উত্তরঃ আদালতের হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকেই অপকৃত ব্যক্তি যে সকল প্রতিকারের হকদার সেগুলি হচ্ছে বিচারালয় বহির্ভূত প্রতিকার। আত্মসহায়তা, পুনরুদ্ধার, পুনঃপ্রবেশ, উৎপাত অপসারণ, ক্ষতিপূরণ আদায় সাপেক্ষে মালামাল আটক ইত্যাদি বিচারালয় বহির্ভূত প্রতিকার।
(১) বিচার বহির্ভূত প্রতিকার (Extra judicial Remedies)
(ক) আত্মসহায়তা ( Self help): বিচার বহির্ভূত প্রতিকারগুলি প্রায় সবই আত্ম-সহায়তার অন্তর্ভূক্ত। আত্মসহায়তা ও আত্মরক্ষা কিন্তু এক নয়। নিজ হস্তক্ষেপ দ্বারা যে কোন ব্যক্তি তার উপর কৃত অন্যায় কার্য দূর করতে পারে, যেমন, অনধিকার প্রবেশকারীকে ভূমির মালিক বা দখলদার জোর পূর্বক তার অঙ্গন হতে বহিষ্কার করতে পারে। এ জন্য আদালতের কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় না। আবার অনধিকার প্রবেশকারীর প্রবেশ করার উদ্যমকে বল প্রয়োগে প্রতিহত করা যায়। পূর্বোক্ত বলপ্রয়োগকে আত্ম সহায়তা এবং পরবর্তী বলপ্রয়োগকে আত্মরক্ষা বলা যায়। আত্মসহায়তা দ্বারা কৃত অন্যায় অপসারণ করা যায় এবং আত্মরক্ষা দ্বারা আসন্ন অন্যায়ের প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করা যায়। তাই বলা যায় যে, আত্মরক্ষা’ পরবর্তীতে আত্মসহায়তায় পরিণত হয়। অবশ্য উভয় ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ প্রয়োজনের তুলনায় আনুপাতিক হতে হবে। তাই কোন আগন্তুক দেখলেই তাকে বের করার জন্য বন্দুক আনা যুক্তিযুক্ত হবে না।
(খ) পুনরুদ্ধার (Re-caption): কোন অস্থাবর সম্পত্তি বা দ্রব্যাদি কেউ অন্যায়ভাবে আটকিয়ে রাখলে প্রকৃত মালিক বা দখলদার সেটা শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ে যেতে পারে কিংবা প্রয়োজনবোধে যুক্তি সম্মত বল প্রযোগ করে তা উদ্ধার করতে পারে। এক জনের কোন বস্তু অন্যের ভূমিতে কেউ অন্যায়ভাবে রেখে দিলে কিংবা ফেলে দিলে প্রকৃত মালিক বা দখলদার সে বস্তুটি উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমিতে প্রবেশ করতে পারে এবং তা নিয়ে যেতে পারে।
(গ) পুনঃ প্রবেশ (Re-entry): অন্যায়ভাবে কোন ভূমি বা গৃহ হতে যদি কাউকে দখলচ্যুত করা হয় তবে সে ব্যক্তি আদালতের অনুমতি ছাড়াই সম্ভব হলে শান্তিপূর্ণভাবে সে ভূমিতে পূনঃপ্রবেশ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বল প্রয়োগ দ্বারা অনধিকার প্রবেশকারীকে প্রতিহত করা যায় কিংবা তাকে বহিষ্কার করা যায় কিন্তু নিজে বেদখল হয়ে দখল উদ্ধারের জন্য আর বল প্রয়োগ করা চলে না। সে ক্ষেত্রে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়।
(ঘ) উৎপাত অপসারণ (Abatement of Nuisance): ব্যক্তিগত উৎপাতের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আদালতের আশ্রয় না নিয়ে নিজে সে উৎপাত অপসারণ করতে পারে। যেমন কারো গাছের ডালপালা অন্যের আঙ্গিনায় বিস্তার লাভ করলে সে ব্যক্তি আদালতের অনুমতি ছাড়াই বর্ধিত ডাল- পালা কেটে দিতে পারে। অবশ্য অপসারণ শান্তিপূর্ণ হতে হবে এবং কারো প্রতি যেনো তা ঝুকিপূর্ণ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
(ঙ) ক্ষতিপূরণ আদায় সাপেক্ষে মালামাল আটক (Distress damage feasant): কারো গৃহপালিত জন্তু যদি অন্যের আঙ্গিনায় প্রবেশ করে তার ক্ষতি সাধন করে তবে সে জন্তুটির মালিক যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দেয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ উক্ত জন্তুটি আটকিয়ে রাখতে পারে। এই অধিকার শুধু জীব জন্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সাইকেল, মোটর গাড়ী ইত্যাদির ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। রেল কোম্পানী তাদের রেল লাইনে অন্য ইঞ্জিন চালনা করার দায়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য ইঞ্জিন আটক রেখেছে এবং আদালত তা সমর্থন করেছে।
দ্বৈত প্রতিকার বিধি (Rule of double action)
বিবাদীর অন্যায় আচরণের দরুন যদি বাদীর একাধিক ক্ষতি হয়ে থাকে, তবে প্রতিটি ক্ষতির জন্য আলাদা প্রতিকার না দিয়ে একই মামলার মধ্যে তার প্রতিকার দেয়া হয়। তাই বিবাদীর ঘুধির ফলে বাদীর যদি একটা দাঁত ভেঙ্গে যায় এবং একটা হাত ভেঙ্গে যায় তবে তার দাঁত ভাঙ্গা ও হাত ভাঙ্গার জন্য বাদী পৃথক মামলা দায়ের করতে পারে না। অনুরূপভাবে বাদী ক্ষতিপূরণ পাবার পরে যদি লক্ষ্য করে যে, তার প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ পূর্বে যথার্থভাবে বুঝতে পারা যায় নাই এবং প্রকৃতপক্ষে ক্ষতির পরিমাণ অধিক ছিল তবে এ আধিক্যের জন্য সে পৃথক মামলা করিতে পারে না। একে দ্বৈত প্রতিকার বিধি বলা হয়।
ব্যতিক্রম (Exceptions): একই কারণে একাধিক মামলা করা যায় না-এ বিধির কিছু ব্যতিক্রম আছে। এগুলি নিম্নরূরপঃ
(১) একই কাজ যদি একাধিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করেঃ বিবাদীর ঘুষির ফলে বাদীর যদি চশমা ভেঙ্গে যায় এবং একটা দাঁতও ভেঙ্গে যায় তবে চশমা ভাঙ্গার জন্য ট্রেসপাশ এবং দাঁত ভাঙ্গার জন্য আঘাত (battery) এর মামলা করা যায়।
(২) একই ধরনের কাজ যখন পৃথক কাজ হিসাবে চিহ্নিত হয়ঃ তাই মানহানিকর উক্তি যদি একাধিক ব্যক্তির নিকট এবং একাধিক স্থানে প্রচার করা হয় তবে প্রতিটি প্রকাশনার জন্য পৃথক মামলা করা যায়।
(৩) যখন একই কার্যের দরুন বিভিন্ন সময়ে ক্ষতি হয়ঃ বাদীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার ফলে যদি সে ‘ক’ এর চাকুরীচ্যূত হয় এবং পরে যখন সে ‘খ’ এর চাকুরী গ্রহণ করে ঐ একই কুৎসা ‘খ’ কে প্রভাবিত করে এবং বাদীকে চাকুরীচ্যুত করে। এমতাবস্থায় ‘ক’ ও ‘খ’ উভয়ের চাকুরী হারোনোর দরুন বাদী দুটি পৃথক মামলা দায়ের করতে পারে।
(৪) যখন একই কার্য ক্রমাগতভাবে চলতে থাকেঃ উৎখাত বা এ জাতীয় অন্যান্য টর্ট যদি ক্রমাগত চলতে থাকে এবং ক্রমাগত বাদীর ক্ষতির কারণ ঘটাতে থাকে তবে প্রতিটি ক্ষতির জন্য সে পৃথক মামলা দায়ের করতে পারে।
Leave a comment