প্রশ্নঃ দোভাষী পুঁথি সাহিত্য কী? এ ধারার কবি ও তাঁদের পুঁথির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ ১৭৬০ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বাংলা, হিন্দি, তুর্কি, আরবি, ফারসি শব্দমিশ্রিত এক ধরনের বিশেষ কাব্য রচিত হয়েছে, যে কাব্যগুলোকে পুঁথি সাহিত্য বলে। এ সকল কাব্য অলৌকিকতাপূর্ণ প্রেমকাহিনী বা বীরত্ব নিয়ে রচিত। যারা এ ধরনের কাব্য রচনা করেন তাদেরকে শায়ের বলে।
পুঁথিকে মুসলমান বাংলা সাহিত্য এবং এর ভাষাকে মুসলমানী বলা হয়েছে। কিন্তু কলকাতার সস্তা ছাপাখানায় মুদ্রিত হয়ে এ ধারার কাব্য দেশময় প্রচারিত হয় বলে একে বটতলার পুঁথি বলা হয়। কিন্তু সুনীতিবাবু, সুকুমার সেন ও দীনেশচন্দ্র সেন এদেরকে দোভাষী পুঁথি সাহিত্য বলেছেন।
পুঁথি সাহিত্যের ভাষার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে— আরবি, ফারসি, হিন্দি শব্দের বাহুল্য ব্যবহার, আরবি ফারসি শব্দের নাম ধাতুর ব্যবহার এবং হিন্দু ধাতুর প্রয়োগ, অনুসর্গ ও উপসর্গরূপে বাংলা ও আরবি-ফারসি হিন্দি শব্দের প্রয়োগ, ফারসি বহুবচনের ব্যবহার, পুংলিঙ্গে বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দের প্রয়োগ।
পুঁথি সাহিত্যের দু’জন বিশিষ্ট কবি ফকির গরীবুল্লাহ ও সৈয়দ হামজা।
গরীবুল্লাহর পুঁথি— জঙ্গনামা, সোনাভানের পুঁথি, ইউসুফ জোলেখা, সত্যপীরের পুঁথি, আমির হামজা। সৈয়দ হামজার পুঁথিগুলো হচ্ছে মধুমালতী, জৈগুনের পুঁথি।
এছাড়াও রেজাউল্লাহ, আমির উদ্দিন, আশরাফ আলী প্রমুখ বিভিন্ন নবী, চার খলিফা ও ইমামদের নিয়ে পুঁথি রচনা করেছেন। কারবালার বিষাদাত্মক কাহিনী নিয়ে লিখিত পুঁথির নাম জঙ্গনামা। কবি মোহাম্মদ খানের ‘মকতুল হোসেন’ এ ধারার প্রাচীন কাব্য, শেষ কাব্য ‘শহীদে কারবালা’। সৈয়দ সুলতান, শেখ চাঁদ ও হায়াত মাহমুদ হযরত মুহম্মদ (সঃ)-এর জীবনী নিয়ে পুঁথি রচনা করেছেন।
লায়লী মজনু, গুলে বকাওলী, চাহার দরবেশ, হাতেম তাঈ— এগুলো ছাড়াও কবি আব্দুল হাকিম পীর ফকিরদের নিয়ে রচনা করেন ‘গাজী কালু চম্পাবতী’।
Leave a comment