ভুমিকা: একদা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি সংক্রান্ত বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয় বস্তুর অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি পৃথক শাস্ত্রের মর্যাদালাভ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলােচ্য বিষয়বস্তুও বহু এবং ব্যাপক। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মধ্যে অন্যতম হল জাতীয় ক্ষমতা বা শক্তি। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। বর্তমানে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আবর্তিত হয়। বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিতে ক্ষমতা কে কেন্দ্র করেই কোনাে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় তার শীর্ষস্থান অধিকার করে নেয়। যেমন— আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান দুনিয়ার একচ্ছত্র অধিপতি।

ক্ষমতার ধারণা: ক্ষমতা বা শক্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ Power, যা ফরাসি শব্দ Pouvoir’ এবং লাতিন শব্দ Potestas’ থেকে এসেছে। এর অর্থ হল সক্ষমতা।

সংজ্ঞা: জোসেফ ফ্রাঙ্কেল মতে, অন্যের মন ও কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে কাজ্কিত ফললাভের সামর্থই হল ক্ষমতা বা শক্তি। হ্যান্স জে মরগেনথাউ তাঁর ‘Politics Among Nations’ গ্রন্থে বলেছেন, ক্ষমতা হল অন্যের মন ও কাজকর্মের উপর একজন মানুষের নিয়ন্ত্রণ।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন জাতি রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বহুলাংশে বিভিন্ন উপাদানের সম্মিলিত শক্তির উপর নির্ভরশীল। অধ্যাপক অর্গানস্কি, কৌলম্বিস ও উফ, হ্যান্স মর্গেনথাউ, পামার ও পারসি , ই এইচ কার প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্ষমতার বিভিন্ন উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন ক্ষমতার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে বিবিধ উপাদান। এইসকল উপাদান রাষ্ট্রের সামর্থ্যের সূচক। হার্টম্যান, পামার ও পাখি এবং জোসেফ ফ্রাঙ্কেল জাতীয় শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলিকে যথাক্রমে ছ-ভাগে, সাত ভাগে ও পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। এইসব উপাদানের মধ্যে ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ, শিল্পের উন্নতি, সরকার ও কূটনীতি, সামরিক প্রস্তুতি, জাতীয় চরিত্র ও মনােবল, আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও ভাবমূর্তি প্রভৃতি হল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে এইসকল উপাদান আলােচিত হল-

(১) ভৌগোলিক উপাদান: হ্যান্স জে মরগেনথাউ-এর মতে, সর্বাপেক্ষা স্থায়ী যে উপাদানটির উপর একটি জাতির শক্তি নির্ভরশীল তা হল ভূগোল”। জাতীয় শক্তির নির্ধারক হিসেবে ভৌগােলিক উপাদানের গুরুত্বকে প্রধানত চারটি দিক থেকে আলােচনা করা যেতে পারে一

  • অবস্থান: ভৌগােলিক অবস্থানের উপর একটি দেশের জাতীয় শক্তি অনেকাংশে নির্ভরশীল। বস্তুত কোনাে দেশের অবস্থান তার সামরিক রণকৌশল ও কূটনীতি কে প্রভাবিত করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় ইউরােপ বা এশিয়ার কোনাে স্থল শক্তির পক্ষে তাকে আক্রমণ করা সহজ নয়। অবশ্য বর্তমানে সামরিক দিক থেকে প্রভূত শক্তিশালী বা পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির কাছে ভৌগােলিক অবস্থান কিরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না।
  • আয়তন: একটি দেশের আয়তনের উপর তার জাতীয় শক্তি অনেকাংশে নির্ভরশীল। বৃহৎ আয়তনের দেশকে শত্রু রাষ্ট্রের পক্ষে পরাজিত করা অসম্ভব। তবে বৃহৎ আয়তনবিশিষ্ট দেশকে রক্ষা করার মতাে সুযােগ্য নেতৃত্বের প্রয়ােজন। সাধারণত ভৌগােলিক আয়তন বৃদ্ধি পেলে সেই রাষ্ট্রের ক্ষমতার বিকাশ ঘটে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন সেই দেশকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
  • জলবায়ু: ভৌগোলিক উপাদানের মধ্যে জলবায়ু অন্যতম। কোনাে দেশের জলবায়ু অনুকূল হলে কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এর ফলে দেশের আর্থিক উন্নতি ঘটবে। নাতিশীত অঞ্চলের একটি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে অগ্রগতির উপযােগী আদর্শ জলবায়ু বলে মনে করা হয়। তা ছাড়া মৌসুমি বায়ুর প্রভাবাধীন অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাতের দরুণ কৃষি উৎপাদন বেশি হয়, ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নও বৃদ্ধি পায়।
  • ভূপ্রকৃতি: ভৌগোলিক উপাদানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ভূপ্রকৃতি। নদনদী থাকার ফলে ব্যাবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ বন্দর গড়ে ওঠে। ফলস্বরূপ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে। আবার কখনাে কখনাে কোনাে দেশের পাহাড়, পর্বত, নদী, মরুভূমির অবস্থান রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্ন ঘটায়। ফলে রাষ্ট্রের পক্ষে সমগ্র শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে- ফলে অর্থনৈতিক বিকাশ ব্যাহত হয়।

(২) জনসংখ্যা: জনসংখ্যা জাতীয় শক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়। বিপুল জনসংখ্যাবিশিষ্ট দেশে প্রয়ােজনীয় সংখ্যক সৈন্যবাহিনী গঠন সম্ভব। তবে দেশের সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হলে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অপুষ্টি, বেকারত্ব প্রভৃতি ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। অন্যদিকে অধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট দেশ যদি শিক্ষা, দারিদ্র্য কবলিত এবং নৈপুণ্যহীন হয় তাহলে তা যে-কোনাে দেশের জাতীয় ক্ষমতার বাধাস্বরূপ হয়ে ওঠে। কেন ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ।

(৩) প্রাকৃতিক সম্পদ: প্রাকৃতিক সম্পদকেও কি ক্ষমতার একটি স্থায়ী উপাদান রূপে গণ্য করা হয়। সাধারণভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে বােঝায় কৃষিজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, বনজ সম্পদ, প্রাণীজ সম্পদ, জলজ সম্পদ প্রভৃতি। বলা যায় যে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্রগুলি অতি সহজেই জাতীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম। কৃষিজাত দ্রব্যের শিল্পজাত দ্রব্য পরিণত করতে যে বিপুল কয়লা ও খনিজ তেলের প্রয়ােজন, তা জোগানাে সম্ভব হলে কোনাে রাষ্ট্র শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আধুনিক বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাশালী হওয়ার পিছনে তার বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের কথা বলা যেতে পারে।

(৪) শিল্পোন্নত: আধুনিক বিশ্বে শিল্পায়নকে কোনাে একটি দেশের অগ্রগতির মাপকাঠি বলে গণ্য করা হয়। একটি দেশের শিল্পোন্নয়নের জন্য প্রয়ােজন প্রাকৃতিক সম্পদ, কাঁচামাল, যথেষ্ট পুজি, দক্ষ শ্রমিক, উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিচালক ও বিক্রয়ের জন্য বাজার। হ্যান্স জে মরগ্যানথাউ বলেছেন, “সামগ্রিকভাবে ভারী শিল্পের বিকাশকে জাতীয় শক্তির অপরিহার্য উপাদান রূপে চিহ্নিত করা হয়।”

(৫) সামরিক প্রস্তুতি: যথাযথ সামরিক প্রস্তুতি ছাড়া জাতীয় শক্তি হিসেবে একটি দেশের আত্মপ্রতিষ্ঠার অন্য উপাদানগুলি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। একটি দেশের সামরিক প্রস্তুতি যুদ্ধবিগ্রহ সংক্রান্ত প্রযুক্তিবিদ্যা, সুযােগ্য নেতৃত্ব, সামরিক বাহিনীর সংখ্যাগত ও গুণগত পরিমাণ প্রভৃতির উপর বিশেষভাবে নির্ভর করে।

(৬) রাজনৈতিক উপাদান: কোনাে একটি দেশের জাতীয় সরকার কেবল দেশের মধ্যে জাতীয় শক্তির বিভিন্ন উপাদানকে সুসংবদ্ধভাবে ব্যবহার করতে পারে। তাই হ্যান্স জে মরগেনথাউ উৎকর্ষসমন্বিত সরকারকে জাতীয় শক্তির একটি স্বাধীন অবশ্যপূরণীয় শর্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমলা অর্থাৎ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীগণ সৎ, সুদক্ষ ও জনকল্যাণব্রতী হলে সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাফল্যলাভ করতে পারে।

(৭) জাতীয় চরিত্র: কোনাে রাষ্ট্রের জাতীয় চরিত্রের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে জনগণের মানসিক অনুভূতির উপর। কিন্তু প্রত্যেক রাষ্ট্রের নাগরিকদের একটি জাতীয় চরিত্র থাকে। কোনাে জাতির আত্মসচেতনতা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার দৃঢ়তার পরিচয় দেয়। আবার কোনাে রাষ্ট্রের জাতীয় চরিত্রের দুর্বলতা সেই রাষ্ট্রকে দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করে।

(৮) কূটনীতি: হ্যান্স জে মরগেনথাউ জাতীয় শক্তির উপাদানগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কূটনীতির উৎকর্ষ-কে চিহ্নিত করেছেন। বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, কারিগরি, অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে আদানপ্রদান বৃদ্ধির ব্যাপারে চুক্তি সম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি কার্যাবলি মূলত কূটনীতিবিদরাই সম্পাদন করেন। এইসব কারণে পামার ও পারকিন্স কূটনীতিবিদদের নিজ নিজ দেশের চক্ষু ও কর্ণ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। কূটনীতির মাধ্যমে একটি দেশ তার জাতীয় শক্তির অন্যান্য উপাদানকে সার্থকভাবে প্রয়ােগ করতে পারে।

(৯) সামাজিক উপাদান: ক্ষমতার অন্যান্য উপাদানের মধ্যে সামাজিক উপাদানটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই সামাজিক উপাদানের মধ্যে জাতিগত, ভাষাগত, বর্ণগত কাঠামাের অবস্থিতি লক্ষ করা যায়। দেশের মানুষের মধ্যে সদ্ভাব, সম্প্রীতি ও সংহতি থাকলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমমাত্রা লাভ করে। কিন্তু যদি দেশের মধ্যে ধর্মগত, বর্ণগত ও সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ থাকে তাহলে শুধু জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রেই সমস্যা হয় না, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। যেমন- শ্রীলঙ্কায় তামিল ও স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে বিরােধ, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে বিরােধ আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজও শ্বেতাঙ্গ-কৃয়াঙ্গবিরােধ সামাজিক উৎকণ্ঠার কারণ।

(১০) মনস্তাত্ত্বিক উপাদান: জাতীয় শক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক উপাদান হিসেবে জাতীয় চরিত্র, আত্মবিশ্বাসের শক্তি ও আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে চিহ্নিত করা যায়। জাতীয় চরিত্র হল একটি জাতির ইতিহাস ও সামাজিক অভিজ্ঞতার যৌথ ফসল। এ ছাড়া, আত্মবিশ্বাসের নৈতিক শক্তি জনসাধারণকে আত্মবিশ্বাসী করে তােলে। অপরদিকে, একটি দেশের আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও ভাবমূর্তি নির্ভর করে বিশ্বজনমতের স্বীকৃতির উপর।

(১১) আন্তর্জাতিক অবস্থান ও মর্যাদা: আন্তর্জাতিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোনাে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা জাতীয় শক্তির পরিচায়ক। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উন্নতি এবং দেশের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি মজবুত হলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনাে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।

(১২) সরকারের প্রকৃতি: জাতীয় ক্ষমতার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কোনাে দেশের সরকার। বিদেশনীতি নির্ধারণ এবং নির্ধারিত নীতির পক্ষে জনসমর্থন সংগ্রহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। হ্যান্স জে মরগ্যানথাউ-এর মতে, একটি উৎকৃষ্ট সরকার ছাড়া পররাষ্ট্রনীতির সার্থক রূপায়ণ সম্ভব নয়। সরকার দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ-সহ দেশের সামরিক শক্তির আকৃতি, প্রকৃতি ও তার কার্যকলাপ নির্ধারণ করে।

(১৩) জাতীয় আত্মবিশ্বাস: জাতীয় আত্মবিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে জাতীয় চরিত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি নাগরিকদের নৈতিক ক্ষমতা ও দৃঢ়তার উপর নির্ভর করে। যেমন প্রবল দেশপ্রেম ও সুদৃঢ় মনােবলের জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতাে বৃহৎ শক্তিধর দেশের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের মতাে দেশ দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের সঙ্গে লড়াই চালাতে পেরেছিল।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয় শক্তি নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপরোক্ত উপাদানগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তবে প্রতিটি উপাদান নিজ নিজ ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করলেই কেবল একটি দেশ বিশ্বরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়। সর্বোপরি একটি দেশের সরকার উপাদানগুলির যথাযথ ব্যবহার করতে পারছে কি না, তার উপর ওই দেশের জাতীয় শক্তি নির্ভর করে। কোনাে দেশের জাতীয় শক্তি বা ক্ষমতা কেবলমাত্র তার অভ্যন্তরীণ অবস্থার উপর নির্ভর করে না, বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি প্রভৃতির উপরও জাতীয় শক্তি বা ক্ষমতার উপাদানগুলি নির্ভরশীল। অবশ্য আধুনিক বিশ্বে ক্ষমতার উপাদানগুলিরও পরিবর্তন ঘটে চলেছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রকৃতি ও পরিধি বা বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করাে।

ক্ষমতা বা শক্তি বলতে কী বােঝায়? জাতীয় ক্ষমতার প্রকৃতি