দুহু কোরে দুহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া আধ তিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া – বিশ্লেষণ কর

উত্তর : নির্বাচিত অংশটুকু ‘মধ্যযুগের বাংলা গীতিকবিতা’ সংকলনের চণ্ডীদাসের ‘মিলন’ বিষয়ক পদ থেকে গৃহীত। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাধা-কৃষ্ণের মিলন মুহূর্তে তাদের অনুভূতি এখানে ব্যক্ত হয়েছে।

বৈষ্ণব পদাবলির তথ্যমতে রাধা-কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ প্রেমিকযুগল। একজন আরেকজনের প্রেমে উন্মাতাল। একের হৃদয়ের সাথে অন্যের হৃদয় একই সুতার বন্ধনে গাঁথা। জল ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না, সূর্যের আলো ছাড়া পদ্ম ফোটে না, বৃষ্টির জল ছাড়া যেমন চাঁতক বাঁচতে পারে না, চাঁদের সাথে যেমন চকোরের সম্পর্ক- রাধা-কৃষ্ণের সম্পর্কও তাই। একজন আরেকজন অদর্শনে অস্থির হয়ে ওঠে। দুজন যেন একই আত্মার দুটি ভিন্ন রূপ। তাদের পরান যেন একই সাথে বাধা। একজন ছাড়া অন্যজনের জীবন কল্পনা করা যায় না। দীর্ঘ বিরহ তাদের মনকে প্রবল শোকাতুর করে তোলে- এর ফলে তাঁদের মিলন মুহূর্তেও যেন বিচ্ছেদ প্রবল হয়ে দেখা দেয়- বিচ্ছেদ যন্ত্রণা আবার নতুন করে তাদেরকে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। কারণ অতীতের বিরহ তাদেরকে আবার নতুন বিরহের কথা স্মারণ করিয়ে দেয়- তাই তারা মিলনের, আনন্দ অপেক্ষা বিচ্ছেদের যন্ত্রণাই বেশি পীড়িত হয়।

আসলে প্রেমের ক্ষেত্রে মিলনের আনন্দের থেকে বিরহের বেদনাই যে প্রবল আকার ধারণ করে তা প্রদত্ত পদগুচ্ছে প্রকাশিত।