অথবা, আইন ও নৈতিকতার সম্পর্ক সম্বন্ধে সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
ভূমিকাঃ আইন মানব সমাজের দর্পণস্বরূপ। বৃহত্তর সমাজ জীবন ও রাষ্ট্রীয় কাঠামাের দ্বারা আইনের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ আইন বৃহত্তর সমাজ জীবনে আপেক্ষিক। আইনের যথার্থ স্বরূপ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা এবং ভাব ও নীতির ওপর নির্ভরশীল।
জনগণ আইন মান্য করার কারণঃ নিম্নে আইন মান্য করার কারণগুলাে আলােচনা করা হলাে-
(১) বুদ্ধি-বিবেকের প্রেরণায়ঃ মানুষ বুদ্ধি ও বিবেকসম্পন্ন জীব। বিবেকবান ব্যক্তি ন্যায় ও কল্যাণের পথে চলতে চায়। আইন ব্যতীত এটা সম্ভব নয়। কাজেই বুদ্ধি-বিবেকের প্রেরণায় মানুষ আইন মেনে চলে। তাছাড়া, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি মানুষকে আইন মেনে চলতে প্ররােচিত করে।
(২) ধর্মীয় কারণঃ জনগণ সাধারণত ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। অতি প্রাচীনকালে ধর্মভিত্তিক আইনের দ্বারা মানুষের জীবন পরিচালিত হতাে। আইন অমান্য করা পাপ বলে বিবেচিত হতাে। পাপের ভয়ে মানুষ আইন মেনে চলত। সুতরাং আইন মান্য করার অন্যতম একটি কারণ ধর্মীয় অনুভূতি।
(৩) ন্যায় প্রতিষ্ঠার তাগিদেঃ আইন দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে। আইন না থাকলে অন্যায়ে দেশ ছেয়ে যেত। মানব সভ্যতা বিলুপ্ত হতাে। কাজেই ন্যায় প্রতিষ্ঠার তাগিদে মানুষ আইন মেনে চলে ও আইনকে শ্রদ্ধা করে।
(৪) সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তার কারণেঃ আইন মেনে চললে রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে। মানুষ সুখে-শান্তিতে ও নিরাপদে বসবাস করতে পারে। সুখ-শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই আইন। আইন ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারে না। সুতরাং রাষ্ট্রের জনগণের সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তার কারণে জনগণ আইন মান্য করে চলে।
(৫) অধিকার সংরক্ষণের জন্যঃ উন্নত জীবনের জন্য রাষ্ট্র মানুষকে কতকগুলাে অধিকার ভােগের সুযােগ প্রদান করে থাকে। আইন না থাকলে এ সমস্ত অধিকার নির্বিঘ্নে ভােগ করা সম্ভবপর হয় না। এসব অধিকার ভােগ করার জন্য আইন প্রয়ােজন। অধিকার সংরক্ষণ ও ভােগের জন্য আইন মান্য করা হয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সভ্য নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে জনগণের আইন মান্য করা অপরিহার্য। আর এটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যও বটে। আইন ব্যতীত মানুষ কল্যাণ ও ন্যায়ের পথে থাকতে পারে। তাই যৌক্তিক কারণেই মানুষ আইন মান্য করে।
Leave a comment