ট্র্যাজেডির স্বরূপ নির্ণয় কর এবং ট্র্যাজেডি কেন আমাদের আনন্দ দেয়- বিশ্লেষণ কর। এই প্রসঙ্গে যে কোন একটি সার্থক ট্র্যাজেডি সম্বন্ধে আলোচনা কর।
ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা দাও। যে কোন একটি নাটক বিশ্লেষণ করে তোমার দেওয়া সংজ্ঞার সার্থকতা প্রতিপন্ন কর।
আমরা বাঙলা ভাষায় ট্র্যাজেডিকে বিয়োগান্ত নাটক বলে থাকি। কিন্তু নাটকের পরিসমাপ্তি বিয়োগান্ত হলেই তা ট্র্যাজেডির মর্যাদা লাভ করে না। কখনও কখনও পরিণতি সুস্পষ্টরূপে বিয়োগান্ত না হলেও তার মধ্য দিয়ে ট্র্যাজেডির ভাব ও রূপগত বৈশিষ্ট্য উদ্ভাসিত হতে পারে। ট্র্যাজেডির ভাববৈশিষ্ট্য ও তার বিশেষ রসের ধ্যানধারণা আমরা ইয়োরোপের বিভিন্ন ট্র্যাজেডি ও তাদের আলোচনা থেকেই পেয়েছি। ট্র্যাজেডির ধারণা ভারতীয় নাট্যচিন্তায় ছিল না। সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রবিদেরা নাটকে বিয়োগান্ত পরিণতি কোনও স্থান দিতে চান নি।
পাশ্চাত্ত্য নাট্যচিন্তায় ট্র্যাজেডির প্রাথমিক ধারণা অ্যারিস্টট্ল নির্দেশিত সংজ্ঞা থেকেই সাহিত্যরসিকেরা লাভ করেছেন। এখনও পর্যন্ত অ্যারিস্টট্লের ট্র্যাজেডি-সম্পর্কিত ধ্যানধারণা মোটামুটিভাবে গ্রাহ্য ও স্বীকৃত। অ্যারিস্টট্ল ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলেছেন : “Tragedy is an imitation of the action that is serious, complete, and of the certain magnitude; in language embelished with each kind of artistic ornament, the several kinds being found in separate parts of the play; in the form of action, not of narrative; through pity and fear affecting the proper purgation of these emotions.” রঙ্গমঞ্চে একটি প্রধান চরিত্র বা নাট্যবিষয়ের প্রবক্তার (Protagonist) গতিময় জীবনকাহিনীর ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ দৃশ্যাবলীর মাধ্যমে যে নাটক দর্শকদের হৃদয়ে ভীতি ও করুণাকে জাগিয়ে তোলে, তাদের প্রশমিত করে, তার মনে করুণরসের আনন্দকে সৃষ্টি করে, তাকেই ট্র্যাজেডি বলা যায় । অ্যারিস্টলের এই সংজ্ঞা থেকে আমরা ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্যের কয়েকটি সূত্র পাই : এক, ট্র্যাজেডিতে কোন ব্যক্তিজীবন ঘটনার ঘাতপ্রতিঘাতে গতিশীলরূপে আভাসিত হয় ; দুই, নাট্যঘটনাবস্তু গভীর ও পূর্ণরূপে ট্র্যাজেডিতে ফুটে ওঠে; তিন, ভাবগৌরব, শব্দসম্পদ ও সংগীতাদি ট্র্যাজেডির বহিরাঙ্গিক সজ্জার অঙ্গ ; চার, ট্র্যাজেডিতে নাটকীয় ঘটনাসমূহে একটি মাত্র পরিণামমুখিনতায় সুসংহত (unity of action) হওয়া চাই ; পাঁচ, ট্র্যাজেডি স্বরূপত ঘটনাত্মক, বর্ণনাত্মক রচনা নয়; হয়, ট্র্যাজেডি দর্শকের মনে করুণা ও ভীতির উদ্রেকের পর তাদের প্রশমন করে তার মানসিক স্বাস্থ্য বিধান করে।
অ্যারিস্টট্ল বলেছেন, ট্র্যাজেডির নায়ক ভুলভ্রান্তির জন্য দৈবদুর্বিপাকে নির্যাতিত হতে পারে, কিন্তু তার চরিত্রটি সৎ, কথোপযোগী, জীবন সত্যানুযায়ী ও সুসমঞ্জস হওয়া চাই। তিনি ট্র্যাজেডিতে চরিত্র অপেক্ষা প্লটকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। অ্যারিস্টট্ল তাঁর ট্র্যাজেডির বিশ্লেষণে নায়কের চরিত্রকে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছেন। নায়ক যদি সম্পূর্ণরূপে সৎ হয়, তবে সমৃদ্ধ অবস্থা থেকে তাঁর পতন দর্শকদের আঘাত করবে এবং তাদের কাছে বিরক্তিকর হবে। অন্যদিকে সম্পূর্ণরূপে অসৎ ব্যক্তির পতন করুণার পরিবর্তে দর্শকদের হৃদয়ে আনন্দ সৃষ্টি করবে। ট্র্যাজেডির নায়কের চরিত্রে কোনও ত্রুটি থাকা প্রয়োজন, তার দুর্ভাগ্যের মূলে থাকে বিচারের কোনও ত্রুটি, অ্যারিস্টটলের ভাষায় hamarita | গ্রীক নাটকে অবশ্য দৈবীশক্তির বিশেষ প্রাধান্য দেখা যায়। অ্যারিস্টটলের ট্র্যাজেডির এই স্বরূপ বৈশিষ্ট্য নির্দেশ গ্রীক ট্র্যাজেডিগুলির ওপরই প্রতিষ্ঠিত। শেক্সপীয়রের ট্র্যাজেডিতে নায়কের চরিত্রগত কোনও মৌলিক ত্রুটির মধ্যেই তার জীবনের ট্র্যাজেডির বীজ নিহিত থাকে; তাঁর ট্র্যাজেডিগুলিকে সেইজন্য চরিত্র-প্রধান বলা হয়। দ্বন্দ্ব (conflict) ট্র্যাজেডির মর্মবস্তু। দুটি ভালো জিনিসের মধ্যে দ্বন্দ্ব ট্র্যাজেডির উপযুক্ত বিষয়, যেমন সোফোক্লিসের Antigone নাটকে নায়িকার মানস রাষ্ট্রের বিধানের প্রতি আনুগত্য এবং ভ্রাতার সুষ্ঠু সৎকারের জন্য তার ধর্মীয় ও নৈতিক কর্তব্য এই দুইয়ের দ্বন্দ্বে আলোড়িত হয়েছে। প্রেম ও কর্তব্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব ট্র্যাজেডির সাধারণ বিষয়বস্তু। শেকসপীরিয়ান ট্র্যাজেডিতে এই দ্বন্দ্ব যতটা না বহির্জগতের তাঁর থেকে বেশী পরিমাণে অন্তর্জগতের। ট্র্যাজেডিতে নায়কের চরিত্র অথবা বাইরের প্রতিকূল শক্তির মধ্যে কোনটি প্রাধান্য লাভ করে তার চুলচেরা হিসেব নির্দেশ করা কঠিন। আমরা মোটামুটিভাবে একথা বলতে পারি, নায়কের কোনও চারিত্রিক ত্রুটি (tragic flaw) ও প্রতিকূল বাইরের শক্তির সমবায়ে, তাদের জটিল সম্বন্ধসূত্রেই তার ট্র্যাজিক পরিণাম গঠিত হয়। শেপীয়রের চরিত্রপ্রধান নাটকেও নিয়তির লীলা, আকস্মিক দৈবদুর্বিপাক ও ঘটনার যোগাযোগ লক্ষ্য করা যায়।
নায়কের চরিত্রকে ত্রুটিযুক্ত হতে হবে, অ্যারিস্টটলের এই নির্দেশ আধুনিক সমালোচকেরা গ্রহণ করতে পারেন নি। আন্তিগোনের চরিত্রে কোনও ত্রুটি ছিল না। অ্যাব্রাহাম লিংকন ছিলেন ত্রুটিহীন মানুষ, তাঁর বিচারে কোনও ত্রুটি ছিল না। তবু তাঁর পরিণাম ট্র্যাজিক। বার্নাড শ-র Saint Joan নাটকের নায়িকা সাধু প্রকৃতির, তবু তার জীবন ও কর্মধারা নিয়ে ট্র্যাজেডি রচিত হয়েছে। গ্রীক যুগের ট্র্যাজেডি ও অ্যারিস্টটলের সংজ্ঞা এবং শেক্সপীয়রীয় ও পরবর্তীকালের ট্র্যাজেডি ও ট্র্যাজেডির ধ্যান-ধারণার মধ্যে যতই পার্থক্য থাকুক, তার মর্মগত বৈশিষ্ট্যটি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কমেডি ও অন্যান্য রচনায় জীবন নিরবচ্ছিন্ন ধারায় প্রবহমান, উপসংহারের মধ্যেই সবকিছু নিঃশেষিত হয়ে যায় না। কিন্তু ট্র্যাজেডি সুনিশ্চিতভাবেই জীবনের ধারা বা ইতিহাসের ওপর একটি মর্মন্তুদ উপসংহারের কৃষ্ণ যবনিকা টেনে দেয়। এটি জীবনের একটি শেষ বিন্দু, একটি চূড়ান্ত পরিপ্রেক্ষিতে জীবন-পর্যবেক্ষণেই ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্য এবং এই বিপর্যয়ের সঙ্গে সকল সময়েই কোনও না কোনও মূল্যবোধের সমস্যা জড়িত। ট্র্যাজেডির নায়কের ব্যক্তিত্ব ও সংগ্রামকে সকল সময়েই সম্ভাব্য বলে প্রতিভাত হতে হবে। মুখ্য চরিত্রের সাহস ও সংগ্রাম সত্ত্বেও তার জীবন যে অভিশপ্ত তাও আমরা অনুভব করি। যেখানে নায়ক জীবনের শুধু পরাজয় বা বিপর্যয় আছে, সংগ্রাম নেই, সেখানে শুধু করুণরসই সৃজিত হয় ; ট্র্যাজেডির ভাবগাম্ভীর্যকে সংগ্রামহীন বিয়োগান্ত পরিণতিতে পাওয়া যায় না, সেটি অগভীর ও ভাবালুতাসিক্ত হয়ে পড়ে। ট্র্যাজেডিতে সংগ্রাম ও পরাজয়কে ঐক্যসূত্রে গেঁথে তুলতে হয়। কোনও নাটকে হয়ত দৈবীশক্তি বা নিয়তি নির্দিষ্ট প্রতিকূল পরিবেশ প্রাধান্য পেতে পারে, কিন্তু ট্র্যাজেডির নায়ককে অদৃষ্টের অসহায় শিকারে পরিণত হয়ে শুধু বিলাপ করলে চলবে না, তাকে জীবনসংগ্রামে উদ্দীপ্ত হতে হবে। তবেই তার বিয়োগান্ত পরিণামে ট্র্যাজেডির ভাবগাম্ভীর্য (sublimity) সৃজিত হবে। খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে গ্রীসে ইস্কাইলাস, সোফোক্লিস, ইউরিপিদিস : ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে শেপীয়র, মার্লো, স্পেনে লোপ দ্য ভেগা, ফ্রান্সে কর্ণেই, রাসীন প্রভৃতিদের ট্র্যাজেডিতে রূপ ও ভাবগত সকল পার্থক্যের মধ্যে ট্র্যাজেডির ঐ মর্মগত বৈশিষ্ট্যকে উদ্ভাসিত হতে দেখি।
ট্র্যাজেডি কেন আমাদের আনন্দ দেয়, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমাদের অনিবার্যভাবেই অ্যারিস্টট্লের ক্যাথারসিস-তত্ত্ব (Cathersis) স্মরণ করতে হয়। তাঁর মতে, রঙ্গমঞ্চে নায়কের দুর্গতি লক্ষ্য করে আমরা তার সঙ্গে একাত্ম হই, তার পীড়িত নির্যাতিত অবস্থা আমাদের মনে করুণা জাগিয়ে তোলে; তার সংকট আমাদের জীবনেও ঘটতে পারে, সেই চিন্তায় আমাদের মনে ভীতি সঞ্চারিত হয়। নাট্যকার সুকৌশলে আমাদের মনে করুণা ও ভীতির আলোড়ন জাগিয়ে তুলে তাদের প্রশমিত করে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিধান করেন। কোনও লোকের দেহে রক্তচাপ বেশি হলে অতীতে চিকিৎসকেরা কিছুটা পরিমাণে রক্তমোক্ষণ করে তাকে সুস্থ করে তুলতেন, তেমনিভাবে ট্র্যাজেডিও আমাদের মধ্যে প্রবলভাবে করুণা, ভীতি প্রভৃতি আবেগ জাগিয়ে তুলে তাদের প্রশমনপূর্বক আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যবিধান করেন। ট্র্যাজেডির অশ্রুধারায় আমাদের আবেগ-উত্তেজনা ধৌত হয়ে গিয়ে আমাদের হৃদয় নির্মল আনন্দ লাভ করে। সমালোচকেরা বলেছেন, অ্যারিস্টটলের ক্যাথারসিস তত্ত্বে ট্র্যাজেডির যে আনন্দের কথা বলা হয়েছে তা নেতিবাচক। তিনি বলেছেন, করুণা ও ভীতি দর্শকদের মনে উদ্রিক্ত হয়ে একেবারে নাটকের শেষ মুহূর্তে প্রকাশিত হয়, তাহলে এই বক্তব্য অনুসরণ করে বলতে হবে, ট্র্যাজেডির অভিজ্ঞতার একটা বৃহৎ অংশই যন্ত্রণাদায়ক ও ভীতিপ্রদ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা ট্র্যাজেডি দেখার সময়ই আনন্দ উপভোগ করি। আসলে ট্র্যাজেডিতে আমরা যখন দেখি, নায়ক ভেতর ও বাইরের দ্বন্দ্বে, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও বাইরের শক্তির সংঘাতে, আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভের সংগ্রামে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছে, তখন তার সংগ্রাম তার মর্মান্তিক পরাজয় সত্ত্বেও তাকে মানবিক মর্যাদা দান করে। আমরা নায়কের মৃত্যু বা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে মানবতার মৃত্যুঞ্জয়ী মহিমাকে অনুভব করি, তাতে আমাদের হৃদয়ে এক বিচিত্র জীবনরসের আনন্দ সঞ্চারিত হয়। সেই কারণেই আমরা ট্র্যাজেডিকে উপভোগ করি।
বাঙলা সাহিত্যে সার্থক ট্র্যাজেডি খুব অল্পই রচিত হয়েছে। আমাদের মজ্জাগত ভক্তিবাদ, অদৃষ্টনির্ভরতা, ভাবালুতা ও সংগ্রামশীলতার অভাব ট্র্যাজেডি রচনার বাধা। বাঙলার নাট্যকারদের ট্র্যাজেডি রচনার প্রেরণার উৎস ছিল শেকসপীয়রের নাটক। রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’ (১৮৯০) শেপীয়রীয় আদর্শে রচিত। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “এই নাটকে বরাবর এই দুটি ভাবের মধ্যে বিরোধ বেঁধেছে—প্রেম এবং প্রতাপ। রঘুপতির প্রভুত্বের ইচ্ছার সঙ্গে গোবিন্দমাণিক্যের প্রেমের শক্তির দ্বন্দ্ব বেঁধেছিল।” রবীন্দ্রনাথ ‘বিসর্জন’ নাটকের কাহিনী তাঁর ‘রাজর্ষি’ উপন্যাস থেকে নিয়েছেন। ত্রিপুরা রাজ্যে পশুবলি নিষিদ্ধ করার জন্য রাজা গোবিন্দমাণিক্যের প্রতি প্রথাবদ্ধ আচারসর্বস্ব ধর্মে বিশ্বাসী পুরোহিত রঘুপতি ক্রুদ্ধ। ছাগশিশুর জন্য করুণ ক্রন্দনে গোবিন্দমাণিক্য দেবীমন্দিরে রক্তপাতের অর্থহীনতা ও অমানুষিকতা উপলব্ধি করেছিলেন, তিনি হিংসার বিরুদ্ধে অটলভাবে দাঁড়িয়েছেন। রঘুপতি নানাভাবে গোবিন্দমাণিক্যকে আঘাত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তাঁর একান্ত স্নেহভাজন জয়সিংহকে রাজরক্ত এনে দেবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করেন। রঘুপতির স্নেহের ঋণ অস্বীকার করা তার পক্ষে সম্ভব হয় নি, তেমনি সে প্রেমধর্মের আদর্শকেও অগ্রাহ্য করতে পারে নি। অপর্ণার প্রতি অনুরাগে, গোবিন্দমাণিক্যের প্রতি শ্রদ্ধায় জয়সিংহ প্রবল প্রতাপান্বিত রঘুপতির অন্ধতা ও হৃদয়হীনতা সম্পর্কে যত সচেতন হয়েছে, ততই তার অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠেছে। শেষ পর্যন্ত জয়সিংহের আত্মোৎসর্গে সব বিরোধের অবসান হয়েছে। এই আত্মোৎসর্গ বাইরের দিক থেকে পরাজয় মনে হলেও আমাদের কাছে মানুষের শক্তি ও চরিত্রের অভিজ্ঞানরূপে প্রতিভাত হয়, মানুষের জীবন সম্পর্কে আমাদের হৃদয়ে এক গভীর আনন্দ ও আশ্বাস জাগিয়ে তোলে। জয়সিংহের অন্তদ্বন্দ্ব, তাকে হারাবার পর রঘুপতির হাহাকার ও হৃদয় পরিবর্তন সত্যই ট্র্যাজেডির মহিমায় মণ্ডিত। আমরা তার মধ্যে মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্যকেই উদ্ভাসিত হতে দেখি। গোবিন্দমাণিক্য ও অপর্ণার চরিত্রে সজীবতার অভাব, ঘটনা বিন্যাসে দুর্বলতা ইত্যাদি ত্রুটি সত্ত্বেও ‘বিসর্জন’কে মোটামুটি সার্থক ট্র্যাজেডি হিসেবে গ্রহণ করা যায় এবং সেই কারণেই এই রচনায় আমাদের হৃদয়ে জীবনোপলব্ধির আনন্দ সঞ্চারিত হয়।
Leave a comment