স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতাে দৃষ্টিহীন ও ব্যাহত দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম সাধারণ ধর্ম এবং বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা উভয়ই হতে পারে। তবে শিক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ভিন্ন হয়। দৃষ্টিহীন ও ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সাধারণ বিষয় ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনযাপন উপযোগী দক্ষতা, ইন্দ্রিয়ের প্রশিক্ষণ ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়তে পারে যদি বড় অক্ষরে লেখা বই, ব্ল্যাকবোর্ডে উচ্চারণ করে করে বড় করে লেখার কৌশল প্রয়োগ করা যায়। অন্যদিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের স্পর্শ পদ্ধতি ও শ্রবণেন্দ্রিয় এর সাহায্য নেওয়া হয়।

প্লাস কারিকুলাম: দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাধারণ পাঠক্রমের শিক্ষা দেওয়ার আগে বিশেষ পাঠক্রমের শিক্ষা দেওয়া হয়, যাকে বলে প্লাস কারিকুলাম। এই শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পর একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সমন্বিত শিক্ষার অধিকারী হতে পারে। প্লাস কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত কার্যাবলী গুলি হল一

  • (১) জ্ঞানেন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ, 
  • (২) ব্রেইল লিখন ও পঠন, 
  • (৩) দৈনন্দিন জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, 
  • (৪) পরিবেশ পরিচিতি ও নিরাপদে হাঁটার কৌশল, 
  • (৫) অ্যাবাকাস, 
  • (৬) রেকর্ডকৃত বই, 
  • (৭) হাতের লেখা, 
  • (৮) টাইপিং।

সাধারণ পাঠক্রম :

দৃষ্টিহীন ও ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম

(১) মৌলিক বিষয় : দৃষ্টিহীন ও ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পাঠক্রমের মূল বিষয় হল ব্রেইল লেখা ও ব্রেইল পড়া। এইসমস্ত শিশুদের ব্রেইল শিক্ষা একান্তই জরুরী।

(২) জ্ঞানমূলক বিষয় : জ্ঞানমূলক বিষয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাঠ করতে হবে— (a) ভাষা, (b) সাহিত্য, (c) গণিত, (d) বিজ্ঞান, (e) সমাজবিজ্ঞানের প্রভৃতি।

(৩) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি : চোখে দেখতে না পেলেও এদের বিশেষ মানসিক ক্ষমতা বর্তমান। তাই মানসিক ক্ষমতা গুলির বিকাশ সাধনের জন্য বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর ব্যবস্থা করা হয়। যেমন- সংগীত, বাদ্যযন্ত্র, চারুশিল্প, হস্তশিল্প এবং বিভিন্ন সৃজনাত্মক কার্যাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

(৪) অতিরিক্ত বিষয়সমূহ : এগুলি ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য ইন্দ্রিয়মূলক প্রশিক্ষণ, দৈনন্দিন জীবন যাপনের উপযোগী শিক্ষা, ব্রেইল, অ্যাবাকাস প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয়। দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা যাতে পরিবার ও সমাজের বাধাস্বরূপ না হয়, তার জন্য এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা করা একান্ত কর্তব্য। তারও যাথে সমাজের অগ্রগতিতে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেই সুযোগ করে দেওয়া আমাদের সকলের কর্তব্য। এতে যেমন তাদের কল্যাণ তেমনি সমাজের ও অগ্রগতি বজায় থাকে।