সাধুচরণের পরিচয়: সাধুচরণের বয়স ছিল পঞ্চাশ, গায়ে মাংস ছিল না। তার বাড়ি ছিল জয়নগরের এক গণ্ডগ্রামে। ছােটোবেলা থেকেই পিতৃমাতৃহীন সাধুচরণ আত্মীয়স্বজনের আশ্রয় না পেয়ে বাধ্য হয়েই খিদের জ্বালায় ছিঁচকে চুরি শুরু করে। একদিন হাতেনাতে ধরা পড়ে জেল হয়ে যায় সাধুচরণের। জেল থেকে বেরিয়ে সে পাকা সিঁধেল চোর হয়ে ওঠে। এরপর অনেকবারই তাকে জেলে যেতে হয়। একসময় সে ঠিক করে, অসততার পথ ত্যাগ করে সে সংসার করবে। চোরাই পয়সায় সে কিছু জায়গাজমি কিনে বিয়ে করে। তার এক ছেলেও জন্মায়, নাম বিশে। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতি সাধুচরণকে বেশিদিন ভালাে থাকতে দেয় না। গ্রামে চুরি-ডাকাতির কোনাে ঘটনা ঘটলেই থানায় ডাক পড়ে তার। নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও তাকে রুলের গুঁতাে খেতে হয়, অনেকক্ষেত্রে পুলিশকে ঘুষ দিয়ে রেহাই পেতে হয়। তার মনে হয় যে, চুরি করে জেলের ভাত খাওয়া এর চেয়ে অনেক বেশি সুখের। তাই সে আবার ফিরে যায় তার পুরােনাে পেশা চৌর্যবৃত্তিতে। তবে দীর্ঘদিন জেলে থাকায় ছেলে বিশের জন্য আর শুকনাে পড়ে-থাকা চাষের জমির কথা ভেবে তার চিন্তা হত।

মুস্তাফার পরিচয় : মুস্তাফা ছিল বছর দশেকের ফুটফুটে একটি ছেলে। সে জেলখানায় এমন ভাবভঙ্গি করে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, যেন পৃথিবীর কাউকে সে তােয়াক্কা করে না। এন্টালির কোনাে এক স্কুলে-পড়া মুস্তাফার বাবা ছিলেন রাজমিস্ত্রি। হঠাৎ একদিন তিনতলা সমান উঁচু বাঁশের ভারা থেকে পড়ে তিনি মারা গেলে বিধবা মা এবং বেশ কয়েকটি ভাইবােন নিয়ে অথই জলে পড়ে মুস্তাফা। মাইনে দিতে না পারায় স্কুল থেকে তার নাম কেটে দেওয়া হয়। তাদের বস্তির এক পকেটমার-সর্দার মুস্তাফাকে টাকার লােভ দেখিয়ে তার দলে নিয়ে নেয়। এভাবেই শুরু হয় তার পকেট কাটার পেশা। পকেটমার হিসেবে ধরা পড়ে ইতিপূর্বে সে বারচারেক জেলেও গেছে। ইস্কুলে যেতে ইচ্ছে করে কি না লেখকের এই প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞের মতাে সে জানায় যে, ‘ইচ্ছে করলেই কি যাওয়া যায়?’