২০০৯ সালের ১৯ জুন, বাংলাদেশে প্রথম বারের মত চালু করা হয় ডে লাইট সেভিং টাইম (Daylight saving time-DST) পদ্ধতি। ওই দিন রাত এগারোটা কে এক ঘণ্টা এগিয়ে করা হয় রাত বারো টা এবং নতুন করে সময় গণনা শুরু করা হয়। বাংলাদেশের জনগণের কাছে বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণই নতুন। যে কারণে সকলের মাঝে ডে লাইট সেভিং টাইম পদ্ধতি কি এবং কেনই বা এটি ব্যাবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে হয়েছে অনেক আলোচনা সমালোচনা।
তবে এই পদ্ধতি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ করে আসছে। বিশ্বের বড় বড় দেশ সহ প্রায় দেড় শতাধিক দেশ বিভিন্ন সময় এই পদ্ধতি অনুসরণ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে এসেছে। এখন প্রশ্ন হল এই পদ্ধতি কিভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সাহায্য করে থাকে, কিভাবেই বা এটি শক্তি সাশ্রয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত?
ডে লাইট সেভিং টাইম টাইম পদ্ধতি কি?
ডে লাইট সেভিং টাইম (Daylight saving time-DST) পদ্ধতি হল সময় গণনা পদ্ধতির সামান্য পরিবর্তন যা কি না দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যাবহারের জন্য ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। স্থানীয় সময় গণনা কে এক বা দু ঘণ্টা এগিয়ে দিয়ে নতুন সময় গণনা শুরু করা হয়। যেমন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রাত এগারোটা কে বানানো হয়েছিল রাত বারোটা। অর্থাৎ সময়কে এক ঘণ্টা এগিয়ে নিয়ে হিসাব ধরা হয়েছিল। মূলত দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যাবহারের উদ্দেশ্যে সময়ের এমন হিসাব পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। এটি সাধারণত পৃথিবীর সেসব অঞ্চলে দেখা যায়, যেসব অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল ক্ষণস্থায়ী, অর্থাৎ শীতপ্রধান দেশসমূহে। সাধারণত বসন্তকালের শেষে এ সময় সংযোজনাটি করা হয়। এর কিছু উপকারিতা আছে। যেহেতু মূল ভৌগোলিক সময়ের চেয়ে কাঁটা এক ঘণ্টা বা দু’ঘণ্টা করে সামনে এগিয়ে দেয়া হয়, ফলে আপাতদৃষ্টে সূর্য দেরি করে অস্ত যাচ্ছে বলে মনে হয়। ফলে আপেক্ষিকভাবে গ্রীষ্মের ছোট রাত আরও ছোট হয়ে পড়ে, দিনের স্থায়িত্বের আপেক্ষিকতা বেড়ে যায় বলে মনে হয়।
“ডে লাইট সেভিং টাইম” এর শুরুর ইতিহাস
যদিও ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রথম ডে লাইট সেভিং রীতির অনুসরণ করেছিল, এর সূচনাটা হয়েছে অনেক আগেই। সর্বপ্রথম এর ধারণা দেন আমেরিকার বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। ১৭৮৪ সালে তিনি এর ধারণা দেন। The Journal of Paris পত্রিকার সম্পাদক কে এক চিঠিতে অনেকটা মজার ছলে বলেছিলেন যে, যদি সময় এগিয়ে দেওয়া যেত তাহলে মোমবাতির ব্যাবহার কমানো যেত। নিউজিল্যান্ডের এন্টোমলজিস্ট ও এস্ট্রোনমার জর্জ হাডসন বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নেন এবং সময় গণনার হিসাব কে প্রতি বসন্তে দু ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেন যাতে করে দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যাবহার করা যায়। তবে বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্ব পায় যখন ১৯০৭ সালে ব্রিটেনের স্থপতি উইলিয়াম উইলেট বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করেন এবং একে শক্তি সাশ্রয়ের একটি কার্যকর উপায় বলে ঘোষণা দেন।
এরপর ১৯১৬ সালে সর্বপ্রথম এই পদ্ধতির প্রয়োগ করে জার্মান সাম্রাজ্য ও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি। এরপর থেকে বিশ্বের প্রায় দেড় শতাধিকেরও বেশি দেশে এ রীতি অনুসরণ করা হয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সহ প্রায় ৭৫টি দেশে এটি চালু ছিল।
“ডে লাইট সেভিং টাইম” যেভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে
বর্তমান সময়ে মূলত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্যই এই পদ্ধতি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। ধরুন, সকাল দশটায় সকল স্কুল প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত বা কারখানা চালু হয়। এখন গ্রীষ্মকালে দিনের দৈর্ঘ্য বেশি হয় আর রাতের দৈর্ঘ্য ছোট হয়। তাহলে গ্রীষ্মকালে যদি এক ঘণ্টা সময় এগিয়ে দেওয়া হয় তাহলে মানুষ এক ঘণ্টা আগে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠবে এবং কর্মক্ষেত্রে যাবে। অর্থাৎ প্রতিদিন এক ঘণ্টা আগেই তাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং রাতে ঘুমাতে যেতে পারবে। আর এই এক ঘণ্টায় অতিরিক্ত যে বিদ্যুৎ ব্যাবহার হত তা আর হবে না, মানে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
যেহেতু গ্রীষ্মকালে সূর্য দ্রুত ওঠে, তাই দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের আলোর সরবরাহ বেশি থাকে। তাই কাজের সময় এগিয়ে আসলে, বিভিন্ন কর্মস্থলে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক বাতি বা আলোক সজ্জার কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ব্যাবহার কমে যায়।
শেষ কথা
এই পদ্ধতিটি বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয় হলেও বিভিন্ন সময়ে বেশ আলোচিত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মের অভাব জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছিল। সঠিক সময়ে এবং সঠিক অঞ্চলে এ পদ্ধতির প্রয়োগ কিছুটা হলেও শক্তি সঞ্চয় করবে। কিন্তু অহেতুক প্রয়োগ জনগণের ভোগান্তি ছাড়া খুব একটা সফলতা বয়ে আনতে পারবে না।
source:
কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান |
Leave a comment