প্রশ্নঃ (ক) ‘জালিয়াতি’ বলতে কি বুঝায়? ‘মিথ্যা দলিল তৈরি করা’ বলতে কি বুঝায় উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।

(খ) ‘ক’ একটি অস্তিত্বহীন সমিতির সচিব হিসেবে একটি দলিল স্বাক্ষর করে একটি ব্যাংক হতে কিছু টাকা ঋণ নেয়। ‘ক’ কোন অপরাধ করেছে কিনা আলোচনা কর।

(a) What is meant by ‘Forgery? Explain with illustration what is meant be making a false document’. 

(b) ‘A’ signed a document in the capacity of a secretary of a non-existence society and obtained some loan from a bank. Discuss whether ‘A’ has committed any offense.

(ক) এর উত্তরঃ  

‘জালিয়াতি’: বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪৬৩ ধারায় জালিয়াতির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই ধারা অনুসারে যে ব্যক্তি জনসাধারণ কিংবা কোন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতি বা অনিষ্ট সাধন করার বা কোন দাবী বা অধিকার সমর্থন করার কিংবা কোন দাবী বা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কিংবা কোন ব্যক্তিকে তার সম্পত্তি পরিত্যাগ করতে বা স্পষ্ট বা পরোক্ষ চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে অথবা প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে বা প্রতারণা করা যেতে পারে এরূপ উদ্দেশ্যে কোন মিথ্যা দলিল বা কোন মিথ্যা দলিলের অংশ বিশেষ প্রস্তত করে তাহলে সে ব্যক্তি জালিয়াতি করেছে বলে গণ্য বিবেচিত হবে।

উপাদানঃ এই সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে জালিয়াতির যে সকল উপাদান পাওয়া যায় তা নিম্নরূপ-

(১) অভিযুক্ত ব্যক্তিকে একটি মিথ্যা দলিল বা দলিলের অংশ বিশেষ প্রণয়ন করতে হবে। 

(২) এরূপ দলিল প্রণয়নের উদ্দেশ্য হতে হবে নিম্নরূপ-

(ক) ব্যক্তিসাধারণের কিংবা ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিসাধন, কিংবা- (খ) কোন ব্যক্তিকে তার সম্পত্তি পরিত্যাগ করানো, কিংবা- (গ) কারোর স্বত্ব বা দাবী সমর্থন, অথবা, (ঘ) প্রতারণা করা বা প্রতারণার সুযোগ সৃষ্টি করা, অথবা, (ঙ) কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চুক্তিতে অংশ নেয়া৷

মিথ্যা দলিল প্রণয়নঃ দন্ডবিধির ৪৬৪ ধারা মতে নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে মিথ্যা দলিল প্রণয়ন সম্পাদিত হয় বলে গণ্য হবে-

প্রথমত, কোন দলিল কিংবা দলিলের অংশ বিশেষ এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক বা তার কর্তৃত্ব বলে প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সীল মোহরকৃত বা সম্পাদিত বলে বিশ্বাস জন্মানোর উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি কর্তৃক কিংবা যে ব্যক্তির কর্তৃত্ব বলে তা প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সীল মোহর কৃত বা সম্পাদিত হয় নি বলে সে জানে, অথবা, এমন কোন সময়ে যে সময় তা প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহর কৃত বা সম্পাদিত হয় নি বলে সে জানে, অসাধুভাবে বা প্রতারণামুলকভাবে অনুরূপ দলিল বা দলিলের অংশ বিশেষ প্রস্তত, স্বাক্ষরদান, সীল মোহর বা সম্পাদন করে বা কোন দলিল সম্পাদন জ্ঞাপক কোন চিহ্ন অংকন করে; অথবা

দ্বিতীয়ত, যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক বা অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রণীত বা সম্পাদিত হবার পর কোন দলিলের কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ আইনানুগ ক্ষমতা ব্যতিরেকেই অসাধুভাবে বা প্রতারণামুলকভাবে বাতিল করনের মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে পরিবর্তন করে, দলিলটি অপরাধকারী কর্তৃক প্রণীত বা সম্পাদিত না হয়ে অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রণীত বা সম্পাদিত হয়ে থাকে তা হলে এরূপ পরিবর্তনের সময় সেই অন্য ব্যক্তি জীবিত থাকুক বা না থাকুক এতে অপরাধের কোন তারতম্য হবে না; অথবা,

তৃতীয়ত, যদি কোন ব্যক্তি অসাধুভাবে বা প্রতারণামুলকভাবে এমন কোন ব্যক্তিকে দিয়ে কোন দলিল স্বাক্ষরিত, সীল মোহরকৃত, সম্পাদিত বা পরিবর্তিত করায়, যে ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতা হেতু বা নেশাগ্রস্ততা হেতু কিংবা তার প্রতি প্রয়োগকৃত প্রতারণার ফলে, দলিলটির বিষয়বস্তু বা পরিবর্তনের প্রকৃতি সম্পর্কে বুঝতে অক্ষম।

উদাহরণঃ 

১. ক. খ কে দিয়ে গ এর প্রতি ১০,০০০ টাকার জন্য একটি লেটার অব ক্রেডিট লিখে নিয়ে পরে গ কে ঠকানোর উদ্দেশ্যে ক ঐ অঙ্কের সাথে একটি শূন্য যোগ করে দশ হাজারের স্থলে এক লাখ করে নেয়। এটা এই অভিসন্ধিতে ক এটা করে যে, গ বিশ্বাস করবে যে, খ এরূপ লিখেছে। এক্ষেত্রে ক জালিয়াতি করেছে বলে গণ্য হবে।

২. ক তার প্রতিনিধি খ এর নিকট তার স্বাক্ষরিত একটি চেক দেয় এবং বলে যে, বিভিন্ন খরচের জন্য অনুর্ধ্ব দশ হাজারের অঙ্ক ঐ চেকে লিখে টাকা যেনো ব্যাংক হতে ভাঙ্গায়ে নেয়। খ প্রতারণামুলক ভাবে কুড়ি হাজার টাকা লিখে চেকটি ভাঙ্গায়ে নেয়। এক্ষেত্রে খ জালিয়াতি করেছে।

৩. ক একটি অসিয়তনামা লেখার জন্য খ কে বলে। যাদের অনুকূলে অসিয়তানামা করার জন্য ক নাম বলে তাদের মধ্যে গোপনে একজনের নাম পরিবর্তন করে। কিন্তু ক এর নির্দেশ মতো সব লেখা হয়েছে বলে অসিয়তনামায় ক এর স্বাক্ষর নেয়। এক্ষেত্রে খ জালিয়াতি করে।

(খ) এর উত্তরঃ দণ্ডবিধির ৪৬৩ ধারার ব্যাখ্যা ২ অনুসারে, এটা একটা জালিয়াতি। এখানে বলা হয়েছে যে, কাল্পণিক ব্যক্তির নামে মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করা এবং সত্যিকার কোন ব্যক্তি কর্তৃক তা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করানোর অভিপ্রায়ে তা করা হচ্ছে জালিয়াতি।