প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত তেলেনাপােতা আবিষ্কার ছােটোগল্পের একটি অপ্রধান চরিত্র যামিনীর মা হলেন অন্ধ, বিধবা, শয্যাশায়ী এক বৃদ্ধা। যামিনীর ছেলেবেলাতেই তিনি তার এক দূর সম্পর্কের বােনপাে নিরঞ্জনের সঙ্গে যামিনীর বিয়ে ঠিক করেছিলেন। শেষবার প্রায় বছর চারেক আগে এসেও নিরঞ্জন যামিনীর মাকে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিল। নিরঞ্জনের এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতিকে বুকে আগলে রেখে বৃদ্ধা সেই ভগ্ন প্রেতপুরীতে দিন কাটাচ্ছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে অন্ধ হয়ে পড়া এই মহিলা তাই অত্যন্ত ধৈর্যহারা ও অবুঝ হয়ে পড়েছিলেন। রেগে গেলে মাথা খুঁড়ে তিনি এমন কাণ্ড বাঁধাতেন যে, তখন তাঁর প্রাণ বাঁচাতে হিমসিম খেতে হত যামিনীকে। আসলে, শােকে তাপে এবং একমাত্র কন্যার বিয়ে না হওয়ার দুশ্চিন্তায় তাঁর মাথার আর ঠিক ছিল না বলে দিনরাত তাঁর শান্ত মেয়ে যামিনীকে তিনি অশেষ যন্ত্রণা ও গঞ্জনা দিতেন। অবশ্য তিনি মেয়ের গুণের প্রশংসাও নিরঞ্জনরূপী কথকের কাছে করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত, নিরঞ্জনরূপী গল্পকথকের কাছ থেকে আশ্বাসবাণী পেয়ে তিনি কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছিলেন। অত্যন্ত সহজ মনের গ্রাম্য নারী হওয়ায় তিনি নাগরিক সভ্যতার দুই প্রতিনিধি নিরঞ্জন ও গল্পকথকের চতুরতা অনুধাবন করতে পারেননি।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর তেলেনাপােতা আবিষ্কার নামক ছােটোগল্পে বেশ কয়েকটি অপ্রধান চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে একজন হলেন মণিবাবু। মণিবাবু হলেন গল্পকথকের এক পানরসিক বন্ধু, যিনি কথককে তাঁর পূর্বপুরুষদের বাসভূমি তেলেনাপােতায় মাছ ধরতে ও ছুটি কাটাতে আসার জন্য লােভ দেখিয়েছিলেন। দেশের বাড়িতে ছুটি কাটাতে আসা এই শহরে যুবককে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জ্ঞাতিবােন যামিনীর পরিবারের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এ কারণেই যামিনীর কাছ থেকে তিনি যখন নিরঞ্জন সম্পর্কে তার অন্ধ, বৃদ্ধ মায়ের অবুঝ, অস্থির আচরণের কথা শােনেন, তখন বিরক্তি প্রকাশ করে জানান যে, ‘হুঁ, এ তাে বড়াে মুস্কিল দেখছি।’ নিরঞ্জনের প্রতিশ্রুতিভঙ্গের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে যখন তিনি কথককে জানান যে, ‘এমন খুঁটেকুড়ুনির মেয়েকে উদ্ধার করতে তার দায় পড়েছে’—তখন তার বাস্তববুদ্ধির পরিচয়ও পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রচলিত শহুরে স্বার্থমগ্নতা ও গাবাঁচানাে মনােভাব মণির মধ্যেও ছিল বলেই গল্পকথক যখন স্বেচ্ছায় যামিনীর মায়ের কাছে যেতে চান, তখন তিনি বিস্ময়ে কথকের দিকে তাকিয়েছিলেন। তাই নিরঞ্জনরূপী কথক যামিনীর মাকে যামিনীকে বিয়ে করার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেও তিনি বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন। কথকের সঙ্গে তেলেনাপােতা ও যামিনীর সংযােগ ঘটানাের সূত্রে এবং কথকের সঙ্গে যামিনী ও তেলেনাপােতার সম্পর্কের প্রত্যক্ষ-সাক্ষী হিসেবে মণিবাবু চরিত্রটি এ গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্র।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে কথকের তেলেনাপােতা অভিযানের সঙ্গী ছিলেন তাঁরই দুই কলকাতাবাসী বন্ধু। তাঁদের একজনের নাম ছিল মণি, অপরজনের নাম উল্লেখ করেননি কথক, যিনি আসলে ‘নিদ্রাবিলাসী।
গল্পকথকের তৃতীয় বন্ধুটি এই গল্পে খুব ছােটো স্থান জুড়ে আছেন। তিনি আছেন কেবল কথকের তেলেনাপােতা আবিষ্কারের নীরব সাক্ষী হিসেবে। ঘুমকাতুরে এই যুবকটি নেহাত ঘুমােতেই যেন এখানে এসেছেন। প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি বাড়ির অপেক্ষাকৃত বাসযােগ্য ঘরে প্রবেশ করামাত্রই তাই তিনি মেঝের ওপর কোনােরকমে একটি শতরঞ্চি পেতে সেখানে শুয়ে পড়েন এবং নাসিকাগর্জন করতে শুরু করেন। কথকের মৎস্য শিকার-নৈপুণ্য নিয়ে কৌতুকে তিনি যােগ দিয়েছিলেন মণির সঙ্গে। তা ছাড়া ফেরবার পথে গােরুর গাড়িতে চড়ে তিনি মণির সঙ্গে তেলেনাপােতার ম্যালেরিয়া-বিধ্বস্ত ইতিহাস নিয়ে আলােচনাতেও মেতে ছিলেন।
তবে, গল্পকথকের মতাে তেলেনাপােতায় তাঁরও প্রথম আগমন ঘটলেও এই নিদ্রাবিলাসী যুবকটি তেলেনাপােতা তথা বহির্জগৎ সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন। এমনকি, মণিবাবু এবং গল্পকথক যামিনীর মায়ের ঘরে গেলেও তিনি তাদের সঙ্গী হবার আগ্রহ প্রকাশ করেননি। জগৎ ও জীবন সম্পর্কে তার এই অনাগ্রহ এবং উদাসীনতার জন্যই এ গল্পে গল্পকথক চরিত্রের আবেগপ্রবণতা, কৌতূহল-প্রবণতা এবং সহৃদয়তা অত্যন্ত উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের সূচনাতেই গল্পকথক পাঠকদের উদ্দেশ করে বলেছেন যে, কোনাে এক শনিবার বা মঙ্গলবার, সম্ভবত মঙ্গলবারই, যােগাযােগ হলে তেলেনাপােতা নামক এক অখ্যাত স্থান পাঠকও আবিষ্কার করে ফেলতে পারেন। প্রতিদিনের কাজকর্ম এবং কলকাতার ভিড়-ভাট্টায় হাঁপিয়ে ওঠার পর হঠাৎ যদি দু-দিনের ছুটি পেয়ে যান পাঠক এবং তাঁর কোনাে বন্ধু যদি তাঁকে লােভ দেখান তেলেনাপােতা আবিষ্কারের—যেখানকার দিঘিতে ইতিপূর্বে কেউ কখনও মাছ ধরেনি বলে সেখানকার মাছের দল বড়শি-বিদ্ধ হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে—তা হলে পাঠক হঠাৎ একদিন তেলেনাপােতা আবিষ্কার করতে পারবেন।
আলােচ্য গল্পে, গল্পকথক তাঁর নামহীন এক ঘুমকাতুরে বন্ধু ও এক পানরসিক বন্ধু মণির সঙ্গে, কোনাে এক পড়ন্ত বিকেলে, কলকাতা থেকে তিরিশ মাইল দূরবর্তী এক অনামা গ্রাম তেলেনাপােতার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। এ যাত্রায় তাদের বাহন ছিল জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি একটি বাস। ভাদ্র মাসের পচা গরমে প্রায় দুঘণ্টা ধরে তারা পথের ঝাকুনি ও মানুষের ঠেলা খেয়ে চলতে থাকেন। এরপর পথের ধুলাে ও শরীরের ঘামে আঠালাে হয়ে যাওয়া দেহ নিয়ে হঠাৎই তারা একসময় নেমে পড়েন তেলেনাপােতার সবচেয়ে কাছের বাসস্টপে। এরপর সামনের নীচু একটা জলার মতাে জায়গার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া লম্বা সাঁকো পেরিয়ে বিচিত্র ঘর্ঘর শব্দে বাসটি ওধারে পথের বাঁকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
“কেননা ভবিষ্যৎকে মানলেই তার জন্যে যত ভাবনা, ভূতকে মানলে কোনাে ভাবনাই নেই;”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“অথচ তার মাথা নেই, সুতরাং কারও জন্য মাথাব্যথাও নেই।”— কার সম্বন্ধে, কেন লেখক এ কথা বলেছেন?
“শুনে ভূতগ্রস্ত দেশ আপন আদিম আভিজাত্য অনুভব করে।”- আদিম আভিজাত্য’ অনুভব করার কারণ কী?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ রচনায় ‘দেশে যত শিরােমণি-চূড়ামণি’-র বক্তব্য কী ছিল?
“এখন কথাটা দাঁড়িয়েছে, ‘খাজনা দেব কিসে।” কারা, কাদের কাছে খাজনা চেয়েছে? খাজনা দিতে না পারার কারণ কী?
“দেশের মধ্যে দুটো-একটা মানুষ” -এর সঙ্গে বুড়াে কর্তার কথােপকথন ‘কর্তার ভূত’ অবলম্বনে লেখো এবং রূপকার্থ আলােচনা করাে।
‘ওরে অবােধ, আমার ধরাও নেই ছাড়াও নেই, তােরা ছাড়লেই আমার ছাড়া’—এখানে কে কাদের অবােধ বলেছেন? উক্তিটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“কর্তা বলেন, সেইখানেই তাে ভূত।”- কোন প্রসঙ্গে এবং কেন কর্তা এ কথা বলেছেন?
‘কর্তার ভূত’ রচনায় ওঝা প্রসঙ্গটির তাৎপর্যটি লেখাে।
“সে ভবিষ্যৎ ভ্যাও করে না ম্যাও করে না” -সে ভবিষ্যৎ ভ্যা বা ম্যা করে না কেন?
“কেননা ওঝাকেই আগেভাগে ভূতে পেয়ে বসেছে”- ওঝাকে ভূতে পেলে কী ক্ষতি হওয়ার কথা লেখক বলেছেন?
‘কর্তার ভূত’- কি নিছক ভূতের গল্প, নাকি রাজনৈতিক রূপক কাহিনি? ব্যাখ্যাসহ লেখাে।
“ভূতের রাজত্বে আর কিছুই না থাক…শান্তি থাকে”- মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করাে।
কেন কিছু দেশবাসীর ভূতশাসনতন্ত্র নিয়ে দ্বিধা জাগল?
‘কর্তার ভূত’-রচনাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।
রবীন্দ্রনাথের ‘কর্তার ভূত’ রচনাটির ভাষাশৈলী তথা রচনাশৈলী পর্যালােচনা করাে।
‘তারা ভয়ংকর সজাগ আছে।’ -কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের এমন ‘ভয়ংকর সজাগ থাকার কারণ কী?
“কেবল অতি সামান্য একটা কারণে একটু মুশকিল বাধল।”—কারণটি পর্যালােচনা করাে।
কর্তার ভূত গল্পে যে সামাজিক সত্যের দিকে লেখক নির্দেশ করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের রচনাশৈলী পর্যালােচনা করাে।
ছােটোগল্প হিসেবে ‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ রচনাটি কতখানি সার্থক, তা পর্যালােচনা করাে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের মধ্যে রােমান্টিকতার যে যে বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, তা আলােচনা করে রােমান্টিক গল্প হিসেবে এর সার্থকতা বিচার করাে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে লেখক গল্প বলার ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদ ব্যবহারে যে নতুনত্ব এনেছেন তা আলােচনা করাে।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ ছােটোগল্পটি অবলম্বন করে এ গল্পের গল্পকথকের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব আলােচনা করাে।
‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে এই গল্পের গল্পকথকের চরিত্র বিশ্লেষণ করাে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প অবলম্বনে যামিনী চরিত্রটি বিশ্লেষণ করাে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার ছােটোগল্পে নিরঞ্জন এবং গল্পকথকের প্রতিশ্রুতি-ভঙ্গের বৈশিষ্ট্য পর্যালােচনা করে উভয় চরিত্রের তুলনামূলক আলােচনা করাে।
Leave a comment