জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষক সম্পর্কে বলা হয়েছে, মর্যাদার বিচারে শিক্ষকের স্থান সবার উপরে। শিক্ষক প্রসঙ্গে NPE 1986-এর সুপারিশ গুলি হল— (a) শিক্ষকদের নিয়োগ পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন, (b) বেতন ও চাকরির শর্তাবলী নিশ্চিত করা, (c) শিক্ষকদের কাজের মূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা চালু রাখা, (d) শিক্ষক-শিক্ষণ প্রসঙ্গে জোর দিতে হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রি.)-তে শিক্ষা বিষয়ক যে মূল নীতিগুলি উল্লেখ হয়েছে, তা বাস্তব ক্ষেত্রে কার্যকর করার জন্য যথোপযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষণের প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রিঃ.)-র সুপারিশ গুলি নিম্নরূপ —

(১) শিক্ষক-শিক্ষণে অগ্রাধিকার : শিক্ষক-শিক্ষণ হবে একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার চাকরি পূর্ব এবং চাকরিরত শিক্ষণের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষণ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

(২) নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ : শিক্ষকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে জাতীয় শিক্ষক-শিক্ষণ সংস্থা (National Council of Teacher Education, NCTE) গঠন করা হবে। এই সংস্থা শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির মান বজায় রাখবে। এরা পাঠক্রম ও পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দানের সামর্থ্য অর্জন করবে।

(৩) DIET প্রতিষ্ঠা : প্রতিটি জেলায়  district Institute of Education and Training (DIET) প্রতিষ্ঠিত হবে। এই প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক, নন-ফর্মাল এবং বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষকদের চাকরিরত অবস্থায় অথবা চাকরি-পূর্বাবস্থায় শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে। DIET প্রতিষ্ঠার পর নিম্নমানের শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলি তুলে দেওয়া হবে। নির্বাচিত শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজগুলোকে উন্নত করে SCERT-এর কর্মের পরিপূরক করা হবে।

(৪) NPE-1986 অনুযায়ী NCTE এর ভূমিকা : NPE-1986-এর শিক্ষক-শিক্ষণের মান উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় NCTE-এর উপর। এর কাজ হবে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি নজর রাখা ও মান উন্নয়ন ঘটানাে। তা ছাড়া পাঠক্রমের বিষয়বস্তু নির্ধারণ, ছাত্র ভর্তি নিয়মকানুন, ছাত্র ও শিক্ষক সংখ্যা, নিয়মনীতি, শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গুলোর অনুমোদন দেওয়া বা অনুমোদন প্রত্যাহার করা। শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজগুলো পরিদর্শন ব্যবস্থা করা, মূল্যায়ন পদ্ধতি ঠিক করা ইত্যাদি। এ ছাড়া NCTE-এর আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল— শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের কাজের মধ্যে যােগাযােগ স্থাপন করা।

(৫) শিক্ষক-শিক্ষণ : শিক্ষক-শিক্ষণ হবে একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় চাকুরিরত ও চাকরি পূর্ব শিক্ষকের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না। নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষক-শিক্ষণের উপর এই শিক্ষানীতির সাফল্য নির্ভর করছে।

(৬) ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ : শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য Massive Training বা ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দানের পরিকল্পনা থাকবে।

(৭) পুরস্কার প্রদান : ভালো শিক্ষককে পুরস্কৃত করা হবে, প্রমোশন ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হবে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষক-শিক্ষণের গুণগত মানের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সমাজের প্রয়ােজনেই এই গুণগত মান বজায় রাখতে হবে।

NPE-1986-তে বলা হয় কোন ব্যক্তির কোন্ বিষয়ে কতটা জ্ঞান বা দক্ষতা আছে, তা ডিগ্রি দেখে বলা সম্ভব নয়। সুতরাং চাকুরির ক্ষেত্রে ডিগ্রি দেখে নিয়ােগ করা উচিত নয়। নির্দিষ্ট কতগুলো চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারা প্রয়োজনমতো এই বিষয়ের উপর পরীক্ষা নেবেন এবং নিয়োগকর্তা নিজেই উপযুক্ত ব্যক্তিকে বেছে নেবেন। এর জন্য কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির কোন প্রয়োজন নেই। তাই এই সমস্ত চাকরির ক্ষেত্রে চাকরি ও ডিগ্রির মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা দরকার।

তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যেমন— অধ্যাপনা, গবেষণা, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা, আইন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডিগ্রির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। মানবিক বিষয় সমূহ, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে চাকরি ও পদের প্রয়োজন অনুসারে ডিগ্রির মর্যাদা থাকবে। কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন দিক খুলে গেলে সাধারণধর্মী শিক্ষা বা উচ্চশিক্ষার উপর চাপ কমবে ও পরীক্ষায় ব্যর্থতা জনিত অপচয় হ্রাস পাবে। একমাত্র উপযুক্ত মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে।

তাই যে-সমস্ত চাকরির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কোণ প্রয়োজন নেই সেসব ক্ষেত্রে চাকরি ও ডিগ্রির মধ্যে সম্পর্কের বিচ্ছেদ হওয়া প্রয়োজন। নিয়োগকর্তারা সেখানে কর্মীদের জন্য পৃথক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন।

চাকুরির ক্ষেত্রে কর্মী বাছাইয়ের জন্য National Testing Service-এর মতো উপযুক্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এই সংস্থার কাজ হবে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করে কোন্ কাজের জন্য কে উপযুক্ত তা বাছাই করা।