উত্তরঃ অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের প্রদত্ত উক্তিটি অনন্তর মায়ের; সে কিশােরের পাগল হওয়ার বিষয়ে বাসন্তীকে লক্ষ করে এমন বলেছে।
দুঃখ বেদনার মধ্যে বেড়ে ওঠা অনন্তর মা অপরিসীম ধৈর্যশীল। গৌরাঙ্গ ও নিত্যানন্দ মালাের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অনন্তর মা যায় গােকঘাটে। অচেনা, অজানা শশুরালয়, সেখানে কেউ তাকে চিনবে না, জানবে না, যে চিনবে সে তখন উন্মাদ অবস্থায়। পাগল কিশাের যে তার স্বামী, সে কথাও ঠিকভাবে জানা নেই তার। উত্তরায়ণ সংক্রান্তির আগের রাতে, রামকেশবের বাড়িতে বা উন্মাদ কিশােরের বাড়িতে তিনজন নারী পিঠা তৈরির কাজ করছিল। পিঠা তৈরির অনুকূল আলাপে মেতে ওঠে দুজনেই। সঙ্গে থাকা মঙ্গলার বউ- সে অনন্তর মায়ের কাছে গল্প শুনতে চায়। পরবর্তীতে সুবলার বউ ধারাবাহিকভাবে কিশােরের পাগল হওয়ার গল্প বলে। এবার অনন্তর মা বুঝতে পারে এই পাগল কিশােরই তার স্বামী। কিন্তু আসল কথা অনন্তর মা কারাে কাছে প্রকাশ করে না। সব চাপতে চাপতে তার এমন অভ্যাস হয়ে গেছে যে- মনের জোরে সে পাথরের মতাে হয়ে গেছে। এসময় গােকনঘাটে শুকদেবপুরের মতাে মানুষেরা দোল উৎসবে মেতে ওঠে- বাসন্তী, অনন্ত, অনন্তর মা-ও আবির নিয়ে সে উৎসবে যােগদান করে। কিশাের পাগলের উঠানের ওপর দিয়ে পথ- সে-পথ দিয়ে বাসন্তীরা যেতে গেলে পাগল তাদের পথ আটকিয়ে আবির দেওয়ার কথা বলে। বাসন্তী কোনােরকমে পাগলকে পাশ কাটিয়ে চলে আসে। কিন্তু অনন্তর মা পাগলকে আবির দিয়ে রাঙিয়ে দেয়। সুবলার বউ হতবুদ্ধি হয়ে জিজ্ঞাসা করে সে কেন এমন করলাে। এ প্রশ্নের উত্তরে অনন্তর মা বলে দোল উৎসবে সবাই সবাইকে রাঙালেও পাগলেরে কেউ না রাঙানাের কারণে সে তাকে আবির দিয়ে রাঙিয়েছে। বাসন্তী রেগে গিয়ে অনন্তর মাকে জিজ্ঞাসা করে- সে তাে জানেনা কী কারণে কিশাের পাগল হয়েছে। এবার অনন্তর মা বলে সে জানে- মনের মানুষকে হারিয়ে কিশাের পাগল হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে কিশাের পাগল ছিল অনন্তর মার স্বামী- আর এসব বিষয় অনন্তর মা নিশ্চিতভাবে জানে। আর এ কারণেই সে বলে কিশাের মনের মানুষকে হারিয়ে উন্মাদগ্রস্ত হয়েছে।
Leave a comment