কোনাে বছরে কোনাে দেশ বা অঞ্চলের মােট জন্মসংখ্যা ও মােট মৃত্যুসংখ্যার পার্থক্যকে ওই অঞ্চলের জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ধরা হয়। আবার ওই অঞ্চলের জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির সাথে অভিবাসন যুক্ত হয়ে এবং প্রবাসন বিযুক্ত হয়ে যে পরিমাণ জনসংখ্যা পাওয়া যায়, সেই পরিমাণ জনসংখ্যাকে জনসংখ্যার বৃদ্ধি বলে। অর্থাৎ, জনসংখ্যার বৃদ্ধি = (জন্ম-মৃত্যু) 土 পরিব্রাজন। মানুষের প্রজনন ক্ষমতার তারতম্য, চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতি, মহামারি, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সম্পদ উৎপাদনের তারতম্য, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতি কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তারতম্য ঘটে।
উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অধিক। অসংখ্য সমস্যা-জর্জরিত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপে সবরকম উন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়। ফলে অর্থনৈতিক পরিকাঠামাে ভেঙে পড়ে এবং বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
[1] খাদ্য সংকট : জনসংখ্যা বেড়ে গেলে খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বাড়ে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনুযায়ী সমহারে খাদ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অপুষ্টি, অনাহার প্রভৃতি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
[2] উন্নয়্নের গতিমন্থরতা : খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করার জন্য বিদেশ থেকে প্রচুর খাদ্যশস্য, ভােজ্য তেল ইত্যাদি আমদানি করতে হয়। এজন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। ফলে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে বিনিয়ােগের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায় এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
[3] মাথাপিছু আয় হ্রাস : উচ্চহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দারিদ্র্যের কারণে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে। মােট জাতীয় উৎপাদন ও মাথাপিছু উৎপাদন কমে। ফলে মানুষের আয় হ্রাস পায়, মানুষ চরম অর্থ সংকটে পড়ে।
[4] জাতীয় মূলধন সঞ্চয়ে বাধা : উন্নয়নশীল দেশগুলিতে খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা প্রভৃতি অনুৎপাদক খাতে ব্যয় বেশি। ফলে উন্নয়নের জন্য প্রয়ােজনীয় মূলধন সঞ্চয় প্রায় অসম্ভব।
[5] বেকারত্ম বৃদ্ধি : জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধিতে শ্রমশক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার অসম্ভব হয়ে ওঠে। তখন বেকারত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অসামাজিক কাজকর্মও বেড়ে যায়।
[6] প্রাকৃতিক ভারসাম্যে বিঘ্ন : উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উচ্চহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কৃষিজমি ও অরণ্যের ওপর চাপ বাড়ে। ভূমিক্ষয় ও অরণ্য ধ্বংসের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশর ভারসাম্য নষ্ট হয়।
[7] শিল্পোন্নয়নের গতি হ্রাস : জাতীয় আয়ের অধিকাংশই অনুৎপাদক খাতে ব্যয় হওয়ায় প্রয়ােজনীয় মূলধনের অভাবে শিল্পোন্নতি অতি মন্থর গতিতে চলে।
Leave a comment