প্রশ্নঃ দেশ ও কাল কী বিষয়গত?

অথবা, দেশ ও কাল কী বস্তুগত?

ভূমিকাঃ বিশ্বতত্ত্ব (Cosmology) দর্শনের এমন একটি শাখা যেখানে দেশ, কাল, জড়, প্রাণ, বিশ্বজগতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্ক আলােচনা করা হয়ে থাকে। দার্শনিক আলােচনার শুরু থেকেই বিভিন্ন দার্শনিকগণ বিশ্বজগতের উৎপত্তি ও সংগঠন অর্থাৎ বিশ্বজগতের পরিদৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলােচনা করেন। বহির্জগতের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, জড়বস্তু কিছু না কিছু স্থান দখল করে এবং কালে অবস্থান করে। এ জড়বস্তুর সম্পর্ক নিয়ে দেশ ও কাল সম্পর্কে বিভিন্ন দার্শনিক দু’টি মতবাদে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সেগুলাে হলাে- (ক) বস্তুগত ও (খ) আত্মগত।

দেশ ও কাল বিষয়গত বা বস্তুগতঃ সাধারণ দৃষ্টিতে দেশ ও কাল জ্ঞাতা নিরপেক্ষ বিষয়গত বা বস্তগত সত্তা আছে। এরা বস্তু ও ঘটনার দুটি আধারের মতাে। দেশ ও কাল বিষয়গত কী না এ নিয়ে দার্শনিকদের মতবাদসমূহ আলােচনা করা হলাে-

(১) ডেকার্টের মতঃ দার্শনিক ডেকার্টের মতে, দেশ এবং বিস্তৃতি অভিন্ন। দেশ বা বিস্তৃতি আসল দ্রব্য নয়। তার মতে, শূন্য দেশ বলে কিছু নেই। পূর্ণ দেশ আছে। দেশ এবং জড়বস্তু সত্তার দিক থেকে পৃথক নয়। এরা অভিন্ন। যে বিস্তৃতি দেশ আবার সে বিস্তৃতিই জড়। তাই দেশের বিষয়গত সত্তা আছে।

(২) স্পিনােজার মতঃ দার্শনিক স্পিনােজার মতে, দেশের বিষয়গত সত্তা আছে। আধুনিককালে আলেকজান্ডার বলেছেন, দেশ-কালই জগতের সমস্ত বস্তুর উপাদান। তিনি নিউটনের পরস্পর নিরপেক্ষ দেশ ও কালকে অস্বীকার করে। পরস্পর নির্ভরশীল দেশ কালকে সত্য বলে মনে করেন।

(৩) লিউসিপায়ের মতঃ পরমাণুবাদী দার্শনিক লিউসিপাসের মত অনুসারে, দেশের স্বতন্ত্র বস্তুসত্তা স্বীকার করা যায়। তার মতে, দেশ হচ্ছে অনন্ত আধার যার মধ্যে গতিশীল জড় পরমাণুগুলাে অবস্থান করছে।

(৪) গ্যালিলিও ও নিউটনের মতঃ গ্যালিলিও ও নিউটনের মতানুসারে, দেশও কাল দু’টি স্বতন্ত্র বা স্বাধীন সত্তা। যা বস্তু বা ঘটনার আধার। তবে এদের কেউ অন্য কোনাে কিছুর ওপর নির্ভরশীল নয়। দেশ ও কালের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের কারণে বস্তুর গতি ও অবস্থার রূপান্তর সম্ভব হচ্ছে। বাহ্য দ্রব্য না থাকলেও দেশ থাকবে। ঘটনা না ঘটলেও কাল থাকবে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, আদিম বা প্রাচীন যুগের দার্শনিকগণ তাদের প্রাথমিক আলােচনা থেকেই দেশ ও কালের ধারণা দাঁড় করান এবং তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব প্রমাণে যুক্তিতর্ক পেশ করেন। বর্তমান আধুনিক দার্শনিক ও তাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে তাদের মতকেই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন। তাদের মতে, দেশ ও কাল এক ও অভিন্ন এবং একান্তভাবে অবিচ্ছেদ্য পরস্পর সাপেক্ষ বিশ্বের আদিম উপাদান। জড়, প্রাণ, মন সবকিছুর উৎপত্তি এ উপাদান থেকে হয়েছে।