অনুগামী নদীর অপর নাম প্রধান নদী বা প্রাথমিক নদী।
নদী অববাহিকায় বিভিন্ন নদী মিলিত হয়ে যে নানা রকমের নদী বিন্যাস গড়ে তােলে, তাকে জলনির্গম প্রণালী বলে।
নদী নকশা গঠনের ভূগাঠনিক নিয়ন্ত্রকসমূহ—শিলার ভাজ ও চ্যুতি, শিলার নতি, প্রবেশ্যতা ও অপ্রবেশ্যতা, কঠিন ও নরম শিলার পরপর সজ্জিতকরণ, শায়িত ও কেলাসিত শিলার ওপর স্তরীভূত শিলার আস্তরণের ধরন প্রভৃতি।
নদী নকশা গঠনের ভূপ্রাকৃতিক তথা ভূমিরূপগত নিয়ন্ত্রকগুলি হল—ভূমির বন্ধুরতা বা ভূমির ঢাল, বিভিন্ন আকৃতি পাহাড় বা উচ্চভূমি, আগ্নেয় শঙ্কু, ক্যালডেরা বা অবনত জ্বালামুখ ও অবনত ভূভাগ বা বেসিনের উপস্থিতি প্রভৃতি।
ক্ষয়চক্রের পরিণত অবস্থায় গঠনের সাথে সামঞ্জস্য ঘটিয়ে নদী নকশা পরিপূর্ণ রূপ পায়।
যে জলনির্গম প্রণালীতে উপনদীগুলি এলােমেলােভাবে সবদিকে শাখাপ্রশাখার ন্যায় বিস্তৃত হয় এবং সম্পূর্ণভাবে গাছের ডালপালার মতাে বিন্যস্ত থাকে, তাকে বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী বলে।
বৃক্ষরূপী নদী নকশা গাছের ডালপালার ন্যায় সজ্জিত হয়।
একই প্রকার শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চলে বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
মূল নদীর সাথে উপনদীগুলি সমকোণে মিলিত হয়ে আয়তাকার জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
প্রায় সরলরেখায় প্রবাহিত প্রধান নদীর সঙ্গে দু-পাশের উপনদী প্রায় সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে প্রধান নদীতে মিশলে যে নদী নকশা তৈরি হয়, তার সাথে হেরিং মাছের কাটার অনেক সদৃশ্য থাকায় একে হেরিংবােন-সদৃশ নদী নকশা বলে।
কোনাে অববাহিকায় যখন উপনদীগুলি প্রধান নদীর গতিপথের উল্টোদিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে বড়শির মতাে বেঁকে প্রধান নদীর সাথে মিলিত হয়, তখন তাকে আঁকশিরূপী নদী নকশা বলে।
ভূতাত্ত্বিক গঠন অনুসরণ করে প্রধান ও অপ্রধান সমস্ত নদী পরস্পর সমকোণে মিলিত হয়ে যে ঝিল্লিযুক্ত জালিকার মতাে নদী নকশা গঠন করে, তাকে জাফরিরূপী নদী নকশা বলে।
ভূমিরূপ ও ভূমিগঠনের মিলিত প্রভাবে যে নদী নকশায় অনেকগুলি অনুগামী নদী, একে অন্যের সঙ্গে সমান্তরালে প্রবাহিত হয়, তাকে সমান্তরাল নদী নকশা বলে।
যে জলনির্গম প্রণালীতে একাধিক নদী পরস্পর মিলিত হয়ে বিক্ষিপ্ত বা অবিন্যস্তভাবে নিকটবর্তী কোনাে হ্রদ বা জলাভূমিতে গিয়ে শেষ হয়, সেই জলনির্গম প্রণালীকে অসংগঠিত বা বিশৃঙ্খল নদী নকশা বলে।
বিশৃঙ্খল নদী নকশার প্রধান বৈশিষ্ট্যটি হল স্থানীয় ভূমিরূপ ও ভূমিঢাল অনুসারে এই নদী নকশার নদীগুলি প্রবাহপথের অভিমুখ তৈরি করলেও এই নদী নকশার সামগ্রিকভাবে কোনাে অভিমুখ থাকে না।
বাইরের উচ্চভূমি থেকে কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত নদী বিন্যাসকে কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী বলে।
উথিত গম্বুজ, শঙ্কু আকৃতির আগ্নেয়গিরি, অবশিষ্ট পাহাড় বা টিলা, গ্রানাইট শিলার বস ও ব্যাথােলিথের উন্মুক্ত অংশ দ্বারা গঠিত উচ্চভূমি প্রভৃতির ওপর কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
মূল নদী যখন বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে গিয়ে পরে পুনরায় পরস্পর একসাথে জড়িয়ে আবার বিচ্ছিন্ন হয় যায়, এইরূপ বিনুনির মতাে নদী নকশাকে বিনুনিরূপী বা শাখানদী সমন্বিত নদী নকশা বলে।
যে স্থান থেকে নদীর উৎপত্তি হয় সেই স্থানকে নদীর উৎস বলা হয়।
পিনেট জলনির্গম প্রণালীতে জলধারাগুলি পরস্পর সূক্ষ্মকোণে মিলিত হয়।
অনুভূমিকভাবে শায়িত মৃদু ঢালযুক্ত অঞ্চলের সমধর্মী শিলায় পিনেট জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
পরস্পর সমকোণে ছেদ করে এমন ফাটল বা দারণ এবং চ্যুতিগঠিত শিলাস্তরের ওপর আয়তাকার নদী নকশা গড়ে ওঠে।
কোনাে গম্বুজ আকৃতির উচ্চভূমিকে কেন্দ্র করে কঠিন ও কোমল শিলা বেষ্টন করে থাকলে নরম শিলা অধিক ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং সেই অঞ্চলের নদীগুলি চক্রাকারে প্রবাহিত হয়ে অঙ্গুরীয় নদী নকশা সৃষ্টি হয়।
যে নদী শিলাস্তরের নতি বা ঢালের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে বিপরা নদী বলে।
ভূমির প্রাথমিক ঢাল এবং শিলাস্তরের নতি অনুসরণ করে ক্ষয়চক্রের প্রথম পর্যায়ে যে নদী গঠিত হয়, তাকে অনুগামী নদী বলে।
ক্ষয়চক্রের দ্বিতীয় পর্যায়ে যেসব নদী অনুগামী নদীর প্রবাহপথকে অনুসরণ করে প্রবাহিত হয়, তাদের পুনর্ভবা নদী বলে।
অনুগামী নদী ক্ষয়চক্রের প্রথম পর্যায়ে ভূমিভাগের প্রারম্ভিক ঢাল অনুসারে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে, পুনর্ভবা নদী ক্ষয়চক্রের দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুগামী নদীর প্রবাহপথকে অনুসরণ ক করে প্রবাহিত হয়।
ভূমির উত্থানের সাথে সামঞ্জস্য ঘটিয়ে যেসব নদী তার পূর্বেকার প্রবাহ বজায় রাখে, তাকে পূর্ববর্তী নদী বলে।
নদীর মস্তক বরাবর ক্ষয়ের ফলে যে নতুন নদী সৃষ্টি হয় তার সঙ্গে ভূ-অভ্যন্তরীণ গঠনের কোনাে সামঞ্জস্য বা সংগতি থাকে না, তাই এই নদীকে অসংগত নদী বলে।
বহুদিন ধরে নদী তার অববাহিকার পৃষ্ঠ শিলাস্তর ক্ষয় করে ভূগর্ভস্থ শিলা ভূপৃষ্ঠে উন্মােচিত করে। এইভাবে ওপরের শিলাস্তরে গঠিত নদী নীচের শিলাস্তরের ওপর অধ্যারােপিত হলে, তাকে অধ্যারােপিত নদী বলে।
অধােভঙ্গে উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীকে অনুদৈর্ঘ্য অনুগামী নদী বলে।
মূলনদীর দুদিকে উপনদীর সংখ্যা ও বিস্তার সমান না হলে তাকে উপবৃক্ষরূপী নদী নকশা বলে।
উত্তর আমেরিকার অ্যাপালেচিয়ান পর্বতে প্রধানত জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী দেখা যায়।
ড্রামলিন অধ্যুষিত। অঞ্চলে জাফরিরূপী নদী নকশা দেখা যায়।
দক্ষিণ কোয়েল নদীর সঙ্গে কারাে নদীর উত্তল বাঁক নিয়ে মিলন নদীগ্রাস ও আঁকশিরূপী নদী নকশার ইঙ্গিত দেয়।
ভূতাত্ত্বিক গঠনের সঙ্গে অধ্যারােপিত নদীর প্রধান অসঙ্গতি হল—প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক গঠনকে এড়িয়ে নবীন ভূতাত্ত্বিক গঠনের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই নদী প্রবাহকে বজায় রাখে।
জাফরিরূপী ও সমান্তরাল নদী নকশার মধ্যে মিল হল—উপনদীগুলি প্রধান নদীতে সমকোণে মিলিত হয়।
বদ্বীপ বা পলল ব্যজনী অঞ্চলে নদী বিভিন্ন শাখায় ভাগ হয়ে যায় এবং পরে ওই শাখানদীগুলি প্রধান নদীর সঙ্গে মিলিত হলে তাকে অ্যানাস্টমজিং শাখা বােঝায়।
একনত ও ভঁজযুক্ত অঞ্চলে কঠিন ও নরম শিলা পাশাপাশি অবস্থান করলে কোমল শিলা বেশি ক্ষয় পেয়ে অনুগামী নদীর সঙ্গে পরবর্তী নদী, পরবর্তী নদীর সঙ্গে বিপরা নদী। সমকোণে মিলিত হয়ে জাফরিরূপী নদী নকশার সৃষ্টি হয়।
কেন্দ্রমুখী নদী নকশার প্রধান নিয়ন্ত্রক অবনত ভূভাগ।
এই জলনির্গম প্রণালী প্রধানত নদীর নিম্নপ্রবাহে বা বদ্বীপ অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালীর কেন্দ্রে হ্রদ বা জলাশয় সৃষ্টি হয়।
আয়তাকার জলনির্গম প্রণালীর উপনদীগুলি মূল নদীকে সমকোণে ছেদ করে।
নদী বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে বৃক্ষরূপী জলনিৰ্গম প্রণালী সৃষ্টি হয়।
মাঝারি থেকে খাড়া ঢালবিশিষ্ট ভূভাগ, কুয়েস্তার নতিটাল, হগব্যাক জাতীয় ভূমিরূপ এবং একনত ও সমনত ভাঁজ, একাধিক চ্যুতিবিশিষ্ট ভূগাঠনিক অঞ্চল সমান্তরাল নদী নকশা গড়ে ওঠার জন্য আদর্শ।
আগ্নেয়গিরির শঙ্কু বা চূড়া থেকে বাইরের দিকে নির্গত জলনির্গম প্রণালীটিকে কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালী বলা হয়।
ক্ষয়চক্রের দ্বিতীয় পর্যায়ে সৃষ্ট অনুগামী নদীকে পুনর্ভবা নদী বলে।
জাফরিরূপী জলনিৰ্গম প্রণালীকে Grape Vine Pattern বলা হয়।
নতির বিপরীত ঢাল বরাবর প্রবাহিত নদীর নাম বিপরা নদী।
কোনাে অঞ্চলে নদী সৃষ্টির সম্ভাবনা শিলার আয়াম ও নতির ওপর নির্ভর করে।
ভূমির প্রারম্ভিক ঢাল অনুসারে গড়ে ওঠা নদী অনুগামী নদী নামে পরিচিত।
মৃদু ঢালযুক্ত সমতল ভূপৃষ্ঠে বা অনুভূমিক একনত গঠনযুক্ত সমধর্মী পাললিক শিলায় এলােমেলােভাবে শাখাপ্রশাখার ন্যায় এই নদী নকশা সৃষ্টি হয়।
নদী নকশা বা জলনির্গম ব্যবস্থার প্রধান দুটি নিয়ন্ত্রক হল- (i) ভূপ্রাকৃতিক তথা ভূমিরূপগত নিয়ন্ত্রক এবং (ii) ভূতাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রক।
পৃথিবীতে বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
কেন্দ্রমুখী নদী নকশায় ভূগাঠনিক কারণে বসে যাওয়া অবনত ভূভাগ, ক্যালডেরা, সিঙ্কহােল, প্লায়া হ্রদ প্রভৃতি অঞ্চলে চারিদিকের উচ্চভূমি থেকে বিভিন্ন নদী এসে মিলিত হয়।
জাফরিরূপী নদী নকশার একটি বৈশিষ্ট্য হল- এই নদী – নকশা প্রধানত একনত ভূগাঠনিক অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠনকে অনুসরণ করে গড়ে ওঠে।
ভূগঠন নিয়ন্ত্রিত দুটি জলনির্গম প্রণালী হল—জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী এবং আয়তাকার জলনির্গম প্রণালী।
কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালীতে কোনাে উথিত গম্বুজ অথবা আগ্নেয় শঙ্কুর ন্যায় কোনাে উচ্চভূমির কেন্দ্রীয় অংশ থেকে ভূমির ঢাল অনুসরণ করে বিভিন্ন অনুগামী নদী চতুর্দিকে প্রবাহিত হয়।
সুদীর্ঘকাল ধরে একটি নদী ধীরে ধীরে তার প্রবাহ খাত বা উপত্যকা গড়ে তােলে যাকে বলা হয় নদীর ক্রমবিকাশ।
কাশ্মীর উপত্যকায় ঝিলাম নদীর উর্ধ্বপ্রবাহে হেরিংবােন-সদৃশ জলনির্গম প্রণালী দেখা যায়।
ভূমির উত্থানের সাথে সামঞ্জস্য ঘটিয়ে যেসব নদী তার পূর্বেকার প্রবাহ বজায় রাখে, তাদের পূর্ববর্তী নদী বলে। অন্যদিকে, অধ্যারােপিত নদী তার পৃষ্ঠীয় শিলাস্তর বহুদিন ধরে ক্ষয় করে নীচের শিলাখণ্ডের ওপর অধ্যারোপিত হয়।
ভূভাগের উত্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্ববর্তী নদী তার নিম্নক্ষয় বজায় রাখে।
একনত ও ভাজযুক্ত ভূগাঠনিক অঞ্চলের প্রধানত ভৃগু ও উপত্যকায় জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
একনত ও ভাঁজযুক্ত অঞ্চলে কঠিন ও নরম শিলা পাশাপাশি অবস্থান করলে জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)
Leave a comment