বিভিন্ন জারণ বিজারণ বিক্রিয়া নিম্নরূপঃ

কোন বিক্রিয়ায় যদি ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে এবং বিক্রিয়ক ও উৎপাদের জারণ সংখ্যার পরিবর্তন ঘটে তবে বিক্রিয়াটিতে জারণ বিজারণ  ঘটবে। অন্যথায় বিক্রিয়াটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া নয়।

১. বিক্রিয়াটি জারণ বিজারণ কি না ব্যাখ্যা করোঃ
         ₀      ₀              +1×2-2
    2H₂ + O₂ ——–> 2H₂O

H₂ ——> 2H+  (জারণ বিক্রিয়া)

O + 2e-  ——-> O²-  (বিজারণ বিক্রিয়া)

এখানে, বিক্রিয়ক হাইড্রোজেনের জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে হাইড্রোজেনের (H+) জারণ সংখ্যা +1. অর্থাৎ হাইড্রোজেন পরমাণু একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়ক অক্সিজেনের জারণ সংখ্যা শূন্য এবং উৎপাদে  অক্সিজেনের জারণ সংখ্যা -2. অক্সিজেন পরমাণু দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয়েছে। 

যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান হয়েছে এবং বিক্রিয়ক ও উৎপাদের জারণ সংখ্যার পরিবর্তন ঘটেছে। সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।

২.

2FeCl₃+SnCl₂ —->2FeCl₂+SnCl₄

এখানে, বিক্রিয়ক SnCl₂ এ টিনের জারণ সংখ্যা +2 এবং উৎপাদে টিনের জারণ সংখ্যা +4.  Sn²+ দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Sn⁴+ অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়ক FeCl₃ এ আয়রনের জারণ সংখ্যা +3 এবং উৎপাদে আয়রনের জারণ সংখ্যা +2. Fe³+ একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Fe²+ অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। 

যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
Sn²+  ———> Sn⁴+  + 2e- (জারণ বিক্রিয়া)
2Fe³+  +2e ——-> 2Fe²+ (বিজারণ বিক্রিয়া)
৩. PCl₅ ———> PCl₃ + Cl₂

এখানে, বিক্রিয়ক PCl₅ এ ক্লোরিনের জারণ সংখ্যা -1 এবং উৎপাদে ক্লোরিনের জারণ সংখ্যা 0 .  

Cl- একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Clº অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়ক PCl₅ এ ফসফরাসের জারণ সংখ্যা +5 এবং উৎপাদে  ফসফরাসের  জারণ সংখ্যা +3. P⁵+ দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে P³+ অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। 

যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
2Cl-  ——-> Cl₂ + 2e (জারণ বিক্রিয়া)
P⁵+   + 2e ——-> P³+ (বিজারণ বিক্রিয়া)

৪.    H₂ + I₂ ——–> 2HI

এখানে, বিক্রিয়ক H₂ এ হাইড্রোজেনের জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে হাইড্রোজেনের জারণ সংখ্যা +1 . H₂ দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে 2H+ অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে I₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে আয়োডিনের জারণ সংখ্যা -1. I₂ দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে 2I- অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। 

যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
H₂ ——-> 2H+  + 2e (জারণ বিক্রিয়া)
I₂  + 2e ——-> 2I- (বিজারণ বিক্রিয়া)
৫.   N₂ + O₂ ——–> 2NO

এখানে, বিক্রিয়ক N₂ এ নাইট্রোজেনের জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে নাইট্রোজেনের জারণ সংখ্যা +2 . N দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে N²+ অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে O₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে অক্সিজেনের জারণ সংখ্যা -2.অক্সিজেন দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে O²- অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। 

যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
N ——-> N²+  +2e (জারণ বিক্রিয়া)
O + 2e ——–> O² – (বিজারণ বিক্রিয়া)
৬. N₂ + 3H₂ ——–> 2NH₃

এখানে, বিক্রিয়ক N₂ এ নাইট্রোজেনের জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে নাইট্রোজেনের জারণ সংখ্যা -3 . N তিনটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে N³- অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে H₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে হাইড্রোজেনের  জারণ সংখ্যা +1.হাইড্রোজেন একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে H+অর্থাৎ জারিত হয়েছে। যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
3H₂ ———> 6H+  +6e (জারণ বিক্রিয়া)
N₂ + 6e ——> 2N³- (বিজারণ বিক্রিয়া)

৭.  2FeCl₂ + Cl₂ ——–> 2FeCl₃

এখানে, বিক্রিয়ক FeCl₂ এ আয়রনের জারণ সংখ্যা +2 এবং উৎপাদে আয়রনের জারণ সংখ্যা +3 Fe²+ একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Fe³+ অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে Cl₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে ক্লোরিনের  জারণ সংখ্যা -1. ক্লোরিন একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cl- অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। 

যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
2Fe²+ ——> 2Fe³+  +2e (জারণ বিক্রিয়া)
Cl₂ + 2e ——-> 2Cl- (বিজারণ বিক্রিয়া)
৮.  2SO₂ + O₂ ——> 2SO₃

এখানে, বিক্রিয়ক SO₂ এ সালফারের জারণ সংখ্যা +4 এবং উৎপাদে সালফারের জারণ সংখ্যা +6 . S⁴+ দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে S⁶+ অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে O₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে অক্সিজেনের  জারণ সংখ্যা -2. অক্সিজেন দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে
 O² –  অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
S⁴+ ——> S⁶+  +2e (জারণ বিক্রিয়া)
O + 2e ——-> O² – (বিজারণ বিক্রিয়া)

৯.  H₂S + Cl₂ ——-> 2HCl + S

এখানে, বিক্রিয়ক H₂S এ সালফারের জারণ সংখ্যা -2 এবং উৎপাদে সালফারের জারণ সংখ্যা 0 . S² – দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Sº অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে Cl₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে ক্লোরিনের জারণ সংখ্যা -1. ক্লোরিন একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে
 Cl-  অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। 

যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
S² – ——> Sº  +2e (জারণ বিক্রিয়া)
Cl + e ——-> Cl – (বিজারণ বিক্রিয়া)
১০. 2Al +3/2 O₂ ——-> Al₂O₃

এখানে, বিক্রিয়কে অ্যালুমিনিয়ামের জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে অ্যালুমিনিয়ামের জারণ সংখ্যা +3. Alº তিনটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Al³+ অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে O₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে অক্সিজেনের  জারণ সংখ্যা -2. অক্সিজেন দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে
O² –  অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
Alº ——> Al³+  +3 e (জারণ বিক্রিয়া)
O + 2e ——-> O² – (বিজারণ বিক্রিয়া)

১১.
2Ca + O₂ ——-> 2CaO

এখানে, বিক্রিয়কে ক্যালসিয়ামের জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে ক্যালসিয়ামের জারণ সংখ্যা +2. 

Caº দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Ca²+ অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে O₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে অক্সিজেনের  জারণ সংখ্যা -2. অক্সিজেন দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে
 O² –  অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
Caº ——> Ca²+  +2e (জারণ বিক্রিয়া)
O + 2e ——-> O² – (বিজারণ বিক্রিয়া)
১২.   2Na + 1/2 O₂ ——> Na₂O

এখানে, বিক্রিয়কে সোডিয়ামের জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে সোডিয়ামের জারণ সংখ্যা +1. 

Naº একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Na+ অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে O₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে অক্সিজেনের  জারণ সংখ্যা -2. অক্সিজেন দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে
O² –  অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
Naº ——> Na+  + e (জারণ বিক্রিয়া)
O + 2e ——-> O² – (বিজারণ বিক্রিয়া)

১৩.     2Na +Cl₂ ——-> 2NaCl

এখানে, বিক্রিয়কে সোডিয়ামের জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে সোডিয়ামের জারণ সংখ্যা +1. 

Naº একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Na+ অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে Cl₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে ক্লোরিনের জারণ সংখ্যা -1. ক্লোরিন একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে
Cl-  অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। 

যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
Naº ——> Na+  + e (জারণ বিক্রিয়া)
Cl + e ——-> Cl – (বিজারণ বিক্রিয়া)
১৪.    Ca + F₂ ——-> CaF₂

এখানে, বিক্রিয়কে ক্যালসিয়ামের জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে ক্যালসিয়ামের জারণ সংখ্যা +2. 

Caº দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Ca²+ অর্থাৎ জারিত হয়েছে। 

আবার বিক্রিয়কে F₂ এর জারণ সংখ্যা 0 এবং উৎপাদে ফ্লোরিনের জারণ সংখ্যা -1. ফ্লোরিন একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে
 F –  অর্থাৎ বিজারিত হয়েছে। 

যেহেতু বিক্রিয়াটিতে ইলেকট্রনের আদান প্রদান ঘটেছে, সেহেতু বিক্রিয়াটি একটি জারণ বিজারণ বিক্রিয়া।
Caº ——> Ca²+  +2e (জারণ বিক্রিয়া)

2F + 2e ——-> 2F – (বিজারণ বিক্রিয়া)