প্রেষণা’ কথার অর্থ হল প্রেরণা। ব্যক্তির নানাপ্রকার চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য যে প্রতিক্রিয়া তার আচার-আচরণকে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করে সুনির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করে, তাকে প্রেষণা বলে।
মানুষের দুটি দিক— একটি তার ব্যক্তিগত দিক, অপরটি তার সামাজিক দিক। জৈবিক প্রেষণাগুলি শিক্ষার্থীর জৈবিক চাহিদাগুলি পরিতৃপ্ত করে এবং সামাজিক প্রেষণাগুলি তার সামাজিক চাহিদাগুলি পরিতৃপ্ত করে। দুটি প্রেষণাই মানুষের কল্যাণসাধন করলেও এই দুটি প্রেষণার মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়। নিম্নে পার্থক্যগুলি আলােচনা করা হল –
➽ জৈবিক প্রেষণা
(১) জৈবিক প্রেষণাগুলি শারীরবৃত্তীয় প্রয়ােজন থেকেই উৎপন্ন হয়।
(২) জৈবিক প্রেষণাগুলি সহজাত। অর্থাৎ এই প্রেষণাগুলি ব্যক্তির জন্মসূত্রে প্রাপ্ত হয়।
(৩) পরিপাক ক্রিয়ার সঙ্গে জৈবিক প্রেষণার গভীর সম্পর্ক বর্তমান।
(৪) জৈবিক প্রেষণাগুলি সংখ্যায় অনেক কম।
(৫) জৈবিক প্রেষণা সমগােত্রীয় সকল প্রাণীর মধ্যে সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়।
(৬) এই ধরনের প্রেষণা জৈবিক বা দৈহিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
(৭) জীবনধারণের জন্য জৈবিক প্রেষণাগুলি অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়।
(৮) প্রয়ােজনের বিচারে জৈবিক প্রেষণাগুলি মুখ্য এবং পরস্পর মৌলিক।
(৯) আপৎকালীন অবস্থায় আলাে, বাতাস, জল, খাদ্য ইত্যাদি জৈবিক চাহিদাকে কেন্দ্র করে প্রেষণা জাগ্রত হয়।
(১০) এই জাতীয় প্রেষণার শারীরিক ভিত্তি আছে, কিন্তু সামাজিক ভিত্তি নেই।
(১১) জৈবিক প্রেষণাগুলির তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তি হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় দেহের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
(১২) খাদ্যের অভাবে ক্ষুধার তাড়নায় প্রাণীর খাদ্য অনুসন্ধান।
➽ সামাজিক প্রেষণা
(১) সামাজিক প্রেষণাগুলি পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয়।
(২) সামাজিক প্রেষণাগুলি জন্মগত নয়। এগুলি ব্যক্তি পরিবেশ থেকে অর্জন করে।
(৩) কিন্তু পরিপাক ক্রিয়ার সঙ্গে সামাজিক প্রেষণার কোনাে সম্পর্ক নেই।
(৪) জৈবিক প্রেষণার তুলনায় সামাজিক প্রেষণাগুলি সংখ্যায় অনেক বেশি।
(৫) সামাজিক প্রেষণা একই শ্রেণিভুক্ত সমস্ত প্রাণীর মধ্যে সমভাবে সৃষ্টি হয় না।
(৬) এই ধরনের প্রেষণা ব্যক্তির শারীরবৃত্তীয় ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রয়ােজনীয় নয়।
(৭) এই ধরনের প্রেষণা জীবনধারণের জন্য বিশেষ প্রয়ােজনীয় নয় বললেই চলে।
(৮) সামাজিক প্রেষণাগুলিকে গৌণ প্রেষণা বলা হয়। এই ধরনের প্রেষণা জৈবিক প্রেষণার মতাে মৌলিক নয়।
(৯) সামাজিক প্রেষণার ক্ষেত্রে আপৎকালীন অবস্থা বলে কিছুই নেই।
(১০) বিপরীত ক্রমে এই জাতীয় প্রেষণার শারীরিক ভিত্তি নেই, কিন্তু সামাজিক ভিত্তি আছে।
(১১) সামাজিক প্রেষণার তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তি না হলে দেহের ভারসাম্য নষ্ট হয় না।
(১২) দলবদ্ধভাবে বাস করা মানুষের আদিম প্রবৃত্তি। মানুষ এখন পরিবারের সঙ্গে সমাজের মধ্যে সকলকে ভালােবেসে নিরাপত্তার আশ্রয় পায়, এটি সামাজিক প্রেষণা।
সবশেষে আমরা এ কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, মানুষের জীবনে প্রেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। প্রেষণার জন্য মানুষ তার দৈহিক ও সামাজিক চাহিদাগুলি পূরণ করে পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত হয়।
Leave a comment