প্রশ্নঃ দায়রা বিচারের পদ্ধতি আলোচনা কর।

উত্তরঃ অপেক্ষাকৃত গুরুতর অপরাধগুলির বিচার কার্য সম্পন্ন হয় দায়রা আদালতে। কিন্তু কোন মামলা সরাসরি সে আদালতে দায়ের করা হয় না। উপযুক্ত ক্ষমতা সম্পন্ন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রথম সকল ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়। সেখান হতে দায়রা আদালতে বিচারযোগ্য মামলাগুলি এখানে পাঠানো হয়। ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ ক হতে ২৬৫ ঠ ধারায় দায়রা আদালতের বিচার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। ১৯৭৮ সাল হতে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

মুলতঃ তিনটি পর্যায়ে দায়রা আদালতের বিচার কার্য সম্পন্ন হয়ে থাকে-

(১) সরকারী কৌসুলী মামলা উত্থাপন করবেন।

(২) নথিপত্র পরীক্ষা করে এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে দায়রা জজ যদি মনে করেন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা চালানোর যথেষ্ট কারণ নেই তাহলে তাকে অব্যাহতি, দিবেন অথবা এই আদালতে বিচার করার মত অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ করেছে মনে হলে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করবেন।

(৩) চার্জ মোতাবেক বিচার কার্য সম্পন্ন করা হয়।

পদ্ধতিগুলি নিম্নরূপঃ 

২৬৫ ক ধারা (সরকারী কৌসুলী কর্তৃক বিচার পরিচালনা): এই ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রের পক্ষে অর্থাৎ অভিযোগকারীর পক্ষে সরকারী কৌসুলী প্রত্যেকটি মামলা পরিচালনা করবেন।

২৬৫ খ ধারা (অভিযোগকারী কর্তৃক মামলার উদ্বোধন): এই ধারা মতে, আসামী আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে সরকারী কৌসুলী আসামীর বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আনা হয়েছে তা বর্ণনা করবেন এবং কিরূপ সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমান করবেন তা বর্ণনা দিয়ে মামলাটি উত্থাপন করবেন।

২৬৫ গ ধারা (অব্যাহতি): মামলার নথিপত্র এবং পেশকৃত কাগজপত্র বিবেচনা করে এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামীর বিরুদ্ধে মামলা চালানোর পর্যাপ্ত কারণ নেই, তবে আদালত আসামীকে অব্যাহতি দিবেন এবং এই অব্যাহতি দেয়ার কারণ নথিতে লিপিবদ্ধ করবেন।

২৬৫ ঘ ধারা (চার্জ গঠন): উক্তরূপ বিবেচনা ও শুনানির পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী অপরাধ করেছে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে তবে আসামীর বিরুদ্ধে লিখিতভাবে একটি চার্জ গঠন করা হবে এবং আসামীকে তা পড়ে শোনানো হবে ও ব্যাখ্যা করা হবে। আসামী দোষ স্বীকার করে না বিচার প্রার্থনা করে তা তাকে জিজ্ঞেস করা হবে।

২৬৫ ৫ ধারা (স্বীকৃতি অনুযায়ী দণ্ড): আসামী দোষ স্বীকার করলে আদালত এই ধারানুযায়ী তা লিপিবদ্ধ করে দণ্ডাদেশ দিতে পারেন। তবে মৃত্যুদন্ড যোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আসামীর দোষ স্বীকারের উপর ভিত্তি করে দণ্ডাদেশ দেয়া যায় না৷

২৬৫ চ ধারা (বাদী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ): এই ধারার বক্তব্য অনুযায়ী আসামী যদি দোষ স্বীকার না করে অথবা বিচার দাবী করে কিংবা ২৬৫ ঙ ধারা অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত না হয়, তাহলে আদালত সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণের জন্য একটি তারিখ ধার্য করবেন এবং সরকার পক্ষের আবেদন ক্রমে প্রয়োজন বোধে কোন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থিত হতে বা কোন দলিলপত্র উপস্থিত করতে বাধ্য করার জন্য পরোয়ানা জারী করতে পারেন।

২৬৫ ছ ধারা (বাদী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ): এই ধারানুযায়ী আদালত ধার্যকৃত তারিখে সরকার পক্ষের উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণাদি গ্রহণ করবেন। এছাড়া আদালত ইচ্ছা করলে অন্যান্য সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ না করা পর্যন্ত কোন একজন সাক্ষীর জেরা মূলতবী বা স্থগিত রাখতে পারেন বা কোন সাক্ষীকে আরো জেরার জন্য পুনরায় ডাকতে পারেন।

২৬৬ জ ধারা (খালাস): সরকার পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীর জবানবন্দী গ্রহণ এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত যদি মনে করেন যে আসামী অপরাধ করেছে বলে প্রমাণিত হয় না, তবে এই ধারা অনুযায়ী আদালত আসামীকে খালাস দিতে পারেন।

২৬৬ ঝ ধারা (সাফাই): উক্ত ধারা অনুযায়ী আসামীকে খালাস দেয়া না হলে এই ধারানুসারে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। আসামী কোন লিখিত বিবৃতি দাখিল করলে আদালত তা গ্রহণ করবেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণ থাকলে তা উপস্থিত করার আহবান জানাবেন। আসামীর আবেদন মত এবং আদালতের বিবেচনায় কোন সাক্ষীকে হাজির করার জন্য বা কোন দলিলপত্র উপস্থিত করতে বাধ্য করার জন্য আদালত ওয়ারেন্ট জারি করতে পারেন।

২৬৬ ঞ ধারা (সওয়াল-জবাব): আসামী পক্ষের সাক্ষী থাকলে তাদের জবানবন্দী নেয়ার পর এই ধারা অনুসারে সওয়াল-জবাব শুরু হবে। প্রথমে সরকারী কৌঁসুলী তার বক্তব্য পেশ করবেন এবং আসামী পক্ষ তার জবাব দিবেন। আসামী পক্ষ আইনগত প্রশ্ন উত্থাপন করলে সরকারী কৌসুলী আদালতের অনুমতিক্রমে সে সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করতে পারবেন।

২৬৬ ট ধারা (রায়): সওয়াল-জবাব এবং আইনগত প্রশ্ন থাকলে তা শোনার পর আদালত রায় প্রদান করবেন। এ রায়ে আসামীকে খালাস বা দণ্ডের আদেশ থাকে।

২৬৬ ঠ ধারা (পূর্ববর্তী দণ্ডাদেশ): যে মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধির ২২১ (৭) ধারা মোতাবেক পূর্ববর্তী দণ্ডাদেশের অভিযোগ করা হয় এবং আসামী তার বিরুদ্ধে আনীত পূর্ববর্তী দণ্ডাদেশের অভিযোগ অস্বীকার করে সেক্ষেত্রে আসামীকে ২৬৬ ট ধারা মোতাবেক দণ্ডদানের পর পূর্ববর্তী অভিযোগ সম্পর্কে আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন এবং সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করবেন। তবে আদালত এক্ষেত্রে কোন অভিযোগ পাঠ করবেন না অথবা আসামী দোষ স্বীকার করে কিনা তা জিজ্ঞেস করা হবে না, অথবা সরকার পক্ষের বক্তব্যে পূর্ববর্তী দণ্ডাদেশের কথা উল্লেখ করা হবে না, যদি না আসামী ২৬৬ ট ধারা অনুসারে দন্ডপ্রাপ্ত হয়৷