অথবা, প্রত্যক্ষ বাস্তববাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকাঃ জ্ঞানের উৎপত্তি সম্পর্কে আলােচনা করতে গিয়ে জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় বস্তুর মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয় অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। যথার্থ জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করতে গিয়ে জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় বস্তুর স্বরূপ ও সম্পর্ক নিয়ে যেসব মতবাদের উদ্ভব ঘটেছে, জ্ঞানতাত্ত্বিক একত্ববাদের সেগুলাের মধ্যে অন্যতম।
জ্ঞানতাত্ত্বিক একত্ববাদ বা প্রত্যক্ষ বাস্তববাদঃ যে জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ অনুসারে কোনাে কিছুর মাধ্যম বা সাহায্য ছাড়া ইন্দ্রিয়ানুভূতির মাধ্যমে জড়বস্তু সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করা যায়, তাকে জ্ঞানতাত্ত্বিক একত্ববাদ বলে। এ মতবাদ অনুযায়ী ইন্দ্রিয়ানুভূতির মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে বস্তু জ্ঞান হয়ে থাকে। অর্থাৎ ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে আমরা সরাসরি একটি বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি। প্রত্যক্ষ বাস্তববাদ বা জ্ঞানতাত্ত্বিক একত্ববাদের আবার দুটি শাখা লক্ষ্য করা যায়। যথা- সরল বাস্তববাদ এবং নব্য বাস্তববাদ।
সরল বাস্তববাদ একটি প্রাচীন মতবাদ। এটা হচ্ছে সহজ সাধারণ লােকের মতাদেশ। এ মতবাদ অনুসারে বস্তু সরাসরি আমাদের চেতনায় ধরা দেয় এবং বস্তু প্রকৃতঁই যেমন ঠিক তেমনভাবে আমরা তার জ্ঞান পাই। বস্তু এবং বস্তুর গুণাবলির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রয়েছে। বস্তুর এই গুণসমূহকে আমরা সরাসরি ইন্দ্রিয়নুভূতির মাধ্যমে জানতে পারি। এ মতবাদ আরাে বলে যে, আমাদের মনের ধারণা বাহ্যবস্তুর অবিকল প্রতিলিপি। এ নব্য বাস্তববাদীরা মনে করেন, জ্ঞাতবস্তু কোনাে প্রতীকের মাধ্যমে জ্ঞানের সম্বন্ধে আবদ্ধ না হয়ে সরাসরি আবদ্ধ হয়। আর এ কারণেই নব্য বাস্তববাদকে জ্ঞানতাত্ত্বিক একত্ববাদ বলা হয়। এ মতবাদ বুদ্ধি বা মনকে মূলসত্তা বলে স্বীকার করে না। এদের মূলকথা হলাে মন নিরপেক্ষ বস্তুর স্বতন্ত্র সত্তা আছে এবং বস্তুকে মন সরাসরি জানতে পারে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়বস্তুর স্বরূপ নির্ধারণ সম্পর্কিত মতবাদ হিসাবে জ্ঞানতাত্ত্বিক একত্ববাদের ইতিহাস সমৃদ্ধ। এমতবাদ অনুসারে বস্তুর মন-নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সত্তা বিদ্যমান এবং বস্তুকে মন সরাসরি জানতে পারে। জ্ঞানতাত্ত্বিক একত্ববাদ বুদ্ধি বা মনকে মূল সত্তা বলে স্বীকার করে না।
Leave a comment