প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ ছােটোগল্পটিতে কথক পাঠককে মধ্যমপুরুষে সম্বোধন করে, তেলেনাপােতা নামক একটি অখ্যাত স্থান আবিষ্কারের সূত্র ধরে নিজের জীবনের কাহিনিই বলে গেছেন। কিন্তু লেখনীর মুনশিয়ানায় কথকের এই আবিষ্কার অভিযানের সমস্ত ঘটনাই পাঠকের একেবারে নিজের কাহিনি হয়ে উঠেছে।
দৈনন্দিন কাজকর্ম ও শহরে ভিড়ভাট্টা থেকে মুক্তির জন্য গল্পকথক এক ভাদ্র মাসের বিকেলে প্রথমে বাসে, পরে গােরুর গাড়ি করে পৌঁছাবেন তার এক বন্ধু মণির পূর্বপুরুষদের বাসভূমি তেলেনাপােতায়। গােরুর গাড়িতে করে গ্রামের পথে চলতে চলতে গােরুর গাড়িটি একটি পানাপুকুরের পাশের জীর্ণ প্রাসাদের সামনে এসে কথকদের থামিয়ে দেবে। সেই প্রাসাদের একটি অপেক্ষাকৃত বাসযােগ্য ঘরে রাত্রিযাপন করবেন কথক ও তার দুই বন্ধু। বহুদিনের অব্যবহৃত সেই ঘরে তখন গল্পকথকদের ছেঁকে ধরবে ম্যালেরিয়ার মশা। ঘরের গুমােট গরমের হাত থেকে মুক্তির জন্য এরপর কথক বিপজ্জনক সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে দেখতে পাবেন অদূরে সংকীর্ণ রাস্তার ওপারে জীর্ণ প্রাসাদের একটি জানলায় একটি রহস্যময়ী অশরীরী মূর্তি। গল্পটির ক্রমিক অগ্রগতিতে এরপর দেখা যাবে সেই রহস্যময়ী নারীমূর্তিটি আসলে কথকের বন্ধু মণির ই জ্ঞাতিবােন যামিনী, যার সঙ্গে পরের দিন ঘাটে মাছ-ধরতে-ব্যস্ত-থাকা কথকের দেখা হয়েছিল। এরপর যামিনীদের বাড়িতেই সেইদিন দুপুরে হবে কথকদের খাবারের নিমন্ত্রণ। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কথকরা যখন বিশ্রাম নেবেন, তখন মণি ও যামিনীর কথােপকথন থেকে এবং পরবর্তীকালে মণির কাছ থেকে কথক জানতে পারবেন যে, যামিনীর অন্ধ মা ভাবছেন যে তার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য নিরঞ্জন পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফিরে এসেছে। অথচ, যামিনীর মাকে সত্যি ঘটনা জানানাে কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ এই অপ্রিয় সত্য সহ্য করার মতাে মানসিক শক্তি তার আর নেই। এরপর মণিবাবুর স্বেচ্ছাসঙ্গী হয়ে গল্পকথক দোতলায় যামিনীর মায়ের ঘরে প্রবেশ করে উপস্থিত সবাইকে হতচকিত করে দিয়ে নিরঞ্জনের ভূমিকায় অভিনয় করে অন্ধ বৃদ্ধকে যামিনীকে বিয়ে করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসবেন। সেদিন বিকেলবেলায় গােরুর গাড়িতে করে রওনা দেওয়ার সময় কথকের হৃদস্পন্দনের মধ্যে একটি কথাই কেবল ধ্বনিত হবে, ‘ফিরে আসব, ফিরে আসব’। কলকাতার আলােকোজ্জ্বল, জনবহুল রাজপথে পেঁৗছেও কথকের হৃদয়ে সেই অনুভূতির রেশ থেকে যাবে। তেলেনাপােতার স্মৃতি তখন তার কাছে এক অন্তরঙ্গ তারার মতাে। এরপর দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততায় কথকের মনে তেলেনাপােতার স্মৃতি কিছুটা হলেও ফিকে হয়ে আসবে। অতঃপর একদিন তিনি যখন তেলেনাপােতা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন ভাগ্যের পরিহাসে তেলেনাপােতারই মশাবাহিত ম্যালেরিয়ায় তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়বেন। বহুদিন পরে দুর্বল শরীরে তিনি যখন বাড়ির বাইরে এসে বসবেন, তখন বুঝতে পারবেন যে, তেলেনাপােতার স্মৃতি তাঁর কাছে এখন বেশ ম্লান, তা বর্তমানে যেন এক অস্তমিত তারা। তেলেনাপােতা বা যামিনী বলে সত্যি-সত্যিই কিছু বা কেউ নেই। তাঁর কোনাে এক দুর্বল মুহূর্তের অসম্ভব এক কুয়াশাচ্ছন্ন কল্পনামাত্র। এভাবেই একটিবার কিছুক্ষণের জন্য আবিষ্কৃত হয়েই তেলেনাপােতা আবার রাত্রির শাশ্বত অতলতায় চিরকালের জন্য নিমজ্জিত হয়ে যায়।
গল্পটির এই সংক্ষিপ্ত আলােচনা থেকে স্পষ্ট যে, এই গল্পে তেলেনাপােতা অঞ্চলের কথা এবং কথকের সেই তেলেনাপােতা আবিষ্কারের কাহিনিটিই কল্পিত হয়েছে। গল্পটিতে এরপর ধাপে ধাপে বিবৃত হয়েছে তেলেনাপােতা পৌঁছােনাের যাত্রাপথের বিবরণ, সেখানকার জঙ্গলে চিতাবাঘের উপস্থিতির কথা, একটি জীর্ণ অট্টালিকায় কথকদের রাত্রিযাপনের কাহিনি, পরদিন সকালে তেলেনাপােতার শ্যাওলা-ঢাকা ভাঙা ঘাটে মাছ ধরতে বসে কথকের সঙ্গে যামিনীর সাক্ষাৎ, যামিনীদের বাড়িতে কথকদের নিমন্ত্রণ, যামিনীকে বিবাহ করার ব্যাপারে যামিনীর অন্ধ, বৃদ্ধা মাকে আশ্বাসদান এবং কলকাতায় ফিরে এসে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা।
প্রসঙ্গত বর্ণিত হয়েছে তেলেনাপােতার মতাে পান্ডববর্জিত দেশে প্রায় একাকী থাকার ফলে পরপুরুষের সামনেও যামিনীর সংকোচশূন্য ব্যবহারের কথা, নিরঞ্জনবূপী কথকের আশ্বাসবাণী শুনে যামিনীর মায়ের হৃদয়ানুভূতির কথা এবং অতি অবশ্যই যামিনীর সকৃতজ্ঞ প্রসন্নতার কথা। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, তেলেনাপােতা অঞ্চলকে ঘিরেই এই গল্পের যাবতীয় তথ্য বা অনুভূতি আবর্তিত, পাঠককে সঙ্গে নিয়েই লেখক সেই অঞ্চলটিকে আবিষ্কার করবেন নিছক ছুটিযাপনের উপলক্ষকে কেন্দ্র করে। সুতরাং, ‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার নামটির মধ্যে গল্পের মূল ঘটনা যেমন বাঙময় হয়ে উঠেছে, ঠিক তেমনি লেখক পাঠককে তেলেনাপােতা নামক এক কাল্পনিক স্থানের আবিষ্কারক করে তুলে একটা সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনাও এই নামের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন। এটি কথকের এবং যে কোনাে সহৃদয় পুরুষ পাঠকের আত্ম-আবিষ্কারের গল্প। অতএব, ‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ গল্পের নামকরণটি নিঃসন্দেহে যথার্থ, শিল্পসার্থক ও ব্যঞ্জনামূলক।
কর্তার ভূত ছােটোগল্পে ভূতের কানমলা সম্বন্ধে কী বলা হয়েছে? এই গল্পে ওঝা চরিত্রটি সৃষ্টির সার্থকতা বিচার করাে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত ছােটোগল্প অবলম্বনে ভূতগ্রস্ত দেশবাসী এবং বিদেশিদের ঘােরানাে ঘানির তুলনামূলক আলােচনা করাে।
কর্তার ভূত ছােটোগল্পের রূপকার্থটি সংক্ষেপে লেখাে।
কর্তার ভূত’ রচনাটিকে কী জাতীয় রচনা বলে তুমি মনে করাে?
‘কর্তার ভূত’ অবলম্বনে ‘স্বভাবদোষে যারা নিজে ভাবতে যায়’ তাদের চরিত্র বিশ্লেষণ করাে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘কর্তার ভূত’ রচনায় দেশসুদ্ধ সবাই বলতে কোন্ ধরনের মানুষের কথা বলা হয়েছে?
কর্তার ভূত ছোট গল্পের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করাে।
কর্তার ভূত ছোট গল্প অবলম্বনে ভুতুড়ে জেলখানার বর্ণনা দাও। কাদের সম্বন্ধে এবং কেন লেখক বলেছেন যে, তারা ভয়ংকর সজাগ আছে?
“দেশের লােক ভারি নিশ্চিন্ত হল।”—কীভাবে দেশের লােক ভারী নিশ্চিন্ত হল?
“একেই বলে অদৃষ্টের চালে চলা।”- ‘কর্তার ভূত’ রচনা অবলম্বন করে এই ‘অদৃষ্টের চালে চলা’র তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“সেই জেলখানার দেয়াল চোখে দেখা যায় না।- সেই জেলখানার বিস্তৃত বিবরণ দাও। সেই জেলখানার কয়েদিদের ঘানি ঘােরানাের কথা আলােচনা করাে।
“শুনে ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি আর মাসতুতাে-পিসতুততার দল কানে হাত দিয়ে বলে,—কোন্ কথার উত্তরে কী বলে তারা?
“কেননা ভবিষ্যৎকে মানলেই তার জন্যে যত ভাবনা, ভূতকে মানলে কোনাে ভাবনাই নেই;”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“অথচ তার মাথা নেই, সুতরাং কারও জন্য মাথাব্যথাও নেই।”— কার সম্বন্ধে, কেন লেখক এ কথা বলেছেন?
“শুনে ভূতগ্রস্ত দেশ আপন আদিম আভিজাত্য অনুভব করে।”- আদিম আভিজাত্য’ অনুভব করার কারণ কী?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ রচনায় ‘দেশে যত শিরােমণি-চূড়ামণি’-র বক্তব্য কী ছিল?
“এখন কথাটা দাঁড়িয়েছে, ‘খাজনা দেব কিসে।” কারা, কাদের কাছে খাজনা চেয়েছে? খাজনা দিতে না পারার কারণ কী?
“দেশের মধ্যে দুটো-একটা মানুষ” -এর সঙ্গে বুড়াে কর্তার কথােপকথন ‘কর্তার ভূত’ অবলম্বনে লেখো এবং রূপকার্থ আলােচনা করাে।
‘ওরে অবােধ, আমার ধরাও নেই ছাড়াও নেই, তােরা ছাড়লেই আমার ছাড়া’—এখানে কে কাদের অবােধ বলেছেন? উক্তিটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“কর্তা বলেন, সেইখানেই তাে ভূত।”- কোন প্রসঙ্গে এবং কেন কর্তা এ কথা বলেছেন?
‘কর্তার ভূত’ রচনায় ওঝা প্রসঙ্গটির তাৎপর্যটি লেখাে।
“সে ভবিষ্যৎ ভ্যাও করে না ম্যাও করে না” -সে ভবিষ্যৎ ভ্যা বা ম্যা করে না কেন?
“কেননা ওঝাকেই আগেভাগে ভূতে পেয়ে বসেছে”- ওঝাকে ভূতে পেলে কী ক্ষতি হওয়ার কথা লেখক বলেছেন?
‘কর্তার ভূত’- কি নিছক ভূতের গল্প, নাকি রাজনৈতিক রূপক কাহিনি? ব্যাখ্যাসহ লেখাে।
“ভূতের রাজত্বে আর কিছুই না থাক…শান্তি থাকে”- মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করাে।
কেন কিছু দেশবাসীর ভূতশাসনতন্ত্র নিয়ে দ্বিধা জাগল?
‘কর্তার ভূত’-রচনাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।
রবীন্দ্রনাথের ‘কর্তার ভূত’ রচনাটির ভাষাশৈলী তথা রচনাশৈলী পর্যালােচনা করাে।
Leave a comment