[1] ন্যাটো

  • গঠন: বিশ্বে সােভিয়েত আগ্রাসন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে আর্থার ভ্যান্ডেনবার্গ আমেরিকার সেনেটে ‘ভ্যান্ডেনবার্গ রেজোলিউশন’ পেশ করলে (১৯৪৮ খ্রি., ১১ জুন) তা অনুমােদিত হয়। স্থির হয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থরক্ষার জন্য আমেরিকার বাইরে অবস্থিত রাষ্ট্রগুলির (নন-আমেরিকান পাওয়ার) সঙ্গে যৌথ সামরিক চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। এরই ফলশ্রুতি হিসেবে ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেয় ন্যাটো অর্থাৎ উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (North Atlantic Treaty Organisation)

  • সদস্য: ন্যাটোর প্রাথমিক সদস্য ছিল ১২টি (বর্তমানে ২৮ টি) দেশ। প্রথমে বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, লুক্সেমবুর্গ, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পাের্তুগাল, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর সদস্য হয়। পরে আরও কয়েকটি দেশ এতে যােগ দেয়।

  • উদ্দেশ্য: [a] সােভিয়েত সাম্যবাদের প্রসার রােধ ও সােভিয়েত আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে এটি গঠিত হয়। [b] ন্যাটো গঠনের অপর একটি উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিম ইউরােপে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। [c] আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।

[2] অ্যানজাস

  • গঠন: কমনওয়েলথের সদস্যভুক্ত কয়েকটি দেশ একজোট হয়ে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের, ১ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষর করে পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি বা অ্যানজাস। এর সদর দপ্তর অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরাতে অবস্থিত।

  • সদস্য: অ্যানজাস নামে নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ড। এক সপ্তাহের মধ্যে জাপান, আরও ৪৮টি দেশ এই চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।

  • উদ্দেশ্য: প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় অ্যানজাস (Australia, New Zealand, United States Security Treaty, সংক্ষেপে ANZUS)।

[3] সিয়াটো

  • গঠন: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কেন্দ্র করেও একটি সংস্থা গড়ে ওঠে (১৯৫৪ খ্রি., ৮ সেপ্টেম্বর)। এটির নাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা বা সিয়াটো (South-East Asia Treaty Organ isation সংক্ষেপে SEATO)।

  • সদস্য: এই সংগঠনটির সদস্য ছিল ৮টি দেশ, যথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিনস। এর প্রধান কার্যালয় ব্যাংককে অবস্থিত।

  • উদ্দেশ্য: মূলত কমিউনিস্ট চিনের বিরুদ্ধাচরণ এবং ভিয়েতনামে কমিউনিস্টদের অগ্রগতি রােধের লক্ষ্যেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই জোট গঠিত হয়েছিল।

[4] সেন্টো

  • গঠন: ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত হয় মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষা সংস্থা বা মেডাে (Middle East Defence Organisation, সংক্ষেপে MEDO)। চুক্তিটি বাগদাদে স্বাক্ষরিত হওয়ায় এটি বাগদাদ চুক্তি নামেও পরিচিত। পরবর্তীকালে এই সংস্থার নাম হয় সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা সেন্টো (CENTO)

  • সদস্য: গঠনের সময় এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল গ্রেট ব্রিটেন, পাকিস্তান, ইরাক ও ইরান। এই সংস্থাটির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষক হিসেবে যুক্ত হয়।

[1] ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা: আমেরিকার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পশ্চিমি সামরিক শক্তিজোট ন্যাটোর পালটা হিসেবে গড়ে ওঠে রাশিয়ার নেতৃত্বে সামরিক জোট ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা [Warsaw Pact Organisation (WPO) or Warsaw Treaty Organisation (WTO)] এই চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়া চেয়েছিল তার নিজের এবং তার সহযােগী দেশগুলির নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান করতে।

  • চুক্তিস্বাক্ষরকারী দেশসমূহ: ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে ওয়ারশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মধ্য ও পূর্ব ইউরােপের কমিউনিস্ট দেশগুলির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই চুক্তিতে অংশ নিয়েছিল রাশিয়া, বালগেরিয়া, হাঙ্গেরি, পােল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি, আলবানিয়া, রুমানিয়া এবং চেকোশ্লোভাকিয়া।

  • উদ্দেশ্য: [a] এই সমস্ত দেশ নিজেদের মধ্যে জোটবদ্ধ হয়েছিল যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। [b] পারস্পরিক অর্থসাহায্যের কর্মসূচি গ্রহণ ও তা রূপায়ণের লক্ষ্যে রাশিয়ার নেতৃত্বে ভবিষ্যতে এক আর্থিক সহায়তা পরিষদ গঠনের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়।

[2] কমিকন: রাশিয়ার নেতৃত্বে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে গঠিত হয় পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযােগিতা সংস্থা বা (Council for Mutual Economic Assistance a COMECON) এটি সামরিক সংস্থা না হলেও সামরিক জোটের সহায়ক হিসেবে কাজ করত।

প্রায় ৫০ বছর ধরে চলা ঠান্ডা যুদ্ধের ঠিক কবে অবসান ঘটে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। তবে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর সােভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির সময়কে অনেকে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানকাল বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ এর ফলে বিশ্বরাজনীতি একমেরুকেন্দ্রিক হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে আয়ােজিত একাধিক সম্মেলনে গৃহীত প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবসান ঘটে।

[1] বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বৈঠক: সােভিয়েত ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন দুই জোটের মধ্যেকার ঠান্ডা লড়াই-এর অবসানে উল্লেখযোেগ্য ভূমিকা নেয় বেশ কয়েকটি শীর্ষ বৈঠক। এক্ষেত্রে বলা যায়, জেনেভায় আয়ােজিত আফগানিস্তান সংকটকে কেন্দ্র করে পরমাণু যুদ্ধ রদের আলােচনা ছিল ঠান্ডা লড়াই অবসানের প্রথম পদক্ষেপ। এর পরে ওয়াশিংটন সম্মেলন (১৯৮৭ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর), মস্কো শীর্ষ বৈঠক (১৯৮৮ খ্রি., ২৯ মে), মাল্টা শীর্ষ সম্মেলন, হেলসিংকি শীর্ষ বৈঠক প্রভৃতি এক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা নেয়। শেষপর্যন্ত ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের প্যারিস শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বুশ নিজেই ঠান্ডা লড়াই-এর সমাপ্তি ঘােষণা করেন।

[2] শান্তিপূর্ণ সহাবসস্থান নীতি: সােভিয়েত রাশিয়ার দিক থেকে প্রথমে কুশ্চেভ, পরে ব্রেজনেভ-কোসিগিনের আমলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি স্থাপন রুশ বিদেশনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। অপর দিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলে ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান প্রক্রিয়া শুরু হয়।

[3] বহুমেরু রাজনীতির উত্থান: ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দ্বিমেরুকরণের পরিবর্তে বহুমেরুকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটে। তৃতীয় বিশ্ব থেকে চিনের উত্থান এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রবর্গ কর্তৃক স্বাধীন বিদেশনীতি গ্রহণ বহুমের রাজনীতির উত্থানকে ত্বরান্বিত করে। এতে শঙ্কিত হয়ে সােভিয়েত ও মার্কিন উভয় রাষ্ট্রই আরও সহনশীল হতে বাধ্য হয়। ফলে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবসানের সূচনা ঘটে।