জাঙ্গল উদ্ভিদ :

  • কম জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস, অধিক বাষ্পীভবন এবং মাটিতে প্রকট জলাভাব-এমন শুষ্ক বা প্রায় শুষ্ক পরিবেশে জন্মায়।

  • জলের প্রাপ্যতা অনুযায়ী কোশের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটায় কোশগুলির নির্দিষ্ট কোনাে আকার নেই। কোশের মধ্যে জল সঞ্চয় করে। খরার সময় ওই জল গ্রহণ করে। এ ছাড়া গাছের পাতা কাঁটায় পরিণত হয়। পাতাগুলি শক্ত ও মসৃণ ও রােম মােমের আস্তরণ দিয়ে ঢাকা, যাতে অতিরিক্ত জল শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে। এরা বীরুৎ শ্রেণির গাছ। বীজের মধ্যেই এদের অঙ্কুরােদগম ঘটায়। গাছগুলি খর্বাকার ও সীমিত বৃদ্ধিসম্পন্ন।

  • গাছ থেকে যাতে জল বেরিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বাম্পমােচন ক্রিয়া অনেক কম। স্টোমাটা দিনে বন্ধ রাখে ও রাতে খােলা রাখে।

লবণাম্বু উদ্ভিদ :

  • প্রচুর পরিমাণে অজৈব লবণযুক্ত (সােডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি) কাদামাটি ও লবণাক্ত জলের উপকূলীয় ও নদী মােহানা পরিবেশে জন্মায়।

  • কোশের নির্দিষ্ট আকার আছে। কোশপ্রাচীর পুরু ও শক্ত। গাছের পাতা পুরু কিউটিক্লযুক্ত, মােমের মতাে মসৃণ। পাতাগুলি ছােটো ও চামড়ার মতাে শক্ত। পাতাগুলি জল সঞ্চয় করে রাখে। উদ্ভিদগুলি বেঁটে ও গম্বুজাকার। বীরুৎ ও কাষ্ঠল প্রকৃতির। এদের ঠেসমূল ও শ্বাসমূল আছে। এরা জরায়ুজ অঙ্কুরােদ্গম ঘটায় এবং অঙ্কুরিত বীজকে লবণাক্ত কাদামাটিতে নিক্ষেপ করে। অঙ্কুরিত গাছ খুব দ্রুত বড়াে হয়।

  • শারীরবৃত্তীয় শুষ্কমাটিতে জন্মায় বলে পত্ররন্ত্রের সংখ্যা কম এবং সেই সঙ্গে বাষ্পমােচনের হারও কম। কোশপ্রাচীর পুরু হওয়ায় আস্রবণ চাপ বেশি সহ্য করতে পারে। এজন্য জলশােষণ করার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি।

জাঙ্গল ও জলজ উদ্ভিদ মাটিতে জলের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ প্রাপ্তি অনুসারে জন্মায়। কিন্তু জলপ্রাপ্তি অনুযায়ী এই দুই উদ্ভিদ গােষ্ঠীর মধ্যবর্তী অবস্থানে স্বাভাবিক পরিবেশে এক বিশেষ শ্রেণির উদ্ভিদ জন্মায়। একে মেসােফাইট বা সাধারণ বা মধ্যবর্তী উদ্ভিদ বলে।

(১) সাধারণ বৈশিষ্ট্য :

  • এরা তৃণ, বীরুৎ এবং কাষ্ঠল শ্রেণির হয়।

  • বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ চিরহরিৎ ও পর্ণমােচী শ্রেণির হয়।

  • অধিকাংশ উদ্ভিদ চাষযােগ্য, যেমন—ধান, আম, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি। সাধারণত স্থলজ উদ্ভিদ এই শ্রেণির অন্তর্গত।

  • ক্ষারধর্মী হিউমাস মাটি এবং বৃষ্টিপাত হলেও জল দাঁড়ায় না এমন অবস্থা এই উদ্ভিদের বৃদ্ধির পক্ষে আদর্শ।

  • কিছু উদ্ভিদ আছে যারা কিছুটা জাঙ্গল চরিত্রের। এদের জল কম লাগে। আবার কিছু কিছু উদ্ভিদ জলজ চরিত্রের মতাে আচরণ করে। এরা বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানে জন্মায়।

(২) অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য :

  • উদ্ভিদের মূলতন্ত্র বিস্তৃত, মূলগুলি শাখাপ্রশাখাযুক্ত। প্রধান মূল, মূলত্রাণ ও মূলরােমসহ সুগঠিত মূলতন্ত্র দেখা যায়।

  • উদ্ভিদের বিটপতন্ত্র সুগঠিত, কিন্তু পাতার ওপর কিউটি- ক্যালের (মােমজাতীয় পদার্থ) আবরণ মাঝারি ধরনের।

  • পাতাগুলি সুগঠিত, বিভিন্ন আকৃতির, কিনারা মসৃণ বা খাঁজকাটা এবং বিষমপৃষ্ঠ। পাতায় রস্প্রের সংখ্যা খুব বেশি এবং রস্প্রগুলি পাতার উভয় ত্বকে অবস্থিত। রক্ষী কোশগুলি বাম্পমােচন নিয়ন্ত্রণ করে।

  • সংবহনতন্ত্র ও যান্ত্রিক কলা সুগঠিত। মেসােফিল কলায় প্যালিসেড এবং স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা থাকে।

  • বাষ্পমােচনের হার বেশি হওয়ায় দুপুরবেলায় গাছগুলি কিছুটা নেতিয়ে পড়ে।