এদের পঠনপাঠনের জন্য মূলত স্পর্শ ও শ্রবণ পদ্ধতির উপর জোর দেওয়া হয়। দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার পদ্ধতি উল্লেখ করা হল—

(1) বেইল পদ্ধতি: ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে লুইস ব্রেইল এই স্পর্শমূলক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। সাধারণত ছয়টি উঁচু উঁচু বিন্দু থাকে যাদের বিভিন্ন ক্রমে সাজিয়ে বর্ণ তৈরি করা হয়। যে কলমের সাহায্যে ব্রেইল লেখা হয় তাকে স্টাইলাস বলে। ব্রেইল বাঁ-দিক থেকে ডান দিকে লিখতে হয়। বৈজ্ঞানিক সংকেত, মানচিত্র, গণিত, সংগীতের স্বরলিপি প্রভৃতি ব্রেইলের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।

(2) শব্দনির্ভর পদ্ধতি: দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রবণেন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে শিক্ষাদানের যেসব পদ্ধতির আবিষ্কার হয়েছে সেগুলিকে শব্দনির্ভর পদ্ধতি বলে। যেমন- টকিং বুক, গ্রামােফোন, টেপরেকর্ডার প্রভৃতি। বিশেষ করে পাঠ্যসূচির উপর বিশেষভাবে তৈরি করা অডিয়াে ক্যাসেট দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য ব্যবহার করা হয়।

(৩) হাতের লেখা প্রশিক্ষণ পদ্ধতি: সকল দৃষ্টিহীন শিশুকেই হাতের লেখা প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক।

  • সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন: তাদের পক্ষে বেশি অভ্যাস করা সম্ভব নয় বা সকল বর্ণ লেখাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রথমে তাদের নিজের নাম লেখার জন্য যে-কটি বর্ণের প্রয়ােজন, সেই বর্ণগুলিই শেখানাে উচিত। এক্ষেত্রে আয়তক্ষেত্রের ন্যায় একটি বিশেষ ধরনের ফাকা বাক্স তৈরি করতে হবে, নীচে একটি কাগজ থাকবে, তারপর শিক্ষার্থী ফাকা স্থানে তার নামের অক্ষরগুলি পরপর লিখবে।

  • আংশিক দৃষ্টিহীন: এইসব শিশুরা বর্ণমালা ও অনুচ্ছেদ লিখতে সক্ষম হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হলে এক্ষেত্রে শিশুকে প্রথমে কালাে দাগ টানা খাতা দিতে হবে এবং কালাে কালির কলম দিতে হবে। শিশুকে সঠিকভাবে সাদা কাগজের উপর লেখার কৌশল শেখাতে হবে।

(4) সক্রিয়তাভিত্তিক পদ্ধতি: দৃষ্টিহীন শিশুদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপযােগী করে তােলার জন্য এবং পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে সঙ্গতিবিধানকরে চলার জন্য তাদেরকে সক্রিয় করে তুলতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযােগ করে দেওয়া প্রয়ােজন। এতে তারা উৎসাহ বােধ করে এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।

(5) জ্ঞানেন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ পদ্ধতি: শিশু পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা পরিবেশ থেকে জ্ঞানার্জন করে। তবে যাদের দর্শন ইন্দ্রিয় কার্যকরী নয়। তাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলি কার্যকরী করে তুলতে প্রশিক্ষণের কতকগুলি কৌশল অবলম্বন করা হয়।

  • স্পর্শ পরিচয়: শিশুকে কোলে নিয়ে স্পর্শ পদ্ধতিতে হাত, মুখ, চোখ, নাক প্রভৃতি অঙ্গগুলি চেনানাে হয়।

(6) অ্যাবাকাস ব্যবহারের প্রশিক্ষণ: গাণিতিক যােগ, বিয়ােগ, গুণ, ভাগ, শতাংশ, বর্গমূল অ্যাবাকাস পদ্ধতিতে দৃষ্টিহীনদের শেখানাে হয়। মানচিত্র তৈরি, হাতের আঙুলের সূক্ষ্ম সালনে সাহায্য করে অ্যাবাকাস পদ্ধতি।

(7) কম্পিউটার পদ্ধতি: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় ভারতে বর্তমানে কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষা দান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।

(8) অন্যান্য পদ্ধতি: অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজে দক্ষ করা হয় যেমন—

  •  স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেখানাে। 

  •  নিজে নিজে স্নান করা, তেল মাখা, জামাকাপড় পরিষ্কার করার অভ্যাস তৈরি করানাে। 

  • সঠিক স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করার অভ্যাস গড়ে তােলা। 

  • সামাজিক আচার-আচরণ ও রীতিনীতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া। 

  • ঘর পরিষ্কার, বাসনপত্র পরিষ্কার, নিজের বিছানা করে নেওয়ার অভ্যাস তৈরি করে দেওয়া।

মনস্তত্ত্বমূলক নাটকাভিনয় পদ্ধতি বলতে কী বোঝো?

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এবং স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনে অক্ষম শিশুদের শিক্ষা সম্পর্কীয় বিষয়ে কী বলা হয়েছে?

ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন বলতে কাদের বােঝায়? এদের শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলােচনা করাে। অথবা, দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশগুলি বিবৃত করাে।