স্বাধীনতার পর সাক্ষরতা কর্মসূচি স্বাভাবিকভাবে বিশেষ গুরুত্ব পায়। দেশের নেতারা বুঝতে পারেন যে দেশের সাধারণ জনগণ শিক্ষিত না হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সফল হবে না, তার ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, ইউনিয়ন টেরিটরি সকলেই সাক্ষরতা প্রসারে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হলো জাতীয় সাক্ষরতা কর্মসূচি (National Literacy Mission)। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী জাতীয় সাক্ষরতা কর্মসূচির ঘােষণা করেন, যেখানে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের মোট ৪০ মিলিয়ন ব্যক্তিকে কার্যকরী সাক্ষর করে তােলার কথা লক্ষ্য হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়।

এই কর্মসূচির কাজের বিশ্লেষণ করতে মূল্যায়ন প্রয়োজন। বয়স্ক শিক্ষা, দূরাগত শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা প্রভৃতি কর্মসূচি রূপায়ণের জাতীয় সাক্ষরতা কর্মসূচি উল্লেখযােগ্য কিছু প্রকল্প গ্রহণ করলেও বিভিন্ন সমীক্ষায় এই কর্মসূচির ব্যর্থতার নানাদিক প্রকাশিত হয়েছে। NPE মনে করে যে বয়স্কশিক্ষা কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে NLM (জাতীয় সাক্ষরতা মিশন) প্রকল্প বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে তিনটি দশক তেমন সাফল্য লাভ করেছে। কেননা স্বাধীনতা লাভের পর খাদ্য সমস্যা, বেকারত্ব, ইত্যাদি সমস্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনবিস্ফোরণ।

বিংশ শতাব্দীর শেষ দুটি দশকের সাক্ষরতা কর্মসূচি অভিপ্রেত সাফল্য পায়নি। স্বাধীন ভারতে পাঁচ দশকে ২.২০ কোটি মানুষকে স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সাক্ষরতা কর্মসূচি অপেক্ষাকৃত আশাপ্রদ সাফল্য দিয়েছে। একবিংশ শতকে জনসংখ্যা ১০০ কোটির উপর গেছে আর দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এই যে, দেশের জনসংখ্যার ৩৪%-এর অধিক সংখ্যক মানুষ এখনও নিরক্ষর। এর মূল কারণ—

(১) প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোগত দুর্বলতা।

(২) প্রায় ৬৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ নেই।

(৩) বিশেষত গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের মধ্যে নিরক্ষরতার হার বেশি।

(৪) ৯৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচাগার নেই।

(৫) প্রাথমিক শিক্ষায় স্কুল-ছুট (dropout)-এর সংখ্যা অনেক বেশি।

১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার সাক্ষরতা কর্মসূচির মূল্যায়ন একটি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করে অধ্যাপক অরুণ ঘোষের নেতৃত্বে। এরা সরকারকে কতগুলো সুপারিশ পাঠায়— (১) এক্ষেত্রে সমগ্র উদ্যোগের ব্যাপারে দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার বদ্ধ হওয়া, (২) প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা কর্মসূচিসমূহের সঙ্গে সাক্ষরতা অভিযান সংগতি সাধন করা, (৩)  দরজায় দরজায় ঘুরে নিরক্ষরতার সমীক্ষা সম্পাদন, (৪) হিন্দি এলাকার উপর জোর স্থাপন, (৫) কর্মসূচিসমূহের স্বেচ্ছামূলক প্রকৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ, (৬) শিক্ষাসূচী যথাযথ মান নির্ধারণ।