• সেটঅফ(set-off) ও কাউন্টার ক্লেইম(Counterclaim) কাকে বলে? সেটঅফ এর আবশ্যকীয় উপাদান কি কি?
  • সেটঅফ ও কাউন্টার ক্লেইম এর মধ্যে পার্থক্য কি কি? কে সেটঅফ ও কাউন্টার ক্লেইম দাবি করতে পারেন?
  • লিগ্যাল সেটঅফ ও ইকুইটেবল সেটঅফ কাকে বলে? লিগ্যাল সেটঅফ ও ইকুইটেবল সেটঅফ এর মধ্যে পার্থক্য কি?
  • সেট-অফ (set-off) বলতে কী বুঝেন? এধরনের আপত্তি কখন তােলা যায়? কোন অর্থের মামলায় বাদীর দাবীর ক্ষেত্রে সেট অফের আইনগত মূল্য কতটুকু? আলোচনা করুন।
  • ‘সেট অফ’ বলতে কি বুঝেন?
  • ইকুইটেবল সেট অফ(equitable set off) ব্যাখ্যা কর এবং আইনগত সেট অফের(legal set off) সাথে এর পার্থক্য নির্ণয় করুন।
  • প্রতিদাবি(counterclaim) কি এবং প্রতিদাবি ও সেট অফের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করুন।
  • Distinguish between set off and counter claim.
  • অথবা, সেট-অফ কি? সেট-অফ এ প্রযোজ্য আবশ্যকীয় শর্তসমূহ কি? এটি কিভাবে পাল্টা দাবী থেকে পৃথক? আলোচনা করুন।

  


🔦অর্থ আদায়ের দাবিতে দায়েরকৃত মামলার বাদির দাবীর বিরুদ্ধে বিবাদী কর্তৃক পাওনার দাবীকেই দাবী সমন্বয় বা সেটঅফ বলে।


দাবী সমন্বয়/সেটঅফ(set-off)

মোকদ্দমায় পারস্পরিক দায় শোধ [Set off]

সেটঅফ(set-off) হলো একটি পাওনাদারের(বাদীর) একটি ন্যায়সঙ্গত অধিকার। এই অধিকার অর্থাৎ পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য বাদী যদি মোকদ্দমা করে তখন বাদীর নিকট পাওনা টাকা এবং বিবাদীর দাবি অনুযায়ী বাদীর নিকট পাওনা টাকা— এই দুইটি বিষয়ের সমন্বয়ে সেটঅফ(set-off) এর মামলা পরিচালিত হয়। সেট অফ মতবাদটি Civil law doctrine of compensation নেওয়া হয়েছে। এক সময় ইংলিশ চ্যান্সারি(English Chancery)কোর্টগুলো সেট অফের ন্যায়সঙ্গত মতবাদ গ্রহণ করেছিল, তখন এটাকে  স্টপেজ(Stoppage) নামে ডাকা হতো। 


সেট অফ (set off) এর আভিধানিক অর্থ সমন্বয় সাধন করা। সাধারনত কোন অর্থ আদায়ের মামলায় বিবাদীর দাবির বিরুদ্ধে বাদীর দাবিকৃত টাকা সমন্বয়ে আবেদনকে সেট অফ (set off) বলে। অন্যভাবে বলা যায়, সেট অফ মানে কোন দাবীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত আরেকটি দাবী। এটা হচ্ছে সেরকম দাবী যা মূল দাবীর বিপরীতে দাঁড় করানো হয়। যখন বাদী কোন টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে মামলা করে, বিবাদী যদি বাদীর বিরুদ্ধেও অনুরূপ টাকা প্রাপ্তির কোন দাবী উত্থাপন করে তাহলে বিবাদীর এই দাবীকৃত টাকা বাদীর দাবীর বিরুদ্ধে “সেট অফ” চাইতে পারে। যেমন, দবীর মিয়া খবীর মিয়ার এর বিরুদ্ধে ২০,০০,০০০/- টাকা মানি স্যুট মামলা করলে খবীর মিয়া যদি দবীর মিয়া এর বিরুদ্ধে ১০,০০,০০০/- টাকা পাবে দাবী করে জবাব প্রদান করে। খবীর মিয়া এক্ষেত্রে  দবীর মিয়া এর বিরুদ্ধে ১০,০০,০০০/- টাকা সেট অফ দাবী করতে পারে।


পারস্পরিক দায় শোধের এই বিধানটি নিয়ে The Code of Civil Procedure, 1908 এর ৮ আদেশের ৬(১) বিধিতে বলা হয়েছে যে, টাকা পরিশোধের দাবিতে দায়েরকৃত মামলায় যদি বাদীর নিকট হতে বিবাদীর আইনগত প্রাপ্য টাকা  নিয়ে বিবাদীর বিরুদ্ধে দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করতে চায় এবং উক্ত টাকার পরিমান যদি আদালতের এখতিয়ারের উর্দ্ধে না হয় এবং বাদীর মামলায় ন্যায় বিবাদীর ক্ষেত্র একই পর্যায়ে হয় তবে মামলার প্রথম শুনানীর তারিখে বা আদালতের অনুমতিক্রমে পরবর্তী তারিখে বিবাদী তার পাওনার টাকার বিবরণসহ লিখিত জবাব দাখিল করতে পারবে। 


উক্ত লিখিত বিবৃতিটি বিধি ৬(২) অনুযায়ী পাল্টা মামলার আরজির ন্যায় গণ্য হবে এবং আদালত মূল মামলা ও পাল্টা দাবি সম্পর্কে একই রায় দান করতে পারবেন। যেহেতু সেট আফের দাবি আরজির ন্যায় গণ্য হবে সেহেতু উক্ত দাবির জন্য আইন অনুযায়ী কোর্ট দিতে হবে।


টাকা আদায়ের মামলায় বিবাদী, সেট অফের আবেদন করতে পারবে। বিবাদী যদি বাদীর বিরুদ্ধে সেট  অফের দাবি করে তবে  বিবাদীকে এটা তার লিখিত জবাবে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। আরেকটি কথা,যেক্ষেত্রে লিখিত জবাবে পারস্পরিক দায় শোধের আবেদন করা হয়নি, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে এটা দাবী করা যাবে না।[বিসিএস বনাম রকিবউদ্দিন, ১৯৯৬ বিএলডি (এডি)] সেট অফ মামলার ক্ষেত্রে অর্থের পরিমাণ নির্দিষ্ট হতে হবে, উক্ত অর্থ আইনগতভাবে আদায়যোগ্য হতে হবে এবং দাবীকৃত অর্থ আদালতের আর্থিক এখতিয়ারের মধ্যে হতে হবে। পারস্পরিক দায়শোধ দাবী করতে হয় লিখিত জবাবের মধ্যে। তবে বিবাদীর পাল্টা দাবী এর দাবী পেশ করতে হয় আরজির মাধ্যমে। সুতরাং প্রতিদাবি(Counterclaim) আলাদা মামলার মাধ্যমে কার্যকর করতে হয়।

যাহোক, এক কথায় আমরা বলতে পারি কোন দাবি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের জন্য বিবাদী কর্তৃক পাল্টা যে দাবি উপস্থাপন করা হয় তাকে সেট অফ (set off) বা মোকদ্দমায় পারস্পরিক দায় শোধ [Set off] বলে।


সেট অফ এর উপাদান বা শর্তাবলী

[Elements or conditions of set-off]


 নিম্নলিখিত উপাদান বা শর্তাবলী বর্তমান থাকলে সেট অফ-এর দাবী মঞ্জুর করা হয়—


(১) বাদী(plaintiff) কর্তৃক আনীত মামলাটি অবশ্যই অর্থ পুনরুদ্ধারের(recovery of money) জন্য হতে হবে;

(২) বাদী হতে বিবাদীর প্রাপ্য বাবত যে টাকা কর্তন দিতে চাওয়া হয় তা অবশ্যই নির্ধারিত অংকের(prescribed figure) অর্থ হবে;


(৩) বিবাদী কর্তৃক দাবীটি অর্থাৎ বিবাদীর প্রাপ্য আইনগত আদায়যোগ্য(legally recoverable) হতে হবে;

(৪) এরূপ দাবী অবশ্যই বিবাদী কর্তৃক বাদীর অথবা বাদীগণের নিকট হতে (যদি একাধিক বাদী থাকে) আদায়যোগ্য বলে গণ্য হতে হবে।


(৫) বিবাদী কর্তৃক দাবীটি অবশ্যই আদালতের আর্থিক এখতিয়ারের(pecuniary jurisdiction of the court) সীমার মধ্যে থাকতে হবে;


(৬) উভয় পক্ষকে অবশ্যই একই চরিত্র পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ বাদীর মামলার ন্যায় বিবাদীর দাবীও একই পর্যায়ে পড়তে হবে। সহজভাবে বলতে গেলে মামলায় উভয় পক্ষের দাবীর চরিত্র একই ধরনের টাকার দাবী হতে হবে। অর্থাৎ বাদীর মামলা যেমন টাকা পরিশোধের দাবীতে হবে, ঠিক তেমনটি বিবাদী দাবীও বাদীর নিকট হতে টাকা পরিশোধের দাবীতে হতে হবে; এবং


(৭) সর্বোপরি, বিবাদী কর্তৃক লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে মামলার প্রথম শুনানির সময় তার সেট অফ-এর দাবী পেশ করতে হবে। এ প্রসংঙ্গে মারগুবা খাতুন বনাম শাহীফুর রেজা, ৩০ ডিএলআর ১৭৯  মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে,দাবীটি অবশ্যই প্রধম শুনানীর সময় করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আদালত ভিন্ন কিছু অনুমতি দেয়। তবে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ইহা প্রথম শুনানির পরেও পেশ করা যায়। 


পারস্পরিক দায় শোধের আবেদন বিবাদী করবে। উপরের শর্তাবলী পূরণ হলে, মোকদ্দমার প্রথম শুনানীর তারিখে, বিজ্ঞ আদালতের অনুমতি ছাড়া, বিবাদী তার পাওনা টাকার বিবরণ সম্বলিত একটি লিখিত বিবৃতি দাখিল করতে পারবে।

চলবে……