প্রশ্নঃ “তামাদি সময় একবার চলতে আরম্ভ করলে পরবর্তী কোন অক্ষমতা বা অসামর্থতা একে থামাতে পারে না।”-আলোচনা কর।
উত্তরঃ “তামাদি সময় একবার চলতে আরম্ভ করলে পরবর্তী কোন অক্ষমতা বা অসামর্থতা একে থামাতে পারে না।”- এই উক্তিটি ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ৯ ধারায় বিবৃত রয়েছে।
তামাদি আইনের ৬ ও ৭ ধারার বিধান মতে, তামাদির মেয়াদ গণনার সময় অর্থাৎ নালিশের কারণ উদ্ভব হবার সময় বাদী বা দরখাস্তকারী যদি নাবালক, বিকৃতমস্তিস্ক বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হয়, তবে তার এরূপ আইনগত অক্ষমতার অবসান না হওয়া পর্যন্ত তামাদির প্রয়োগ স্থগিত থাকবে।
অপরদিকে, ৯ ধারার বিধান মতে, যদি মামলার কারণ উদ্ভুত হবার সময় বাদী বা দরখাস্তকারীর আইনগত অক্ষমতা না থেকে থাকে তবে পরবর্তী এরূপ অযোগ্যতার কারণে সে কোন রেয়াত পাবে না। মামলার কারণ উদ্ভুত হবার অর্থাৎ তামাদিকাল আরম্ভ হবার সময় নাবালক পাগল বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হলে ৬ হতে ৮ ধারার সুবিধা পাওয়া যাবে এবং তামাদিকাল স্থগিত রাখা যাবে। কিন্তু উক্ত সময়ে এরূপ অক্ষমতা না থাকলে এবং তামাদিকাল আরম্ভ হলে পরবর্তী অক্ষমতার কারণে তামাদি গণনা স্থগিত রাখা যাবে না।
ব্যতিক্রমঃ তবে এই বিধানটি চূড়ান্ত ও অনমনীয় কতিপয় ব্যতিক্রম রয়েছে যেক্ষেত্রে তামাদিকাল স্থগিত রাখা যায় এগুলি নিম্নরূপঃ-
১. ৯ ধারায় একটি শর্ত সন্নিবেশিত রয়েছে। এই শর্তানুযায়ী যেক্ষেত্রে পাওনাদারের সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেনাদারের উপর অর্পিত হয় সেক্ষেত্রে যতদিন তার উপর উক্ত দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে ততদিন-উক্ত দেনার টাকা আদায়ের মামলা অতিবাহিত হওয়া স্থগিত থাকবে।
২. ১২ ধারায় বিধান মতে আপীল বা দরখাস্ত পেশের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা প্রমাণাদি যেমন রায়, আদেশ, ডিক্রী বা রোয়েদাদের নকল নিতে আইনত যে সময় ব্যয় হবে তামাদি গণনাকালে তা বাদ যাবে। এছাড়া যে দিন হতে তামাদিকাল শুরু হবে সে দিনটিও বাদ যাবে।
৩. বিবাদী যদি বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করে তবে যতদিন বিবাদী বাইরে থাকবে ১৩ ধারার বিধান মতে ততদিন তামাদিকাল স্থগিত থাকবে।
৪. ১৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, বাদী যদি যত্নসহকারে সরল বিশ্বাসে কোন মুল মামলা অথবা আপীল মামলা চালাতে থাকে এবং পরে ধরা পড়ে যে, উক্ত আদালতের এই মামলা করার কোন এখতিয়ার নেই, তবে এরূপ এখতিয়ারবিহীন আদালতে মামলার বিষয়ে যত সময় অতিবাহিত হবে পুনরায় যথোপযুক্ত আদালতে মামলা করার সময় তামাদিকাল হতে তা বাদ যাবে।
৫. ১৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কোন বৈধ আদেশ দ্বারা কোন মামলা অথবা ডিক্রী জারীর পথে কোন বাধা সৃষ্টি করা হয়, তবে এ রকম নিষেধাজ্ঞা বা আদেশ অপসারিত হবার দিন সহ যে সময় অতিবাহিত হবে তা পরবর্তী মামলা অথবা ডিক্রী জারীর তামাদিকাল গণনা হতে বাদ যাবে।
এ ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, যে ক্ষেত্রে মামলা দায়েরের পূর্বে আইনের নির্দেশ মোতাবেক কোন নোটিশ দিতে হয়, সেক্ষেত্রে নোটিশের সময়কাল তামাদিকাল গণনায় বাদ যাবে।
৬. ১৬ ধারায় বিধান রয়েছে যে, ডিক্রী জারীতে নীলাম ক্রেতা সম্পত্তিতে দখল পাবার জন্য মামলা দায়ের করার তামাদিকাল গণনা করার সময় সংশ্লিষ্ট নীলাম রদের জন্য মামলা হয়ে থাকলে উক্ত মামলায় যে সময় অতিবাহিত হবে তাও তামাদিকাল হতে বাদ যাবে।
বস্তুত এ সকল ব্যতিক্রম সাপেক্ষে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে উক্তি যথাযথভাবে প্রযোজ্য হবে।
Leave a comment