ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্রনাথের ব্যাপক প্রভাব বলয়ের বাইরে যেসব কবি মৌলিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন, জীবনানন্দ দাশ ছিলেন তাদের মধ্যে বিশিষ্ট। তিনি ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বরিশাল বজ্রমোহন স্কুল ও কলেজ, পরে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে লেখাপড়া করেছেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম. এ পাস করেন। কর্মজীবনে ছিলেন ইংরেজির অধ্যাপক। তার রচিত কাব্যগুলোর মধ্যে প্রধান-ঝরা পালক (১৯২৮), ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন (১৯৪২),
সাতটি তারার তিমির (১৯৪৯), রূপসী বাংলা (১৯৫৭) ও বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৫৭)।

জীবনানন্দ দাশের কবি প্রকৃতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক দীপ্তি ত্রিপাঠী বলেছেন, “এক বিমূঢ় যুগের বিভ্রান্ত কবি জীবনানন্দ। পৌষের চন্দ্রালোকিত ও মধ্যরাত্রির প্রকৃতির মতো তার কাব্য কুহেলি কুহকে আচ্ছন্ন। সুবোধ্যতার অন্তরালে এক দুর্জেয় রহস্য বিরাজিত। সত্যি কথা বলতে কি, আধুনিক কবিদের মধ্যে একমাত্র তার কাব্যেই এ যুগের সংশয়ী মানবাত্মায় ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত পরিচয়টি ফুটে উঠেছে।” তার কবিতার অবয়ব জুড়ে একটি বিষণ্ণতা সহজেই অনুভব করা যায়।

ভাষা ও শব্দ প্রয়োগে জীবনানন্দ দাশ কখনো দুর্বোধ্য হননি। অতি সাধারণ শব্দ ও চিত্রকল্প তার হাতের ছোঁয়ায় অসামান্য
হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতাকে বলেছেন ‘চিত্র রূপময়’। জীবনানন্দের কবিতা পাঠকের সামনে একটি সহজ ছবি তুলে ধরে। এজন্য জীবনানন্দের বিমুগ্ধ পাঠকের সংখ্যা এত বেশি। ছবি ও সুরের সম্মিলন ঘটিয়ে জীবনানন্দ দাশ তার
কবিতাকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছিলেন। যেমন- ‘বনলতা সেন’ কবিতায় তিনি ছবি ও ছন্দের সার্থক মিলন ঘটিয়েছেন-

“হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে।
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে, মালয় সাগরে।

অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে।
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে।
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দু’দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে জীবনানন্দ দাশ কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।