কোন্ সময় লিনলিথগাে ভারতের বড়ােলাট হয়ে আসেন?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনাকালে (১৯৩৬ খ্রি.) ভারতের বড়ােলাট হয়ে আসেন লিনলিথগাে।

মােট কয়টি গােলটেবিল বৈঠক হয়?

মােট তিনটি গােলটেবিল বৈঠক হয়।

ভারতের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট ঘােষণা বলতে কী বােঝ?

ভারতের বড়ােলাট লর্ড লিনলিথগাে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট এক প্রস্তাবে ঘােষণা করেন যে- [i] গভর্নর-জেনারেলের শাসন পরিষদে আরও বেশি ভারতীয় সদস্য নেওয়া হবে, [ii] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি গণপরিষদ গঠন করা হবে, [ii] এই পরিষদ ভারতের জন্য সংবিধান রচনা করবে ইত্যাদি। এটি আগস্ট ঘােষণা নামে পরিচিত।

লিনলিথগাে প্রস্তাব অথবা আগস্ট প্রস্তাব কবে ঘােষিত হয়?

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট লিনলিথগাে প্রস্তাব অথবা আগস্ট প্রস্তাব ঘােষিত হয়।

লিনলিথগাের প্রস্তাবে ভারতের পক্ষ থেকে কোন্ দুটি শর্তের উল্লেখ করা হয়?

লিনলিথগাের প্রস্তাবের প্রথম শর্তে বলা হয় যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। আর দ্বিতীয় শর্তে বলা হয়, ব্রিটিশকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, যুদ্ধশেষে তারা ভারতকে স্বাধীনতা প্রদান করবে।

মুসলিম লিগ কবে মুক্তি দিবস পালনের ডাক দেয়?

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর প্রাদেশিক, কংগ্রেসি মন্ত্রীসভাগুলি পদত্যাগ করে। এই দিনটিকে মুসলিম লিগ মুক্তি দিবস পালনের ডাক দেয়।

কে, কবে লাহাের প্রস্তাব উত্থাপন করেন?

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের লাহােরে মুসলিম লিগের অধিবেশনে আবুল কাশেম ফজলুল হক লাহাের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন যা পাকিস্তান প্রস্তাব নামেও পরিচিত।

অতীত স্মরণ (Short-Q&A)

উনবিংশ ও বিংশ শতকে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার (Short-Q&A)

ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি: নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য (Short-Q&A)

সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (Short-Q&A)

ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (Short-Q&A)

ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ (Short-Q&A)

অব-উপনিবেশীকরণ (Short-Q&A)

লাহাের প্রস্তাব কী?

লাহােরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লিগের অধিবেশনে বাংলার প্রধানমন্ত্রী আবুল কাশেম ফজলুল হক উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব ভারতের মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলিকে নিয়ে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবি তােলেন। এটি ‘লাহাের প্রস্তাব’ বা ‘পাকিস্তান প্রস্তাব নামে পরিচিত।

কোন অধিবেশনে পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হয়?

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের লাহাের অধিবেশনে পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হয়। ফলে জাতীয় রাজনীতি এক জটিল আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়।

জাতীয় কংগ্রেসের রামগড় অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে দুটি উল্লেখ করাে।

জাতীয় কংগ্রেসের রামগড় অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে দুটি হল- [i] ডােমিনিয়নের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করা হবে, [ii] গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন করতে হবে।

লিনলিথগাের আগস্ট প্রস্তাবসমূহের দুটি উল্লেখ করাে।

লিনলিথগাের আগস্ট প্রস্তাবগুলির মধ্যে দুটি হল- [i] ব্রিটিশ সরকার ভারতে ডােমিনিয়ন (স্বশাসনের অধিকারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ উপনিবেশ) ধরনের এক দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে ইচ্ছুক, [ii] ভারতে দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধি ও জাতীয় নেতাদের নিয়ে একটি যুদ্ধ উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হবে।

লিনলিথগাের প্রস্তাবের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করাে।

লিনলিথগাের প্রস্তাবের দুটি ত্রুটি ছিল—[i] এই প্রস্তাবে ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা দানের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনাে উল্লেখ ছিল না। [ii] এই প্রস্তাবে সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

ক্রিপস প্রস্তাব কী?

ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ) ও ভারতকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে ২৯ মার্চ একগুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত।

ক্রিপস মিশনের উল্লেখযােগ্য দুটি প্রস্তাব উল্লেখ করাে।

ক্রিপস মিশনের উল্লেখযােগ্য দুটি প্রস্তাব ছিল—[i] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার অব্যবহিত পরেই ভারতে একটি যুক্তরাষ্ট্র (union) প্রতিষ্ঠা করা হবে। [ii] ওই যুক্তরাষ্ট্রকে ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনাধিকার ‘ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস’-এর মর্যাদা দান করা হবে।

ক্রিপস প্রস্তাবের ব্যর্থতার মূল কারণ কী?

ক্রিপস প্রস্তাবে প্রচ্ছন্নভাবে ভারত বিভাজনের ইঙ্গিত থাকায় তা ব্যর্থ হয়।

ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবে গান্ধিজি কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন?

গান্ধিজি ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় বলেন যে, “এই প্রস্তাবটি ছিল একটি ভেঙে পড়া ব্যাংকের এক আগাম তারিখের চেক কাটার শামিল” (A postdated cheque on a crashing bank) I

আগস্ট বা ভারত ছাড়াে আন্দোলন কোন্ কোন্ শহরে ছড়িয়ে পড়ে?

আগস্ট বা ভারত ছাড়াে আন্দোলন বােম্বাই, আমেদাবাদ, কলকাতা, পুনা, নাগপুর, কানপুর, কেরালা, মহিশূর ইত্যাদি শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

ভারত ছাড়াে আন্দোলন চলাকালে কোথায় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়?

ভারত ছাড়াে আন্দোলন চলাকালে মেদিনীপুরের তমলুকে স্বাধীন জাতীয় সরকার গঠিত হয় যা ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট পর্যন্ত টিকে ছিল।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কী?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর তমলুকে অজয় মুখার্জি, সুশীল ধাড়া ও সতীশচন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের মহিলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নাম কী ছিল?

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের মহিলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নাম ছিল ভগিনী সেবাসমিতি।

সুভাষচন্দ্র বসু কাকে ‘পূর্ব এশিয়ায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জনক’ বলে অভিহিত করেন?

সুভাষচন্দ্র বসু, রাসবিহারী বসুকে ‘পূর্ব এশিয়ায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জনক বলে অভিহিত করেন।

বাংলায় আগস্ট বা ভারত ছাড়াে আন্দোলনের কয়েকটি মূলকেন্দ্রের নাম লেখাে।

বাংলায় আগস্ট আন্দোলনের মূলকেন্দ্র ছিল কলকাতা, ঢাকা, হুগলি-সহ বিভিন্ন জায়গা।

ভারত ছাড়াে আন্দোলনের কয়েকজন নেতৃবৃন্দের নাম লেখাে।

গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারত ছাড়াে আন্দোলনের ক্ষেত্রে জয়প্রকাশ নারায়ণ, অরুণা আসফ আলি, সুচেতা কৃপালনি, রামমনােহর লােহিয়া, অচ্যুৎ পট্টবর্ধন, অজয় মুখার্জি, যােগেন চ্যাটার্জি, সুশীল ধাড়া, সরযু পান্ডে, নানা পাতিল এবং আসামের ১৩ বছরের স্কুলছাত্রী। কনকলতা বড়ুয়া ও মেদিনীপুরের তমলুকের ৭৩ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন উল্লেখযােগ্য।

ভারত ছাড়াে আন্দোলনের ব্যর্থতার কয়েকটি কারণ লেখাে।

ভারত ছাড়াে আন্দোলনের ব্যর্থতার কয়েকটি কারণ ছিল—[i] নেতৃত্বের অভাব, [ii] ঐক্যের অভাব, [iii] ব্রিটিশের দমননীতি, [iv] অসময়ে সূচনা, [v] কয়েকটি সংগঠনের অসহযােগিতা, [vi] গান্ধিজির অনুপস্থিতি, [vii] প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং [viii] মুসলিম সম্প্রদায়ের ভূমিকা ইত্যাদি।

ভারত ছাড়াে আন্দোলনকালে কংগ্রেসকে কোন্ কোন্ রাজনৈতিক দল সমর্থন করেনি?

ভারত ছাড়াে আন্দোলনকালে মুসলিম লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি, হিন্দু মহাসভা, র‍্যাডিক্যাল ডেমােক্র্যাটিক পার্টি, অনুন্নত সম্প্রদায়, লিবারেল গােষ্ঠী কেউই কংগ্রেসকে সমর্থন করেনি।

ভারত ছাড়াে আন্দোলনের গুরুত্ব লেখাে।

ভারত ছাড়াে আন্দোলন ভারতবাসীর স্বাধীনতা অর্জনের ভিত্তি স্থাপন করে এবং কংগ্রেসের মর্যাদার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটায়।

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেসে কে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন?

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।

হরিপুরা কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্র কাকে পরাজিত করে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন?

সুভাষচন্দ্র গান্ধিজি সমর্থিত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে পরাজিত করে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।

কেন সুভাষচন্দ্র জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির পদ ত্যাগ করেন?

গান্ধিজির সমর্থিত কংগ্রেসি গােষ্ঠীর অসহযােগিতার কারণে সুভাষচন্দ্র জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির পদ ত্যাগ করেন।

কোন্ উদ্দেশ্যে সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি নতুন দল গঠন করেন?

জাতীয় আন্দোলনকে গতিশীল ও সংগ্রামমুখী করে তুলতে সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি নতুন দল গঠন করেন (১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ, ৩ মে)।

সুভাষচন্দ্র কেন হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের জন্য আন্দোলন গড়ে তােলার সিদ্ধান্ত নেন?

সিরাজউদদৌলার অন্ধকূপ হত্যাকে স্মরণ করে ব্রিটিশ সরকার হলওয়েল মনুমেন্ট স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেন। কিন্তু বেশিরভাগ ভারতবাসী মনে করত অন্ধকূপ হত্যা ঘটনাটি অসত্য এবং সিরাজকে কলঙ্কিত করার জন্য ব্রিটিশের সাজানাে এক চেষ্টা। এতে সুভাষচন্দ্র বাংলার মুসলিম লিগের সহযােগিতায় হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের জন্য আন্দোলন গড়ে তােলার সিদ্ধান্ত নেন।

সুভাষচন্দ্র কীভাবে ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার গঠন করেন?

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের শেষার্ধে সুভাষচন্দ্র বার্লিনে গিরিজা মুখার্জি, এম. আর. ব্যাস, এ. সি. এন. নাম্বিয়ার-সহ ২০ জন ভারতীয়কে নিয়ে গঠন করেন ‘ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার।

‘ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার’-এর মুখপত্রটির নাম কী?

‘ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার’-এর মুখপত্রটির নাম হল ইংরেজি ও হিন্দি দ্বিভাষিক পত্রিকা ‘আজাদ হিন্দ’।

কাদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র ইন্ডিয়ন লিজিয়ন’ গড়ে তােলেন?

জার্মানির হাতে যুদ্ধবন্দিদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র গড়ে তােলেন ইন্ডিয়ান লিজিয়ন। জার্মানিতে যুদ্ধবন্দির সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫,০০০ জন। এদের মধ্যে ৪,০০০ যুদ্ধবন্দি পরে ইন্ডিয়ান লিজিয়ন এ যােগ দেন।

কোথায় সুভাষচন্দ্র নেতাজি শিরােপায় ভূষিত হন?

জার্মানির বার্লিনে সুভাষচন্দ্র ‘নেতাজি’ শিরােপায় ভূষিত হন।

কাদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র জার্মানিতে ইন্ডিয়ান লিজিয়ন বা ‘ফ্রি ইন্ডিয়া আর্মি’ নামে এক সেনাদল গঠন করেন?

জার্মানির হাতে বন্দি ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র ইন্ডিয়ান লিজিয়ন বা ফ্রি ইন্ডিয়া আর্মি নামে এক সেনাদল গঠন করেন।

জাপানের কাছ থেকে সুভাষচন্দ্র কী প্রতিশ্রুতি পান?

জাপানের আইনসভা ডায়েট (Diet)-এ সুভাষচন্দ্রের উপস্থিতিতে জাপানি প্রধানমন্ত্রী তােজো ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য জাপানের তরফে সুভাষকে নিঃশর্ত সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন।

কে, কবে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে জাপানের হাতে যুদ্ধবন্দি ভারতীয় সেনাদের নিয়ে ক্যাপটেন মােহন সিং-এর প্রচেষ্টায় রাসবিহারী বসু সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ বা আই. এন. এ (Indian National Army) গঠন করেন।

রাসবিহারী বসু কে ছিলেন?

রাসবিহারী বসু ছিলেন ভারতের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র ধারার অন্যতম প্রবক্তা। ভারতের মধ্যে থেকে এবং ভারতের বাইরে গিয়েও তিনি আজীবন দেশের মুক্তির লক্ষ্যে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর দায়িত্বভার পান।

কীভাবে সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন?

সিঙ্গাপুরে রাসবিহারী বসু ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্রের হাতে তার প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স লিগ বা ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘের দায়িত্বভার অর্পণ করেন। পরে নেতাজি আনুষ্ঠানিকভাবে আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর সর্বাধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন।

নেতাজি কোন্ কোন্ দ্বীপের নাম দেন শহিদ ও স্বরাজ দ্বীপ?

জাপান নবগঠিত আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং নেতাজির হাতে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অধিকার সমর্পণ করলে তিনি ওই দ্বীপ দুটির নামকরণ করেন যথাক্রমে শহিদ’ ও ‘স্বরাজ।

আজাদ হিন্দ ফৌজের পাঁচটি ব্রিগেডের নাম লেখাে।

আজাদ হিন্দ ফৌজের পাঁচটি ব্রিগেডের নাম ছিল—গান্ধি ব্রিগেড, আজাদ ব্রিগেড, সুভাষ ব্রিগেড, ঝাসির রানি ব্রিগেড, নেহরু ব্রিগেড।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর দুজন সেনানায়কের নাম লেখাে।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর দুজন সেনানায়ক হলেন রাসবিহারী বসু ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

কার নেতৃত্বে ঝাসি রেজিমেন্ট গঠিত হয়?

শ্ৰীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথনের নেতৃত্বে ঝাঁসি রেজিমেন্ট গঠিত হয়।

সুভাষচন্দ্র কীভাবে জার্মানি থেকে জাপানে এসে পৌছােন?

সুভাষচন্দ্র দুঃসাহসিক সাবমেরিন অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে জার্মানির টোকিও-তে এসে পৌছােন (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুন)।

আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতের কোথায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে?

কোহিমা পর্যন্ত এসে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতের মাটিতে তেরঙা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ)।

কেন আজাদ হিন্দ সেনারা অস্ত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হন?

জাপান মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করলে (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ, আগস্ট) জাপানিদের দ্বারা অস্ত্র ও খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে আজাদ হিন্দ সেনারা অস্ত্র ত্যাগ করতে বাধ্যে হন।

দিল্লির লালকেল্লায় বন্দি আজাদ হিন্দ সেনাদের পক্ষে কংগ্রেসের কোন্ আইন বিশেষজ্ঞরা কৌসুলি হিসেবে সওয়াল করেন?

আজাদ হিন্দ সেনাদের পক্ষে সওয়াল করতে কৌসুলি হিসেবে এগিয়ে আসেন ভুলাভাই দেশাই, জওহরলাল নেহরু, অরুণা আসফ আলি, তেজবাহাদুর সপ্ত, কৈলাসনাথ কাটজু প্রমুখের মতাে কংগ্রেসের প্রথমসারির আইন বিশেষজ্ঞ।

কংগ্রেস ছাড়াও আর কোন্ কোন্ রাজনৈতিক দল আজাদ হিন্দ সেনাদের মুক্তির দাবিতে সােচ্চার হয়ে ওঠে?

কংগ্রেসের পাশাপাশি মুসলিম লিগ, হিন্দু মহাসভা, আর. এস. এস., অকালি দল, শিখ লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি প্রভৃতি সমস্ত রাজনৈতিক দল মতপার্থক্য ভুলে আজাদ হিন্দ সেনাদের মুক্তির দাবিতে সােচ্চার হয়ে ওঠে।

আজাদ হিন্দ সেনাদের বিচারকে কেন্দ্র করে কলকাতায় কীরূপ ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে?

২১ নভেম্বর (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ) প্রাদেশিক ছাত্র কংগ্রেস, ছাত্র ব্লক (ফরওয়ার্ডব্লকের ছাত্র সংগঠন), ছাত্র ফেডারেশন (কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন)-এর সদস্যরা এবং ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজ) সহ নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা মিছিল বের করে।

রশিদ আলি কে?

রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন।

‘রশিদ আলি দিবস’ কী?

আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন রশিদ আলিকে বিচারে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলে, প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ব্যাপক ছাত্র ধর্মঘট এবং ১২ তারিখে সাধারণ ধর্মঘট ঘটে, যা রশিদ আলি দিবস নামে পরিচিত।

নৌবিদ্রোহ কবে, কোথায় শুরু হয়?

ভারতীয় নৌবাহিনীর রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি নামক জাহাজে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে নৌবিদ্রোহ শুরু হয়।

কোথায় প্রথম নৌবিদ্রোহের সূচনা ঘটে?

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে বােম্বাইয়ের ২২টি জাহাজে এবং করাচির হিন্দুস্তান জাহাজে এই বিদ্রোহের সূচনা ঘটে।

যুদ্ধবন্দি আইনে আই. এন. এ.র কোন তিন সেনাপতিকে বিচারের জন্য দিল্লির লালকেল্লায় নিয়ে আসা হয়?

যুদ্ধবন্দি আইনে আই. এন. এর তিন সেনাপতি গুরুদয়াল সিং ধিলন, প্রেম সায়গল, শাহনওয়াজ খানকে বিচারের জন্য দিল্লির লালকেল্লায় নিয়ে আসা হয়।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্যদের লালকেল্লায় বিচারের সময় কংগ্রেস নেতা ছিলেন এমন দুজন ব্যারিস্টারের নাম লেখাে।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্যদের লালকেল্লায় বিচারের সময় কংগ্রেস নেতা ছিলেন এমন দুজন ব্যারিস্টারের নাম হল ভুলাভাই দেশাই ও জওহরলাল নেহরু।

নৌসেনাবাহিনী কোন্ দুই বিভাগে বিভাজিত ছিল?

নৌসেনাবাহিনী দুই বিভাগে বিভাজিত ছিল, যথা- [i] ইংরেজ শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায় ‘British Other Ranks’ (BOR), [ii] ভারতীয় নৌকর্মচারীর ‘Indian Other Ranks’ (IOR)

কার নির্দেশে নৌবিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে?

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নির্দেশে বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে (২৩ ফেব্রুয়ারি)। বিদ্রোহীরা ঘােষণা করে, আমরা আত্মসমর্পণ করছি ব্রিটিশের কাছে নয়, ভারতের কাছে।

নৌবিদ্রোহের অন্যতম প্রধান গুরুত্ব কী ছিল?

নৌবিদ্রোহের জন্যই ব্রিটিশ প্রশাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের অর্থাৎ ভারতকে স্বাধীনতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল এবং তড়িঘড়ি তার ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশনকে ভারতে পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল।

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের সি. আর. ফর্মুলার মূল কথা কী ছিল?

মুসলিম লিগের পৃথক পাকিস্তানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চক্রবর্তী রাজাগােপালাচারী যে প্রস্তাব (১৯৪৪ খ্রি.) দেন তা ‘সি. আর. ফর্মুলা’ নামে পরিচিত। চক্রবর্তী রাজাগােপালাচারীর নামে এই ফর্মুলা প্রকাশিত হয়।

ওয়াভেল পরিকল্পনা কী?

বড়ােলাট ওয়াভেল ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুন কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের কাছে একটি সূত্র উত্থাপন করেন। সেটিই ওয়াভেল পরিকল্পনা নামে খ্যাত।

ওয়াভেল তার পরিকল্পনায় কী সুপারিশ করেন?

ওয়াভেল তার পরিকল্পনায় ভারতীয়দের হাতে অধিকতর ক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্পণ করে কেন্দ্রীয় শাসন পরিষদ পুনর্গঠনের সুপারিশ করেন।

সিমলা বৈঠকের মূল আলােচ্য বিষয় দুটি কী ছিল?

সিমলা বৈঠকের মূল আলােচ্য বিষয় দুটির মধ্যে প্রথমটি ছিল বড়ােলাটের কাউন্সিল বা শাসন পরিষদ যে সমস্তনীতির ভিত্তিতে কাজ করবে সেগুলি ঠিক করা; দ্বিতীয়টি ছিল কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হবে বা এই কাউন্সিলের কারা সদস্য হবেন, তা ঠিক করা।

এটলির ঘােষণা কী?

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট এটলি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঘােষণা করেন যে, ভারতের স্বাধীনতার বিষয়ে আলােচনার জন্য ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার তিনজন সদস্যকে নিয়ে গঠিত একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধি দলকে ভারতে পাঠানাে হবে।

মন্ত্রী মিশনের (ক্যাবিনেট মিশন) তিনজন সদস্যের নাম করাে।

মন্ত্রী মিশনের তিনজন সদস্য ছিলেন- [i] ভারত-সচিব স্যার পেথিক লরেন্স, [ii] বাণিজ্যসভার সভাপতি স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এবং [iii] নৌবাহিনীর প্রধান এ. ভি, আলেকজান্ডার।

ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন কী?

ভারতবাসীকে স্বাধীনতা দান প্রসঙ্গে ভারত-সচিব পেথিক লরেন্স, বাণিজ্য-সচিব স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এবং নৌ-সচিব এ. ভি, আলেকজান্ডার—এই তিনজনকে নিয়ে গড়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্রিটিশ প্রতিনিধি দলটি ভারতের ইতিহাসে ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন (১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ) নামে খ্যাত।

ক্যাবিনেট মিশন কেন ভারতে আসে?

ক্রিপস মিশন ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ২৯ মার্চ ভারতকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ভারতে আসে।

ভারতের সংবিধান সভার সভাপতি কে ছিলেন?

ভারতের সংবিধান সভার সভাপতি ছিলেন ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ।

ভারতের সংবিধান খসড়া কমিটির সভাপতি কে ছিলেন?

ভারতের সংবিধান খসড়া কমিটির সভাপতি ছিলেন ড. বি. আর. আম্বেদকর।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতের ইতিহাসে কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে।

ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবে কী বলা হয়?

ব্রিটিশ শাসিত ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে। পররাষ্ট্র, যােগাযােগ ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক ক্ষমতা থাকবে প্রদেশগুলির হাতে। প্রদেশগুলিকে তিনভাগে ভাগ করা হবে। নতুন সংবিধান যতদিন না প্রবর্তিত হবে ততদিন ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করবে। প্রদেশগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান রচনার জন্য গণপরিষদ গঠিত হবে।

কোন পরিকল্পনা মেনে ভারতীয় গণপরিষদ গঠিত হয়?

মন্ত্রী মিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী চারটি মূলনীতির ভিত্তিতে গণপরিষদ গঠিত হয়।

গণপরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে কোন্ কোন্ উদ্দেশ্য পূরণ করতে চাওয়া হয়?

গণপরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে ভারতে দুঃখদারিদ্র্যের অবসান ঘটানাে, যাবতীয় বৈষম্য লােপ ও শােষণের অবসান ঘটাতে চাওয়া হয়।

গণপরিষদে নির্বাচিত কয়েকজন সদস্যের নাম লেখাে।

গণপরিষদে নির্বাচিত কয়েকজন সদস্য হলেন বল্লভভাই প্যাটেল, জওহরলাল নেহরু, বি. আর. আম্বেদকর, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, চক্রবর্তী রাজাগােপালাচারী, কৃয়স্বামী আমার প্রমুখ।

কবে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে?

গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর।

পরাধীন ভারতের শেষ ভাইসরয় কে ছিলেন?

পরাধীন ভারতের শেষ ভাইসরয় ছিলেন মাউন্টব্যাটেন।

ভারত কবে প্রজাতন্ত্র হল?

ভারত ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র হল।

ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন?

ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল ছিলেন মাউন্টব্যাটেন।

গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’ বা কলকাতা হত্যাকাণ্ড কী?

মুসলিম লিগ পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দিলে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট এই পাঁচদিনে কলকাতায় কয়েক হাজার নিরীহ মানুষ মারা যায় যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং বা কলকাতা হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।

ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ক্লিমেন্ট এটলি।

স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল কে হন?

গণপরিষদের পঞ্চম অধিবেশনে (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) মাউন্টব্যাটেনকে স্বাধীন ভারতের। প্রথম গভর্নর জেনারেল নিয়ােগ করা হয়।

কবে স্বাধীন ভারতের নতুন সংবিধান কার্যকর হয়?

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি গণপরিষদের শেষ অধিবেশনে স্বাধীন ভারতের নতুন সংবিধান কার্যকর হয়।

ভারতের গণপরিষদের প্রকৃতি লেখাে।

প্রকৃতিগত বিচারে ভারতের গণপরিষদ জনপ্রতিনিধিত্বহীন একদলীয় আপসমুখী ছিল, যাতে আইনবিদদের প্রাধান্য দেখা যায়।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কী?

মাউন্টব্যাটেনের উপদেষ্টা লর্ড ইসমে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত ভাগের পরিকল্পনা পাঠান যা ভারতীয় স্বাধীনতা আইনরূপে পাস হয় এবং মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা নামে পরিচিতি পায়।

‘মাউন্টব্যাটেন রােয়েদাদ’ কী?

ব্রিটিশ সরকার ভারত বিভাজনের পরিকল্পনা অনুমােদন করার পর লর্ড মাউন্টব্যাটেন ৩ জুন (১৯৪৭ খ্রি.) তাঁর ভারত বিভাগের পরিকল্পনা ঘােষণা করেন। এই ঘােষণা ‘মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন রােয়েদাদ’ নামে পরিচিত।

বলকান পরিকল্পনা কী?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অটোমান সাম্রাজ্যের ভাঙনের পর বলকান অঞ্চলে জাতিভিত্তিক একাধিক ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের উদ্ভব প্রক্রিয়াই বলকান পরিকল্পনা নামে পরিচিত।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে বলকান পরিকল্পনায় কী প্রস্তাব রাখা হয়?

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে অটোমান সাম্রাজ্যের বলকান পরিকল্পনার ন্যায় পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগের প্রস্তাব রাখা হয় এবং বলা হয়, যে সকল প্রদেশ সাংবিধানিক সভায় যােগ দেবে তাদেরও ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

সিমলা বৈঠক বলতে কী বােঝ?

ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে বড়ােলাট ওয়াভেল সিমলাতে সর্বদলীয় নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক ডাকেন (২৫ জুন, ১৯৪৫) যা সিমলা বৈঠক নামে পরিচিত।

ভারতের লৌহমানব কাকে বলা হয়?

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে ভারতের লৌহমানব বলা হয়।

জাপানের তরফে ‘পূর্ব এশিয়ার নতুন বিধান’ ঘােষণায় কী বলা হয়?

পূর্ব এশিয়ার নতুন বিধান (New Order of East Asia) ঘােষণায় বলা হয় দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ায় পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের সূচনা ঘটানাে হবে।

‘এশিয়া এশিয়াবাসীর জন্য’—এই স্লোগান কোন দেশের?

এশিয়া এশিয়াবাসীর জন্য—এই স্লোগানটি ছিল জাপানের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান এশিয়ার উপনিবেশগুলি থেকে পশ্চিমি শক্তিগুলিকে বিতাড়িত করে নিজের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটানাের জন্য এই স্লোগানটি ছিল। এই স্লোগানটির আড়ালে জাপানের প্রকৃত বক্তব্য ছিল ‘পশ্চিমি শক্তিগুলি নয়, এশিয়ায় কর্তৃত্ব করবে জাপান।

‘এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া’ জাপানের এই ঘােষণার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল?

এশিয়াবাসীদের জন্য এশিয়া এই ঘােষণার দ্বারা জাপান আসলে চেয়েছিল এশিয়াকে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে মুক্ত রাখতে, আর এই সুযােগে নিজের সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটাতে।

‘AAA’-বলতে কী বােঝ?

জাপানের উদ্যোগে ১৯৪২ খ্রি. ‘AAA’ নামে এক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূচনা ঘটে। AAA’-এর অর্থ হল জাপান এশিয়ার (A) রক্ষক, এশিয়ার (A) নেতা এবং এশিয়ার (A) আলাে ।

জাপানি পার্লামেন্টে কোক্কা সােদোইন আইন পাসের মাধ্যমে কী কর্মসূচি নেওয়া হয়?

জাপানি পার্লামেন্টে কোক্কা সােদোইন আইন পাসের মাধ্যমে একদিকে যেমন শিল্প বিকাশের কর্মসূচি নেওয়া হয় অপরদিকে তেমনই জাপানি আগ্রাসী নীতিকেও সমর্থন করা হয় (১৯৩৮ খ্রি., এপ্রিল)।

কে, কবে পার্ল হারবারে বােমা বর্ষণ করে?

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটি পার্ল হারবারের ওপর বিমান আক্রমণ চালায় এবং বােমা বর্ষণ করে।

কারা রােম-বার্লিন-টোকিও চুক্তিতে আবদ্ধ হয়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ইটালি ও জার্মানির সঙ্গে ‘রােম বার্লিন-টোকিও চুক্তি-তে আবদ্ধ হয়।

রােম-বার্লিন-টোকিও চুক্তি কবে স্বাক্ষরিত হয়?

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে রােমবার্লিন-টোকিও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

রােম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জাপান, ইতালি, জার্মানি নিজেদের মধ্যে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, নিজ নিজ দেশের রাজধানীর নামানুসারে সেই চুক্তির নাম হয় রােম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি।

জাপান কবে মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করেছিল?

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে জাপান চিনের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করেছিল।

জাপান কেন মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করেছিল?

চিনের মাঞ্চুরিয়ার ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভের লক্ষ্যে, সেখান থেকে কাঁচামাল জোগাড় করা এবং সর্বোপরি পণ্য বিক্রির বাজার তৈরির লক্ষ্যে জাপান মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হিদেকি তােজো।

জাপানের কোন দুটি শহরে আমেরিকা আণবিক বােমা বর্ষণ করে?

আমেরিকা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানের হিরোশিমা (৬ আগস্ট) ও নাগাসাকিতে (৯ আগস্ট) আণুবিক বােমা বর্ষণ করেছিল।

মেইজি পুনরুত্থান কাকে বলে?

জাপানের টোকুগাওয়া শােগুনতন্ত্রের অবসানের পর সম্রাট মেইজির আমলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আধুনিকতার সূচনা হয়। পাশাপাশি মেইজি সম্রাটের ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা এক নতুন যুগের সূচনা ঘটায় যা জাপানের ইতিহাসে মেইজি পুনরুখান নামে পরিচিত।

ভৌগােলিকভাবে ইন্দোচিন কোন্ কোন অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল?

ভৌগােলিকভাবে ইন্দোচিন টংকিং ও আন্নাম, কোচিন-চিন (একত্রে ভিয়েতনাম), লাওস ও কম্বােডিয়া নিয়ে গঠিত ছিল।

ভিয়েতমিন কী?

হাে-চি-মিন ভিয়েতনামি মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে গঠন করেন। ভিয়েতমিন (Vietminh) বা ভিয়েতনামি স্বাধীনতা লিগ (League for Vietnamese Independence)I

‘বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া যুগ্ম বিকাশ’ তত্ত্ব কার?

বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া যুগ্ম বিকাশ তত্ত্ব’ হল জাপানের।

‘বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া যৌথ অগ্রগতি বলয়’ কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান, মিত্রশক্তিভুক্ত ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে কোণঠাসা করার পর জাপানি বিদেশমন্ত্রী মাৎসুওকা এশিয়ায় বিস্তার নীতি গ্রহণ করেন, যা বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া যৌথ অগ্রগতি বলয়’ নামে পরিচিত।

‘টানাকা মেমােরিয়াল’ কী?

জাপানের উগ্র সাম্রাজ্যবাদী প্রধানমন্ত্রী টানাকা জাপানের সম্রাট হিরােহিতাের কাছে। প্রদত্ত এক প্রতিবেদনে জানান যে, পূর্ব এশিয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য জাপানের উচিত। যুদ্ধনীতি গ্রহণ করা। এই প্রতিবেদন টানাকা মেমােরিয়াল (১৯২৭ খ্রি.) নামে পরিচিত।

সিয়াটো কেন গঠিত হয়?

ইন্দোচিনসহ সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সাম্যবাদ মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন উদ্যোগে গঠিত হয় সিয়াটো (SEATO) বা ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা’।

নুশানতারা (Nusantara) কী?

আজকের স্বাধীন ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলটির নাম ছিল নুশানতারা। এটি প্রাচীন জাভাদেশীয় শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ হল ‘দ্বীপপুঞ্জ।

ভােকস্রাদ (Volksraad) কী?

১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে গঠিত ইন্দোনেশিয়ায় বিদেশি ডাচ সরকারের গঠিত উপদেষ্টা সমিতির নাম ছিল ভােকস্রাদ। এই সভাটির আইন প্রণয়নের কোনাে ক্ষমতা না থাকলেও এর মাধ্যমে রাজনৈতিক মতামত এবং অভাব অভিযােগ জানানাে হত।

কাদের উদ্যোগে ইন্দোনেশিয়াতে শশাঙ্ক পূর্ণামা সংগঠনটি গড়ে ওঠে?

ইন্দোনেশিয়ায় স্থানীয় শাসকগােষ্ঠী বা পূবতী (ভূপতি)-দের উদ্যোগে ‘শশাঙ্ক পূর্ণামা’ নামের সংগঠনটি গড়ে ওঠে।

স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি হন ড. সুকর্ণ এবং প্রধানমন্ত্রী হন মহম্মদ হাত্তা।

ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নাম লেখাে।

ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নাম হল বুদিউতােমা (বুদ্ধি উত্তম), সারেকত ইসলাম (মুসলিম জাতীয়তাবাদী সংগঠন), কমিউনিস্ট দল বা (PKI বা Partai Komunis Indonesia) প্রভৃতি।

সুকর্ণ কে ছিলেন?

PNI দলের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি।

কোন কোন্ দ্বীপ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া গড়ে উঠেছে?

জাভা, সুমাত্রা, বাের্নিয়াে এবং একশােরও বেশি ছােটো বড়াে দ্বীপ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া গড়ে উঠেছে।

উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট বাহিনী কী নামে পরিচিত ছিল?

উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট বাহিনী ভিয়েতকং নামে পরিচিত ছিল।

দক্ষিণ ভিয়েতনামের কমিউনিস্টরা কী নামে পরিচিত ছিল?

দক্ষিণ ভিয়েতনামের কমিউনিস্টরা ভিয়েতকং নামে পরিচিত ছিল।

কবে ভিয়েতনামে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়?

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর ভিয়েতনামে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়।

ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনামের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?

ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনামের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন হাে-চি-মিন।

হাে-চি-মিন কে ছিলেন?

হাে-চি-মিন ছিলেন ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

কবে দিয়েন-বিয়েন ফু-এর যুদ্ধ সংঘটিত হয়?

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ দিয়েন-বিয়েন ফু-এর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

ভিয়েতকং কাকে বলে?

দক্ষিণ ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট, অকমিউনিস্ট এমনকি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও মার্কিন অনুগ্রহপুষ্ট ন-দিন-দিয়েম সরকারের বিরােধীতার লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট নামে এক সংগঠন গড়ে তােলে (১৯৬০ খ্রি.)। এদের দিয়েম সরকার ভিয়েতনামি কমিউনিস্ট বা ভিয়েতকং আখ্যা দেয়।

লিঙ্গজ্যোতি চুক্তি কী?

ডাচদের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার প্রজাতন্ত্রী নেতাদের যে সমঝােতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তার নাম লিঙ্গজ্যোতি চুক্তি। বাটাভিয়া (জাকার্তা)র লিগজ্যোতি শহরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ণ স্বাধীনতার স্বীকৃতি না দিয়ে সেখানে এক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়।

জেনেভা সম্মেলনে কোন্ কোন দেশ অংশগ্রহণ করে?

জেনেভা সম্মেলনে আমেরিকা, ব্রিটেন, চিন, ফ্রান্স, ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশ অংশগ্রহণ করে।

কাদের মধ্যস্থতায় ডাচ-ইন্দোনেশীয় চুক্তি (লিঙ্গজ্যোতি) স্বাক্ষরিত হয়?

ব্রিটিশের মধ্যস্থতায় ডাচ ইন্দোনেশীয় চুক্তি (লিঙ্গজ্যোতি) স্বাক্ষরিত হয় (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ)।