প্রশ্নঃ চৌতিশা কী?

উত্তরঃ চৌত্রিশটি বাংলা বর্ণের (ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, য, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, আ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, র, ল, ষ, শ, স, হ, ক্ষ = ৩৪) এক একটিকে চরণের প্রথম শব্দের আদ্যক্ষর রূপে প্রয়োগ করে বিরহী হৃদয়ের উপর এক এক মাসের প্রাকৃতিক প্রভাব বর্ণনার উদ্দেশ্যে একাধিক চরণ রচনার শৈল্পিক রীতিকে চৌতিশা বলে। 

চৌতিশা অর্থ বিলাপ। মধ্যযুগীয় বিভিন্ন কাব্যে নায়ক বা নায়িকার অর্থনৈতিক ও প্রেম- বিরহ-বেদনা একেক মাসে একেক রূপে প্রকটিত। মাসে মাসে নায়ক-নায়িকার বিরহের রঙের যে বর্ণনা তা যেমন বারোমাসিতে বর্ণিত হয়, কোন কোন কাব্যে তা চৌতিশায় বর্ণিত হয়। যেমন- ‘লায়লী-মজনু’ কাব্যে বারোমাসির পরিবর্তে চৌতিশার মাধ্যমে নায়ক-নায়িকার বিরহ ও কষ্টের বর্ণনা করা হয়েছে।

চৌতিশার উদাহরণ—

জগৎ হইল ঘোর    যথ বুদ্ধি হৈল ভোর

         জনম হইল বিষময়।

জন্মিল বিরহ-দুঃখ   জীবনে নাহিত সুখ

         জলে পশি মরিমু নিশ্চয়৷

জাগিয়া গহন রাতি   জঞ্জাল ভাবিয়া অতি

     জপিতে আছি এ এক জাপ

যদি সে গোলক নাথ   যাইমু উহার সাথ

      জুড়াইতে মনের সন্তাপ॥

(লায়লী-মজনু থেকে উদ্ধৃত)

চৌতিশায় ৩৪টি বর্ণের যে-কোন একটিকে আদিতে রেখে বিভিন্ন মাস বা ঋতুতে নায়ক বা নায়িকার বিরহের দশ-দশার বর্ণনা দেওয়া হয়। যেমন-

আষাঢ়— নিকটে সুন্দরী নাহি আষাঢ় প্রবেশ।

               নিয়মে নাহিক চিত্ত দগধে বিশেষ॥

শ্রাবণ— ডুবিলু শ্রাবণ মাসে বিরহ সাগরে। 

              ডাকএ চাতক পক্ষী বরিখ নির্ভরে॥ 

ভাদ্র—   তামসী রজনী ভাদ্র অতি ভয়ঙ্কর। 

              তনু ক্ষীণ মজনু বঞ্চএ একসর॥

আশ্বিন— ধরণী ধবল ভেল আশ্বিন রজনী। 

                ধরাইতে নারীচিত্ত দগধে পরাণি৷ 

(লায়লী-মজনু কাব্য হতে উদ্ধৃত)