উদ্দিষ্ট জেলখানা: সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের মেঘের গায়ে জেলখানা রচনা থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটিতে বক্সা জেলখানার কথা বলা হয়েছে।
জেলখানায় অপরাধের তুলনায় শান্তির হেরফের : লেখক সুভাষ মুখােপাধ্যায় বক্সা জেলখানার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে তিনি দুইপ্রকার কয়েদির সম্ধান পান-অভিজাত কয়েদি এবং অনভিজাত কয়েদি। খাদ্যে ভেজাল বা বিষ মিশিয়ে, অথবা নােট জাল করে, কিংবা ব্যাংক লুঠ করে আসা অর্থবান ঘরের, লেখাপড়া-জানা, ভদ্র, বিনীত কয়েদিরাই হল অভিজাত কয়েদি। আর চুরি, ডাকাতি, পকেটমারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে আসা হতদরিদ্র, ছােটোলােক পরিবারের নিরক্ষর, অভদ্র, সৌজন্যহীন কয়েদিরাই হল অনভিজাত কয়েদি। অভিজাত কয়েদিরা বহু মানুষকে ধনে-প্রাণে শেষ করলেও জেলের কর্তামহল তাদের তােয়াক্কা করে। বড়াে ঘর, বনেদি বংশের ছেলে বলে জেলে গিয়ে তারা সুখেই থাকে। অন্যদিকে, ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণ করতেই অভাবের তাড়নায় চুরি ছিনতাই রাহাজানি করা অনভিজাত কয়েদিদের জন্য থাকে ‘অনন্ত নরকবাসের ব্যবস্থা’। জেলের জুতাে সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ অবধি সমস্ত কাজ বিনা মজুরিতে করিয়ে নেওয়া হয় এদের দিয়ে। তবুও “পান থেকে চুন খসলেই পিঠে ডান্ডা কিংবা লােহার নাল মারা বুটের লাথি”। জেলখানায় অপরাধের তুলনায় শাস্তির এই হেরফের লক্ষ করেই লেখক অভিজাত কয়েদিদের ‘সুয়ােরানির ছেলে’ এবং অনভিজাত কয়েদিদের ‘দুয়ােরানির ছেলে’ বলে অভিহিত করেছেন।
Leave a comment