প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার ছােটোগল্পে আমরা দেখি যে, তেলেনাপােতা থেকে ফিরে আসার সময় যামিনী-সহ তেলেনাপােতার স্মৃতিতে আচ্ছন্ন গল্পকথক। হৃদয়ম্পনের মধ্যে এই কথাটিই বারবার উচ্চারিত হতে শুনেছিলেন—ফিরে আসব, ফিরে আসব।
কলকাতায় ফিরে তেলেনাপােতায় দেওয়া প্রতিশ্রুতির দায়ভার কিছুটা ফিকে হয়ে গেলেও একদিন পারিপার্শ্বিক এবং মানসিক সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে তেলেনাপােতায় যাবার জন্য তিনি প্রস্তুত হলেন। কিন্তু সেখানে যাবার দিনই আকস্মিক মাথার যন্ত্রণা এবং কাপানাে শীতে তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন যে, ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন হলে তিনি জানালেন যে, কথক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বহুদিন পর ম্যালেরিয়া থেকে সেরে উঠে, অতি দুর্বল দেহ নিয়ে কাপা পায়ে বাড়ির বাইরের আলাে বাতাসে যখন গল্পকথক এসে বসলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, ইতিমধ্যেই তাঁর দেহ-মনে নিজের অজান্তেই অনেক ধায়া-মােছা হয়ে গেছে। কলকাতা-ফেরার দিনটিতে যে তেলেনাপোতা তার কাছে ছিল ঘনিষ্ঠ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাই বর্তমানে পরিণত হয়েছে অস্তমিত এক তারায়। যামিনীকেও তিনি অনুভব করলেন তার দুর্বল মুহূর্তের এক কুয়াশাচ্ছন্ন, অসম্ভব কল্পনা বলে। এভাবেই কথকের মন থেকে যামিনী-সহ তেলেনাপােতার স্মৃতি ক্রমশ মলিন হয়ে গিয়েছিল।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে তেলেনাপােতা এমন একটি জায়গার নাম যে জায়গাটি জনস্রোতে ভরা রাজধানী অঞ্চল থেকে খুব একটা দূরে নয়। ঠাসাঠাসি বাসে চেপে শহরাঞ্চল থেকে মাত্র দুঘণ্টার যাত্রাপথে এমন একটি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল রয়েছে, যেখানে জীবন যেন থেমে গেছে বলে বােধ হয়, অবসর সময় কাটাতে এবং মৎস্য শিকারের ইচ্ছা চরিতার্থ করবার জন্যই কথক তার দুই বন্ধুর সঙ্গে তেলেনাপােতায় পাড়ি দেন।
লেখক এই তেলেনাপােতায় যাওয়ার ব্যাপারটিকে আবিষ্কার বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ সভ্যজগতের এত কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যে এমন একটি দমবন্ধ করা পরিবেশে স্থির জীবন প্রবাহের সন্ধান পাওয়া শহরাঞ্চলের ব্যস্ত মানুষের কাছে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানকার এক আশ্চর্য সরােবরে পৃথিবীর সবচেয়ে সরল মাছেরা প্রথম বড়শি-বিদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় উদ্গ্রীব হয়ে আছে। একশাে দেড়শাে বছর আগে ম্যালেরিয়ার প্রকোপে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এই অঞ্চল প্রকৃতপক্ষে একটি শ্মশানের দেশ—যেখানে। দশটা বাড়ি খুঁজলেও একটি পুরুষের দেখা মেলে না। এই তেলেনাপােতাতেই কবি আবিষ্কার করেছিলেন তার মাছ ধরার ব্যর্থতার জন্য মাছরাঙার নীরব উপহাস। এই অঞ্চলটি বেশিরভাগ মানুষের কাছে অজ্ঞাত বলে তেলেনাপােতায় যাওয়াকে লেখক আবিষ্কার বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটি এ গল্পের গল্পকথকের মনে হবে।
গল্পকথক দুই বন্ধুসহ একরাতের জন্য তেলেনাপােতা নামক এক গ্রামে বেড়াতে গিয়ে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে গ্রামের মেয়ে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। ফিরে এসে বেশ কয়েকদিন পর পারিপার্শ্বিক এবং মানসিক সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে পুনরায় তেলেনাপােতা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু তার আগেই তিনি তেলেনাপােতার মশা-বাহিত ম্যালেরিয়ায় প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বহুদিন পর সেরে উঠে অতি দুর্বল দেহ নিয়ে কাপা পায়ে বাড়ির বাইরের আলাে বাতাসে যখন কথক এসে বসলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, ইতিমধ্যেই তাঁর দেহ-মনে নিজের অজ্ঞাতেই অনেক ধােয়া-মােছা হয়ে গেছে। কলকাতা-ফেরার দিনটিতে যে তেলেনাপােতা তার কাছে ছিল ঘনিষ্ঠ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাই বর্তমানে পর্যবসিত হয়েছে। অস্তমিত এক তারায়। সদ্য ম্যালেরিয়া থেকে সেরে ওঠা কথক অতঃপর উপলব্ধি করেন যে, তেলেনাপােতা এখন ঝাপসা এক স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আর, যামিনী তাঁর কোনাে এক দুর্বল মুহূর্তের অসম্ভব, কুয়াশাচ্ছন্ন এক কল্পনামাত্র। ভয়ংকর ম্যালেরিয়া কথককে ভেতরে বাইরে নাড়িয়ে দিয়েছিল বলেই এমনটা মনে হয়েছিল তার।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার ছােটোগল্পে আমরা দেখতে পাই কলকাতা থেকে ত্রিশ মাইল দূরবর্তী এক ম্যালেরিয়া-বিধ্বস্ত গ্রাম তেলেনাপােতাকে। শহরের হাঁসফাঁস করা জীবন থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে গল্পকথক মাছ ধরার অছিলায় দুই বন্ধু-সহ সেখানে যান। দিনের আলােয় তিনি আবিষ্কার করেন অজগরপুরী তেলেনাপােতাকে। আর, তেলেনাপােতারই অন্ধকূপসম ধ্বংসস্তুপে অবস্থান করা যামিনী ও তার অন্ধ বৃদ্ধা মা-কে। তেলেনাপােতায় অবস্থানকালে স্থানমাহাত্ম্যে কথক এতই প্রভাবিত হয়ে যান যে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে ফেলেন। কিন্তু কলকাতায় ফিরে এসে তেলেনাপােতার মশাবাহিত ম্যালেরিয়া তাকে এমন শারীরিক ও মানসিকভাবে আহত করে যে, তেলেনাপােতাকে ঝাপসা একটা স্বপ্ন বলে মনে হয় তার। এই মূল কাহিনি নিয়ে রচিত তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পটিতে তেলেনাপােতা নামক আবিষ্কার-প্রতীক্ষিত স্থানটিই প্রাধান্য পেয়েছে। সেই আবিষ্কার অভিযানে ছােটো বড়াে চরিত্রগুলি সেই মূল বিষয়-সংগীতে যােগ্য সংগত করেছে। তেলেনাপােতার সঙ্গে সঙ্গে এইসব চরিত্রগুলিও পাঠকের কাছে আবিষ্কৃত হয়েছে। সুতরাং তেলেনাপােতা আবিষ্কার নামকরণটি বিষয়ানুগ, যথাযথ এবং শিল্পসার্থক।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ ছােটোগল্প থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটিতে গল্পকথকের ‘আসল উদ্দেশ্য’- এর কথাই বলা হয়েছে। গল্পকথকের তেলেনাপােতায় বেড়াতে আসার আসল উদ্দেশ্য ছিল মৎস্য-শিকার।
সেই উদ্দেশ্য-সাধনে গল্পকথক তেলেনাপােতায় পৌঁছানাের পরদিন সকালে বড়শি-সহ মাছ ধরার সমস্ত উপকরণ নিয়ে হাজির হন পানাপুকুরটিতে। সেখানে বড়শি ফেলে ভাঙা ঘাটে তিনি একাকী বসে থাকেন মাছের অপেক্ষায়। ক্রমে বেলা বাড়তে থাকলেও মাছের দেখা পাওয়া যায় না। একটি মাছরাঙার মৎস্যশিকার, একটি সাপের সন্তরণ এবং দুটি ফড়িং-এর ফাতনাটিতে বসার প্রতিযােগিতামূলক চেষ্টা নীরবে দেখে চলেন কথক। ঘুঘুপাখির উদাস-করা ডাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন কথক একসময় হঠাৎ জলের শব্দে চমকে গিয়ে দেখেন যে, পুকুরের স্থির সবুজ জলে ঢেউ উঠেছে এবং তার ফাতনা ধীরে ধীরে দুলছে। ঘাড় ঘুরিয়ে একটি মেয়েকে কলশিতে জল ভরতে দেখে অবাক হয়ে যান তিনি। কলশিতে জল ভরে ফিরে যাওয়ার সময় মেয়েটি কথককে বড়শিতে টান দিতে বললে ভ্যাবাচাকা খাওয়া কথক বড়শিতে টান দিয়ে দেখেন যে, তাতে মাছ তাে নেই-ই, টোপও নেই। মৃদু হেসে মেয়েটি চলে গেলে তার কথা ভাবতে ভাবতে আবার জলে টোপ-সহ বড়শি ফেলে বসে থাকেন তিনি। দ্বিতীয়বার মাছ আর তার টোপ না খাওয়ায় একসময় হতাশ কথক সবকিছু গুটিয়ে উঠে পড়েন। সুতরাং, মৎস্য-শিকারে ব্যর্থ হলেও কথক মাছ ধরার সূত্রে তেলেনাপােতায় এক আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের যামিনীর মায়ের চরিত্র সংক্ষেপে পর্যালােচনা করাে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে গল্পকথকের বন্ধু মণিবাবুর চরিত্র সংক্ষেপে পর্যালােচনা করাে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পটির গল্পকথকের ঘুমকাতুরে বন্ধুর চরিত্র আলােচনা করাে।
“তা হলে হঠাৎ একদিন তেলেনাপােতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন”- তেলেনাপোতা আবিষ্কার অভিযানের সময় বাসযাত্রার বিবরণ দাও।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকথকদের গােরুর গাড়িতে করে তেলেনাপােতা যাওয়ার বর্ণনা দাও।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প অবলম্বনে গল্পকথকদের তেলেনাপােতা যাওয়ার পথে গােরুর গাড়িতে ওঠার আগে পর্যন্ত যাত্রার বিবরণ দাও।
তেলেনাপােতায় জীর্ণ প্রাসাদের অপেক্ষাকৃত বাসযােগ্য ঘরটিতে কীভাবে রাত কেটেছিল গল্পকথকদের?
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প অবলম্বনে গল্পকথকের রাত্রিকালীন ছাদ-ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করাে।
“মনে হবে বােবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক এক কান্না নিংড়ে নিংড়ে বার করছে।”—কখন বক্তার এই উপলব্ধি হয়? অমানুষিক কান্না আসলে কী ছিল?
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পটি অবলম্বনে ক্যানেস্তারা বাজানাে প্রসঙ্গটি আলােচনা করাে।
‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে কোন্ ঘটনার প্রেক্ষিতে আবিষ্কারকের ধারণা হবে যে “জীবন্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে অতীতের কোনাে কুজ্বাটিকাচ্ছন্ন স্মৃতিলােকে এসে পড়েছেন”?
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকথকের কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হবে সময় সেখানে স্তব্ধ, স্রোতহীন?
তখন হয়তাে জানতে পারবেন যে,প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃত অংশে কী জানতে পারার কথা বলা হয়েছে লেখাে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার ছােটোগল্প অবলম্বনে গল্পকথকের সঙ্গে যামিনীর শেষ সাক্ষাৎকারটি বর্ণনা করাে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে কথক ও যামিনীর শেষ সাক্ষাৎ-এর আগে কোথায়, কী পরিস্থিতিতে দেখা হয়েছিল?
‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকথক তেলেনাপােতার পানাপুকুরে ছিপ ফেলে যখন বসে ছিলেন, তখন বিভিন্ন প্রাণী কীভাবে তাকে বিরক্ত করেছিল?
“খানিক আগের ঘটনাটা আপনার কাছে অবাস্তব বলে মনে হবে।” -কোন ঘটনার কথা এখানে বলা হয়েছে?
“খাওয়া শেষ করে আপনারা তখন একটু বিশ্রাম করতে পারেন”—কোথায়, কীভাবে তারা খাওয়া শেষ করেছিলেন?
ব্যাপারটা কী এবার আপনারা হয়তাে জানতে চাইবেন- কোন্ ব্যাপার অতঃপর গল্পকথক জানতে পেরেছিলেন?
“হূ, এতাে বড়াে মুস্কিল দেখছি”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তা কাকে মুস্কিল’ বলে অভিহিত করেছেন লেখাে।
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে গল্পকথক যামিনীকে বিয়ে করার ব্যাপারে তার মাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন?
“আপনাকে কৌতুহলী হয়ে যামিনীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই হবে” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এমনটা করার কারণ লেখাে।
“আপনাকে কৌতুহলী হয়ে যামিনীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই হবে” -যামিনী সম্পর্কে কোন কোন তথ্য গল্পকথক অবগত হয়েছিলেন?
“আপনাদের পদশব্দ শুনে সেই কঙ্কালের মধ্যেও যেন চাঞ্চল্য দেখা দেবে” -সেই কঙ্কালের মধ্যেও চাঞ্চল্য দেখা দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গ-সহ লেখাে।
“পুকুরের ঘাটের নির্জনতা আর ভঙ্গ হবে না তারপর।” -পুকুরের ঘাটের নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
“পুকুরের ঘাটের নির্জনতা আর ভঙ্গ হবে না তারপর।” -‘পুকুরের ঘাটের’ নির্জনতা ইতিপূর্বে কীভাবে ভঙ্গ হয়েছিল তা লেখাে।
“এই জনহীন ঘুমের দেশে সত্যি ওরকম মেয়ে কোথাও আছে আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না।”—ওরকম মেয়ে দেখে বিশ্বাস করতে না পারার কারণ কী?
“ব্যাপারটা কী এবার হয়তাে জানতে চাইবেন।” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে।
Leave a comment