শিক্ষার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীকে তার বুদ্ধি ও ক্ষমতা অনুযায়ী উপযুক্ত বৃত্তির সুযোগ করে দেওয়া, যাতে সে স্বনির্ভর হতে পারে। এই শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র শিক্ষার্থীকে সঠিক বৃত্তির সঙ্গে পরিচয় করানােই নয়, শিক্ষার্থীর চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ ঘটনা। যেমন– শ্রমের প্রতি মর্যাদাবোধ, দলগতভাবে কাজ করার ক্ষমতা, শৃঙ্খলাবোধ, সহিষ্ণুতা, আত্মবিশ্বাসী ও স্বনির্ভর হওয়া ইত্যাদি।

NPE-1986-তে শিক্ষায় বৃত্তিমুখীনতা সম্পর্কে যে যে বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে তা হল—

(১) বৃত্তিমুখীনতা : ন্যূনতম প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন যে সকল শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ছুট তারা, বেকার, আংশিক বেকার এ ছাড়াও কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তি এবং মহিলাদের জন্য বিধিমুক্ত, প্রয়োজন ভিত্তিক বৃত্তিমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

(২) পেশা নির্বাচন : এই শিক্ষার উদ্দেশ্য হল— শিক্ষার্থীদের একটি পেশা নির্বাচনে ও সেই পেশায় উপযুক্ত দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করা। 

(৩) বৃত্তি শিক্ষার কোর্স : বৃত্তিশিক্ষার কোর্স গুলি সাধারণত মাধ্যমিক শিক্ষার পরে থাকে। তবে পাঠ্যসূচি এমন নমনীয় হবে যাতে অষ্টম শ্রেণির পর শিক্ষার্থীরা এগুলো গ্রহণ করতে পারে। 

(৪) শিল্প প্রশিক্ষণ : বৃত্তিশিক্ষার স্বার্থে শিল্প প্রশিক্ষণ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার সংযুক্তি ঘটাতে হবে।

(৫) স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় : Health Planning e Health Service Management-কেও বৃত্তি শিক্ষার আওতায় আনা হবে।

(৬) স্বাস্থ্য শিক্ষা : প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে Health Education চালু করে শিক্ষার্থীদের পরিবার ও সমাজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা দরকার। তারপর এই +2 স্তরে বৃত্তিমূলক কোর্স নিয়ে পড়াশোনা করবে।

(৭) বহুমুখী বৃত্তিমূলক কোর্স : কৃষি, মার্কেটিং, সমাজসেবা ইত্যাদি বিষয়েও বৃত্তিমূলক কোর্সের ব্যবস্থা থাকবে।

(৮) বৃত্তিমুখী শিক্ষার পুনর্গঠন : বৃত্তিমুখী শিক্ষার পুনর্গঠনের জন্য ব্যবস্থা, পরিকল্পনা ও দৃঢ়তার সঙ্গে উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার।

(৯) বৃত্তিমুখী কোর্সের দায়িত্ব : বৃত্তিমুখী কোর্স ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থাকবে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার হাতে।

(১০) সর্বজনীনতা : নিম্ন সম্প্রদায়ভুক্ত নারী-পুরুষ, অবহেলিত শ্রেণি, প্রতিবন্ধী প্রভৃতির জন্য উপযুক্ত বৃত্তিমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন অর্থাৎ শিক্ষার সার্বজনীনতা প্রয়োজন।

(১১) ব্রিজ কোর্স : এই কোর্সে স্নাতক এর পূর্ব নির্ধারিত শর্তে সাধারণ, কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষায় প্রবেশের অধিকার থাকবে। তবে এর জন্য একটি ব্রিজ কোর্সের ব্যবস্থাও বাঞ্ছনীয়।

(১২) সাধারণ কোর্সের শিক্ষার্থী : সাধারণ কোর্স উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিমূলক কোর্সের ব্যবস্থা প্রয়োজন।

(১৩) চাকরির সুযোগ : বৃত্তিমুখী কোর্সের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ যাতে চাকরি পায় বা স্বনিযুক্ত বৃত্তি প্রবেশ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

(১৪) বৃত্তি শিক্ষা ভর্তি : ১৯৯০ ও ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে যথাক্রমে ১০% ও ২৫% শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ভর্তি করতে হবে।

তবে বর্তমানে বৃত্তিমুখী শিক্ষার গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।