থ্যালাসেমিয়া হলো জিন জনিত রক্ত রোগ। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং না থাকার
কারণে অনেকেই থ্যালাসেমিয়া কি – থ্যালাসেমিয়া – কেন হয় এ সম্পর্কে
জানেনা। তাই আমি থ্যালাসেমিয়া কি – থ্যালাসেমিয়া – কেন হয় এ
সম্পর্কে আমার আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।থ্যালাসেমিয়া কি –
থ্যালাসেমিয়া – কেন হয় জানতে আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
থ্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই প্রকার। আলফা থ্যালাসেমিয়া, বিটা থ্যালাসিমিয়া।
থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, সাবধানতা, বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়ার
অবস্থা, শিশুদের থ্যালাসেমিয়া বিস্তারিত নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।-
থ্যালাসেমিয়া কি
থ্যালাসেমিয়া হল একটি রক্ত জনিত রোগ। এটি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রক্ত জনিত
রোগ যা রোগীর দেহে হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিক গঠন প্রকৃতি বা হিমোগ্লোবিনের
অপর্যাপ্ত তৈরি করে। থ্যালাসেমিয়া ইংরেজি হল Thalassemia একটি অটো
মোজাল মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন যাকে জিন ঘটিত বংশগত রক্ত রোগ বলা হয়।
থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হলে রক্তের অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন
কনার উপাদানে ত্রুটি হয়।
যারা থ্যালাসেমিয়াতে আক্রান্ত হয় তারা রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা
অ্যামেনিয়াতে ভুগে থাকেন। আমাদের শরীরের মধ্যে দিয়ে অক্সিজেন বহন করে লোহিত
রক্ত কণিকার মধ্যে স্থিত হিমোগ্লোবিন। থ্যালাসেমিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলো প্রচুর
পরিমাণে লোহিত রক্ত কণিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে আর এই কারণে রোগের রক্তস্বল্পতা
বা অ্যামেনিয়া হয়ে থাকে।
মানুষের দেহে রক্ত কণিকা সাধারণত ১২০ দিন পর ভেঙে যায়। কিন্তু থ্যালাসেমিয়া হলে
৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে রক্তকণিকা ভেঙ্গে যায়। আর এই কারণে রোগী থ্যালাসেমিয়ায়
আক্রান্ত হয়। থ্যালাসেমিয়া হল একটি জিনগত ব্যাধি বা রোগ।
থ্যালাসেমিয়া কত প্রকার
থ্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই প্রকার। যথা –
আলফা থ্যালাসেমিয়া
বিটা থ্যালাসেমিয়া
আলফা থ্যালাসেমিয়া আবার দুই প্রকার। যথা –
থ্যালাসেমিয়া মেজর
থ্যালাসেমিয়া মাইনর
বিটা থ্যালাসেমিয়া
বিটা থ্যালাসেমিয়া দুই প্রকার।যথা –
বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর
বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর
আলফা থ্যালাসেমিয়া বিটা থ্যালাসেমিয়ার চেয়ে কম তীব্র হয়। যেসব রোগী আলফা
থ্যালাসেমিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয় তাদের উপসর্গ কম থাকে বা মাঝারি আকারের হয়ে
থাকে। অন্যদিকে যেসব রোগী বিটা থ্যালাসেমিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয় তাদের রোগের
মাত্রা অনেক বেশি থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি আরো মারাত্মক হয়ে থাকে।
শিশুদের ক্ষেত্রে এক ১ থেকে দুই ২ বছর বয়সে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
এবং সঠিক সময় চিকিৎসা না কারণে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে মানুষ বিটা
থ্যালাসেমিয়ার চেয়ে আলফা থ্যালাসেমিয়াতে বেশি আক্রান্ত হয়। এই আলফা
থ্যালাসেমিয়া সাধারণত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, চীনের সর্বত্র এবং মধ্যপ্রাচ্য
ও কখনো কখনো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে দেখা যায়। থ্যালাসেমিয়ার জরিপে জানা
যায় বিশ্বে প্রায় এক ১ লক্ষ শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মগ্রহণ
করে।
থ্যালাসেমিয়া কেন হয়
থ্যালাসেমিয়া জিনগত রোগ। থ্যালাসেমিয়া ডি এন এর কোষগুলি অভিযোজন এর কারণে ঘটে
থাকে যা মানব শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। থ্যালাসেমিয়া বাবা-মার কাছ থেকে
শিশুদের মধ্যে সংক্রামিত হয়ে থাকে। বাবা ও মা দুইজনেই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক
হয় তাহলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানুষের
শরীরে ২৩ জোড়া অর্থাৎ ৪৬ টি ক্রোমোজোম থাকে।
এই প্রতি জোড়া ক্রোমোজোমের অর্ধেক অর্থাৎ ৪৬ টি ক্রোমোজোমের ২৩ টি বাবার কাছ
থেকে এবং ২৩ টি মায়ের কাছ থেকে প্রতিটা সন্তান পেয়ে থাকে। এই ২৩ জোড়া
ক্রোমোজোমের মধ্যে ১১ নং ক্রোমোজোম এ থাকে বিটা জিন আর ১৬ নং ক্রোমোজোম এ
থাকে আলফাজিন। আর বিটা ও আলফা জিন গুলো আলফা গ্লোবিন নামের প্রোটিন তৈরি করে থাকে
যাকে এমাইনো এসিডের সমষ্টি বলা হয়।
শিশু জন্মগতভাবে যদি আলফা সঠিকভাবে তৈরি করতে না পারে তাহলে মানব শরীরে যে বিটা
আলফা নামে গ্লোবিন থাকে তা ত্রুটিপূর্ণ হয়। একজন স্বাভাবিক মানুষের শরীরে লোহিত
কণিকার গড় আয়ু .১২0 দিন। কিন্তু থ্যালাসেমিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে লোহিত
কণিকার গড় আয়ু থাকে ২০ থেকে ৬০ দিন। একটি শিশুর অবয়ব এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
কেমন হবে তা নির্ভর করে তার বংশগত জিনের উপর।
অনুরূপভাবে একজন শিশুর রক্ত কেমন তৈরি হবে তা নির্ভর করে তার বাবা-মায়ের রক্তের
কম্পোজিশন কেমন ছিল তার ওপর। বিশেষ করে বাবা মায়ের হিমোগ্লোবিন কম্পোজিশন কেমন
ছিল তার ওপর নির্ভর করে একটি শিশুর রক্তে হিমোগ্লোবিনের প্রোটিন তৈরি হয়। শিশুর
শরীরে যে এক জোড়া জিন থাকে এর মধ্যে মায়ের কাছ থেকে একটি ও বাবার কাছ থেকে একটি
এই মোট দুইটি জিন তার শরীরে হিমোগ্লোবিনের প্রোটিন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে
থাকে।
আর এক্ষেত্রে যদি বাবা অথবা মায়ের রক্তে হিমোগ্লোবিনে যদি থ্যালাসেমিয়ার জিন
থাকে তাহলে তাদের সন্তান ও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আবার শরীরে
রক্তে যে লাল অংশ থাকে তাকে হিমোগ্লোবিন বলে। এই হিমোগ্লোবিনের আবার দুইটি অংশ
থাকে। তার একটির নাম হলো হিম এবং অপরটির নাম হল গ্লোবিন।
আর পলি প্যাপটাইল এর পরিবর্তনের ফলে গ্লোবিন তৈরি হয়। আর এতে থাকে বিটা ১১ এবং
আলফা ১৬ নামক দুটি জিন আর এই দুই জোড়া চেইনের সমন্বয়ে গঠিত হয় গ্লোবিন। যাদের
থ্যালাসেমিয়া রয়েছে তাদের বিটা বা আলফা চেইন তৈরি হয় না অথবা তৈরি হলেও
তার ত্রুটিপূর্ণ হয়। আর এতে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হয়। শিশুদের বন মেরু যেখানে
থেকে হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় এর উৎপাদন ক্ষমতা কিছুটা বাড়তি থাকে অর্থাৎ ৬ থেকে ১২
গুণ বেশি থাকে।
বোনমেরো বেশি কাজ করলেও হিমোগ্লোবিন কম তৈরি হয়। আর এতে করে যখন আস্তে আস্তে বয়স
বাড়তে থাকে তখন রক্তস্বল্পতা বা এমিনিয়া দেখা দেয়। থ্যালাসেমিয়া বিটা বা মেজর
হলে প্রয়োজন অনুপাতে রক্ত তৈরি করতে পারে না তাই অন্যের রক্ত ট্রান্সফিউশন নিয়ে
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের জীবন ধারণ করতে হয়। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত
রোগীদের গড় আয়ু থাকে ৩0 বছর।
থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু ছোটকাল থেকে স্বাভাবিক মানুষের মতো বেড়ে ওঠে। অনেক
সময় এমনও হতে পারে যে এই সমস্যাটি কখনো ধরায় পড়ে না। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত
হলে যে লক্ষণ গুলি প্রকাশ পায় তা হল –
-
- শিশুর ডেভেলপমেন্টাল মাইন্ড স্টোন গুলো কমে যায়
-
- নির্দিষ্ট বয়সের তুলনায় বৃদ্ধি কম হয়
-
- ১৫ বছর শিশুকে ৮ থেকে ১০ বছরের শিশু বলে মনে হয়
-
- চেহারার মধ্যে উপজাতীয় একটা ছাপ চলে আসে
-
- কপালের হাড় মোটা হয়ে যায়
-
- কপাল সামনের দিকে ঝুঁকে যায়
-
- শরীরের হাড় গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে
-
- ঠোট দুটো লেগে থাকে
-
- দুই চোখের মাঝখানে নাকের দূরত্ব আস্তে আস্তে বেড়ে যায়
-
- অস্বাভাবিক অস্থি বৃদ্ধি পায়
-
- অতিরিক্ত আয়রন
-
- সংক্রমণ
-
- ক্লান্তি
-
- দুর্বলতা
-
- প্লিহা বড় হয়ে যাওয়া
-
- ভঙ্গুর হাড়
-
- খিদে না পাওয়া
-
- অবসাদ অনুভব হওয়া
-
- বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
-
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
-
- মুখমণ্ডল ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
-
- অস্বস্তি
-
- জন্ডিস
-
- তলপেটে ফোলা ভাব
-
- গাড় প্রস্রাব
-
- হৃদপিন্ডের সমস্যা
-
- ধীরগতিতে শারীরিক বৃদ্ধি
-
- ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া
থ্যালাসেমিয়ার সনাক্তকরণ পরীক্ষা
থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় করতে যে পরীক্ষাগুলো করা হয় তা হলো –
সিবিসি ( CBC) কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সম্পূর্ণ রক্তকণিকা গণনা এবং হিমোগ্লোবিন
ইলেক্ট্রো ফোরে সিস পরীক্ষা
সিভিএস ক্রনিক ভিসুলুস স্যাম্পলিং
এই পরীক্ষাটি গর্ভধারণের ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। এই পরীক্ষা করতে অতি
সূক্ষ্ম একটি সুচ মায়ের পেটের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করিয়ে প্লাসেন্টা থেকে
অতি ক্ষুদ্র একটি টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আর এইভাবে টিস্যু নিয়ে
থ্যালাসেমিয়া বা শিকল সেল আছে কিনা তা টিস্যু থেকে প্রাপ্ত কোষ গুলো পরীক্ষা করা
হয়।
অ্যামিনোওসিন্টেসিস অ্যামিনিওটিক তরলের নমুনা সংগ্রহের সাথে সম্পর্কিত। যাকে
ভ্রুনকে ঘিরে থাকে। এক্ষেত্রে অতি সূক্ষ্ম একটি সুচ মায়ের পেটের মধ্যে
দিয়ে প্রবেশ করে মায়ের জরায়ু থেকে শিশুকে ঘিরে থাকা তরলের সামান্য একটু নমুনা
সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। আর এই তরল পরীক্ষা করলে জানা যায় শিশুর
থ্যালাসেমিয়া শিকল সেল আছে কিনা। এই পরীক্ষাটি গর্ভধারণের .১৫ অথবা ১৬ সপ্তাহে
করা হয়।
স্ক্রিনিং পরীক্ষা
গর্ভধারণের ১0 সপ্তাহের মধ্যে এই স্ক্রিনিং টেস্ট করানো হয়। তবে স্ক্রিনিং
টেস্ট করানোর পূর্বে অনেক চিন্তা ভাবনা করে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কারন এই
টেস্টের ফলে আপনার গর্ভপাত হতে পারে।
গর্ভকালীন সময় স্ক্রিনিং টেস্ট না করালে শিশু জন্মের ৫ দিন পর ব্লাড স্পট
স্ক্রিনিং টেস্ট করানো হয়।
সিবিসি হিমাটোলজি অটো এনালাইজার মেশিনে থ্যালাসিমিয়া রোগের জীবাণুর ধারণা
পাওয়া যায়। এছাড়াও থ্যালাসেমিয়া বাহক নিশ্চিত করতে হিমোগ্লোবিনের
ইলেকট্রোফররেসিস পরীক্ষা করা হয়। তবে অনেক সময় ডিএনএ এনালাইসিস পরীক্ষা করার
প্রয়োজন হতে পারে।
থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা
থ্যালাসেমিয়ার হালকা লক্ষণ হলে বা.১৬ নং আলফা জিন থাকলে কোন প্রকার চিকিৎসার
প্রয়োজন হয় না। তবে থ্যালাসেমিয়া ১১ নং ক্রোমোজোমের যে বিটা জিন থাকে তা থাকলে
মাঝেমধ্যে রক্ত স্থানান্তর এবং কখনো কখনো অস্ত্র প্রচারের প্রয়োজন হতে পারে।
থ্যালাসেমিয়া হলে যেহেতু রক্তস্বল্পতা হয় তাই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীকে
মাঝে মধ্যে বা প্রতি মাসে ১ থেকে ২ ব্যাগ রক্ত শরীরে নিতে হতে পারে।
ঘন ঘন রক্ত নেওয়া ঠিক নয় কারণ ঘন ঘন রক্ত নিলে পরিপাক নালী থেকে আয়রনের মাত্রা
বেড়ে যায় যার কারণে লিভার হৃদপিন্ডসহ গ্রন্থিতে সমস্যা দেখা দেয়।এমনকি সঠিক
সময় চিকিৎসা না নিলে রোগী মারা পর্যন্ত যেতে পারে। শরীরের রক্ত নিলে অনেক
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তখন এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ও চিকিৎসা নেওয়া
প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শরীরে যেন আয়রন বেশি জমে না থাকে এর জন্য আয়রন চিলেশন করা
দরকার হয়।
ব্লাড ট্রান্সফিউশন
থ্যালাসেমিয়ার গুরুতর লক্ষণ গুলি থাকলে বছরে ৮ থেকে ১২টি ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা
রক্তের স্থানান্তর করার প্রয়োজন হয়।
বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমঞ্জা প্রতিস্থাপন
মানুষের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে থাকে বোন সেল। আর বোন হল এমন ধরনের কোষ তৈরি
করে এবং পরবর্তীতে খারাপ হয়ে যাওয়া কোষ গুলি কে সারিয়ে তোলে।
আয়রন ক্লিয়েশন থেরাপি
রক্ত প্রবাহ থেকে অতিরিক্ত আয়রন সরিয়ে নেওয়ার জন্য আইরন ক্লিয়েশন
থেরাপি ব্যবহার করা হয়। আর এই আয়রন ক্লিয়েশন পদ্ধতি যা মূলত ব্লাড
ট্রান্সফিউশন বা রক্তের স্থানান্তর এর মাধ্যমে হয়ে থাকে এবং এর দ্বারা হৃদপিণ্ড
এবং অন্যান্য অঙ্গ গুলির ক্ষতি হতে পারে। আর এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে
এই ক্লিয়েশন আয়রন থেরাপি করা দরকার।
সার্জারি
হাড়ের অস্বাভাবিকতাকে ঠিক করার জন্য অনেক সময় সার্জারি করার প্রয়োজন হয়
শিশুদের থ্যালাসেমিয়া
থ্যালাসেমিয়া হলো একটি জিনগত সমস্যা এবং বাবা-মায়ের কোন ভুলের কারণে হয় না।
কারণ এটি জিনগত সমস্যা। এই রোগ শিশু জন্মের এক ১ থেকে দুই ২ বছরের মধ্যে প্রকাশ
পায় এবং পরবর্তীতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন
হয়। মেজর থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে সন্তান বড় হয়ে সাধারণত ৩0 বছর পর্যন্ত
বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় তা হলো –
যথাযথ শিশুর বৃদ্ধি না হওয়া, রক্তস্বল্পতা ও দুর্বলতা অনেক সময় দেখা দিতে
পারে। থ্যালাসেমিয়ার আক্রান্ত শিশু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না যার কারণে
শিশু হীনমন্যতায় ভোগে, নিজেকে গুটিয়ে রাখে। তাই আক্রান্ত শিশুদের যথাযথ যত্ন
করে শিশুদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়া সবার গুরুত্বপূর্ণ
দায়িত্ব।
বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়া
বাংলাদেশে দিন দিন থ্যালাসেমিয়ার রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ বাংলাদেশে
থ্যালাসেমিয়া স্কিনিং না থাকার কারণে অনেকেই জানেনা যে সে আসলে থ্যালাসেমিয়ার
বাহক। যার কারণে বাহকদের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে এবং দিন দিন থ্যালাসেমিয়ার রোগী
বেড়ে চলেছে। সন্তানের বাবা মা যদি দুজনে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন তাহলে সন্তানের
থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ৫০ শতাংশ।
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ এবং সুস্থ হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ২৫
শতাংশ। আবার বাবা অথবা মা যদি কেউ একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয় তাহলে সন্তানের
থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ। তবে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবার যাদের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে যেমন , খালাতো –
চাচাতো – ফুফাতো ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে হলে থ্যালাসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনেক
বেড়ে যায়।
থ্যালাসেমিয়া রোগ হলে সতর্কতা
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের খাবারে দিকে বেশি নজর দিতে হবে। কারণ যিনি
থ্যালাসেমিয়ার বাহক তার খাবার এবং যিনি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তার খাবার
আলাদা থাকতে হবে। যেমন যিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক তার স্বাভাবিক মানুষের মতো
খাবারের কোন নিষেধ নেই কিন্তু যিনি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তার খাবার
আলাদা থাকতে হবে। যিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক তাকে অনেক বেশি আয়রনসমৃদ্ধ খাবার
খেতে হবে।
আর যিনি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত তাকে আয়রন পরিহার করতে হবে। যিনি
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তাকে আয়রন জাতীয় খাবার কম খেতে দিতে হবে এবং আয়রন
কমানো ঔষধ দিতে হবে। কিন্তু এটা অনেক ব্যয়বহুল। তবে অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক আয়রন খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে তা খুব
অল্প মাত্রায়।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী কত দিন বাঁচে
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে ৩০ বছর
পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে কিছু ঔষধ নিলে থ্যালাসেমিয়ার
রোগীর রক্ত কম নেওয়ার প্রয়োজন হয় এবং এর ফলে রোগীর প্লীহা ও বড় হয় না। যার
কারণে অস্ত্র প্রচারের প্রয়োজন পড়ে না। শিশুর থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত
হলে জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়।
সে ক্ষেত্রে সঠিকভাবে পরীক্ষা করে নিয়মিত ডাক্তারে তত্ত্বাবধানে রাখলে স্বাভাবিক
জীবন যাপন করতে পারে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী যদি নিয়মিত নিরাপদ রক্ত
নেয় ও আয়রন চিলেশন করে এবং অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করে বা জিন থেরাপি করে
তাহলে সে ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আর যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয় তাহলে
সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
আবার যদি সে আলফা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয় তাহলে সে স্বাভাবিক জীবন যাপন
করতে পারে। এই রোগীকে বাঁচাতে এদের খাবারের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হয়। যেমন –
যে এই রোগের বাহক তাকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। আর যে আক্রান্ত
তাকে আয়ন সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে হবে।আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে আয়রনের মাত্রা
বেড়ে যায় তাই তাকে আয়রন কমানো ওষুধ দিতে হবে।
থ্যালাসেমিয়া রোগীর বিয়ে
থ্যালাসেমিয়া রোগ থেকে বাঁচতে হলে যাদের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে অর্থাৎ
খালাতো ভাই-বোন, মামাতো ভাই বোন এবং ফুপাতো ভাই-বোন বিয়ে বন্ধ করতে হবে। কারণ
আপনজনের সঙ্গে বিয়ে হলে থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
ছেলেমেয়েদের বিয়ের আগে স্ক্রিনিং টেস্ট করানো উচিত। এই
স্ক্রিনিং টেস্ট না করানোর ফলে বাহকদের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে এবং দিন দিন
থ্যালাসেমিয়ার রোগী বেড়ে চলেছে।
সন্তানের মা-বাবা যদি দুজনে থ্যালাসেমিয়ার বাহন তাহলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়ার
বাহক হওয়ার ঝুকি ৫০ শতাংশ। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ এবং
সুস্থ হওয়ার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ। আবার বাবা অথবা মা যদি কেউ একজন থ্যালাসেমিয়ার
বাহক হয় তাহলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ।তবে আক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
শেষ কথা
থ্যালাসেমিয়া হলো একটি জিনগত রোগ। এবং এটি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত
রক্ত জনিত রোগ যা মানব দেহে হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিক গঠন প্রকৃতি বা
হিমোগ্লোবিনের অপর্যাপ্ততা তৈরি করে। থ্যালাসেমিয়া বাংলাদেশসহ দক্ষিণ
পূর্ব এশিয়া, চীনের সর্বত্র, মধ্যপ্রাচ্য এমনকি ভূমধ্যসাগরে অঞ্চলেও দেখা
যায়। বিশ্বের প্রায় ১ লক্ষ শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে প্রতিবছর
জন্মগ্রহণ করে।
আমি থ্যালাসেমিয়া নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আমি
আশা করি আমার এই আর্টিকেল আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
Leave a comment