প্রশ্নঃ জড়ের নির্জড়ীকরণ কী?

অথবা, জড়ের নির্জড়ীকরণ বলতে কী বােঝ?

অথবা, নির্জড়ীকরণ মতবাদের ব্যাখ্যা দাও।

ভূমিকাঃ দর্শনের প্রথম ও প্রধান কাজ জড়ের প্রকৃতি নির্ণয় করা। জড়ের প্রকৃতি নিরূপণের লক্ষ্যে আলােচনা করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন যুগের দর্শনের জড় সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাবাে। জড় সম্পর্কীয় প্রাচীন মতবাদগুলাে জড়কে নিশ্চল ও নিষ্ক্রিয় বলেই মনে করতাে। আধুনিক বিজ্ঞান জড় সম্পর্কে এই প্রাচীন ধারণার ভিত্তিমূলে আঘাত হানে এবং জড়কে সচল ও সক্রিয় বলে ঘােষণা করে। আর ক্ষেত্রে জড়ের আপেক্ষিকতাবাদ ও কোয়ান্টামবাদ অন্যতম।

জড়ের নির্জড়ীকরণ মতবাদঃ জড়ের প্রকৃতি সম্পর্কে প্রাচীন ধ্যান-ধারণাকে বদলে দিয়ে বৈজ্ঞানিক জড়বাদের ভিত্তি মজবুত করেছেন বর্তমান অত্যাধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিকগণ যেমনঃ প্ল্যাংক, আইনস্টাইন প্রমুখ বিজ্ঞানী এরা সচল জড়বাদের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করতে জড়ের নির্জড়ীকরণ মতবাদ প্রচার করেন।

জড়শক্তির রূপান্তরঃ অনেক দিন থেকেই পদার্থবিজ্ঞানে ভরের মাঝে শক্তিকে বােঝানাে হতাে। কিন্তু আপেক্ষিকতাবাদ ও কোয়ান্টামবাদ এই প্রাচীন মতবাদের ওপর আঘাত হেনে দীপ্ত বলে ঘােষণা করে যে, ভর ও শক্তি দু’টি স্বতন্ত্র সত্তা নয় এবং ভরকে শক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করার কোনাে প্রয়ােজন নেই। কেননা, ভর শক্তির রূপান্তর ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই শক্তিই জগতের মূল উপাদান এবং জড় শক্তিরই এক বিশেষ রূপমাত্র। এই কারণে আধুনিক বিজ্ঞানীদের হাতে পড়ে জড় এবং শক্তির মধ্যের দ্বৈততা দূর হয়ে যায় এবং শক্তিই জগতের আদিম উপাদান বলে পরিগণিত হয়।

আপেক্ষিকতাবাদীদের মতঃ আপেক্ষিকতাবাদীরা স্থান, কাল ও পাত্রভেদে ভরের তারতম্যের কথা বলেছেন। তারা বলেন, কোনাে একটি বস্তুর ভর সবসময় সমান থাকে না। বরং স্থান, কাল ও পাত্রভেদে এর পরিবর্তন সাধিত হয়। উদাহরণস্বরূপ পৃথিবী থেকে কোনাে মানুষ যতই ওপরে বা শূন্যে ওঠতে থাকবে তার ওজন ততই কমতে থাকবে। তাই ভর মূলত শক্তিরই রূপান্তর।

কোয়ান্টামবাদীদের মতঃ কোয়ান্টামবাদীরা ভর ও শক্তির মধ্যেকার সম্পর্কে আরাে সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের মতে, বিকিরণের ফলে জড়শক্তির যতটা ক্ষয় হয় ভরেরও ঠিক ততটাই ক্ষয় হয়। কাজেই বস্তুর ভর জড় শক্তিরইকপাতৰ মাত্র। তাই তাদের মতে বস্তুজগতের মূল উপাদানই হলাে শক্তি। জড় নিশ্চল বা নিষ্ক্রিয় নয় বরং জড়ই শক্তি। লর্ড বেলফোর বলেছেন, “আমরা আজকাল জড় সম্পর্কে এতাে বেশি জেনেছি যে, আমরা আর জড়বাদী থাকতে পারছি না।”

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, জড়ের প্রকৃতি সম্পর্কে আলােচনা দর্শনে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। জড় সচল, নাকি নিশ্চল এ প্রশ্নকে কেন্দ্র করে জড়ের নির্জড়ীকরণ ধারণাটির উদ্ভব। মতবাদ অনুসারে জড় নিশ্চল নয় বরং সচল শক্তিই জড়ের আসলরূপ। এ মতবাদ জড়ের নিশ্চলতা দূর করে এর শক্তিরূপ প্রকাশ করেছে।