অথবা, টমাস হবসের সার্বভৌমত্বের ধারণাটি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর।
ভূমিকাঃ সপ্তদশ শতাব্দীর অন্যতম দার্শনিক ও ইউরোপের রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলকারী টমাস হব্স ১৫৮৮ খৃষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন ইংল্যান্ডের অরাজকতাপূর্ণ অবস্থা দেখে হবস সার্বভৌম শাসকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাই তিনি লেভিয়েথান নামক গ্রন্থে সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে জোরাল বক্তব্য পেশ করেন।
সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞাঃ হবস তার সার্বভৌম ক্ষমতার নিম্নরূপ সংজ্ঞা প্রদান করেছেন- ‘সার্বভৌম ক্ষমতা এমন এক ব্যক্তি বা ব্যক্তিমন্ডলী যার কাছে জনসাধারণ নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে তাদের যাবতীয় প্রাকৃতিক অধিকার সমর্পণ করে দিয়ে তার যাবতীয় কাজকে তাদের নিজেদের কাজ বলে স্বীকার করে নেয়। এই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণ কর্তৃক তার নিকট সমর্পিত সকল ক্ষমতাকে তার নিজস্ব বিচার বিবেচনা অনুসারে ক্ষমতা সমর্পণকারী জনসাধারণের শান্তি ও সাধারণ প্রতিরক্ষার লক্ষ্যে নিয়োজিত করা।’
হবসের সার্বভৌম তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যঃ হবসের সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি পরিলক্ষিত হয়-
(১) চুক্তির ফলে সার্বভৌমের উদ্ভব হয়েছেঃ সার্বভৌম ক্ষমতার ভিত্তি হচ্ছে জনগণের সমর্থন। জনগণ নিজেদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করে সার্বভৌমিকতার জন্ম দিয়েছে।
(২) সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার চুক্তি একপক্ষীয়ঃ সার্বভৌম শক্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত সার্বভৌম শক্তি কোনোক্রমেই অংশগ্রহণ করেন না। তাই তার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার চুক্তি একপক্ষীয় চুক্তি।
(৩) সার্বভৌম শক্তির অধিকারী জনগণের নিকট দায়ী ননঃ হবসের চুক্তির শর্তানুযায়ী সার্বভৌম শক্তি চুক্তির ঊর্ধ্বে। এ চুক্তি অনুযায়ী শাসক শাসিতের নিকট হতে ক্ষমতা লাভ করলেও তিনি শাসিতের নিকট দায়ী নন।
(৪) সার্বভৌম জনসাধারণের ক্ষতি করে নাঃ জনসাধারণ-এর ক্ষতি বা দায় জনসাধারণের নিজেদের, যেহেতু মানুষ নিজেদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে সার্বভৌমের যাবতীয় কাজকে নিজেদের কাজ বলে স্বীকার করে নিয়েছে।
(৫) শাস্তি প্রদান ও ক্ষমতা প্রদর্শনঃ সার্বভৌমের যেকোনো আইন প্রণয়ন ও বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে এবং ক্ষমতা রয়েছে দেশের আইনের সংগে সংশ্লিষ্ট যেকোনো মামলা শ্রবণ করে তা মীমাংসা করার এবং আইন ভংগকারীর শাস্তি প্রদান করার বা ক্ষমা করার।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, হব্স স্বৈরতন্ত্রকে স্বীকার করলেও জনস্বার্থকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। কেননা ইংল্যান্ডের তৎকালীন বিরাজমান অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য হসের সার্বভৌমিকতা তত্ত্ব বিশেষভাবে উপযোগী ছিল।
Leave a comment