প্রশ্নঃ জামিনের দরখাস্ত দাখিল সংক্রান্ত আইনের বিধানাবলী উল্লেখ করুন.
জামিন(Bail)
‘জামিন’ হলো একজন গ্রেফতারকৃত বা আইনানুগ আটক হতে কোন ব্যক্তিকে জামিনদারের মুচলেকায় শর্তাধীন বা শর্তসাপেক্ষে ব্যক্তির ন্যায়বিচারের স্বার্থে সাময়িক মুক্তি দেওয়া। এমন শর্ত যে, প্রয়োজন হওয়ামাত্রই আদালতের আদেশ অনুযায়ী শর্তাধীন মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি আদালত বা অন্য কোথাও হাজির হতে বাধ্য থাকবে। জামিনের ক্ষেত্রে জামিন প্রার্থিত ব্যক্তি জামিনযোগ্য না জামিনের অযোগ্য অপরাধে অপরাধী তা প্রথম এবং প্রধান নির্ণয়ের বিষয়।
জামিন(Bail) এমন একটি পদ্ধতি যেখানে কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে শাস্তি ভোগ করা থেকে রক্ষা করা এবং তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়।দুই ধরনের জামিন রয়েছে– একটি হলো আগাম জামিন(Anticipatory Bail) এবং অপরটি হলো অন্তর্বর্তীকালীন জামিন(Interim bail)।
জামিনের দরখাস্ত দাখিল সংক্রান্ত আইনের বিধানাবলী
যে ব্যক্তি আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়ে গেছে তার জামিনের বিষয়ে বিধান করা হয়েছে ফৌজদারী কর্মবিধির ৪২৬ এবং ৪৩৫ ধারায়। অন্যদিকে, যে ব্যক্তি এখনো convicted হয়নি তার জামিনের বিষয়ে বিধান করা হয়েছে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ এবং ৪৯৮ ধারায়।
জামিনযোগ্য অপরাধে জামিন
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ ধারা অনুযায়ী জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে সন্তোষজনক জামিনদারের প্রস্তাব করা সাপেক্ষে জামিন পাওয়া অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার। এ ধারায় বলা হয়েছে যে, জামিনযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার হলে বা আদালতে হাজির হলে বা আদালতে হাজির করানো হলে, তিনি যদি জামিন দিতে প্রস্তুত থাকেন তাহলে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে। জামিনযোগ্য অপরাধে অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে প্রেরণ করা যাবে না, যদি না অভিযুক্ত ব্যক্তি অসমর্থ বা অনিচ্ছুক হয় জামিনের বন্ড দিতে বা security দিতে (41 DLR 291)
জামিনদার ছাড়াও ব্যক্তিগত মুচলেকায় (Bond) এরূপ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়া যায়। মিয়া মোহাম্মদ আলী বনাম রাষ্ট্র [15 DLR (SC) 429] মামলায় রায় দেয়া হয়েছে যে, এ ধারাটি অবশ্য পালনীয় এবং ম্যাজিস্ট্রেট আসামীকে জামিন অথবা মুচলেকায় মুক্তি দিতে বাধ্য।
জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন
জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন দেয়া বা না দেয়া আদলতের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা (discretionary power) ৪৯৭ ধারা জামিনের অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসারকে জামিন প্রদান করার ক্ষমতা দেয়, যদি আসামী মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধের জন্য দোষী বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ না থাকে।
৪৯৭ ধারায় আরও বিধান করা হয়েছে যে, নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে, যদিও সে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধে অভিযুক্ত হয় –
- ষোল বছরের কম বয়সী কেউ।
- স্ত্রীলোক।
- অসুস্থ বা অক্ষম ব্যক্তি।
৪৯৭(২) উপধারায় বলা হয়েছে যে, তদন্ত অনুসন্ধান বা বিচারের কোন পর্যায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন অযোগ্য অপরাধ করেছে বলে বিশ্বাস করার মতো যুক্তিসংগত কারণ না থাকলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালত অনুসন্ধান সাপেক্ষে মুক্তি দিতে বাধ্য থাকবে। আবার, ৪৯৭(৪) ধারায় বলা হয়েছে যে, বিচার শেষ হয়েছে, কিন্তু রায় এখনো ঘোষনা করা হয়নি এমন অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী নয় বলে বিশ্বাস করার মতো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে আদালত তাকে রায় শোনার দিন হাজির হওয়ার শর্তে মুক্তি দিবেন।
আগাম বা গ্রেফতার পূর্ব জামিন
(Anticipatory bail)
৪৯৮ ধরায় ২টি ক্ষেত্রে জামিনের কথা বলা হয়েছে। একটি হলো আগাম বা গ্রেফতার পূর্ববর্তী জামিন (Anticipatory bail) এবং অন্যটি হলো গ্রেফতার পরবর্তী জামিন (regular bail)। যখন প্রেপ্তার হবার সম্ভাবনায় বা অনুমানে কোন ব্যক্তিকে জামিন প্রদান করা হয়, তখন তাকে anticipatory জামিন বলে। এ ধরনের জামিন সাধারনতঃ দেয়া হয় না । জামিন প্রদানের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম হিসেবেই এ ধরনের জামিন দেয়া হয়। যখন কোন ব্যক্তির নিকট বিশ্বাস করার এমন কারণ থাকে যে, কোন অজামিনযোগ্য অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে পারেন, তখন তিনি হাইকোর্ট বিভাগে অথবা দায়রা আদালতে নির্দেশের জন্য আবেদন করলে, আদালত যথাযথ মনে করলে উক্ত ব্যক্তিকে ঐ মুহূর্তে ভবিষ্যৎ গ্রেপ্তারের উপর আগাম জমিন নির্দেশ করবে। আগাম জামিন অনুমোদন করার জন্য আইনের বিধানে কোন নির্দিষ্ট ধারা নেই। তথাপি আগাম জামিনের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। কারণ এই ধারায় শব্দাবলী “যেকোন ক্ষেত্রে” ব্যবহার করেছে। সুতরাং, এই ধারা ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করেছে এবং এই ক্ষমতা যে কোন ক্ষেত্রে এবং কোন রকম সীমাবদ্ধতা ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগ ও দায়রা আদালত ব্যবহার করতে পারবে।
খসড়া
Leave a comment