❋ তােমাদের কলেজে কোনাে বিখ্যাত কবির আগমন উপলক্ষ্যে একটি অভিনন্দনপত্র রচনা কর।
গৌরনদী সরকারি কলেজে বাংলাদেশের
অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের আগমনে
হৃদয়ােষ্ণ শ্রদ্ধাঞ্জলি।
হে বরেণ্য
ঋতুরাজ বসন্তের লীলালগ্নে গ্রামবাংলার ছায়া-সুনিবিড় নিভৃত পল্লির এ কলেজ তােমার শুভ পদার্পণে আজ ধন্য। তােমার আগমনে আমাদের নবীন হৃদয়-আঙিনা আনন্দ, ভালােবাসা ও মিলনের মধু গুঞ্জনে গুঞ্জরিত । জীবনের শত কর্মব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে আমাদের আহ্বানে তুমি যে সাড়া দিয়েছ,, সেজন্য আজ আমরা এবং পল্লির সবুজ-শ্যামল আঙিনা ধন্য ও গৌরবদীপ্ত। তুমি আমাদের প্রাণঢালা শ্রদ্ধাঞ্জলি গ্রহণ কর।
হে মহান অতিথি
তােমার সাহচর্যে আজ আমরা আনন্দে আত্মহারা। তােমাকে পেয়ে আমরা এ মুহূর্তে সবকিছু ভুলে গেছি, এমনকি তােমার কাব্যকেও। সত্যিই মনে হচ্ছে তােমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ’।
হে সুন্দরের পূজারি
প্রকৃতির একনিষ্ঠ পূজারি তুমি। প্রকৃতির বুক থেকে রূপ, রস ও গন্ধ আহরণ করে ভাষার ছন্দ-মাধুরী দিয়ে আঁক তুমি কাব্যের আলপনা। তােমার কাব্যরসে আমরা মুগ্ধ ও সঞ্জীবিত। তােমার কবিতার মধ্য দিয়ে তােমার সাথে আমাদের যেটুকু পরিচয়, তােমার সাক্ষাৎ সান্নিধ্যে তা আরও নিবিড় ও মধুর হলাে । তােমার কবিতার চারপাশে যে সুরভিত সুবাস ছড়িয়ে পড়ে, যে আম্রকাননের মৌ মৌ গন্ধে মাতােয়ারা মৌমাছি গুঞ্জন করে ওঠে এবং যে বসন্ত নিদাঘ কোকিলের কুহুতানে মুখরিত হয়, তা আমরা উপলব্ধি করি আমাদেরই চারপাশে। আর তাতে আমরা যে প্রকৃতির নতুন পরিচয় পাই, তারই অভিনব আনন্দের আবেগে তােমাকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন জানাচ্ছি।
হে প্রজ্ঞাবান
তােমার ভাষা ও বাণীবদ্ধতায় রয়েছে সুগভীর জীবন দর্শনের সংমিশ্রণ । তুমি জীবনকে দেখেছ অতি কাছ থেকে। তাইতাে তুমি মানুষের আত্মার আত্মীয়, জনপদের অতি ঘনিষ্ঠ । তােমার মতাে জ্ঞানতাপসকে পেয়ে আজ আমরা সত্যিই ধন্য। তাইㅡ
অপমান তব করিব না আজ
করিয়া নান্দী পাঠ।
হে প্রগতিশীল সংগ্রামী কণ্ঠ
স্বাধীনতার চার দশক পরেও আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সামাজিক শান্তি ও স্থিতি অর্জিত হলাে না। দুর্নীতি, অন্যায়অবিচার ও স্বার্থপরতার কারণে গােটা জাতির অস্তিত্ব আজ বিপন্নপ্রায়। জাতির দুর্দিনে তােমার বলিষ্ঠ লেখনী, প্রগতিশীল চিন্তাধারা দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করবে, সত্যানুসন্ধানের পথ দেখাবে। তােমার প্রচেষ্টার কথা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
হে কবিㅡ কল্পনার বরপুত্র
সবকিছুর উর্ধ্বে তােমার যে পরিচয় সেটি হলাে তুমি যথার্থই কবি । যে কবিহৃদয় অসীমের আনন্দ খুঁজে বেড়ায়, যে কবি হৃদয়ে অপার আনন্দ-বেদনায় নিত্য ভাবের কুসুম ফোটে, তুমি ধারণ করেছ সেই কবিচিত্ত। তুমি আকাশে মেঘের ভেলা ভাসাও, মরুতে প্রস্ফুটিত পদ্মের কল্পনা কর, তােমার স্বপ্নের পাখিরা পৃথিবীর আকাশ থেকে জন্ম নেয়। তােমার কবিচিত্তে যে প্রেরণার সুরধ্বনি নিত্য বেজে যায়, তার উৎস কখনাে খুব সাধারণ মেয়ে আবার কখনাে মেঘরাজ্যের রংধনু-কন্যা কবি।
হে শিল্পী
তােমার শুভাগমনে আমরা একটি ছােটো সাহিত্যসভার আয়ােজন করেছি। এ আয়ােজনে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তুমি এ বাইরের আয়ােজন বাদ দিয়ে আমাদের অন্তরের অকৃত্রিম প্রীতি ও শ্রদ্ধা গ্রহণ কর। পরিশেষে পরম করুণাময় স্রষ্টার কাছে তােমার সুস্বাস্থ্য, শতায়ু ও সুখকর জীবন প্রার্থনা করি । বাংলাদেশের সাহিত্যের আকাশে তােমার সাহিত্যকর্ম চির উজ্জ্বল দীপ্তি পাক, তােমার কাব্য-চর্চায় দেশ ও জাতি গৌরবান্বিত হােক, এ আমাদের আন্তরিক প্রত্যাশা।
০৫ মার্চ ২০২১
তােমার গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ
গৌরনদী সরকারি কলেজ
বরিশাল।
Leave a comment