জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল – ফজিলত সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেছেন এই দশ দিন নেক আমল করা সে আল্লাহর কাছে প্রিয় আর কোন আমল নেই। তাই এই ১০ দিন প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের ইবাদত করা উচিত।
জিলহজ মাসের আমল – ফজিলত সঠিকভাবে জেনে প্রত্যেকটি মুমিন মুসলমানের উচিত সেই ভাবে ইবাদত করা। এবং মহান আল্লাহতালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল – ফজিলত সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ফজিলত – জিলহজ মাসের করণীয়
জিলহজ মাসের করণীয়
সিয়াম পালন করা-রোজা রাখা
জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো প্রথম ১০ দিন রোজা রাখা। আর এই নেক আমলের মধ্যে রোজা বা সিয়াম পালন হলো অন্যতম ইবাদত। এই দিনগুলোতে খুব যত্ন সহকারে সিয়াম পালন করা উচিত। হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো করেননি এগুলো হল মহরম মাস বা আশুরার রোজা, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের রোজা বা আওয়াবিনের রোজা, ফজরের পূর্বে দুই রাকাত সালাত বা নামাজ।
তাকবীর ও তাসবীহ পাঠ করা
জিলহজ মাসের এই ১০ দিন তাকবীর, তাহমিদ ও তাসবীহ করা। আর এই দিনগুলো জিকির করার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, এ দশ দিন নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় কোন আমল নেই। তাই তোমরা এ সময় তাকবীর তাহলিল তাহমিদ পাঠ কর।
তাকবীর – আল্লাহু আকবার
তাহমিদ – আলহামদুলিল্লাহ
তাহলিল – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
তাসবিহ – সুবহানাল্লাহ (বায়হাকে সোয়াবুল ঈমান হাদীস ৩৪৭৪)।
আল্লাহর জিকির করা
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন আল্লার জিকির করায় বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসুল সালাম বলেন, এ দশ ১০ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে অতি প্রিয় কোন আমল নেই। তোমরা এ সময়ে বেশি বেশি করে তাকবীর তাহলিল বেশি বেশি করে পাঠ করো।
মহান আল্লাহতালা বলেন, যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিন সমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। আর অধিকাংশ ফকিগণের মতে এই আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ ১০ দিন কে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে।
তওবা
তওবা অর্থ হল প্রত্যাবর্তন করা বা ফিরে আসা। আল্লাহর হুকুম এর ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া, অতীতের কৃতকর্ম সম্পর্কে লজ্জিত হওয়া, ভবিষ্যতে আর কখনো আল্লাহ না ফরমানি না করা ও আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে অবাধ্য না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প। আল্লাহ তায়ালা না ফরমানি থেকে ফিরে আসাকে বলা হয় তওবা। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো বিশুদ্ধ তওবা।
সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ নবীদেরকে এবং তার মমিন সঙ্গীদেরকে লজ্জা দিবেন না। ধাবিত হবে তাদের জ্যোতি। তাদের সম্মুখে এবং দক্ষিণ পাশ্বে। তারা বলবে হে আমার প্রতিপালক আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান করুন এবং আমাদের ক্ষমা করুন নিশ্চয়ই আপনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান”।
হজ ও ওমরা করা
জিলহজ মাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো হজ ও ওমরা পালন করা। আর রাসূল সাঃ তার উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন এই দুইটি আমল সম্পর্কে। হজ ও ওমরা সম্পর্কে রাসুল সালাম বলেন, “এক ওমরা থেকে আরেক ওমরার মধ্যবর্তী গোনাহের কাফফারা স্বরূপ। আর কবুল হজের প্রতিদান কেবল জান্নাত”। (বুখারি হাদিস নং ১৭৭৩ মুসলিম হাদীস ৩৩৫৫)। হজের মাধ্যমে পাওয়া যায় পাপের কুফল থেকে আত্মার পবিত্রতা।
আর এই ইবাদতের মাধ্যমেই মানুষ মহান আল্লাহতালার কাছে হবে প্রিয় ও সম্মানিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি হজ করেছে তাতে কোন অশ্লীল আচরণ করেনি ও কোন পাপে লিপ্ত হয়নি, সে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে গেল যেদিন তার মাথা তাকে প্রসব করেছে”। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম বলেছেন, এক ওমরা থেকে অন্য উমরা কে তার মধ্যবর্তী পাপ সমূহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আর কবুল হজ্জের প্রতিদান হলো জান্নাত”। সহীহ বুখারী।
আরাফার দিনে রোজা রাখা
আরাফার দিন রোজা বা সিয়াম পালন করা এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।যে হজ পালন করবে তাকে আরাফার দিন রোজা রাখতে হবে না, আর যারা হজ পালন করবে না তাদের জন্য আরাফার দিনের রোজা রাখতে হবে। আবু কাতাদা থেকে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেন, “আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী আরাফাত দিন রোজা আগের ও পরের এক বছরের গোনার কাফফারা হবে”( মুসলিম)।
ফরজ, নফল সালাত আদায় করা
আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যেভাবে নামাজ আদায় করেছেন সেইভাবেফরজ, নফল সালাত আদায় করতে হবে। সকল প্রকার ইবাদত যেমন ফরজ, সুন্নাহ ও মুস্তাহাবসমূহ সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। ফরজ নামাজ সঠিক সময় আদায় করতে হবে এবং নফল নামাজে অন্যান্য ইবাদত বেশি বেশি করে পালন করতে হবে। সালাত হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম মাধ্যম।
সাওবান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাঃ কে বলতে শুনেছি তুমি বেশি বেশি করে সেজদা করো কারণ তুমি যে কোন সেজদায় করো না কেন তার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করবেন” (সহীহ মুসলিম)।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখে আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরজ ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোন ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট অর্জন করে থাকে।
এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে দেই আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শুনে, আমি তার চোখ হয়ে যায় যা দিয়ে এসে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যায় যা দিয়ে সে ধরে, আমি তার পা হয়ে যায় যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কোন কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে দান করি। আর সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দেই।
আমি যে কোন কাজ করতে চাইলে তাতে কোনো রকম দ্বিধা করি না যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ হরনে। সেই মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তার প্রতি কষ্টদায়ক বস্তু দিতে অপছন্দ করি।
কোরবানির দিনের আমল
কোরবানির দিন বা জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখের আরেকটি নাম রয়েছে আর তা হলো ইয়াওমিল হজ্জিল আকবর বা একে শ্রেষ্ঠ হজের দিন বলা হয়। হাজীগণ এদিনে পশু কোরবানি করেন এবং তাদের হজ পূরণ করেন। হযরত ওমর রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির দিন জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কোন দিন? সাহাবারা উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন নাহার বা কোরবানির দিন”। (আবু দাউদ ১৯৪৫)।
অর্থাৎ জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ বা কোরবানির দিন হল শ্রেষ্ঠ দিন। রাসুল সাঃ বলেছেন আল্লাহর কাছে দিবস সমূহের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কোরবানির দিন। তারপর পরবর্তী তিন দিন অথচ এই দিনগুলোতে মুসলিমগণ ইবাদত করে না। এই দিনের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হয় না। মহান আল্লাহ তায়ালা আরাফার দিন জাহান্নাম থেকে অধিক পরিমাণে লোক মুক্ত করেন।
কিন্তু বছরের অন্য কোন দিনে তা করেন না। আল্লাহ তাআলা এই দিনে তার প্রিয় বান্দাদের নিকটবর্তী হন এবং তার বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় দিন হলো নহরের দিন। তারপর মিনায় অবস্থানের দিন। এই দিনে আমাদের সবার উচিত অধিক পরিমাণে ইবাদত বন্দেগী করা।
কোরবানি করা
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে গৃহপালিত পশু আল্লাহর নামে কোরবানি করা আর ইসলামী শরীয়া মোতাবেক একে ইবাদত বলা হয়। মহান আল্লাহতালা বলেন, তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং নহর অর্থাৎ পশু কোরবানি করো। আরো বলা হয়েছে বল আমার সালাত, আমার জীবন, আমার মরণ, জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।
তার কোন শরীফ নেই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম মুসলিম।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পর কোরবানি করলো তার কোরবানি পরিপূর্ণ হল এবং সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল”।
জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ফজিলত
আরবি ১২ মাসের মধ্যে সর্বশেষ মাস হলো জিলহজ মাস। আরবি ১২ মাসের মধ্যে চারটি মাস আছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এই চার মাসের মধ্যে জিলহজ মাস হলো অন্যতম। এই জিলহজ মাস একজন মুসলিমের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ পবিত্র এই মাসে মুসলিমগণ হজ পালন করে থাকে। এই মাসে হজ পালনের নির্ধারিত তারিখ হল ৭ তারিখ থেকে ১0 তারিখ পর্যন্ত।
জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে মুসলিম জাহানের জন্য নির্ধারিত ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করা হয়ে থাকে। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের রয়েছে আলাদা মর্যাদা। এই প্রথম ১০ দিন বা রাত এতই গুরুত্বপূর্ণ যে মহান আল্লাহতালা কসম খেয়েছেন এই দিনগুলোর জন্য। আল্লাহতালা সূরা ফজরের ১ থেকে ২ আয়াতে বলেন, “শপথ প্রভাতের, শপথ ১০ রাতের”। আর এই আয়াতে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে তা জিলহজ মাসের .১০ রাতের কথা।( তাফসিরে ইবনে কাসির চতুর্থ খন্ড পৃষ্ঠা ৫৩৫)। >
জিলহজ হলো চার ৪ টি সম্মানিত ও পবিত্র মাসের মধ্যে অন্যতম। পবিত্র এই চারটি মাস হল মহরম, রজব, জিলকদ ওজিলহজ্জ। মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা তাওবার ৩৬ নং আয়াতে বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর বিধান গণনার মাস বার ১২টি, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত”।জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেন, আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম ১০ দিনের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের আমল উত্তম নয়।
সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ও এই দশ দিনের আমলের চেয়ে উত্তম নয়।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ রাস্তার জিহাদ ও এর চেয়ে উত্তম নয় তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করলো এবং কিছুই না নিয়ে ফিরে এলো”। আবু দাউদ হাদিস ২৪ ৩৮ বুখারী হাদিস ৯৬৯)। সূরা হজ্ব এর আয়াত ২৮শে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তারা যেন নির্দিষ্ট দিন সমূহে আল্লাহর স্মরণ করে”।
মহান আল্লাহ তায়ালার গণনায় বারো ১২টি মাস রয়েছে পৃথিবীর শুরু থেকেই। আর এই বার ১২টি মাসের মধ্যে চারটি মাস হলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর এই চার ৪ মাসে মহান আল্লাহতালা কোন রক্তপাত অর্থাৎ যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা হজ্জের ২৮ নং আয়াতে বলেছেন, “তারা যেন নির্দিষ্ট দিন সমূহে আল্লাহর স্মরণ করে”। আর নির্দিষ্ট দিন বলতে জিলহজ মাসের ১০ দিন কে বোঝানো হয়েছে।
হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৮ জিল হজ থেকে। জিলহজ মাসের ৮ তারিখে মিনায় গমন করতে হয় এবং ৯ তারিখে অবস্থান করতে হয়। এরপর সূর্যাস্তের পর মাগরিব এশার নামাজ একসাথে আদায় করা এবং রাত্রি যাপন করতে হয় মুজদালিফায়। মিনায় গমন করতে হয় এবং শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে হয় এবং এরপর কোরবানি করতে হয়। জিলহজ মাসের ১০ দিনের আমল পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের রাত যেমন মর্যাদার তেমনি জিলহজ মাসের ১০ দিনও ইবাদত বন্দেগী অনেক মর্যাদার এবং সম্মানের।
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব
জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের মর্যাদায় মহান আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে সূরা ফজরের প্রথম দুই আয়াতে জিলহজ্ব মাসের ১০ রাতের শপথ করেছেন এবং এই দিনগুলোর মর্যাদা তুলে ধরেছেন। আর এই দুই আয়াতে আল্লাহতালা বলেছেন,” শপথ ভোর বেলার, শপথ দশ রাতের”। আর এই দশ ১০ রাত বলতে জিলহজ মাসের দশ ১০ রাত বা দিনকে বোঝানো হয়েছে। সূরা হাজ্বের ২৮ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তারা যেন নির্দিষ্ট দিন সময় আল্লাহর স্মরণ করে”।
আর মহান আল্লাহতালা কোন কিছুর ব্যাপারে কসম করেন তার মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে। মহান আল্লাহতালা রিজিকের প্রত্যাবর্তনও করেছেন এইসব দিনে। সুরা আল হজ্বের.২৮নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তারা যেন নিজেদের কল্যাণের স্থানসময়ে হাজির হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিন সময় স্মরণ করতে পারে মহান আল্লাহ তায়ালার নাম”।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনগুলোকে আখ্যায়িত করেছেন শ্রেষ্ঠ দিন বলে।জাবির রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে দশকের দিনগুলো হল সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। আর এই দশক মানে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন ইঙ্গিত করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো আল্লাহর আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন নেই?
তিনি বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আল্লাহর পথে জিহাদেও এর চেয়ে উত্তম দিন নেই। হ্যাঁ কেবল সেই যার চেহারা মাটির সাথে মিশে দিয়েছে। (মুসনদে বাযযার ১১২৮)। আর এই দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফার দিন। আর আরাফার দিন হল বড় হজের দিন। আর হজের দিন হল জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন। মাগফেরাত ও ক্ষমার দিন। জিলহজ মাসের এই দশ ১০ দিন যদি ফজিলত আর কিছু না থাকতো তাহলে মর্যাদার জন্য এই দিনে যথেষ্ট হতো।
আরাফার দিবস সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আরাফার দিবসের হজ। (তিরমিজি ৮৯৩)। অনেক ফকিগণের মতে কোরবানির দিন বা নহরের দিন হল শ্রেষ্ঠ দিন। রাসুল সাঃ বলেছেন, “মহান আল্লাহর কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিন হল কোরবানির দিন স্থিরতার দিন” নাসায়ী ১০৫১২)।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, জিলহজের প্রথম দশকের চেয়ে উত্তম এমন কোন দিন নেই যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়। সাহবাগন জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহর পথে জিহাদ ও নয়? রাসুল সাঃ বললেন না, জিহাদ ও নয়। তবে যে জান মাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে পড়ে কিন্তু কোন কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না। (বুখারী ৯৬৯)।
জিলহজ মাসের ১০ দিন করণীয় ও বর্জনীয়
জিলহজ্ব মাসের ১০ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর এই ১০ দিন অনেক আমল করতে হয় এবং কিছু কাজ আছে যা বর্জন করতে হয়। নিচে জিলহজ মাসের ১০ দিনের করনীয় বর্জনীয় বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো –
জিলহজ মাসের করণীয়
বেশি বেশি করে তাকবীর ও তাশরীক করতে হবে। বিশেষ করে ৯ জিলহজ্ব ফজর থেকে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করো” (সুরা বাকারা, আয়াতঃ ২০৩)।
আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেছেন সেই ব্যক্তি আরাফাত দিন রোজা রাখবে তার আগের এক বছর এবং পরের এক বছরের গুনাহ মহান আল্লাহতালা ক্ষমা করে দেবেন। তবে যারা হজ আদায় করতে আরাফার ময়দানে থাকবেন তাদের সিয়াম পালন করতে হবে না।
জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ইবাদতের মধ্যে নফল নামাজ, রোজা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একমাত্র নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হওয়া যায়। তাই ফরজ নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজের সাথে পালন করতে হবে।
জিলহজ মাসের ১১-১২ ও ১৩ তারিখ বেশি বেশি করে আল্লাহর জিকির করা যেমন আল্লাহ আক বার, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এগুলো পাঠ করা। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্ত হতে রিজিক দান করিয়াছেন ওহার উপরে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারো”।( সূরা হাজ্ব, আয়াতঃ ২৮)।
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন বর্জনীয় কাজ
মহান আল্লাহ তায়ালার ১২ টি মাসের মধ্যে চার ৪টি মাস হলো অধিক সম্মানের, অধিক মর্যাদার। মানুষ সারা বছর যে গুনহা করে জিলহজ মাসে প্রথম ১০ দিন হল সেই গুনাহ মাফের সময়। মহান আল্লাহতালা বলেন, “নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হইতে আল্লার বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় বার ১২টি। এর মধ্যে চার ৪টি মাস অধিক মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রতিষ্ঠিত বিধান সুতরাং ইয়ার মধ্যে জুলুম করিও না”।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ যে কয়দিন কোরবানি করা যায় সে কয়দিন রোজা রাখা হারাম আর এই চার ৪ দিন মহান আল্লাহতালার নিকট হতে মেহমানদারী করানো হয়। সুতরাং এই চার ৪ দিন রোজা রাখলে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করা হয়ে থাকে। তাই প্রত্যেকটি মুমিন বান্দার উচিত এই চার ৪ দিন সিয়াম পালন থেকে বিরত থাকা।
শেষ কথা
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন কত গুরুত্বপূর্ণ তা আমি আমার লেখার মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। জিলহজ্ব মাসের করণীয় কাজ এবং বর্নীরয় কাজগুলোও আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন এবং এখন থেকে আল্লাহর ও তার রাসূলের দেখানো পথে ইবাদত বন্দেগি করবেন।
Leave a comment