তোমার দেখা একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা কর।
অথবা, একটি হাসপাতাল সম্পর্কে সংবাদ প্রতিবেদন রচনা কর।

প্রতিবেদনের প্রকৃতি : সংবাদ প্রতিবেদন
প্রতিবেদনের শিরােনাম : নানা সমস্যায় জর্জরিত রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল
প্রতিবেদন তৈরির সময় : সকাল ১১:০০টা
তারিখ :  ২৮/০১/২০২৩
সংযুক্তি : হাসপাতালের নানা সরঞ্জামের দুরবস্থার ছবি (২টি)। লোকবল সংকটের নমুনার ছবি (১টি) ।

নানা সমস্যায় জর্জরিত রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল : জনদুর্ভোগ চরমে

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। এই এলাকার অসংখ্য মানুষ সেবা পাওয়ার জন্য এ হাসপাতালের ওপর নির্ভর করলেও এখানে বিরাজ করছে বেহাল অবস্থা । এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই পর্যাপ্ত লোকবল, প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ও যন্ত্রপাতি । ফলে কোনোরকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি ।

এ হাসপাতালে অসংখ্য চিকিৎসক ও নার্সের পদ শূন্য রয়েছে। এতে করে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। লোকবল সংকটের কারণে জেলার সবকটি উপজেলায় চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরাও নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না । মেডিকেল টেকনোলজিস্টেরও অভাব রয়েছে উক্ত হাসপাতালটিতে ।

১০০ শয্যাবিশিষ্ট রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ও ব্লাড ব্যাংকের অভাবে প্রতিনিয়ত সুচিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে । জেলায় জটিল রোগের চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত জটিল রোগীদের চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ জেলার বাইরে প্রেরণ করা হয়। সুচিকিৎসার অভাবে অনেকে মৃত্যুবরণ করছে। ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল দিয়েই চলছে । এ কারণে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যসেবার মান বিঘ্নিত হচ্ছে ।

এ হাসপাতালে নেই কোনো ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ও অ্যাম্বুলেন্স । বিভিন্ন টেস্টের জন্যও কোনো রিয়েজিন নেই । এসব সমস্যার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায়নি ।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের মঞ্জুরকৃত চিকিৎসক পদের সংখ্যা ৩১টি হলেও বর্তমানে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১১ জন । এর মধ্যে ৩ জন এমবিবিএস চিকিৎসক (বিসিএস) উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ৩ বছরের জন্য দেশের বাইরে চলে গেছেন । অবশিষ্ট মাত্র ৮ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা । এককথায় বলা যায় যে, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে জনবল ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রচুর ঘাটতি রয়েছে ।

হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর অপরিচ্ছন্নতার কারণে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে চান না । হাসপাতালে রোগীদের জন্য যে খাবার দেওয়া হয় সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের । অন্যদিকে, পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যুর ঝুঁকির হার কমাতে ৫ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও অনিয়মের কারণে সেটিও ভেস্তে যেতে বসেছে ।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, জেনারেল হাসপাতালসহ জেলায় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আরও দেওয়া হবে । রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং হাসপাতালে বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে । খুব শীঘ্রই হাসপাতালটিতে জনবল বৃদ্ধির প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হবে ।

লোকবল সংকটসহ নানা অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতার কারণে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান পিছিয়ে পড়ছে । জনগণকে সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে অবিলম্বে এসব সংকট নিরসন করা প্রয়োজন । এ লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য ।