প্রশ্নঃ জিলা নিবন্ধকের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী কে? নিবন্ধনের মহাপরিদর্শকের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর অথবা প্রধান নিবন্ধন মহাপরিদর্শক সাব রেজিষ্ট্রারের কার্যালয় পরিচালনার নিয়ম কিভাবে প্রণয়ন করেন অথবা মহাপরিদর্শকের রেজিষ্ট্রেশন কার্যালয় তদারকি এবং বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ দলিল রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয়ে জেলা রেজিষ্ট্রার বা জেলা নিবন্ধক গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। সাধাণত সাব-রেজিষ্ট্রার সকল দলিল নিবন্ধন করে। তবে ক্ষেত্র বিশেষ জেলা রেজিষ্ট্রারও দলিল নিবন্ধন করেন।

জিলা নিবন্ধকের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী কেঃ কোন জেলা নিবন্ধকের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী হলেন- ‘ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিষ্ট্রেশন’। নিবন্ধন আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী নিম্নে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিষ্ট্রারের নিয়োগ পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো-

(১) সরকার এখতিয়ারভুক্ত এলাকার জন্য ‘ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিষ্ট্রেশন’ নামক অফিসার নিয়োগ করবেন। তবে সরকার চাইলে ‘ইন্সপেক্টর জেনারেল’ এর পরিবর্তে অন্য অফিসার নিয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ‘ইন্সপেক্টর জেনারেল’ যে ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন উক্ত অফিসারও সেই ক্ষমতা প্রয়োহ করবেন।

(২) ‘ইন্সপেক্টর জেনারেল’ সরকারের অধীন অন্য কোন পদের কাজও সম্পাদন করতে পারেন। জেলা রেজিষ্ট্রার অনুপস্থিত থাকলে বা তার পদ সাময়িকভাবে খালি হলে উক্ত পদ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ‘ইন্সপেক্টর জেনারেল’ রেজিষ্ট্রার অফিসের কাজ চালানোর জন্য লোক নিয়োগ করতে পারেন।

নিবন্ধনের মহাপরিদর্শকের ক্ষমতা ও কার্যাবলী অথবা

প্রধান নিবন্ধন মহাপরিদর্শক সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয় পরিচালনার নিয়ম কিভাবে প্রণয়ন করেন অথবা

মহাপরিদর্শকের রেজিষ্ট্রেশন কার্যালয় তদারকি এবং বিধি প্রণয়নের ক্ষমতাঃ

(১) তত্ত্বাবধান : রেজিষ্ট্রেশন মহাপরিদর্শক সরকারের অধীন এলাকায় সকল রেজিষ্ট্রি অফিস তত্ত্বাবধান করেন।

(২) ভাষা নির্ধারণ : কোন জেলায় কোন ভাষা ব্যবহৃত হবে তা ঘোষণা করেন।

(৩) সংরক্ষণ : কাগজপত্র ও দলিলপত্র সংরক্ষণকরণ।

(৪) জরিমানা নিয়ন্ত্রণ : ২৫ ও ৩৪ ধারা অনুযায়ী ধার্যকৃত জরিমানা নিধারণ করেন। 

(৫) ফরম নিয়ন্ত্রণ : যে ফরমে দলিরপত্রের স্মারকলিপি প্রস্তুত হয় তা নিয়ন্ত্রণ।

(৬) সূচিপত্র নির্ধারণ : ১ থেকে ৪ নং সূচিপত্রে কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হবে তা নির্ধারণ করেন।

(৭) ছুটি ঘোষণা : রেজিষ্ট্রি অফিসে কোন কোন ছুটি পালন হবে তা ঘোষণা করেন।

(৮) কাজ নিয়ন্ত্রণ : রেজিষ্ট্রার ও সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন। 

(৯) মূল্য নির্ধারণ : ৬৩(এ) ধারা অনুযায়ী সম্পত্তির মূল নির্ধারণ করেন।

(১০) গেজেট প্রকাশ : উপরের বিধিগুলি অনুমোদনের জন্য দাখিল করতে হবে। অনুমোদনের পর সরকারি গেজেটে প্রকাশ করতে হবে। গেজেট প্রকাশ করা হলে তা এই আইনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

নিবন্ধন কর্মকর্তার ক্ষমতা ও কর্তব্যঃ নিবন্ধন আইনের ৫১-৬৩ ধারা অনুযায়ী নিম্নে নিবন্ধন কর্মকর্তার ক্ষমতা ও কর্তব্য আলোচনা করা হলো-

(১) রেজিষ্ট্রার বই সংরক্ষণ : প্রত্যেক রেজিষ্ট্রি অফিসে ৪টি বই রাখতে হবে। (i) উইল ব্যতীত অন্যান্য দলিলের বিবরণ সম্বলিত বই, (ii) রেজিষ্ট্রি অস্বীকারের বিবরণ সম্বলিত বই, (iii) উইল এবং পোষ্য পুত্র গ্রহণের বিবরণ সম্বলিত বই এবং (iv) বিবিধ বিষয় সম্বলিত বই। [ধারা-৫১]

(২) রেজিস্ট্রিকারীর কর্তব্য : কোন দলিল দাখিল করা হলে রেজিস্ট্রিকারী কর্মকর্তার কাজ হলো- উক্ত দলিল দাখিলের তারিখ, স্থান, সময়, স্বাক্ষর হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা তিনি দলিল দাখিলকারীকে দলিল প্রাপ্তির একটি রশিদ প্রদান করবেন এবং দ্রুত দলিল রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ করবেন। [ধারা-৫২]

(৩) রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ করতে বাধা: দলিলের সাথে সর্বশেষ মালিকানা সম্পর্কিত খতিয়ানের কপি দিতে হবে। এছাড়া সম্পত্তির প্রকৃতি, সম্পত্তির মূল্য, সম্পত্তির মানচিত্র, সম্পত্তির পূর্ববর্তী ২৫ বছরের মালিকানার বর্ণনা ইত্যাদি প্রদান না করলে রেজিষ্ট্রিকারী কর্মকর্তা রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ করবেন না। [ধারা-৫২(এ)]

(৪) ক্রমিক নম্বর প্রদান : প্রত্যেক বইতে লিখিত বিষয়ের ক্রমিক নম্বর দিতে হবে। বছরের শুরু থেকে এই নম্বর শুরু হবে এবং বছরের শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলবে। [ধারা-৫৩] 

(৫) সূচিপত্র প্রদান : প্রত্যেক বইতে বিষয়বস্তুর সূচিপত্র প্রদান করতে হবে। [ধারা-৫৪] 

(৬) চারটি সূচিপত্র প্রণয়ন : মোট চারটি সূচিপত্র প্রস্তুত করতে হবে। [ধারা-৫৫]

(৭) সূচিপত্র দেখার অনুমতি প্রদান : রেজিষ্ট্রি অফিসার নির্ধারিত ফি গ্রহণ করে সূচিপত্র ও অন্যান্য বই পরিদর্শনের অনুমতি প্রদান করতে পারেন । [ধারা-৫৭]

(৮) জাবেদা সকল প্রদান : রেজিষ্ট্রি অফিসার নির্ধারিত ফি গ্রহণ করে জাবেদা নকল প্রদান করতে পারেন। [ধারা-৫৭]

(৯) সম্পাদনকারীর স্বাক্ষর গ্রহণ : কোন দলিল রেজিষ্ট্রির জন্য গৃহীত হলে প্রত্যেক সম্পাদনকারীর স্বাক্ষর নিতে হবে। কোন জবানবন্দী নেওয়া হলে তার স্বাক্ষর নিতে হবে। সনাক্তকারী ব্যক্তির স্বাক্ষর নিতে হবে। দলিল রেজিস্ট্রিকারী অফিসারের সামনে কোন পাওনা লেনদেন হলে তা দলিলের পৃষ্ঠে নোট করতে হবে। [ধারা-৫৮]

(১০) রেজিস্ট্রিকারীর স্বাক্ষর প্রদান : ৫২ ও ৫৮ ধারায় বর্ণিত সকল পৃষ্ঠায় রেজিষ্ট্রিকারী অফিসার তারিখসহ স্বাক্ষর দিবেন। [ধারা-৫৯]

(১১) সার্টিফিকেট প্রদান : দাখিলকৃত দলিলে আইন অনুযায়ী সকল শর্ত পালন হলে রেজিষ্ট্রিকারী অফিসার স্বাক্ষর ও তারিখসহ সার্টিফিকেট প্রদান করবেন। [ধারা-৬০] 

(১২) দলিল ফেরত : দলিল রেজিষ্ট্রি সম্পূর্ণ হলে দলিল দাখিলকারীকে রশিদ সাপেক্ষে দলিলটি ফেরত দিতে হবে। [ধারা-৬১]

(১৩) অজানা ভাষার ক্ষেত্রে পদ্ধতি : রেজিস্ট্রিকারী অফিসারের অজানা ভাষায় দলিল রেজিষ্ট্রেশনের জন্য দাখিল করা হলে মূল দলিলের সাথে ১৯ ধারা অনুযায়ী প্রচলিত ভাষায় একটি অনুবাদ দাখিল করতে হবে। [ধারা-৬২]

(১৪) শপথ গ্রহণ : রেজিস্ট্রিকারী অফিসার প্রয়োজন মনে করলে যিনি জবানবন্দী দান করেন তার শপথ গ্রহণ করতে পারেন। [ধারা-৬৩]

(১৫) সারমর্ম লিপিবদ্ধকরণ : রেজিষ্ট্রিকারী অফিসার বিবৃতির সারমর্ম লিপিবদ্ধ করবেন এবং বিবৃতিদানকারীকে তা পড়ে শোনাবেন। বিবৃতিদানকারী উক্ত বিবৃতির যথার্থতা স্বীকার করলে রেজিস্ট্রিকারী অফিসার স্বাক্ষর করবেন। [ধারা-৬৩]

উপসংহারঃ দলিল রেজিষ্ট্রি বা নিবন্ধন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন দলিল সম্পাদন হয়ে গেলে যতদিন না উক্ত দলিল রেজিষ্ট্রি হবে ততদিন ঐ সম্পত্তির মালিকানা ক্রেতার উপর প্রতিষ্ঠিত হবে না।