জানুয়ারি অর্থ কি – ১লা জানুয়ারি (থার্টি ফাস্ট) এর ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। কেননা পুরো বিশ্ব আজ জানুয়ারি অর্থ কি – ১লা জানুয়ারি (থার্টি ফাস্ট) এর ইতিহাস জানতে চায়। তাই আমি জানুয়ারি অর্থ কি – ১লা জানুয়ারি (থার্টি ফাস্ট) এর ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

প্রাচীন রোম বাসি তাদের দেবতা জানোস  Janus কে খুশি করার জন্য ১লা বা পহেলা জানুয়ারি পালন করা শুরু করে। তবে এখন পুরো বিশ্ব এই দিবস পালন করে তাই জানুয়ারি অর্থ কি – ১লা জানুয়ারি (থার্টি ফাস্ট) এর ইতিহাস নিচে তুলে ধরা হলো –

১লা জানুয়ারি (থার্টি ফাস্ট) এর ইতিহাস 

Janus শব্দ থেকেই মূলত জানুয়ারি January  শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। জানুয়ারি January শব্দটির প্রথম উৎপত্তি হয় প্রাচীন  রোমে আর এর কারণ হিসাবে অনুমান করা হয় রোমান সাম্রাজ্যের মুশরিকরা এক ঈশ্বরের পূজা করতো যার নাম ছিল জানোস বা জাইলাস বা ইয়ানুস। আর তারা তাদের এই ঈশ্বরকে বলতো শুরুর স্রষ্ঠা বা Good of gates , Doors and beginning রোমান মুশরিকরা মূলত অনেক স্রষ্টায় বিশ্বাসী ছিল আর Janus ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম।

রোমান মুশরিকদের তৈরি মূর্তির মাথা ছিল দুই দিকে অর্থাৎ একটি মাথা ছিল সামনে এবং একটি মাথা ছিল পেছনে। আর তাদের বিশ্বাস ছিল যে, এই মুর্তি সামনের এবং পেছনের সবকিছু শুনতে পাই এবং বুঝতে পারে। অর্থাৎ তাদের ধারণা ছিল যে এই মূর্তি অতীত এবং ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও রাখে। আর এই মূর্তি বা জানুস Janus থেকে আসলে জানুয়ারি January মাসের উৎপত্তি হয়েছে।

প্রাচীন রোম বাসি তাদের দেবতা জানোস  Janus কে খুশি করার জন্য ১লা বা পহেলা জানুয়ারি পালন করা শুরু করে। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল বছরের প্রথম দিন যাত্রা শুভ হয় যার কারণে তারা নিউ ইয়ার্স ডে New Years Day হিসাবে ১লা বা পহেলা জানুয়ারি পালন করা শুরু করে। তাদের বিশ্বাস ছিল একমাত্র জানুস দেবতাই সকল ভালো কিছুর যাত্রা শুরু করতে পারে যার কারণে তারা জানুয়ারি January মাসের এক ১ তারিখে নববর্ষ পালন করে।

ইংরেজি মাসের উৎপত্তি

সারা পৃথিবীর লোক ইংরেজি মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর এই ১২ মাসের হিসেবে বছর পালন করে থাকে এবং দিন গণনা করে থাকে। কিন্তু তারা সকলেই ইংরেজি মাসগুলোর উৎপত্তি সম্পর্কে জানে না। তাই আমি তাদের জন্য ইংরেজি মাসের উৎপত্তি সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি থেকে এসেছে। তবে জুলীয় পঞ্জিকার প্রথম দিন হিসেবে মধ্যযুগে অন্য দিনকে ধরা হতো।

তবে ইউরোপে ১৪৫0 থেকে ১৬00 সালের মধ্যে বেশিরভাগ সময়ে জানুয়ারি January মাসকেই বছরের প্রথম দিন হিসেবে গ্রহণ করা হতো। আর এভাবেই জানুয়ারি January মাস বছরের প্রথম দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ইংরেজি মাসের উৎপত্তি হয়েছে গ্রেগরীয়  বর্ষপঞ্জি থেকে।

১লা জানুয়ারি কোন ধর্মীয় দিবস

পহেলা জানুয়ারি সারা বিশ্বের মানুষ এক কথায় সকল ধর্মের মানুষ পালন করে থাকে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেনা যে  ১লা বা পহেলা জানুয়ারি আসলে কোন ধর্মের বা কোন ধর্মীয় উৎসব বা কোন ধর্মীয় দিবস।  ১লা বা পহেলা জানুয়ারি প্রধানত খ্রিস্টান ধর্মীয় উৎসব অর্থাৎ খৃষ্টান ধর্মীয় লোকজন যীশু খ্রিস্টের খাতনা দিসব উদযাপন উপলক্ষে  ১লা বা পহেলা জানুয়ারি পালন করে বা উদযাপন করে। আর খ্রিস্টান ধর্মীয় লোকজন বিশ্বাস করে যে

আরো পড়ুনঃ বিজয় দিবস কি ও কেন জেনে নিন

যিশুখ্রিস্টের জন্ম হয় ২৫শে ডিসেম্বর আর তাদের হিব্রু ঐতিহ্য অনুসারে খৎনা করা হয় আট ৮ দিন পর অর্থাৎ ২৫শে ডিসেম্বর জন্ম হলে  ১লা বা পহেলা জানুয়ারি হয় যিশুখ্রিস্টের জন্মের অষ্টম ৮ম দিন। আর এই দিন যীশুখ্রীষ্ট কে খৎনা করা হয় যার কারণে তারা  ১লা বা পহেলা জানুয়ারি যিশুখ্রিস্টের খৎনা দিবস হিসেবে উদযাপন করে। আর তাই বলা হয়  ১লা বা পহেলা জানুয়ারি হল খ্রিস্টান ধর্মীয় দিবস।

১ জানুয়ারি কে নতুন বছর হিসেবে ঘোষণা করেন

৪৫ খৃষ্ট পূর্বে জুলিয়াস সিজার ছিলেন রোমান শাসক এবং তিনি ছিলেন একজন স্বৈরশাসক এবং তিনি শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করার পর সিদ্ধান্ত নেন যে, রোমান ক্যালেন্ডার সংস্কারের একান্ত প্রয়োজন। যার কারনে তিনি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার কার্যকর হওয়ার সাথে সাথেই জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ  ১লা বা পহেলা জানুয়ারি উদযাপন করেন। আর তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রথমবারের মতো  ১লা বা পহেলা জানুয়ারি নববর্ষের দিন হিসেবে উদযাপন করেন। ১ জানুয়ারি জুলিয়াস সিজার নতুন বছর হিসেবে ঘোষণা করেন।

১লা  জানুয়ারির বিশেষত্ব কি

সারা বিশ্বের প্রায় সকল ধর্মেরই মানুষ  ১লা বা পহেলা জানুয়ারি পালন করে বা উদযাপন করে থাকে। তবে  ১লা বা পহেলা জানুয়ারি হলো প্রধানত খ্রিস্টান ধর্মীয় উৎসব। আর রোমান দেবতা জানোস Janus এর নাম অনুসারে প্রধানত জানুয়ারি মাসের উৎপত্তি হয়েছে। আর খ্রিস্টান ধর্মীয় মতবাদ অনুসারে জানোস হল সকল শুভ যাত্রার প্রতীক অর্থাৎ তিনি সকল ভালো কিছুর যাত্রা শুরু করতে পারেন যার কারণেই জানুয়ারি মাসের এক তারিখে অর্থাৎ জানোসের নাম অনুসারে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে নববর্ষ হিসাবে পালন করা হয়।

আরো পড়ুনঃ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস – (রচনা) – সম্পর্কে কিছু কথা

তবে খ্রিস্টান ধর্মের লোকদের মতভেদ অনুসারে জানা যায় ২৫ ডিসেম্বর যীশু খ্রীষ্টের জন্ম হয় এবং হিব্রু ঐতিহ্য অনুসারে তাদের জন্মের ৮ দিন পর খাৎনা করা হয় অর্থাৎ যিশুখ্রিস্টের জন্ম ২৫ ডিসেম্বর হলে পয়লা জানুয়ারি হয় তার জন্মের অষ্টম দিন। আর এই দিনে যীশু খ্রিস্টের খৎনা করা হয় বলে পহেলা জানুয়ারি যিশুখ্রিস্টের খৎনা দিন হিসাবেই খ্রিস্টান ধর্মীয় লোকজন ১লা বা পহেলা জানুয়ারি পালন করে থাকে বা উদযাপন করে থাকে।

জানুয়ারি মাস কত দিনে শেষ হয়

খ্রিস্টান ধর্মীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে জানুয়ারি মাস হলো বছরের প্রথম দিন এবং জানুয়ারি মাসে রয়েছে মোট ৩১ দিন তাই জানুয়ারি মাস ৩১ দিনে শেষ হয়। আমরা জানি এপ্রিল, জুন, সেপ্টেম্বর এবং নভেম্বর এই চার ৪ মাস ৩০ দিনে হয় এবং ফেব্রুয়ারি মাস হয় ২৮ দিনে তবে লিপিয়ার বছরে ফেব্রুয়ারি মাস হয় ২৯ দিনে। এছাড়া বাকি সাত ৭ মাস অর্থাৎ জানুয়ারি, মার্চ, মে, জুলাই, আগস্ট, অক্টোবর এবং ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ৩১ দিনে।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি কবে যুক্ত হয়

খ্রিস্টপূর্ব ৭১৩ অব্দে নুমা পম্পিলিয়াস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে যুক্ত করেছিলেন। কারণ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস রোম দেশে শীতকাল। আর প্রাচীন রোমবাসী মনে করেন শীতকাল মাস হীন সময় যার কারণে তারা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে একসঙ্গে যোগ করে মাস হিসেবে গণনা করেন।

জানুয়ারি অর্থ কি

জানুয়ারি January শব্দের সঠিক অর্থ করা হয়নি তবে জানোস Janus থেকে জানুয়ারি January শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। আর জানোস Janus হল রোমান শব্দ যার অর্থ হলো শুরুর শ্রষ্ঠা। মূলত প্রাচীন রোম দেশের মুশরিকরা জানস Janus বা জাইনাস বা ইয়ানুস নামে ঈশ্বরের পূজা করত এবং তারা মনে করত যে জানোস Janus হল শুরুর স্রষ্টা এবং এই দেবতার দুইটি মাথা ছিল একটি ছিল সামনে এবং অন্যটি ছিল পেছনে এবং তাদের বিশ্বাস ছিল যে

এই দেবতা সামনের এবং পিছনের সব কিছুই দেখতে পায় এবং শুনতে পায় এবং সে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ও রাখে। তাই এই জানোস Janus এর নাম অনুসারেই জানুয়ারি January মাসের নামকরণ করা হয়েছে। আর যেহেতু জানুয়ারি January হল বছরের প্রথম দিন তাই এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে জানুয়ারি January শব্দের অর্থ হলো শুভ যাত্রা।

ক্যালেন্ডার কবে সূচনা হয়

আমরা সবাই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি। বিশেষ করে দিন, তারিখ দেখতে ক্যালেন্ডারের জুড়ি মেলা ভার। বিশ্বে এমন কোন দেশ নেই যে দেশে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয় না তেমনি বাংলাদেশেও সবাই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। যদিও বাংলা এবং আরবি ১২ মাস রয়েছে কিন্তু সবাই ইংরেজি ক্যালেন্ডার এর প্রতি বেশি নির্ভরশীল। আমরা সবাই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করলেও জানি না ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি কবে হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫ অব্দে সূচনা হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার এর আর সেই থেকেই সারা বিশ্বে প্রচলিত হয় ক্যালেন্ডারের ব্যবহার।

বিশ্বের কোন দেশে কখন পহেলা বছর বা নববর্ষ ছিল

ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্য মতে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন শুরু করেন জুলিয়াস সিজার। ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয়। খ্রিস্টানদের ধর্ম ও চার্চ পোপ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রেগরিয়ান এর নাম অনুসারে যে ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয় সারা বিশ্বে সেই ক্যালেন্ডারই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তবে ইরানে নববর্ষ কে বলা হয় নওরোজ এবং তা শুরু হতো যে বছর শেষ হচ্ছে অর্থাৎ পুরনো বছরের শেষ বুধবার এবং এই উৎসব নতুন বছরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত চলতে থাকে খ্রিষ্টপূর্ব 800 সালে সম্রাট জমশের যে যিনি ছিলেন সম্রাট এবং তিনি নওরোজ অর্থাৎ ইরানের প্রথম নববর্ষ জাতীয় উৎসব হিসেবে পালন করেন। আর এই উৎসব থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ তথা ভারত উপমহাদেশে নববর্ষ উদযাপন প্রবেশ করে।

আবার মেসোপটেমিয়ায় নববর্ষ কে বলা হয় আকিতু এবং তা শুরু হতো নতুন চাঁদ দেখার সঙ্গে। আবার ব্যাবিলিয়নরা নববর্ষ শুরু করতো মহাবিশুবের দিনে অর্থাৎ বিশ ২০ মার্চ। আবার অ্যাসিরিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ জলবিষুবের দিনে। আবার আসিবিয়ার সাথে সঙ্গতি রেখে পারসিক, ফিনিশিয়া এবং মিশরেও নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত একুশে ডিসেম্বর ছিল গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হওয়ার দিন।

আরো পড়ুনঃ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস সমূহ

তবে রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী পহেলা মার্চ তাদের নববর্ষ শুরু হতো আর খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ এরপরে নববর্ষ শুরু হয় পহেলা জানুয়ারি। ইহুদিদের নববর্ষ যাকে তারা তিসরি বলে এবং মাসকে বলা হয় তিসরি মাস এবং এই প্রথম দিন গোড়া ইহুদিদের মতে মাসের দ্বিতীয় দিন হল নববর্ষ আর তিসির মাস হিসেবে তারা ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর গণনা করতো। আবার মধ্য ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে ২৫ শে মার্চ নববর্ষ শুরু হতো তাদের বিশ্বাস ছিল যে

এই দিন দেবদূত grabiel যিশুমাতা মেরির কাছে এসেছিলেন যীশু খ্রীষ্টের জন্ম বার্তা নিয়ে। আবার ২৫শে ডিসেম্বর ছিল অ্যাংলো সেকশন ইংল্যান্ডের নববর্ষের দিন তবে ১৮৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয়। আর সেই থেকে শুধু ইউরোপ নয় সারা বিশ্বেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পয়লা জানুয়ারি নববর্ষ পালন করা হয়ে থাকে।

শেষ কথা

জানুয়ারি অর্থ কি – ১লা জানুয়ারি (থার্টি ফাস্ট) এর ইতিহাস আমাদের অনেকের কাছে অজানা থাকলেও পুরো বিশ্বই এই দিবস পালন করে থাকে। বিশেষ করে আমাদের তরুণ সমাজ এই দিবসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট যদিও এই দিবসটি মূলত খ্রিস্টানদের দিবস। জানুয়ারি অর্থ কি – ১লা জানুয়ারি (থার্টি ফাস্ট) এর ইতিহাস সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই আর্টিকেল পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন।