প্রশ্নঃ টমাস একুইনাস আইনকে কয় ভাগে ভাগ করেছেন তা সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, টমাস একুইনাস আইনকে কয় ভাগে ভাগ করেছেন তা তুলে ধর।

ভূমিকাঃ মধ্যযুগীয় এরিস্টটল টমাস একুইনাস আইন তত্ত্বকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি আইন তত্ত্বকে চারটি দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করেছেন, যা নিম্নরূপ– (১) শাশ্বত আইন (২) প্রাকৃতিক আইন (৩) ঐশ্বরিক বা প্রত্যাদিষ্ট আইন (৪) মানরিক আইন।

(১) শাশ্বত আইনঃ শাশ্বত আইন একুইনাসের আইন তত্ত্বের প্রথম পর্যায়। তার মতে, আল্লাহ যে মহানিয়ম অনুসারে জগৎ সংসার প্রতিপালন ও নিয়ন্ত্রণ করছেন এটি সাধারণত মানুষের নৈতিক প্রকৃতির ঊর্ধ্বে এবং সামগ্রিকভাবে মানুষের জ্ঞানের আওতার বাইরে। যদিও মানুষ তার স্বল্পবুদ্ধি ও সীমিত যুক্তি দ্বারা এই আইনকে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারে না। তথাপি এটি মানুষের যুক্তিবােধের বিরুদ্ধে নয়।

(২) প্রাকৃতিক আইনঃ একুইনাসের মতে, মানবগােষ্ঠী সহজাত প্রবণতা বা স্বাভাবিক ন্যায়বােধ দ্বারা সঞ্চালিত হয়ে ন্যায় নিষ্ঠার সাথে জীবনযাপন ন্যায়-অন্যায়ের প্রভেদ উপলব্ধি করার, জ্ঞান চর্চার ও সন্তানকে শিক্ষিত করার যে প্রয়াস তাই স্বাভাবিক আইন বা প্রাকৃতিক আইন। তার মতে, মানুষের সহজাত প্রবণতা ও ন্যায়বােধের ধারণা হতেই প্রাকৃতিক আইনের উৎপত্তি। এই জ্ঞান বস্তুতে ঐশী ইচ্ছার প্রতিফলন বলে মনে করা হয়।

(৩) খােদায়ী বা ঐশ্বরিক আইনঃ ঐশ্বরিক আইন একুইনাসের আইনের তৃতীয় স্তর। তার মতে, শাশ্বত আইন ও প্রাকৃতিক আইনের সঙ্গে সাধারণভাবে সঙ্গতি রক্ষা করে স্রষ্টা প্রত্যাদেশের আকারে যে আইন মানুষকে প্রদান করে তাকে ঐশ্বরিক আইন বলে। মানুষ তার প্রজ্ঞার সাহায্যে প্রাকৃতিক আইনকে যেভাবে আবিষ্কার করে, ঐশ্বরিক আইন সেরূপ আবিষ্কারের কোনাে জিনিস নয়, এটি নিতান্তই স্রষ্টার দান।

(৪) মানবীয় আইনঃ একুইনাসের মতে, মানুষ তার নিজের কল্যাণের জন্য যে আইন তৈরি করে, তাই মানবীয় আইন। এই আইন শুধু পার্থিব জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, আধ্যাত্মিক ব্যাপারে এর কোনাে এখতিয়ার নেই। এই আইন শুধু বিশেষ এক শ্রেণীর প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রযােজ্য বিধায় একে বিশেষ আইন বলে মনে করতেন। তার মতে, মানবিক আইনের মধ্যেই একটা যুক্তিবােধ থাকবে যার স্রষ্টা হলাে মানুষ। এই আইন রচিত হবে সর্বসাধারণের কল্যাণের লক্ষ্যে।

পরিশেষঃ টমাস একুইনাসের আইন তত্ত্বটি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমালােচিত হলেও তার এই তত্ত্বটির উৎস ও লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। তিনি আইনকে পৃথক-পৃথক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে একে অনেকটা সহজ করেছেন।