সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা গল্পের কাহিনি অনুসরণে দেখা যায়, পাঁচ বছর আগে যখন সৌখী জেলে যায়, তখন তার রুগণা দ্বিতীয়া স্ত্রী গর্ভবতী ছিল। সৌখীর অনুচররা প্রথম দুবছর ধরে প্রতি মাসে তার মাকে টাকা দিয়ে গেলেও তার পর থেকে তারা সৌখীর মায়ের সঙ্গে যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অর্থের অভাবে নাতি ও বউমাকে নিয়ে তাই এরপর সে অথৈ জলে পড়ে। সৌখীর দ্বিতীয় স্ত্রীর শরীর-স্বাস্থ্য এমনিতেই ভালাে ছিল না। তার ওপর, ছেলে হওয়ার ধকল নিতে না-পারায় একেবারে ভেঙে যায় তার শরীর। ছেলের মুখে অন্ন জোগাতে যে কিছু করবে ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য তাও সম্ভব হয় না সৌখীর দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষে। এদিকে সৌখীর মা খই ও মুড়ি ভেজে তা বাড়ি বাড়ি বিক্রি করা শুরু করে। কিন্তু এতে তার একার পেট চালানােই মুশকিল। তা ছাড়া, জাতে গােয়ালা বলে সে তার ঝি- গিরিও করতে পারে না, করলেও ডাকাত বাড়ির বউ অথবা মাকে কেউ বাড়ির পরিচারিকার কাজ দিতে চায় না। এসব কারণেই সৌখীর মা নাতি-সহ পুত্রবধূকে তার বেয়াইবাড়িতে পাঠাতে বাধ্য হয়। রাতে গায়ে-দেওয়ার কম্বলটা ছেড়া এবং খুব পুরােনাে হয়ে যাওয়ায় তা দিয়ে ভালােভাবে শীতের মােকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু সৌখীর মাকে তা দিয়েই কোনােরকমে কাজ চালাতে হচ্ছিল। সুতরাং, সৌখী শেষবার জেলে যাওয়ার পর পাঁচ বছর ধরে তার পরিবারের লােকেরা অত্যন্ত দুঃখ-দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল।

ডাকাতের মা ছােটোগল্পের প্রধান চরিত্র সৌখীর মা চরিত্রটির বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

অপত্যস্নেহ: পুত্রের চিন্তাভাবনা, আচার-আচরণের প্রতি তার যেমন পূর্ণ সমর্থন ছিল, তেমনি মেজাজি ডাকাত সর্দারের মা হিসেবে তার যথেষ্ট গর্বও ছিল। পুত্রের প্রতি তার সন্ত্রম ও স্নেহ দুই প্রবল ছিল বলেই পুত্রকে সে নিজের দুর্বিষহ দারিদ্র্যের কথা যেমন জানাতে পারেনি, তেমনি জেলফেরত ছেলেকে আলুচচ্চড়ি-ভাত খাওয়াতে তাকে ছিচকে চুরির মতাে মর্যাদাহানিকর কাজেও হাত দিতে হয়েছিল।

পুত্রবধূর প্রতি স্নেহপরায়ণতা: দুর্বল চেহারার পুত্রবধূর উপযুক্ত পরিচর্যার জন্য সে বাধ্য হয়েই নাতিসহ বউমাকে তার বেয়াই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

পরিশ্রমী: সৌখীর মা অত্যন্ত পরিশ্রমী মহিলা ছিল। তাই সৌখীর অনুচররা তার জেলে যাবার দুবছর পর টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে সে বাড়িতে খই-মুড়ি ভেজে তা বাড়ি বাড়ি বিক্রি করে নিজের পেট চালিয়ে নিয়েছে।

পুরুষতন্ত্রে আস্থা: নিরক্ষর সৌখীর মা পুরুষের আধিপত্যকে শিরােধার্য করে নিয়েছিল। তাই সে বলে বাপের বেটা, তাই মেজাজ অমন কড়া”। পুত্রের প্রহার বা শাসানিও তাই তাকে বিচলিত করেনি।

বাস্তববুদ্ধি: সৌখীর মার যথেষ্ট বাস্তববুদ্ধি থাকার জন্য দীর্ঘদিন পর ছেলে বাড়ি ফিরলে সেই মুহূর্তেই সে তার ছেলেকে তার ডাকাত-অনুচরদের স্বার্থপরতার কথা অথবা তার স্ত্রী-পুত্রের অসুস্থতার কথা জানায়নি।

এসব সত্ত্বেও তার একটা আবেগতড়িত ভুল-সিদ্ধান্তের জন্যই গল্পটি বিষাদময় পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে গিয়েছে।

সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা ছােটোগল্পের একটি ছােটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মাতাদীন পেশকারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

আইন-বাগীশ: পেশকার হওয়ার জন্যই মাদীনবাবু অত্যন্ত আইনবাগীশ ছিলেন। তাই লােটা-চুরি হওয়ার পর তার স্ত্রী যখন বাড়ির লক্ষ্মীশ্রী ফেরানাের জন্য অবিলম্বে আর-একটি লােটা কিনে আনতে বলেন, তখন তিনি স্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, “আইনের ধারায় স্পষ্ট লেখা আছে। যে, চুরির খবর পুলিশকে না দিলে জেল পর্যন্ত হতে পারে।” এ ছাড়া, বাসনওয়ালাকে শাসিয়েও বলেন, ‘চোরাই মাল রাখবার ধারা জানিস?’

বদমেজাজি: আইনচ মাতাদীন পেশকার অত্যন্ত বদমেজাজি ছিলেন বলেই লােটা-চুরির কারণে বিমর্ষ স্ত্রীর সাধারণ কথাতেই তিনি খেঁকিয়ে উঠে বলেন, বাজে বক্ বক কোরাে না। যখন তিনি দেখেন যে, বাসনওয়ালার দেখানাে শেষ লােটাটা তাঁরই, তখন হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে বাসনওয়ালার টুটি চেপে ধরেন। বলেন, “বল! এ লােটা কোত্থেকে পেলি? দিনে করিস দোকানদারি—আর রাতে বার হস সিধকাঠি নিয়ে!”

শুচিবায়ুগ্রস্ত: মাতাদীন পেশকার তার সাধের লােটাটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বেশ খানিকটা শুচিবায়ুগ্রস্ত ছিলেন বলেই দিনে বারকয়েক লােটা না মাজলে তাঁর হাত যেন নিশপিশ করত।

খুঁতখুঁতেমি: খুঁতখুঁতে মানুষ ছিলেন বলেই বাসনওয়ালার দেখানাে কোনাে লােটাই প্রথমে তার পছন্দ হয়নি।

লেখক সতীনাথ ভাদুড়ী মাতাদীন চরিত্রটিকে গল্পের উপযােগী করে তুলতেই তাকে কিছুটা রুক্ষ্ম এবং তির্যক চরিত্র করে গড়ে তুলেছেন।

সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা’ ছােটোগল্পের একটি ছােট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হল দারােগাবাবু। মাতাদীন পেশকার থানায় গিয়ে এই দারােগাবাবুর কাছেই লােটাচুরির ঘটনাটা লিখিয়ে আসেন। তারপর নতুন লােটা কেনার জন্য বাসনের দোকানে গিয়ে মাতাদীন চুরির কিনারা করলে খবর পেয়ে সাইকেল নিয়ে দারােগাবাবু নিজে অকুস্থলে চলে আসেন। লেখক দারােগাবাবুর কাজকর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করার জন্যই বলেছেন, “চোর ধরা পড়বার পর দারােগাসাহেবের কাজে আর টিলেমি‌ নেই। দারােগাবাবু তাই এরপর অভিযােগকারী মাতাদীনবাবু এবং বাসনওয়ালাকে নিয়ে সৌখীদের বাড়িতে তদন্তের জন্য উপস্থিত হন। মাকে বাঁচানাের জন্য সৌখী নিজে চুরির দায় স্বীকার করলে দারােগাবাবু তার অনুচরদের দিকে বিজয়ীর দৃষ্টিতে তাকান। ভাবখানা এমন যে, অনেক বেলা অবধি ডাকাত সৌখীকে ঘুমন্ত দেখে তিনি আগেই অনুমান করেছিলেন যে, সৌখীই চোর, বুড়িকে প্রশ্ন করেছিলেন কেবল সত্য-উদ্ঘাটনের জন্যই। তাই বৃদ্ধার অনুরােধে কর্ণপাত না করে দারােগাবাবু চোর সৌখীকে নিয়ে সগর্বে থানায় চলে যান।

সুতরাং দারােগাসাহেব তার কাজের ক্ষেত্রে বেশ অদূরদর্শী। চোরের কাছে পৌঁছেও তাই বুদ্ধিমত্তার অভাবেই তিনি প্রকৃত চোরকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দারােগাবাবু চরিত্রটিকে চরিত্র বিশ্লেষণের ভাষায় তাই ফ্লাট ক্যারেক্টার বলা যেতেই পারে।

তখন হয়তাে জানতে পারবেন যে,প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃত অংশে কী জানতে পারার কথা বলা হয়েছে লেখাে।

তেলেনাপােতা আবিষ্কার ছােটোগল্প অবলম্বনে গল্পকথকের সঙ্গে যামিনীর শেষ সাক্ষাৎকারটি বর্ণনা করাে।

তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে কথক ও যামিনীর শেষ সাক্ষাৎ-এর আগে কোথায়, কী পরিস্থিতিতে দেখা হয়েছিল?

‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকথক তেলেনাপােতার পানাপুকুরে ছিপ ফেলে যখন বসে ছিলেন, তখন বিভিন্ন প্রাণী কীভাবে তাকে বিরক্ত করেছিল?

“খানিক আগের ঘটনাটা আপনার কাছে অবাস্তব বলে মনে হবে।” -কোন ঘটনার কথা এখানে বলা হয়েছে?

“খাওয়া শেষ করে আপনারা তখন একটু বিশ্রাম করতে পারেন”—কোথায়, কীভাবে তারা খাওয়া শেষ করেছিলেন?

ব্যাপারটা কী এবার আপনারা হয়তাে জানতে চাইবেন- কোন্ ব্যাপার অতঃপর গল্পকথক জানতে পেরেছিলেন?

“হূ, এতাে বড়াে মুস্কিল দেখছি”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তা কাকে মুস্কিল’ বলে অভিহিত করেছেন লেখাে।

তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে গল্পকথক যামিনীকে বিয়ে করার ব্যাপারে তার মাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন?

“আপনাকে কৌতুহলী হয়ে যামিনীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই হবে” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এমনটা করার কারণ লেখাে।

“আপনাকে কৌতুহলী হয়ে যামিনীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই হবে” -যামিনী সম্পর্কে কোন কোন তথ্য গল্পকথক অবগত হয়েছিলেন?

“আপনাদের পদশব্দ শুনে সেই কঙ্কালের মধ্যেও যেন চাঞ্চল্য দেখা দেবে” -সেই কঙ্কালের মধ্যেও চাঞ্চল্য দেখা দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গ-সহ লেখাে।

“পুকুরের ঘাটের নির্জনতা আর ভঙ্গ হবে না তারপর।” -পুকুরের ঘাটের নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।

“পুকুরের ঘাটের নির্জনতা আর ভঙ্গ হবে না তারপর।” -‘পুকুরের ঘাটের’ নির্জনতা ইতিপূর্বে কীভাবে ভঙ্গ হয়েছিল তা লেখাে।

“এই জনহীন ঘুমের দেশে সত্যি ওরকম মেয়ে কোথাও আছে আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না।”—ওরকম মেয়ে দেখে বিশ্বাস করতে না পারার কারণ কী?

“ব্যাপারটা কী এবার হয়তাে জানতে চাইবেন।” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে।

তেলেনাপােতা ত্যাগ করার পর থেকে কীভাবে তেলেনাপােতা এবং যামিনীর স্মৃতি গল্পকথকের মন থেকে ক্রমশ মলিন হয়ে যায় তা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্প অবলম্বনে লেখাে।

তেলেনাপােতা যাওয়াকে লেখক ‘আবিষ্কার’ বলেছেন কেন?

“মনে হবে তেলেনাপােতা বলৈ কোথায় কিছু সত্যি নেই” -এ কথা কার মনে হবে? এই মনে হওয়ার কারণ কী?

তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পটির নামকরণ কতটা সার্থক আলােচনা করাে।

“আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনি নিশ্চয় বিস্মৃত হবেন না।” -আসল উদ্দেশ্য কোনটি? সেই উদ্দেশ্য সাধনে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী করলেন?

ছােটোগল্প হিসেবে ‘ডাকাতের মা’ কতটা সার্থক আলােচনা করাে।

‘ডাকাতের মা’ ছােটোগল্পের মূল চরিত্র কে—সৌখী না তার মা?

ডাকাতের মা গল্পে একটি ডাকাত পরিবারের কথা যেভাবে ফুটে উঠেছে তা আলােচনা করাে।

ডাকাতের মা গল্পে ন্যায়-অন্যায় বােধ যেভাবে আবর্তিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় বুঝিয়ে লেখাে।

ডাকাতের মা ছােটোগল্প অবলম্বনে ডাকাত-সর্দার সৌখীর চরিত্র আলােচনা করাে।

‘ডাকাতের মা’ গল্পে সৌখীর বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে প্রবেশ করা থেকে শুরু করে ঘরে ঢােকা অবধি সময়কালের বিস্তৃত বর্ণনা দাও।