প্রশ্নঃ জড়বাদ কী?

অথবা, জড়বাদ কাকে বলে?

ভূমিকাঃ জড়বাদ একটি সত্তাতাত্ত্বিক মতবাদ। জড়বাদ অনুসারে জড়ই পরমসত্তা, এর থেকে বিশ্বের সৃষ্টি। বিশ্বের যাবতীয় পদার্থ এমনকি প্রাণ ও মন জড় থেকে উদ্ভূত। এই জড় উপাদানগুলাে অসংখ্য পরমাণুর সমষ্টি। এই পরমাণুগুলাে অভেদ্য ও অবিনশ্বর। আধুনিক বিজ্ঞানীগণ পরমাণুর পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ক্ষুদ্রাংশের কথা বলেন।

জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ হিসেবে জড়বাদঃ জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ হিসেবে জড়বাদের সাথে অভিজ্ঞতাবাদের মিল দেখা যায়। এটি অভিজ্ঞতালব্ধ বস্তুর অস্তিত্বে বিশ্বাসী। জড়বাদ অনুসারে, পঞ্চয়েন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞানই সত্য। এটি কোন অতীন্দ্রিয় বা অতিপ্রাকৃতিক সত্তায় বিশ্বাসী নয়। জগৎ সৃষ্টির পেছনে কোন চেতনসত্তার উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জড়বাদীরা বিশ্বাস করেন না। জড়বাদীদের মতে, প্রাণ ও মন জড় থেকে স্বরূপত ভিন্ন নয়। প্রাণ ও মন জড়ের জটিল রূপবিশেষ। মূলত জড়ের সঙ্গে প্রাণের গুণগত কোন পার্থক্য নেই, যে পার্থক্য আছে সেটি হল পরিমাণগত।

জড়বাদের সাথে যান্ত্রিকতাবাদের মিল আছে, অর্থাৎ জড়বাদ এবং যান্ত্রিকতাবাদ একই। যান্ত্রিকতাবাদীদের মত জড়বাদীরাও যান্ত্রিক কার্যকারণ নিয়মে বিশ্বাসী। জড়বাদীদের এক অর্থে নাস্তিকও বলা যেতে পারে। জড়বাদীরা জগতের পেছনে কোন উদ্দেশ্য বা পরিণাম রয়েছে বলে মনে করেন না। তারা যান্ত্রিক নিয়মে জগৎকে ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট।

জড়বাদে কোন ইচ্ছার স্বাধীনতা নেই। কারণ ব্যক্তির ইচ্ছা জাগতিক নিয়ম দ্বারা সীমাবদ্ধ। অনুকল্প কি হবে তা পূর্বকল্প দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। যেহেতু জড়বাদ ইচ্ছার স্বাধীনতা অস্বীকার করে, সেহেতু নৈতিকতাকেও তারা অস্বীকার করে থাকেন। কারণ ইচ্ছার স্বাধীনতা নৈতিকতার একটি প্রধান শর্ত। মানুষের যদি ইচ্ছার স্বাধীনতা না থাকে, সব কিছুই যদি যান্ত্রিক নিয়মে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে মানুষকে কর্মের জন্য দায়ী করা যায় না।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, জড়বাদ ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিত প্রভৃতি নৈতিক প্রত্যয়গুলােকে অর্থহীন হিসেবে প্রতিপন্ন করে। শুধু নৈতিকতা নয়, ধর্মের মূলে এ মতবাদ আঘাত হানে। সসীম সত্তা হয়ে মানুষ অসীম সত্তাকে উপলব্ধি করতে চায়। কিন্তু জড়বাদীদের মতে, অসীম সত্তার ধারণা একটি অলীক কল্পনামাত্র। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিকে আলীক কল্পনা বলে বিবেচনা করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।