ঠান্ডা লড়াই কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে (১৯৪৫ খ্রি.) সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট এবং আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে কোনাে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না হলেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চলতে থাকে। প্রকৃত যুদ্ধের সূচনা না হলেও উভয়ের মধ্যে চলতে থাকা এই যুদ্ধের পরিবেশকে ঠান্ডা লড়াই নামে অভিহিত করা হয়।

‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?

মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর The Cold War’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম ঠান্ডা যুদ্ধ’ কথাটি ব্যবহার করেন।

ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব ঘটে কটি পর্যায়ে?

ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব ঘটে তিনটি পর্যায়ে, যথা- [i] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী পর্যায়, [ii] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পর্যায়, [iii] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়।

বিশ্ব রাজনীতিতে কোন ঘটনার পর দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির জন্ম হয়?

সােভিয়েত রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর বিশ্বে দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির জন্ম হয়।

কখন দ্বিমেরু বিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী জোট গড়ে উঠলে দ্বিমেরু বিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল।

ইয়াল্টা সম্মেলন কেন ডাকা হয়?

ইয়াল্টা সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল- [i] বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলা, [ii] যুদ্ধের পর জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা, [iii] পােল্যান্ডের সমস্যার সমাধান করা প্রভৃতি।

কবে, কী উদ্দেশ্যে মেডাে গঠিত হয়?

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্যে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ করা এবং এখানকার তৈলসম্পদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকার মদতে মধ্যপ্রাচ্যে গঠিত হয় মেডো যার পরে নাম হয় CENTO।

অতীত স্মরণ (Short-Q&A)

উনবিংশ ও বিংশ শতকে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার (Short-Q&A)

ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি: নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য (Short-Q&A)

সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (Short-Q&A)

ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (Short-Q&A)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং উপনিবেশসমূহ (Short-Q&A)

অব-উপনিবেশীকরণ (Short-Q&A)

টুম্যান নীতি কী?

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় (১৯৪৭ খ্রি., ১২ মার্চ) তুরস্ক ও গ্রিস-সহ বিশ্বের যে-কোনাে দেশকে সােভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন, যা টুম্যান নীতি নামে পরিচিত।

টুম্যান কে ছিলেন?

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ছিলেন হ্যারি টুম্যান।

কেন্নানের বেষ্টনী নীতি কী?

রাশিয়ায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কোন এক প্রবন্ধে সােভিয়েত রাশিয়ার আক্রমণাত্মক নীতি প্রতিহত করার এবং সােভিয়েত প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার যে নীতি পেশ করেন, তা কেন্নানের বেষ্টনী নীতি নামে পরিচিত।

মার্শাল পরিকল্পনা কী?

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরােপে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এক পরিকল্পনা পেশ করেন, যা মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত।

মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কী ছিল?

মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল- [i] ইউরােপের অর্থনৈতিক সংকট দূর করা, [ii] সােভিয়েত রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিহত করা, [iii] কমিউনিস্টদের অগ্রগতি রােধ করা, [iv] মার্কিন বাণিজ্যের প্রসার ঘটানাে প্রভৃতি।

‘আনরা’ (UNRRA) কী?

‘আনরা’ হল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রশাসন (United Nations Relief and Rehabilitation Association)। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

কমিকন কীভাবে গঠিত হয়েছিল?

সােভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মার্শাল পরিকল্পনার প্রত্যুত্তর হিসেবে কমিকন (COMECONI Council for Mutual Economic Assistance) নামে একটি আর্থিক সহায়তা পরিষদ গঠন করে।

পেরেস্ত্রৈকা কী?

সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গর্বাচেভ প্রবর্তিত পেরেস্ত্রৈকার অর্থ হল ‘অর্থনৈতিক পুনর্গঠন’। এই নীতিতে পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। গ্রহণের কথা বলা হয়।

গ্লাসনস্ত কী?

সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গর্বাচেভ প্রবর্তিত ‘গ্লাসনস্ত শব্দটির অর্থ হল ‘মুক্ত মন। এর দ্বারা রাশিয়ায় রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই স্বাধীন ও মুক্ত আলােচনার কথা বলা হয়।

ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত শক্তিজোটগুলির নাম উল্লেখ করাে।

ঠান্ডা লড়াই-এর প্রেক্ষাপটে সােভিয়েত আগ্রাসন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথমেগড়ে তােলে উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (NATO)। তারপর একে একে গড়ে তােলে ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা (SEATO); ‘মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষ সংস্থা’ (MEDO) পরবর্তীকালে এটির নাম হয় ‘মধ্যপ্রাচ্য এশিয়া চুক্তি সংস্থা’ (CENTO)]; ‘অ্যানজাস’ (ANZUS) ইত্যাদি শক্তিজোট।

সােভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে কীভাবে ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা গঠিত হয়?

সােভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব ইউরােপীয় দেশগুলিকে (রাশিয়া, পােল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, বালগেরিয়া, আলবানিয়া ও পূর্ব জার্মানি) নিয়ে গঠন করে ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা (Warsaw Pact Organisation বা WPO), যা ছিল একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

বুলগানিন কে ছিলেন?

বুলগানিন ছিলেন সােভিয়েত রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।

[Book Download – ক্লিক করুন]

ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাগুলি কী কী?

ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাগুলি মূলত চারটি। এগুলি হল—[i] চিরায়ত বা ঐতিহ্যবাহী বা রক্ষণশীল ধারণা (Traditional Orthodox View), [ii] সংশােধনবাদী ধারণা (Revisionist View), [iii] বাস্তববাদী ধারণা (Objective বা Realistic View) এবং [iv] অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারণা (View of Economic Confict)।

ঠান্ডা লড়াইয়ের চিরায়ত বা ঐতিহ্যবাহী ধারণাটির মূল বক্তব্য কী?

ঐতিহ্যবাহী ধারণার মূল বক্তব্য হল—ঠান্ডা লড়াই-এর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা সােভিয়েত ইউনিয়নই বেশি দায়ী।

ঠান্ডা লড়াইয়ের সংশােধনবাদী ধারণাটির মূল বক্তব্য কী?

সংশােধনবাদী ধারণার মূল বক্তব্য হল—সােভিয়েত ইউনিয়নের সম্প্রসারণশীল নীতি নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতি ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিল।

ঠান্ডা লড়াইয়ের বাস্তববাদী বক্তব্যের মূল ধারণাটি কী?

বাস্তববাদী ধারণা ঠান্ডা যুদ্ধের জন্য সােভিয়েত বা মার্কিন কোনাে একটি পক্ষকে চূড়ান্তভাবে দায়ী করায় বিশ্বাসী নয়। এই ধারণা অনুযায়ী ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনার জন্য সােভিয়েত বা মার্কিন উভয়পক্ষই দায়ী অথবা কোনা পক্ষই দায়ী ছিল না।

ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাগুলির ওপর সাম্প্রতিক অভিমত কী?

সাম্প্রতিক অভিমত অনুযায়ী সােভিয়েত কর্তৃত্ববাদী মনােভাব এবং মার্কিন ক্ষমতা লাভের প্রবণতা ঠান্ডা লড়াই-এর জন্ম দিয়েছিল।

কীসের ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তিসাম্যের সূচনা ঘটেছিল?

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও ইটালির একত্রীকরণের ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তিসাম্যের (Balance of Power) সূচনা ঘটেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কোন বৈঠকে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খােলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়?

১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কায়রাে ও তেহরান বৈঠকে চার্চিল, রুজভেল্ট ও স্টালিন দ্বিতীয় রণাঙ্গন খােলার সিদ্ধান্ত নেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে পূর্ব ইউরােপের কোন্ দেশগুলিতে রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হয়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে সােভিয়েত রাশিয়া পূর্ব ইউরােপের দেশগুলিতে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রসার ঘটায়। শুধু তাই নয় পােল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, বালগেরিয়া, যুগােশ্লাভিয়া, আলবানিয়া, পূর্ব জার্মানিতে সােভিয়েত নিয়ন্ত্রণাধী কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

স্টালিন কেন উদার ইউরােপের ঘােষণা করেন?

স্টালিন রাশিয়ার পাশাপাশি ইউরােপবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার ও নিজ নিজ দেশের সরকার গঠনের মতামত প্রয়ােগের ওপর জোর দেন। এই লক্ষ্যপূরণের জন্য তিনি রুজভেল্ট-এর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করেন ও উদার ইউরােপের ঘােষণা করেন।

ট্রম্যান নীতির দুটি উদ্দেশ্য কী ছিল?

টুম্যান নীতির উদ্দেশ্য ছিল—[i] অর্থ সাহায্যের নামে মার্কিন অস্ত্র ও শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করা এবং বিভিন্ন দেশে অল্প সুদে মার্কিন মুলধন লগ্নী করা। [ii] মার্কিন শিল্প ও বাণিজ্য এবং অস্ত্র কারখানাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা।

মার্শাল পরিকল্পনার সরকারি নাম কী?

মার্শাল পরিকল্পনার সরকারি নাম হল—ইউরােপীয় পুনরুদ্ধার কর্মসূচি বা European Recovery Programme (ERP)I

মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশগুলি মিলিত হয়ে কোন্ গােষ্ঠী গঠন করেছিল?

মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশগুলি মিলিত হয়ে গঠন করেছিল—ইউরােপীয় আর্থিক সহায়তা গােষ্ঠী বা Organisation of European Economic Cooperation (OEEC)|

কোন্ দেশগুলি মার্শাল পরিকল্পনার ঘােষণামতাে মার্কিন আর্থিক সাহায্য গ্রহণের যৌথ পরিকল্পনা নেয়?

মার্শাল পরিকল্পনায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলিতে আর্থিক সাহায্যদানের ঘােষণা করা হয়। এই মার্কিন আর্থিক সাহায্য গ্রহণের জন্য ১৬টি ইউরোপীয় রাষ্ট্র যৌথ পরিকল্পনা নেয়। এই রাষ্ট্রগুলি হল ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইটালি, লাক্সেমবার্গ, পাের্তুগাল, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, গ্রিস, তুরস্ক, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, জার্মানি।

মার্শাল পরিকল্পনার দুটি মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

মার্শাল পরিকল্পনার দুটি উদ্দেশ্য ছিল—[i] যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরােপের দেশগুলিকে অর্থসাহায্য দিয়ে তাদের সােভিয়েত প্রভাব থেকে মুক্ত করা। [ii] অর্থসাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলিকে মার্কিন নীতির প্রতি আস্থাশীল করে তুলে মার্কিন রাষ্ট্রজোটের শক্তি বাড়ানাে।

তৃতীয় বিশ্বে ঠান্ডা লড়াই-এর প্রভাবে উদ্ভূত কয়েকটি সংকটের নাম লেখাে।

তৃতীয় বিশ্বে ঠান্ডা লড়াই-এর প্রভাবে কোরিয়া সংকট, ভিয়েতনাম সংকট, সুয়েজ সংকট, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট প্রভৃতি সৃষ্টি হয়।

কাদের মধ্যে ম্যানিলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফিলিপিনস, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইত্যাদি দেশে ম্যানিলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪ খ্রি.)। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলিকে নিয়ে গঠিত হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা (SEATO)I

সিয়াটো কেন গঠিত হয়?

মার্কিন মদতে কমিউনিস্ট চিনকে প্রতিরােধ ও ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট আগ্রাসন রােধ করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা বা সিয়াটো (SEATO)। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্লকে কমিউনিস্ট আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আমেরিকার নেতৃত্বে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কেন্দ্র করে সিয়াটো (SEATO) গড়ে ওঠে।

SEATO পুরাে নাম কী?

SEATOর পুরাে নাম হল Southeast Asia Treaty Organization (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা)।

ফালটন বক্তৃতার বিষয়বস্তু কী ছিল?

ফালটন বক্তৃতায় চার্চিল বলেছিলেন—আমেরিকা যদি এখনই সতর্ক না হয়, তাহলে একটা প্রাগৈতিহাসিক বিশাল আকৃতির পাখির মতাে সােভিয়েত রাশিয়া একদিন সারা ইউরােপীয় সভ্যতাকে গ্রাস করবে। তাই ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ প্রতিরােধ গড়ে তুলে রাশিয়ার ওই সম্প্রসারণ স্তব্ধ করে দিতে তিনি আমেরিকাকে আহ্বান জানান।

মেডাে বা সেন্টো প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য কী ছিল?

মেডাে বা সেন্টো প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল—মধ্যপ্রাচ্যে রুশ আগ্রাসন রােধ করা ও সেখানকার তৈল সম্পদের ওপর মার্কিন আধিপত্য স্থাপন করা।

মধ্যপ্রাচ্য বলতে কী বােঝ?

সাধারণভাবে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীর থেকে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ভূ-ভাগ মধ্যপ্রাচ্য নামে পরিচিত। তবে মিশরকেও এর মধ্যে ধরা হয়। মিশর ছাড়া এই অঞ্চলের উল্লেখযােগ্য রাষ্ট্রগুলি হল তুরস্ক, প্যালেস্টাইন, ইরাক, ইরান, জর্ডন ও সৌদি আরব।

NATO কী?

বার্লিন সংকটের পর রাশিয়া যাতে ভবিষ্যতে আর কোনাে সংকট তৈরি করতে না পারে তার জন্য পশ্চিমি দেশগুলি একজোট হয়ে যে সামরিক শক্তিজোট গঠন করে তার নাম NATO I

ন্যাটো (NATO) কবে গঠিত হয়?

৪ এপ্রিল ১৯৪৯-এ ন্যাটো গঠিত হয়।

ন্যাটোর জন্ম হয় কেন?

বার্লিন সংকটের পর রাশিয়া যাতে ভবিষ্যতে আর কোনাে সংকট তৈরি করতে না পারে সেই লক্ষ্যে পশ্চিমি দেশগুলি একত্রিত হয়ে ন্যাটো নামে সামরিক শক্তিজোট গঠন করে।

NATO-এর পুরাে নাম কী? এর অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি দেশগুলির নাম কী?

NATO-এর পুরাে নাম হল ‘নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন। ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি দেশ হল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইতালি, নরওয়ে, পাের্তুগাল, নেদারল্যান্ড, গ্রিস ও তুরস্ক, পশ্চিম জার্মানি।

ন্যাটো সামরিক জোটের কয়টি ভাগ ছিল?

ন্যাটো সামরিক জোটের তিনটি ভাগ ছিল, যথা—[i] অ্যালায়েড কম্যান্ড, [ii] আটলান্টিক অ্যালায়েড কম্যান্ড চ্যানেল, [iii] অ্যালায়েড কম্যান্ড ইউরােপ।

কীসের উদ্দেশ্যে মার্কিন উদ্যোগে অ্যানজাস গঠিত হয়েছিল?

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে মার্কিন উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল অ্যানজাস।

ওয়ারশ চুক্তি (Warsaw Pact) কবে ও কেন স্বাক্ষরিত হয়?

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে সাম্যবাদের প্রসারের লক্ষ্যে ওয়ারশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ওয়ারশ চুক্তি কাদের নিয়ে হয়েছিল?

মধ্য ও পূর্ব ইউরােপের কমিউনিস্ট দেশগুলির মধ্যে ওয়ারশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল (১৪ মে, ১৯৫৫ খ্রি.)। এই চুক্তিতে অংশ নিয়েছিল রাশিয়া, বালগেরিয়া, হাঙ্গেরি, পােল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি, আলবানিয়া, রুমানিয়া, চিন এবং চেকোশ্লোভাকিয়া।

ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে সােভিয়েত ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে গঠিত সংস্থাগুলির নাম লেখাে।

সােভিয়েত ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে গঠিত সংস্থাগুলির নাম হল—কমিনফর্ম’, ‘ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা’।

ব্রেজনেভ তত্ত্ব (Brezhnev Doctrine) বলতে কী বােঝ?

পূর্ব ইউরােপের কমিউনিস্ট দেশগুলিতে কমিউনিস্ট বিরােধী আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যে ব্রেজনেভ যেতত্ত্বটি ঘােষণা করেছিলেন, সেটিই ব্রেজনেভ তত্ত্ব’নামে পরিচিত। ওই ঘােষণায় ব্রেজনেভ যা বলেছিলেন তার মূল কথা হল—কমিউনিস্ট দল পরিচালিত দেশগুলিকে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

জোটনিরপেক্ষ নীতি কাকে বলে?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে (১৯৪৫ খ্রি.) গড়ে ওঠা সােভিয়েত সাম্যবাদী জোট এবং মার্কিন পুঁজিবাদী জোট এই দুই-এর প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতি হল জোটনিরপেক্ষ নীতি।

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের জেনেভা সম্মেলন কেন ডাকা হয়েছিল?

ফ্রান্স ও ভিয়েতনামের মধ্যে যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজয়ের পর ভিয়েতনামের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের উদ্দেশ্যে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে জেনেভা সম্মেলন ডাকা হয়েছিল।

জেনেভা সম্মেলনে কোন্ কোন্ দেশ অংশগ্রহণ করে?

জেনেভা সম্মেলনে আমেরিকা, ব্রিটেন, চিন, ফ্রান্স, ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া অংশগ্রহণ করে।

বার্লিন অবরােধ বলতে কী বােঝায়?

সােভিয়েত ইউনিয়ন কিছু উদ্দেশ্যপূরণের লক্ষ্যে পশ্চিমি রাষ্ট্রজোটের পূর্ব বা পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশের সড়কপথ (যা ছিল সােভিয়েতের অধীনস্থ) অবরােধ করে (১৯৪৮ খ্রি., ২৪ জুন), যা বার্লিন অবরােধ নামে পরিচিত।

বার্লিন সংকটের ফলে জার্মানি কোন্ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়?

বার্লিন সংকটের ফলে জার্মানি পশ্চিম জার্মান যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র এবং পূর্ব জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র—এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।

বার্লিন এয়ারলিফট (Berlin Airlift) কী?

সােভিয়েত কর্তৃক বার্লিন অবরােধের কাছে নতিস্বীকার না করে ব্রিটেন ও আমেরিকা দীর্ঘ ১১ মাস ধরে ১৪০০ বিমানের সাহায্যে আকাশপথে বার্লিনে খাদ্য, ঔষধ, তেল, কয়লা প্রভৃতির জোগান দেয়, যা বার্লিন এয়ারলিফট নামে পরিচিত।

সুয়েজ সংকটের আশু কারণ কী ছিল?

সুয়েজ সংকটের আশু কারণ ছিল মিশরের শাসক গামাল আবদেল নাসের কর্তৃক সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির জাতীয়করণ (২৬ জুলাই, ১৯৫৬ খ্রি.) করা।

কে সুয়েজ খালের জাতীয়করণ করেন?

মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘােষণায় সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানি জাতীয়করণ করার কথা জানান (১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই)।

নাসের কেন সুয়েজ খালের জাতীয়করণ করেন?

নাসের নীলনদের ওপর আসওয়ান শহরের কাছে আসওয়ান বাঁধ প্রকল্প নামে একটি নদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ওই কাজে অর্থ জোগানাের জন্য তিনি ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও বিশ্বব্যাংকের দ্বারস্থ হন। তারা ওই ঋণ দিতে প্রথমে সম্মত হয়। কিন্তু অল্প কাল পরেই ইংল্যান্ড ও আমেরিকা ওই ঋণ দিতে অস্বীকার করে। শুধু তাই নয়, তারা এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংককেও প্ররােচিত করে। বিশ্বব্যাংক এরপর মিশরের ওই ঋণের আবেদন বাতিল করে দেয়। এই কারণেই ক্ষিপ্ত নাসের সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির জাতীয়করণ করেন।

সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা কী ছিল?

সুয়েজ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ভারতের বিদেশমন্ত্রী কৃয় মেনন ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে যােগসূত্রের ভূমিকা পালন করেন এবং পাঁচ দফা পরিকল্পনা পেশ করেন।

ফিদেল কাস্ত্রো কে ছিলেন?

ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন কিউবার জাতীয়তাবাদী নেতা। তাঁর নেতৃত্বে কিউবায় একনায়কতন্ত্রী বাতিস্তা সরকারের বদলে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণকে কেন্দ্র করে কাদের মধ্যে প্রবল দ্বন্দ্ব শুরু হয়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ক্যারিবিয়ান সাগরের বুকে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণকে কেন্দ্র করে সােভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক স্বল্পকালীন অথচ প্রবল দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই সংকট কিউবা ক্ষেপনাস্ত্র সংকট নামে পরিচিত।

‘প্ল্যান্ট চুক্তি’ কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে চুক্তির দ্বারা কিউবার অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা লাভ করে (১৯০৩ খ্রি.) তার নাম ‘প্ল্যান্ট চুক্তি।

কোরিয়া সংকটে ভারতের ভূমিকা কী ছিল?

রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা কর্তৃক গঠিত এক অস্থায়ী কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কে. পি. এস. মেনন কোরিয়া থেকে বিদেশি সেনা অপসারণ এবং সেখানে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দ্বারা এক জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব রাখেন।

কোরিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ায় কাদের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়?

কোরিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন প্রভাবাধীন এবং উত্তর কোরিয়ায় সােভিয়েত নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার গড়ে ওঠে। দক্ষিণ কোরিয়ায় সিংম্যান রি-র নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তর কোরিয়ায় কিম ইল সুঙ-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হয়।

৩৮° অক্ষরেখা কী?

১৯৪৫ সালে কোরিয়াবাসীর অনুমতি ছাড়াই কোরিয়াকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে ৩৮° অক্ষরেখাকে দুই কোরিয়ার মধ্যে সীমারেখা হিসেবে ধার্য করা হয়। এই অক্ষরেখা বরাবর উত্তরাংশে সােভিয়েত রাশিয়ার এবং দক্ষিণ অংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।

মার্কিন মদতে গঠিত দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের নাম লেখাে।

মার্কিন মদতে গঠিত দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের নাম হল—প্রজাতান্ত্রিক কোরিয়া (Republic of Korea)|

সােভিয়েত মদতে গঠিত উত্তর কোরিয়ার সরকারের নাম লেখাে।

সােভিয়েত মদতে গঠিত উত্তর কোরিয়ার সরকারের নাম হল—গণতান্ত্রিক কোরিয়া (Peoples’ Democratic Republic of Korea) I

কীভাবে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে প্রত্যক্ষ লড়াই শুরু হয়?

দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন একাধিপত্য সােভিয়েত রাশিয়া মেনে নিতে পারেনি। তাই ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন রুশ মদতে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করে এবং দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

বিভাজনের পর দুই কোরিয়ার রাজধানী কোথায় ছিল?

বিভাজনের পর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী হয় সিওল এবং উত্তর কোরিয়ার রাজধানী হয় পিয়ংইয়ং।

ইমরে নেগি কে ছিলেন?

ইমরে নেগি ছিলেন হাঙ্গেরি যুক্তফ্রন্টের নেতা। রুশ প্রভাবিত হাঙ্গেরির নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন স্টালিন বিরােধী গােষ্ঠীভুক্ত।

মার্শাল টিটো কে ছিলেন?

মার্শাল টিটো ছিলেন যুগােশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি যুগােশ্লাভিয়াকে সােভিয়েত প্রভাব মুক্ত করার চেষ্টা করলে রুশ রাষ্ট্রপ্রধান স্টালিনের সঙ্গে তার সংঘাত বাধে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ কী?

হাে-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামবাসী দীর্ঘ ৩০ বছর (১৯৪৫-৭৫ খ্রি.) ধরে যে যুদ্ধ চালিয়েছিল, তা ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে পরিচিত।

ভিয়েতকং কারা?

ভিয়েতকং ছিল উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্টদের দ্বারা ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী সামরিক বাহিনী। এর পুরাে নাম ছিল The People’s Liberation Armed Forces (PLAF)। এই বাহিনী ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং অন্যদিকে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যায়।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রেক্ষাপট লেখাে।

প্রথমদিকে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ ও পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভিয়েতনামে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, চিন ও সােভিয়েত সাহায্যপুষ্ট ভিয়েতনামবাসী রুখে দাঁড়ায়। শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী ভিয়েতনাম যুদ্ধ।

ভিয়েতমিন কী?

হাে-চি-মিন ভিয়েতনামের মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে ‘লিগ ফর দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স ইন ভিয়েতনাম’ (League for the Independence in Vietnam) গড়ে তােলেন। এই সংগঠনটি সংক্ষেপে ভিয়েতমিন নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

নেভারে প্ল্যান কী?

ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে ফরাসি সেনাপতি নেভারে ভিয়েতমিনদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এক নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যা ‘নেভারে প্ল্যান’ নামে পরিচিত।

দিয়েন-বিয়েন ফু ঘটনা কী?

টংকিং-এর দিয়েন-বিয়েন-ফু নামে ভিয়েতনামের একটি গ্রামে ফরাসিরা অস্ত্রঘাঁটি নির্মাণ করলে ভিয়েতনামিরা তা ধ্বংস করে দেন যা দিয়েন-বিয়েন ফু ঘটনা নামে পরিচিত।

জেনেভায় ইন্দোচিন সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত মূল সিদ্ধান্ত কী ছিল?

জেনেভা সম্মেলনের মূল সিদ্ধান্তে বলা হয়-১৭° অক্ষরেখা বরাবর ভিয়েতনামকে দু ভাগে ভাগ করা হবে এবং ওই অক্ষরেখার উত্তরাঞ্চলে ভিয়েতমিনদের এবং দক্ষিণাঞ্লে ফরাসি নিয়ন্ত্রণাধীন ন-দিন-দিয়েম (Ngo-Dinh-Diem)-এর শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

মাই লাই ঘটনা কী?

ভিয়েতনাম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভিয়েতনামে মাই লাই নামক স্থানে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে মার্কিন সেনাদল প্রায় ৫০০ জন নিরীহ ভিয়েতনামবাসীকে হত্যা করে। এই ঘটনার নাম মাই লাই ঘটনা।

হাে-চি-মিন কে ছিলেন?

হাে-চি-মিন ছিলেন ভিয়েতনামের মুক্তিসংগ্রামের পথ-প্রদর্শক ও প্রাণপুরুষ। তাঁর নেতৃত্বে ভিয়েতনামবাসী দীর্ঘ ৩০ বছর (১৯৪৫-৭৫ খ্রি.) ধরে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছিল।

কোন্ বছর ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘােষিত হয়?

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘােষিত হয়।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে যােগ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কীভাবে আমেরিকার মর্যাদাহানি ঘটেছিল?

ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে আমেরিকাকে শেষপর্যন্ত লজ্জা, অপমান ও কলঙ্কের বােঝা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করতে হয়েছিল, এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার মর্যাদাহানি ঘটেছিল।

ভিয়েতনাম সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিপুঞ্জের তদারকি কমিশনের কী ভূমিকা ছিল?

ভিয়েতনাম সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ভারত, পােল্যান্ড, কানাডা নিয়ে গঠিত হয়। জাতিপুঞ্জের তদারকি কমিশন। স্থির হয় এই কমিশনের মাধ্যমে দুই ভিয়েতনামের ঐক্যের মীমাংসা করা হবে। ততদিনে হাে-চি-মিনের ভিয়েতমিনের সরকারের অধীনে থাকবে উত্তর ভিয়েতনাম এবং ফরাসি সেনার অধীনে থাকবে দক্ষিণ ভিয়েতনাম।

ক্ষমার অভিযান (Mission of Mercy) কী?

১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির পশ্চিমের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়। বার্লিন অবরােধের ৬৯ বছর পূর্তি উৎসবে হাজার হাজার বার্লিনবাসীর বার্লিনে সমবেত হওয়ার আভিযানটি (১২ মে, ২০০৯ খ্রি.) ক্ষমার অভিযান’ নামে পরিচিত।

পটসডাম সম্মেলনে মূল আলােচ্য বিষয় কী ছিল?

পটসডাম সম্মেলনে মূল্য আলােচ্য বিষয় ছিল জার্মানির কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায়, জার্মান সমাজব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং পােল্যান্ডের পশ্চিম সীমান্ত নির্ধারণ।

ইয়াল্টা সম্মেলনের মূল আলােচ্য বিষয় কী ছিল?

ইয়াল্টা সম্মেলনের মূল আলােচ্য বিষয় ছিল জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইউরােপের রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন।

ফালটন বক্তৃতা কে, কবে প্রদান করেন?

প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের অন্তর্গত ফালটনের ওয়েস্টমিনস্টার কলেজে ফালটন বক্তৃতা প্রদান করেন।

চার্চিল কে?

উইনস্টন চার্চিল ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

কোন ঘটনার পর বিশ্বে সার্বিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের প্রচেষ্টা শুরু হয়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরােসিমা ও নাগাসাকি শহর দুটিতে আণবিক বােমার বিস্ফোরণ ঘটালে (১৯৪৫ খ্রি., আগস্ট) সার্বিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের প্রচেষ্টা শুরু হয়।

MAD তত্ত্ব কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সােভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় তরফেই পারমাণবিক বােমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে, ফলে ভবিষ্যতে পারমাণবিক যুদ্ধে বিশ্বে ধ্বংসসাধনের সম্ভাবনা দেখা দেয়, যা MAD তত্ত্ব নামে পরিচিত।

বারুচ পরিকল্পনা কী?

মার্কিন রাষ্ট্রপতি টুম্যান কর্তৃক মনােনীত পারমাণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি বার্নার্ড বারুচ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কিত যে পরিকল্পনা জাতিপুঞ্জের আণবিক শক্তি বিষয়ক একটি কমিশনের কাছে পেশ করেন, তা বারুচ পরিকল্পনা নামে পরিচিত।

আইজেনহাওয়ার তত্ত্ব কী?

মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার এক ঘােষণায় বলেন—আন্তর্জাতিক সাম্যবাদী দেশ দ্বারা বা সাম্যবাদ নিয়ন্ত্রিত কোনাে দেশ দ্বারা অন্য কোনাে দেশ আক্রান্ত হলে এবং সেই আক্রান্ত দেশের কাছ থেকে সাহায্যের আবেদন এলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সাহায্য দেবে। এই সাম্যবাদ প্রতিরােধ তত্ত্ব আইজেনহাওয়ার তত্ত্ব নামে পরিচিত।

আইজেনহাওয়ার তার পরিকল্পনায় কী উল্লেখ করেন?

মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার রাষ্ট্রসংঘে পেশ করা তার পরিকল্পনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সামরিক ঘাঁটিগুলির আলােকচিত্র বিনিময়ের উল্লেখ করেন এবং রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে এক আন্তর্জাতিক শক্তি কমিশন গঠনের কথা বলেন।

BRAVO Test কী?

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিকিনি অ্যাটল নামক দ্বীপে এক প্রচণ্ড শক্তিশালী হাইড্রোজেন বােমার বিস্ফোরণ ঘটায়, ১৫ মেগাটন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বােমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের ঘটনাটি BRAVO Test নামে পরিচিত।

কোন্ প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে শান্তির লক্ষ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রস্তাব পেশ করে?

সােভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন প্রথমে আণবিক বােমা আবিষ্কার করে, পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়ন আরও শক্তিশালী, হাইড্রোজেন বােমা আবিষ্কার করে। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে শান্তির লক্ষ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রস্তাব পেশ করেন।

ইউরেটম (EURATOM) কী?

ইউরেটম হল ইউরােপীয় আণবিক শক্তি কমিউনিটি। ইউরোপের পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলির উদ্যোগে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়।

বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত কয়েকটি চুক্তি উল্লেখ করাে।

পরমাণু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় একাধিক চুক্তি। যথা, দক্ষিণ মেরু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল করার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় আন্টার্কটিকা চুক্তি এবং দক্ষিণ আমেরিকাকে অস্ত্রমুক্ত করার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় ল্যাটেলােলকো (Tlalelolco) চুক্তি। এ ছাড়াও মার্কিন ও সােভিয়েত উভয়ের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় SALT-1 SALT-2 চুক্তি।

SDI (Strategic Defence Initiative) কর্মসূচিটি কী?

মার্কিন রাষ্ট্রপতি রােনাল্ড রেগান সােভিয়েত আক্রমণরােধের লক্ষ্যে এক নতুন প্রতিরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। সােভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্রকে মহাকাশেই ধ্বংস করে ফেলার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যে কর্মসূচি গৃহিত হয় তার নাম SDI (Strategic Defence Initiative)I

NTBT (Nuclear Test Ban Treaty)- কারা, কবে স্বাক্ষর করেছিলেন?

১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্ট মস্কোতে রাশিয়া ও আমেরিকা পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধের চুক্তি NTBT (Nuclear Test Ban Treaty)-তে স্বাক্ষর করেছিলেন।

নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাদের মধ্যে SALT-1 স্বাক্ষরিত হয়?

সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান ব্রেজনেভ এবং মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান রিচার্ড নিকসনের মধ্যে SALT- 1 চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাদের মধ্যে SALT-2 স্বাক্ষরিত হয়?

নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান ব্রেজনেভ এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার-এর মধ্যে SALT-2 চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাদের মধ্যে START-I চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গরবাচভ এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশের মধ্যে START-I চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (১৯৯১ খ্রি., জুলাই)।

নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাদের মধ্যে START-II চুক্তিতে স্বাক্ষরিত হয়?

নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে রুশ প্রজাতন্ত্রের প্রধান বরিস ইয়েলৎসিন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বুশের সঙ্গে START-II চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন (১৯৯৩ খ্রি., জানুয়ারি)।

SALT-1 চুক্তির অন্যতম শর্তে কী বলা হয়?

SALT-1 চুক্তির অন্যতম শর্তে বলা হয়—সােভিয়েত ও মার্কিন দু-পক্ষই ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের (ABM বা Anti-Ballistic Missile) দ্বারা নিজেদের রাজধানী সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলি রক্ষা করার অধিকার পাবে।

SALT-2 চুক্তির অন্যতম শর্ত হিসেবে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়?

SALT-2 চুক্তির অন্যতম শর্ত অনুসারে সােভিয়েত ও মার্কিন উভয় দেশের ক্ষেপণাস্ত্র এবং বােমারু বিমানের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।

গ্রোমিকো প্রস্তাব কী?

নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগে গঠিত অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশন পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব নেয়। সােভিয়েত রাশিয়া এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নতুন যে প্রস্তাব দেয় তার নাম গ্রোমিকো প্রস্তাব। এই প্রস্তাবে পারমাণবিক উৎপাদন ও তার ব্যবহারের বিরােধিতা করা হয়।

START-I চুক্তির ফলশ্রুতি লেখাে।

START-I চুক্তি অনুসারে সােভিয়েত ও মার্কিন এই দুই দেশ ১৬০০টি Strategic Nuclear Delivery Vehicles এবং ৬ হাজার যুদ্ধ বােমা রাখার অনুমতি লাভ করে।

START-II চুক্তির ফলশ্রুতি লেখাে।

START-II চুক্তি অনুযায়ী সােভিয়েত ও মার্কিন উভয় দেশ নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার অর্ধেকেরও বেশি নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে রাজি হয়।

‘Ostpolitik’ কী?

পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযােগিতা শুরু হলে পশিচিমইউরােপে অধিক ক্ষতির আশঙ্কায় পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলার উইলি ব্রান্ট এক নীতি নেন, যার নাম ‘Ostpolitik’। এই নীতির দ্বারা পূর্ব ইউরােপের সঙ্গে পশ্চিম ইউরােপে সুসম্পর্ক স্থাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়।

দাঁতাত কী?

সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী জোট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী জোটের মধ্যেকার ঠান্ডা লড়ায়ের অবসান প্রক্রিয়া দাঁতাত নামে পরিচিত। এই প্রক্রিয়ায় উভয় জোটের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হয় এবং উভয়ের মধ্যে রণনীতি বিষয়ে সমঝােতা গড়ে ওঠে।

সলিডারিটি আন্দোলন কী?

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে পােল্যান্ডে লেচ ওয়ালেসার নেতৃত্বে সাম্যবাদ-বিরােধী যে অহিংস আন্দোলন শুরু হয় তার নাম সলিডারিটি আন্দোলন।

কোন লক্ষ্যে ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে?

নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষা এবং সােভিয়েত ও মার্কিন উভয় জোটের কাছ থেকেই সমানভাবে সাহায্য নিয়ে নিজের দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে।

নির্জোট আন্দোলন বলতে কী বােঝ?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সােভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের কোনাে একটি জোটে যােগ না দিয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতিই হল জোটনিরপেক্ষ বা নির্জোট নীতি। এই জোটনিরপেক্ষ দেশগুলি নিজেদের স্বার্থে যে আন্দোলন গড়ে তােলে তার নাম নির্জোট আন্দোলন।

নির্জোট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দুজন নেতার নাম লেখাে।

নির্জোট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দুজন নেতার নাম হল জওহরলাল নেহরু ও মার্শাল টিটো।

‘কমনওয়েলথ’ কী?

স্বাধীন সার্বভৌম দেশগুলি নিয়ে ব্রিটেনের উদ্যোগে গঠিত এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হল কমনওয়েলথ। বর্তমানে কমনওয়েলথ-এর সদস্যসংখ্যা প্রায় ৫০টি।

পঞ্চশীল নীতি কী?

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি মেনেই ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে চিনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই দ্বিতীয় বার ভারতে এলে ভারত ও চিনের মধ্যে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যে ৫টি নীতি স্থির হয়, তা পঞ্চশীল নীতি (২৯ এপ্রিল, ১৯৫৪ খ্রি.) নামে পরিচিত।

পঞ্চশীল নীতি কবে গৃহীত হয়?

২৯ এপ্রিল ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পঞশীল নীতি গৃহীত হয়।

বান্দুং সম্মেলনের পরিচয় দাও।

ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৯টি দেশের প্রতিনিধিরা এক জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের পদক্ষেপ নেন (১৯৫৫ খ্রি., ১৮-২৬ এপ্রিল), যা বান্দুং সম্মেলন নামে পরিচিত। সম্মেলনে বর্ণবৈষম্যের অবসান, ঔপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তি, পারমাণবিক অস্ত্র-পরীক্ষা ও ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি বিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

বান্দুং সম্মেলনে চিনের প্রতিনিধি কে ছিলেন?

বান্দুং সম্মেলনে চিনের প্রতিনিধি ছিলেন চৌ-এন-লাই।

‘An Appeal for Peace’ কী?

যুগােশ্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে আয়ােজিত প্রথম নির্জোট সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর তত্ত্বাবধানে রচিত এক খসড়া প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত রাশিয়া উভয় রাষ্ট্রকেই কোনাে সংঘাতে জড়িত না হওয়ার অনুরােধ জানানাে হয়, যা ‘An Appeal for Peace’ নামে পরিচিত।

প্রথম নির্জোট সম্মেলন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

প্রথম নির্জোট সম্মেলন যুগােশ্লাভিয়ার বেলগ্রেড় শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান রূপকার কে ছিলেন?

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান রূপকার ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের দুজন নেতার নাম লেখাে।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের দুজন নেতা ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও যুগােশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল টিটো।

ব্যালফুর ঘােষণাপত্রে কী বলা হয়?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিদেশ-সচিব আর্থার ব্যালফুর এক ঘােষণাপত্র জারি করে বলেন—ব্রিটিশ সরকার প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় বাসভূমি গড়ে তােলার সাধ্যমতাে চেষ্টা চালাবে।

‘কিং ক্রেন কমিশন (১৯১৯ খ্রি.) কেন গঠিত হয়?

প্যালেস্টাইন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয় ‘কিং ক্রেন কমিশন (১৯১৯ খ্রি.)।

কারা, কেন আরব লিগ গঠন করে?

লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ট্রান্সজর্ডন, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও মিশর এই সাতটি আরব রাষ্ট্র ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাজধানী কায়রােতে একত্রিত হয়ে আরব লিগ গঠন করে। লিগের দাবি ছিল—প্যালেস্টাইনকে আর ব্রিটেনের অছি হিসেবে রাখা চলবে না। পাশাপাশি, সেখানে ইহুদি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

কীভাবে প্যালেস্টাইন সমস্যার সৃষ্টি হয়?

আরব জাতীয়তাবাদীরা চেয়েছিল প্যালেস্টাইনের আরবদের (ফিলিস্তিনীয়) জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে, অপরদিকে জিওনবাদীদের লক্ষ্য ছিল প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যার ফলে প্যালেস্টাইন সমস্যার সৃষ্টি হয়।

প্যালেস্টাইন মুক্তিসংঘের নেতা কে ছিলেন?

প্যালেস্টাইন মুক্তিসংঘের নেতা ছিলেন ইয়াসের আরাফত।

জিওনবাদ কী?

রােমানরা ইহুদিদের জেরুজালেম ও প্যালেস্টাইন থেকে বিতাড়িত করলেও ইহুদিদের মনে পুনরায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে সুপ্ত থাকে এবং বিশ শতকে এই ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ ঘটে যা জিওনবাদ নামে পরিচিত।

ইয়মকিপুর যুদ্ধ কী?

১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর মিশর ও সিরিয়ার মিলিত বাহিনী ইজরায়েল অধিকৃত সিনাই উপত্যকার ওপর সামরিক অভিযান শুরু করে, এর জবাব হিসেবে ইজরায়েল সেনারা রুখে দাঁড়ালে যে চতুর্থ আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়, তার নাম ইয়মকিপুর যুদ্ধ।

কাদের মধ্যে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে আরব-ইজরায়েল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাষ্ট্রপ্রধান আনােয়ার সাদাত ও ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মেনাচিম বেগিন উভয়ের মধ্যে আরব-ইজরায়েল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ইরান ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-৮৮ খ্রি.) কারণগুলি কী ছিল?

ইরাকের রাষ্ট্রপ্রধান সাদ্দাম হুসেন মূলত তিনটি কারণে ইরান আক্রমণ করেন। যথা- [i] ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর ইরানের শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত নেতা আয়াতুল্লা খােমেইনির প্রভাবের জন্য আশঙ্কিত হন সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত সাদ্দাম হুসেন। [ii] পারস্য উপসাগরের জলপথ ব্যবহারের লক্ষ্যে শাত-এল-আরব জলপথটির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। [iii] আরব জাতীয়তাবাদের অবিসংবাদী নেতা হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা।

তেল কূটনীতি কী?

আমেরিকা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। আমেরিকার এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ তেল কূটনীতি (Oil Diplomacy) নামে পরিচিত।

‘Operation Desert Storm’ বলতে কি বোঝ?

মার্কিন সেনাপ্রধান নর্মান সােয়ার্জকফের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বহুজাতিক দেশগুলি ইরাকের বিরুদ্ধে যে সামরিক অভিযান চালায় (১৬ জানুয়ারি, ১৯৯১ খ্রি.) তার নাম Operation Desert Storm’। ইরাকের বিরুদ্ধে এই সামরিক অভিযানে অংশ নিয়েছিল মার্কিন সেনাদল ছাড়াও ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মিশর, সৌদি আরব, সিরিয়া, মরক্কো, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশের সম্মিলিত সেনাদল। এই সম্মিলিত সামরিক জোটের কাছে শেষপর্যন্ত সাদ্দাম হুসেনের নেতৃত্বে ইরাক পরাজিত হয়।

তেল কূটনীতির ওপর হস্তক্ষেপে মার্কিন বিদেশনীতির লক্ষ্য কী ছিল?

তেল কূটনীতির ওপর হস্তক্ষেপে মার্কিন বিদেশনীতির লক্ষ্যগুলি ছিল- [i] তেল সম্পদে সমৃদ্ধ মধ্য প্রাচ্যের ওপর নিরঙ্কুশ মার্কিন প্রভাব কায়েম করা, [ii] আন্তর্জাতিক তেল-বাণিজ্যের ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, [iii] তেল-বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত মুনাফার দ্বারা মার্কিন অর্থনীতিকে আরও মজবুত করা।

ওপেক (OPEC) কী?

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার লক্ষ্যে এক আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংগঠন গড়ে তােলে, যার নাম ওপেক (OPEC)।

OFID কী?

তেল রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত মুনাফার একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে ওপেক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে (১৯৭৬ খ্রি.), এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির নাম হল OFID (OPEC Fund for International Development).

মধ্যপ্রাচ্য বলতে কী বােঝ?

সাধারণভাবে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীর থেকে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ভূ-ভাগ মধ্যপ্রাচ্য নামে পরিচিত। তবে মিশরকেও এর মধ্যে ধরা হয়। মিশর ছাড়া এই অঞ্চলের উল্লেখযােগ্য রাষ্ট্রগুলি হল তুরস্ক, প্যালেস্টাইন, ইরাক, ইরান, জর্ডন ও সৌদি আরব।

কীভাবে চিনে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়?

সান-ইয়াৎ-সেনের নেতৃত্বে শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির সক্রিয় সহযােগিতায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে চিনে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

লং মার্চ কী?

মাও-সে-তুঙ এবং চু-তের মিলিত প্রচেষ্টায় কমিউনিস্টদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে কিয়াং-সি প্রদেশ থেকে শেনসি পর্যন্ত ছয় হাজার মাইলের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পদযাত্রা ইতিহাস লং মার্চ নামে পরিচিত।

লং মার্চ কত খ্রিস্টাব্দে শুর হয়েছিল?

লং মার্চ শুরু হয়েছিল ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর। ৩৭০ দিন পর এই অভিযান শেষ হয়েছিল ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ অক্টোবর।।

কাদের প্রচেষ্টায় চিনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা ঘটে?

মাও-সে-তুঙ, লিও কাও-চি, চৌ-এন-লাই, চু-তে প্রমুখের প্রচেষ্টায় চিনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা ঘটে।

চিনে কার নেতৃত্বে লং মার্চ শুরু হয়েছিল? কতদিন পরে কবে তা শেষ হয়?

চিনে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর মাও-সে-তুঙ-এর নেতৃত্বে দীর্ঘ পদযাত্রা (লং মার্চ) শুরু হয়েছিল। চিনে দীর্ঘ পদযাত্রা ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর শুরু হয়ে ৩৭০ দিন পরে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ অক্টোবর ওই যাত্রা শেষ হয়।

কবে, কার নেতৃত্বে চীনে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়?

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর মাও-সে-তুঙ-এর নেতৃত্বে চিনের পিকিং শহরে গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।