উৎপন্ন দত্তের ‘টিনের তলোয়ার’ নাটকের বেণীমাধব চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

‘টিনের তলোয়ার’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র বেণীমাধব চাটুজে। দি গ্রেট বেঙ্গল অপেরার প্রধান অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক বেণীমাধব ‘কাপ্তেনবাবু’ নামে পরিচিত। এই কেন্দ্রীয় চরিত্রটির যাবতীয় স্ববিরোধ, আবেগ-বিক্ষোভ, অভিমান-অনুযোগ, দোষ-ত্রুটি, ত্যাগ ও আপসের বহুমুখী ও জটিল বৃত্তান্তের মধ্য দিয়েই নাট্যকার উন্মোচিত করতে চেয়েছেন সে যুগের নাট্যকর্মীদের সমস্যা ও সংগ্রামকে, অস্তিত্ব ও আদর্শের সংঘাতকে এবং একই সঙ্গে সমকালীন সমাজ-সংস্কৃতি ও রাজনীতির আবহটিকে।

‘টিনের তলোয়ার’ নাটকের কালগত প্রেক্ষাপট ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দ। ওই বৎসর বাংলার নাট্যমঞে জাতীয় চেতনামূলক এবং ইংরেজ-বিরোধী রাজনৈতিক নাটকের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের ব্যাপারে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ভারতের ঔপনিবেশিক ইংরেজ সরকার নাট্য নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে। ফলে সময়কালটি বাংলার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তাৎপর্যময় সময়কালে বাংলার তথা বঙ্গ-সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমি কলকাতার এক বিশিষ্ট নাট্যকর্মীর ভাবনা, অস্তিত্ব সংকট, আত্মিক দ্বন্দ্ব, আদর্শ ও অস্তিত্বরক্ষার সংঘাত, নাট্যপ্রেম ও সেজন্য সামাজিক লাঞ্ছনা, বেনিয়া ও প্রশাসনযন্ত্রের দ্বিমুখী পেষণের মধ্যেও জাতীয় মুক্তিচেতনার দুর্নিবার প্রকাশ এই বেণীমাধব চাটুজ্যে চরিত্রটির মধ্য দিয়েই উন্মোচিত করেছেন নাট্যকার উৎপল দত্ত।

নাটকের সূচনাদৃশ্যেই বেণীমাধবকে দেখি মদ্যপ অবস্থায় নাটকের বিজ্ঞাপন লাগানোর কাজে তদারকি করতে। অর্থাৎ তিনি শুধু নট ও নির্দেশক নন, নাটকের প্রচার ও ব্যবসায়িক দিকটিরও তত্ত্বাবধায়ক। মেথর মথুরের সঙ্গে মদ্যপ বেণীমাধবের কথোপকথনে তার নাট্যপ্রতিভার জন্য গৌরববোধ, অসাধারণ আবৃত্তি ও সংলাপ উচ্চারণ ক্ষমতা, জীবনের পূর্ব-ইতিহাস, এমনকি আত্মগ্লানিটিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মথুরকে বেণীমাধব জানান যে, ইন্ডিয়ান মিরার পত্রিকা তাঁকে ‘বাংলার গ্যারিক’ অভিধায় সম্মানিত করেছে। থিয়েটারই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান, অর্থাৎ জাতে বামুন হলেও আসলে তিনি থিয়েটারওয়ালা। এই পরিচয়ই তাঁর গর্ব। মথুর তাঁর এই নকল দাড়িগোঁফ লাগিয়ে জরিদার পোষাক পরে রাজা-উজির সাজাকে অর্থহীন ‘ছেলেমানুষী’ বা ‘ধাপ্পা’ বলে ভৎসনা করলেও সে সমালোচনা বেণীমাধবকে তেমন আলোড়িত করতে পারে না। বরং বেণীমাধব আত্মপ্রতিভার গৌরব ঘোষাণাতেই ব্যস্ত হয়— “আমার নিমচাঁদ তো দেখেন নি। গিরিশ ঘোষের সাধ্য আছে অমন নিমচাঁদ করে?” এই সঙ্গেই একদিকে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অস্তিত্বরক্ষার সংকট এবং স্থূলরুচি অশিক্ষিত ধনী মুৎসুদ্দি বীরকৃয় দাঁর অধীনতা স্বীকার করে নাট্যপ্রতিভা বিকাশের আত্মগ্লানি প্রকাশ পায় বেণীমাধবের সংলাপে জানা যায়, গ্রেট বেঙ্গল অপেরার প্রধান অভিনেত্রী মানদাসুন্দরীকে ভাঙিয়ে নিয়ে গেছে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার, যে মানদাসুন্দরী বেণীমাধবের হাতেই অভিনয়শিক্ষা লাভ করেছেন। আর অসামান্য অভিনয়প্রতিভা সত্ত্বেও বেণীমাধবকে অনুগত থাকতে হয় স্বত্বাধিকারী বীরকৃয় দাঁর, এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ ও আত্মগ্লানিটিও গোপন থাকে না—“ব্যাটার ক অক্ষর গোমাংস…… সে শলা হলো স্বত্বাধিকারী। আর আমি বাংলার গ্যারিক, ঐ বেনে মুৎসুদ্দির সামনে আমাকে গলবস্ত্র হয়ে থাকতে হয়।

নাট্যনির্দেশক হিসাবে অভিনেতা-অভিনেত্রী আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও তাঁর প্রতিভাটি স্পষ্ট হয় নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে। প্রথম দৃশ্যে নেশাগ্রস্ত অবস্থাতেও তরকারিওয়ালী ময়নার গান শুনেই তার মধ্যে অভিনেত্রীর সম্ভাবনা লক্ষ্য করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় দৃশ্যে সেই ময়নাকে নিয়ে শুরু করেছেন অভিনয়শিক্ষার কঠিন সাধনা। অমার্জিতস্বভাব, উচ্চারণদোষযুক্ত ময়নাকে তিনি গড়ে তুলেছেন তিলোত্তমারূপে। দলের প্রত্যেকে যখন এই অমার্জিত মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ, তখন বেণীমাধবের মধ্যে আমরা দেখি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ও দত্তী এক ব্যক্তিত্বকে—“বেণীমাধব চাটুজ্যে পাথরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে পারে, কাষ্ঠপুত্তলির চক্ষু উন্মীলন করে দিতে পারে, গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানাতে পারে।” নিজেকে বিশ্বশিল্পী ব্রহ্মা বা দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার সঙ্গে উপমিত করে তিনি বলেন—“আমি স্রষ্টা। আমি তাল তাল মাটি দিয়ে জীবন্ত প্রতিমা গড়ি। আমি একদিক থেকে ব্রহ্মার সমান। আমি দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা।” শুধু শূন্যগর্ভ অহঙ্কারী ঘোষণা নয়, বেণীমাধব তাঁর এই অহঙ্কারকে প্রমাণ করেছেন ময়নাকে অসামান্য সম্ভাবনাময়ী অভিনেত্রী হিসাবে গড়ে তুলে।

এই নাট্যপাগল থিয়েটারওয়ালাটিকে তাঁর প্রতিভাবিকাশে অনেকগুলি প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। প্রথমত, সমাজের রক্ষণশীল অংশ পতিতাপল্লীর মহিলাদের নিয়ে নাট্যচর্চাকে সমাজরুচির পক্ষে ক্ষতিকারক বলে মনে করেন। নাটকের বাচস্পতি এই রক্ষণশীল সমাজের প্রতিনিধি। তাঁরা প্রয়োজনে মানুষকে উত্তেজিত করে নাট্যচর্চার মহলাগৃহ আক্রমণ করেন। এদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ করে কোনো লাভ নেই জেনে বেণীমাধব আক্রমণ হলে তাৎক্ষণিকভাবে মহলাগৃহের নকল ঢাল-তরোয়াল নিয়েই সেই আক্রমণ প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করেন। এই রক্ষণশীল সমাজকে আবার প্ররোচিত করে ‘ভারতসংস্কারক’-এর মতো কিছু সংবাদপত্র। ‘ভারতসংস্কারক’ ও বাচস্পতির যৌথ আক্রমণ ও কুৎসাপ্রচারের বিরুদ্ধে বেণীমাধবের নাট্যসাধনা তাই যথার্থই একটি পরীক্ষা।

দ্বিতীয়ত, সমাজের নিম্নতম বর্গের মানুষ মথুর এবং পাশ্চাত্যশিক্ষা-প্রভাবিত জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্দীপ্ত উন্নত সাংস্কৃতিক চেতনার অধিকারী প্রিয়নাথও বেণীমাধবের নাট্যচর্চার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। মথুরের কাছে বেণীমাধবের নাট্যচর্চা মূল্যহীন, কেননা এই নাটকের সঙ্গে তাদের মতো নিম্নবর্গের মানুষের জীবনের কোনো ক্ষীণ সংযোগও নেই। অন্যদিকে প্রিয়নাথ মনে করে, বাস্তব আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করে এই নাটক এক অলীক স্বর্গ রচনা করতে চাইছে। মথুরও বেণীকে তার জীবন নিয়ে নাটক লিখতে বলে। প্রিয়নাথও বেণীকে আহ্বান করে বাস্তবসচেতন নাটক বেছে নিতে। এই দ্বিমুখী বিরুদ্ধতা আসলে বেণীমাধবের মধ্যে এক তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে বেণীমাধব এই দুই সমালোচনার বিরুদ্ধে একটা কৈফিয়ৎ তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়।

সেই কৈফিয়তের পিছনে আসলে আছে বেণীর নাট্যসাধনার তৃতীয় প্রতিবন্ধকতাটি। সেটি হল গ্রেট বেঙ্গল অপেরার স্বত্বাধিকারী বীরকৃয় দাঁ। তিনি শিক্ষা-সংস্কৃতিহীন স্থূলরুচি ব্যবসায়ী মানুষ। ইংরেজের ব্যবসার সহকারী হিসাবে উচ্ছিষ্ট ভোগ করে, কমিশন ও চোটার ব্যবসা করে তিনি প্রচুর অর্থের মালিক। সেই অর্থকৌলীন্য নির্লজ্জভাবে ঘোষণা করে তিনি আত্মতৃপ্ত হন। সেই বীরকৃষ্ণ দাঁ সমাজে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং মুনাফার অন্যতর সন্ধানে থিয়েটারের স্বত্ব ক্রয় করেছেন। ফলে বেণীমাধবকে বীরকৃষ্ণের অযৌক্তিক দাবি ও অবাঞ্ছিত আদেশ পালন করে চলতে হয়। ‘সধবার একাদশী’ তাঁর কাছে অশ্লীল নাটক। আবার ‘পলাশীর যুদ্ধ’ বা ‘তিতুমীর’ নাটকও ব্রিটিশ বিরোধিতার জন্য তিনি করতে দিতে চান না। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী না চললে বা মুনাফার ঘাটতি হলে তিনি বার বার থিয়েটার বন্ধ করে দেবার হুমকি দেন। এই দাসত্ব ও অধীনতার জন্য আত্মগ্লানি অনুভব করেন বেণীমাধব।

অপ্রত্যাশিতভাবে এই দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে যান বেণীমাধব। বীরকৃষ্ণের ব্যভিচারী -স্বভাব নতুন অভিনেত্রী ময়নাকে অধিকার করার লালসায় বেণীমাধবকে মুক্তি দিতে রাজি হয়ে যায়। তিনি গ্রেট বেঙ্গল অপেরাকে নতুন থিয়েটার গৃহ গড়ে দিতে এবং স্বত্বাধিকারি ত্যাগ করতে প্রস্তুত, কিন্তু বিনিময়ে ময়নাকে তিনি রক্ষিতা রাখবেন বসুন্ধরা, প্রিয়নাথ, ময়না—সবার নিষেধ অগ্রাহ্য করে বেণীমাধব যখন মুক্তির আত্যন্তিক আগ্রহে বীরকৃষ্ণের প্রস্তাব স্বীকার করে নেন, তখন বেণীমাধবকে আত্মসর্বস্ব স্বার্থপর বলেই মনে হয়। কিন্তু নাট্যকার বসুন্ধরার সঙ্গে কথোপকথনে বেণীমাধবের অন্তরের রক্তক্ষরণকেও দেখিয়েছেন আমাদের। বেণীমাধবের মূল লক্ষ্য ছিল মুক্তি, বীরকৃয়র দাসত্ব থেকে মুক্তি।

বেণীমাধবের মধ্যে যথার্থ জাতীয় চেতনার অভাব থাকলেও একটি স্বাতন্ত্র্যচেতনা অবশ্যই ছিল। যেটি বীরকৃষ্ণ দাঁর দাসত্বকে অস্বীকার করতে চেয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে ইতিহাসবোধ ও স্বদেশচেতনার গোপনসঞ্জার ঘটিয়েছে প্রিয়নাথ। বাস্তবে প্রিয়নাথকে ব্যঙ্গ ও অস্বীকার করলেও তার অবচেতনে প্রিয়নাথের উদ্দীপনাসঞ্চারী বিদ্রোহচেতনা ক্রিয়া করেছে। গ্রেট ন্যাশনালের মতো দেশপ্রেম ও বিদ্রোহমূলক নাটক করতে না পারলেও সেই বিদ্রোহ দানা বাঁধছিল বেণীমাধবের মধ্যে। কারণ যে বীরকৃষ্ণের প্রতি সে শ্রদ্ধাহীন ও যার অধীনতা থেকে সে মুক্তি চায়, সেই বীরকৃয় আবার ব্রিটিশ শাসকের বশংবদ মুৎসুদ্দি। ব্রিটিশ শাসকই এক সার্বিক অধীনতা চাপিয়ে দিয়েছে সমস্ত ভারতীয়ের উপর। ফলে ব্রিটিশের দাসত্ব থেকে মুক্তি না পেলে শুধু বীরকৃষ্ণের দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া অর্থহীন। ইংরেজ সরকার বাংলা থিয়েটারের বিদ্রোহমূলক নাটকের টিনের তলোয়ারে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে নাট্য নিয়ন্ত্রণ আইন বলবৎ করে। গ্রেট ন্যাশনালের নট-নির্দেশকদের গ্রেপ্তার করে। বেণীমাধব সরকারের এই আগ্রাসী ভূমিকায় সতর্ক হয়ে উঠলেও তার মনের গভীরে ক্রমশ সত্য হয়ে উঠতে থাকে প্রিয়নাথের বিদ্রোহ। তাই শেষপর্যন্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ল্যামবার্টসহ অন্যান্য ইংরেজ রাজপুরুষ এবং বীরকৃয় দাঁর উপস্থিতিতেই বেণীমাধব নিমচাঁদের অভিনয় করতে করতেই আকস্মিকভাবে পৌঁছে যান প্রিয়নাথের লেখা নাটক ‘তিতুমীর’-এর সংলাপে, যে সংলাপে আবেগতপ্ত দেশপ্রেম ও ব্রিটিশের প্রতি তীব্রঘৃণা যুগপৎ অভিব্যক্ত—“সাহেব তোমরা আমাদের দেশে এলে কেনে? আমরা তো তোমাদের কোনো ক্ষেতি করি নি।….হাজার হাজার ক্রোশ দূরে এদেশে এসে কেনে ঐ বুট জোড়ায় মাড়গে দিলে মোদের স্বাধীনতা?”

অর্থাৎ বেণীমাধব চরিত্রটির মধ্য দিয়ে তৎকালীন মধ্যবিত্ত সংস্কৃতিকর্মীর স্ববিরোধিতা ও আত্মদ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত আত্মার যন্ত্রণাটিকে স্পষ্ট করেছেন উৎপল দত্ত। বেণীমাধবের মধ্যে উনিশ শতকের বাংলার বহু নাট্যব্যক্তিত্ব যেন একদেহে এসে মিলেছে। তাঁরা সকলেই বিচিত্র ও বহুমুখী প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বাংলার নাট্যচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। কখনো কখনো তাঁদের ব্যবস্থার সঙ্গে আপোসও করতে হয়েছে হয়তো। বেণীমাধবও নাটকে বহুদূর পর্যন্ত প্রতিবাদহীন ও আপোসকামী। কিন্তু শেষপর্যন্ত আত্মরক্ষার জন্য ও স্বাধীন সংস্কৃতি রক্ষার জন্য সমস্ত ভয় ও আপোসকামিতাকে বিসর্জন দিয়ে বেপরোয়া বিদ্রোহের পথে নামতে হয়েছে। বেণীমাধবকে। এখানেই চরিত্রটির পূর্ণতা ও পরিণতি।

সাধারণ রঙ্গালয়ের শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রচিত এই নাটকে নাট্যকার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর অষ্টম দশকের সেই নাট্যকর্মীদের, যারা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলার নাট্যসংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনাকে প্রজ্জ্বলিত রেখেছিলেন। নাটকের ভূমিকায় নাট্যকার জানিয়েছেন—“বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের শতবার্ষিকীতে প্রণাম করি সেই আশ্চর্য মানুষগুলিকে—যাঁহারা কুষ্টগ্রস্ত সমাজের কোনো নিয়ম মানে নাই, সমাজ যাঁহাদের দিয়াছিল অপমান ও লাঞ্ছনা, যাঁহারা মুৎদ্দিদের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকিয়াও ধনীর মুখোস টানিয়া খুলিয়া দিতে ছাড়েন নাই, যাঁহারা পশুশক্তির ব্যাদিত মুখগহ্বরের সম্মুখে টিনের তলোয়ার নাড়িয়া পরাধীন জাতির হৃদয়-বেদনাকে দিয়াছিলেন বিদ্রোহ মূর্তি।” “টিনের তলোয়ার’ নাটকের বেণীমাধব চাটুজ্যে নাট্যকারের কল্পিত চরিত্র হলেও আসলে সে যুগের সেই প্রণম্য নাট্যকর্মীদেরই একজন।