প্রশ্নঃ জড়াত্মক বহুত্ববাদ কী?

অথবা, জড়াত্মক বহুত্ববাদ বা পরমাণুবাদ কী?

ভূমিকাঃ আমাদের এ দৃশ্যমান জগতের সংগঠনের আড়ালে যে মূল উপাদান বা সত্তা আছে, তার প্রকৃত স্বরূপ জড় না মন বা আধ্যাত্মিক শক্তি এ নিয়ে দর্শনে বিভিন্ন মতবাদের উদ্ভব হয়েছে। আবার জগতের সংগঠনের আড়ালে যে মূল উপাদান বা সত্তা রয়েছে তা এক না দুই, না দুইয়ের অধিক তা নিয়ে দর্শনে তিনটি মতবাদ পরিলক্ষিত হয়। যথা- ১. একত্ববাদ, ২. দ্বৈতবাদ এবং ৩. বহুত্ববাদ। নিম্নে বহুত্ববাদের প্রকারভেদ হিসেবে জড়াত্মক বহুত্ববাদ/ পরমাণুবাদ ব্যাখ্যা করা হলাে-

জড়াত্মক বা বহুত্ববাদ/পরমাণুবাদঃ জড়াত্মক বহুত্ববাদ বা জড় পরমাণুবাদের মতে, অসংখ্য জড়াত্মক সত্তা বা জড় পরমাণুর সংমিশ্রণ ও বিমিশ্রণের ফলেই দৃশ্যমান জগতের সৃষ্টি হয়েছে। জড় পরমাণুই দৃশ্যমান জগতের আসল এবং আদিম উপাদান। পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস আলােচনা করলে দেখা যায়, গ্রিক দার্শনিক ডেমােক্রিটাস এ জড়াত্মক সত্তা বা জড় পরমাণুবাদের প্রবর্তন করেন।

তার মতে, কোন দ্রব্যকে যদি ক্রমাগত বিভক্ত করা হয়, তাহলে কতগুলাে সূক্ষ্ম কণা পাওয়া যায়, যেগুলাে আর বিভক্ত করা যায় না। আর এই অবিভাজ্য কণাগুলাের নামই পরমাণু। এই পরমাণু অবিনশ্বর ও স্বতন্ত্র এবং এই পরমাণুই জড়বাদের ভিত্তি। এই পরমাণুগুলাের মধ্যে পরিমাণগত পার্থক্য আছে। কিন্তু গুণগত পরামাণুবাদ পরমাণুর গুণগত পার্থক্যে বিশ্বাসী।

বিজ্ঞানী ডাল্টন ডেমােক্রিটাসের মতকে সমর্থন করেন এবং বলেন যে, পরমাণু নিশ্চয় জড় এবং বিভিন্ন পরমাণুর মধ্যে শুধু পরিমাণগত পার্থক্য আছে। পরমাণুবাদের মতে, স্বনির্ভর অসংখ্য জড়াত্মক পরমাণু বিশৃখল ও বিক্ষিপ্ত অবস্থায় মহাশূন্যে সৃষ্টির শুরুতে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় ছিল। এই পরমাণুর মধ্যে আকর্ষণ ও বিকর্ষণ গতির ফলে অর্থাৎ আকস্মিকভাবে পরমাণুগুলাের সংযােগ ও বিয়ােগের ফলেই জড়জগতের উৎপত্তি। এই জড় পরমাণু থেকেই প্রাণ ও জীবদেহের সৃষ্টি হয়। আর জীবদেহের স্নায়ুকেন্দ্র ও মস্তিষ্ক থেকেই মন বা চেতনার আবির্ভাব। জড় পরমাণুবাদের ঈশ্বরের অস্তিত্ব ব্যতিরেকেই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি, লয় প্রভৃতি সম্পর্কে জড় পরমাণুর আকস্মিক সংমিশ্রণ ও বিমিশ্রণের দ্বারা ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে। তাই এ মতবাদ জগৎ প্রক্রিয়ার মূলে কোন উদ্দেশ্য বা পরিণতিকে স্বীকার করে না।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, সত্তার মতবাদ হিসেবে জড়াত্মক বহুত্ববাদ একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে এ মতবাদের ব্যাখ্যাকে মােটামুটি গ্রহণযােগ্য বলে দর্শনে স্বীকার করা হয়।