ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর গোড়াপত্তনে ডিরোজিওর ভূমিকা মূল্যায়ন কর

উনিশ শতকে বাংলাদেশে রেনেসাঁ সংঘটিত হয়েছিল, তাতে ডিরোজিওর অবদান ছিল অসামান্য। তার পুরো নাম ছিল হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির প্রবক্তা ও কবি। ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার এক খ্রিষ্টান পরিবারে তার জন্ম হয়। ১৮১৫-১৮২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার ধর্মতলা একাডেমিতে তিনি শিক্ষা লাভ করেন। তিনি সবসময়ই ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে সমাজ-জীবনকে যুক্তিতর্ক এবং বস্তুবাদী বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে দেখেছেন। তিনি শিক্ষক-জীবনে ছাত্রদের মনে- সংস্কার-আচার-প্রথার-ধর্মীয় গোঁড়ামির উর্ধ্বে ওঠার মুক্তচিন্তা-মুক্তিবুদ্ধির সাহস যুগিয়েছেন।

তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। অল্প দিনের মধ্যে তিনি ইতিহাস, দর্শন ও ইংরেজি সাহিত্যে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে চাকরি নিয়ে তিনি ভাগলপুরে যান। ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৭ বছর বয়সের তিনি হিন্দু কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ছাত্রদের আস্তিকতা হোক নাস্তিকতা হোক সব কিছুকেই আগে থেকে গ্রহণ না করে মুক্তবুদ্ধি তথা যুক্তি দিয়ে গ্রহণ বা বর্জন করার কথা বলেন। তিনি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা কুসংস্কারের জঞ্জাল সরানোর জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। ফলে তার ছাত্ররা মুক্তচিন্তা করতে শেখে এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন আচার সর্বস্ব ভেদাভেদে আকীর্ণ হিন্দুধর্মের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করতে থাকে। ডিরোজিওর ছাত্রদের মধ্যে নামকরা ছিলেন তারাচাঁদ চক্রবর্তী, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্যারীচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। তারা ইয়ং বেঙ্গল নামে পরিচিত হয়েছিল। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে ডিরোজিওর অনুপ্রেরণায় ছাত্ররা ‘পার্থেনন’ নামে একটি ইংরেজি দৈনিক প্রকাশ করে। কিন্তু ইতঃমধ্যে রক্ষণশীল হিন্দুরা ডিরোজিওর অপসারণের জন্য আন্দোলন শুরু করে দিয়েছিলেন। ফলে নির্দোষ ডিরোজিও চাকরিচ্যুত হন। ডিরোজিও পরে ‘হেসপারাম ও ইস্ট ইন্ডিয়ান’ নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে অকালে তার মৃত্যু হয়।