সূচনা: ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে টমাস ফ্রমওয়েল এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তাঁকে আধুনিক ইংল্যান্ডের রূপকার হিসেবে সম্মান দেওয়া হয়।

[1] নব্য রাজতন্ত্রের ধারা: ইংল্যান্ডরাজ সপ্তম হেনরি প্রতিষ্ঠিত টিউডর রাজতন্ত্রকে ঐতিহাসিক জন রিচার্ড গ্রিন সর্বপ্রথম ‘নব্য রাজতন্ত্র’ (New Monarchy) আখ্যা দেন। ঐতিহাসিক ডি. এল. কেয়ার লিখেছেন যে, “সপ্তম হেনরির রাজত্বকালে রাজতন্ত্রের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়।” এই রাজতান্ত্রিক ধারা পরবর্তী রাজা অষ্টম হেনরির সময়কাল পর্যন্ত বজায় থাকে। অষ্টম হেনরির শাসনকালেরাজার প্রধান উপদেষ্টা এবং সচিবটমাস ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড এক আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

[2] জাতীয় সার্বভৌমত্ব ধারণার প্রতিষ্ঠা: রিফরমেশন পার্লামেন্টে টমাস ক্রমওয়েল দুটি আইন পাস করিয়ে ইংল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। অ্যাক্ট অব অ্যাপিলস (Act of Appeals) নামে প্রথম আইনটি পাসের (১৫৩৩ খ্রি.) মাধ্যমে ইংল্যান্ডের রাজাকে সার্বভৌম বলে ঘােষণা করা হয়। বলা হয়, রাজা হলেন সমস্ত ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক গােষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রভু। অ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসি নামে দ্বিতীয় আইনটি পাস (১৫৩৪ খ্রি.) করিয়ে রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়।

[3] চার্চের ওপর রাজার অধিকার তথ্য: টমাস ক্রমওয়েল বলেন রাজা হলেন চার্চের (ইতিহাস ও বাইবেল অনুসারে) প্রশাসনিক প্রধান। এই ঘােষণার পর চার্চের প্রধান হিসেবে অষ্টম হেনরি চার্চের ওপর যাবতীয় প্রশাসনিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। চার্চের ওপর কর স্থাপন, যাজকদের নিয়ােগ, বিচার ব্যবস্থা প্রভৃতি তিনি নিজের হাতে তুলে নেন।

[4] সংসদীয় আইনের প্রাধান্য: টমাস ফ্রমওয়েল সর্বপ্রথম সংসদীয় আইনের গুরুত্ব অনুভব করেন। সংসদ অনুমােদিত আইনগুলিকে তিনি জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়ােগ করতে শুরু করেন। ফলে সংসদীয় আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

[5] জাতীয় রাষ্ট্র গঠন: ক্রমওয়েল জাতীয় প্রশাসন গঠনের মাধ্যমে জাতীয় রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপট রচনা করেন। জাতীয় সার্বভৌমত্বের ধারণা, চার্চের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, সংসদীয় আইনের প্রবর্তন, আর্থিক ও প্রশাসনিক বিভাগের পুনর্গঠন—এই সমস্ত কিছুর সম্মিলিত প্রভাবে ইংল্যান্ড অচিরেই এক জাতীয় রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

[1] সরকারি প্রশাসনের পুনর্গঠন: রিফরমেশনের আগে পর্যন্ত রাজা এবং তার প্রাসাদের কর্মচারীরা ছিলেন প্রশাসনিক প্রধান। কিন্তু ক্রমওয়েল এই ব্যবস্থা বদলে দিয়ে প্রশাসনিক কেন্দ্রে মন্ত্রীসভাকে স্থান দেন। উনিশজন মন্ত্রী নিয়ে তিনি গঠন করেন প্রিভি কাউন্সিল। ক্রমওয়েল রাজার একটি সচিবালয় গড়ে তােলেন এবং একটি প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদ সৃষ্টি করে নিজে সেই পদে বসেন।

[2] স্থানীয় শাসনের পুনর্গঠন: জনগণের আন্দোলন মােকাবিলার জন্য ক্রমওয়েলের উদ্যোগে উত্তর ইংল্যান্ডের কাউন্সিলকে নতুনভাবে গঠন করা হয়। এই নবগঠিত কাউন্সিলকে প্রশাসনিক ও বিচারক্ষমতা দান করা হয়। এই কাউন্সিলের সক্রিয় ভূমিকায় উত্তর ইংল্যান্ডে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসে। একইভাবে স্কটল্যান্ডের ওয়েলস প্রদেশে এবং পশ্চিম ইংল্যান্ডে ক্রমওয়েল আর-একটি কাউন্সিল গঠন করেন।

[3] আর্থিক বিভাগের পুনর্গঠন: টমাস ক্রমওয়েল আর্থিক ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করেন। তিনি অর্থবিভাগের নতুন পদ সৃষ্টি করেন (১৫৩৪ খ্রি.)। পাশাপাশি চার্চের কর নির্ধারণ ও কর আদায়ের জন্য নতুন কোণাধ্যক্ষ পদ সৃষ্টি করেন। রাজস্ব বিষয়ক বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তির জন্য গঠিত হয় রাজস্ব আদালত।